somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুভবের অনুরণনে আমার প্রিয় স্কুল

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

।। নাসীমুল বারী ।।
ধূসর রঙের দ্বিতল দালান। বামেই বড় করে লেখা ‘বিষ্ণুচরণ পাঠাগার'।
দ্বিতল দালানের সমানে এক চিলতে মাঠ। পেছনেও এক চিলতে মাঠ। তার ডানে তিনতলা আরেকটি দালান। নাম ‘শামসুদ্দিন ভবন'। এ ভবনেই আজ শেষ পদচারণা। স্কুলের শেষ ক্লাস। অনুভবেও ধূসরতা। মনে তাই অনেক কষ্ট। ক্লাসটা আজই শেষ। নিয়মিত আগমন আর ঘটবে না এ আঙিনায়। এ ধূসর অট্টালিকায়।

আমার অনুভবে আজও সে ধূসর দালানটা অক্ষয় হয়ে আছে। এ ধূসর দালানটাই আমার প্রিয় স্কুল- ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল; অনুভবের শিহরণে আজও দোলা দেয়। শেষ ক্লাসের তারিখটা মনে নেই। টেস্টের তিন-চার দিন আগে হবে হয়ত। ক্লাসের শেষে রাফ খাতাটার শেষ খালি পাতায় বড় করে লেখি ‘বিদায় ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল’। তারপর - - -। তারপরের পৃষ্ঠা থেকে বন্ধুদের অটোগ্রাফ নিতে থাকি ওই খাতায়।

আমাদের বন্ধু আমীরুল ইসলাম; টুলু নামেই আমাদের কাছে পরিচিত। সে সময়ে কিশোর লেখক হিসেবে দেশময় পরিচিতও হয়ে উঠেছে। আমাদের ক্লাস ক্যাপ্টেনও। আমাদের সেকশনে ১৪৫ জন ছাত্র ছিল। আর তিন গ্রুপ মিলে সেবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম সাড়ে তিনশ’র মত। আমীরুলের সাথে আমার সখ্যতা একটু ভিন্নমাত্রার ছিল লেখালেখির কারণেই। তাকে খাতাটা তুলে দিলাম। সে খাতা নিয়ে প্রায় আধঘণ্টা ভাবল। তারপর আমার নাম ‘নাসীম' এ তিনটি অক্ষরকে অদ্যাক্ষরে রেখে ছয় লাইনের একটা ছড়া লিখে দিল। পুরো ছড়াটি এখন মনে নেই- তবে প্রথম লাইনটি এমন ছিল, ‘নাইবা রইলাম আমি কাছে’।

স্কুলের ফেলে আসা সে ধূসর সময়টার চেয়েও বড় ধূসর- আমার এ খাতাটি নষ্ট হয়ে যাওয়া। আজও আমাকে কেউ কষ্টের কথা জিজ্ঞেস করলে বড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলি, আমার সবচে' বড় কষ্ট আর দুঃখ স্কুলের শেষ দিনে বন্ধুদের অটোগ্রাফ দেয়া সেই খাতাটি নষ্ট হবার কারণটি।

আজও মনে পড়ে স্কুলকে। স্কুলের বন্ধুদেরকে। কৈশোরের দূরন্তপনা, দেয়াল টপকে স্কুল পালানো, টিফিনঘরে গিয়ে অতিরিক্ত টিফিন খাওয়া আর স্কুল গেটে মামুর হালিম- স্মরণের জানালায় দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে কী না মজা লাগছে! পেছনে ফেলা ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুলের এ চিরায়ত দৃশ্য। অনুভবের অনুরণনে মনটা কৈশোরে চলে যায়। বন্ধুদের আবার কাছে পেতে ইচ্ছে করে। চুটিয়ে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করে। অপ্রাসঙ্গিক-প্রাসঙ্গিক, শ্লীল-অশ্লীল- সব কৌতুকী কথার বানে আবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। হাশেম খান স্যারের প্রচ- ধমক, হেড স্যারের (আ. রশিদ সরকার) বেতের তাড়া, জুনাইদুল্লা স্যারের কানমলা, আশরাফুল হক স্যারের পড়ানোর ফাঁকে পৌরাণিক গল্প বলা, গেমটিসার আমির আলী স্যারের সাথে ভীষণ রকম দুষ্টুমী ইত্যাদি- শৈশব-কৈশোরের সেই ফেলে আসা স্কুল জীবনটা আবার ফিরে পেতেই অনুভব করি বন্ধুদের একত্র করা। তাদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেয়া।

স্মরণের ডায়েরি হাতড়ে মনের আবেগ, কৈশোরিক অনুভূতির উন্মাদনা খুঁজছি। আড্ডা, কথার তুরি, কৈশোরিক দুষ্টামী; সেই যেন স্কুলের ছোটবেলা- তাই আনুষ্ঠানিক খাতা-কাগজে রেজুলেশন লিখে এসব আড্ডা হত না। স্বাভাবিক কারণেই সঠিক সময়টা মনে রাখার জন্য আজ আর কোন দালিলিক ভেণ্ডার নেই। তবু অবিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো বার বার ভেসে ওঠে চোখের সামনে মনের উঠোনে।

ফিরে দেখা এমনি এক বোধ, অনুভব নিয়ে অর্ধ পুরোনো এক ভেসপায় লিটারের পর লিটার তেল পুড়িয়ে যে বন্ধুটি আমাদের সংঘবদ্ধ করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে, সে আমাদেরই অতি পরিচিত বন্ধু ডা. রুহুল আমিন।

নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্ঠার সেই ফসলেই আমরা আজ সুসংগঠিত, ভিত্তিশালী এক কৈশোরিক বন্ধুর দল। মাঝে মাঝে ভাবতে হয়, সত্যি আমরাতো কৈশোরেও এত ঐক্যবদ্ধ ছিলাম না। আজ কতই না ঐক্যবদ্ধ। কতই না মজবুত আমাদের মনের ভিত। অনুভবের ভিত।

এত বড় ভিত্তি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র কৈশোরিক বন্ধুদের অপার অনুভূতির উচ্ছ্বাসে। নির্মল সে উচ্ছ্বাস আজও আমাদের স্কুল জীবনে ফিরিয়ে নেয় বার বার। আড্ডায় বসলে মনেই হয় না আজ আমরা পরিবার পরিপালনে পরিণত মানুষ। এখনও মনে হয় সেই উচ্ছ্বল কৈশোরের চঞ্চল বন্ধু আমরা। অনুভব আর আবেগে আমরা একাকার হয়ে যাই।

৯২ বছরে স্কুলটি সাফল্যের সোনালী সোপানে উঠেছে বহুবারই। ষাট-সত্তর-আশির দশকে দেশসেরা ১ম ৫টি স্কুলের একটি ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল। জন্ম দিয়েছে অসংখ্য সোনার ছেলের। দীর্ঘ এ পথ চলায় এসব শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির জন্যে অবদান রেখে চলছে অবিরত। আজও বাংলাদেশের যে কোন সেক্টরেই পাওয়া যায় এ স্কুলের শিক্ষার্থী। ফলে এসব সোনার ছেলেরা স্কুলকে যেমন মহিমানি¦ত করেছে, গৌরবানি¦ত করেছে; তেমনি দেশ-জাতি এমনকি বিশ্বকেও দিয়েছে অনেক কিছু। সেসব সোনার ছেলেদের কীর্তিগাথাতেই আজ ঐতিহ্যের ধারক হয়েছে ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল।

ঐতিহ্যের পতাকাবাহী ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুলকে নিয়ে আজও আমি অনুভব করি আমার ধমনীতে প্রবাহমান শিহরণকে। স্কুলের নাম শুনলেই হৃদয়ের অলিন্দে নেচে ওঠে সুখ-স্মৃতি। আমাদের কৈশোরিক ভালবাসা আর আনন্দ-ঝগাড়ার মুখরিত পট ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল। কালের বিবর্তনে হয়ত কিছুটা ক্ষয়ে গেছে এর স্বর্ণমুকুট; কিন্তুু মানুষ গড়ার কারিগররাতো এখনো আছে। আবার হয়ত রং-আলোতে সেজে উঠবে আমাদের প্রিয় এ স্কুলটি। এমন প্রত্যাশা করা অমূলক নয়। সে সুন্দরের প্রত্যাশায় আগামির দিন গুনছি।
#



২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×