somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালন ফকির ও কতিপয় গুরুতর প্রসঙ্গঃ পর্ব-৪

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্বঃ ৪
ডঃ আবুল আহসান চৌধুরী বা ডঃ আহমদ শরীফ তারা কেউই লালনের মর্তবা ও গুপ্ত ঐশ্বর্যের আধ্যাত্নিক মহিমা নিয়ে অন্য অনেকের মতো একপেশে কথা বলতে চান নি। তারা লালনের সর্বতোমুখী পরিচয়, ভালো-মন্দ উভয় নিয়েই পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন। তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। তাদের নিরপেক্ষ মতবাদের মধ্যে সুস্পষ্ট যে, লালন আসলে ছিল একজন কামাচারী ও মিথুনাত্নক সাধনার গুরু গোসাঁই, অশিষ্ট অভিধায় একজন প্রকৃত লম্পট। আর আমি যেহেতু নিরপেক্ষ নই, ধর্ম নিরপেক্ষও নই; আমি যেহেতু রাসূল (সাঃ) এর পথ নির্দেশকেই চুড়ান্ত বিবেচনা করি, আমার পক্ষে জেনেশুনে লালনের বিপজ্জনক অনিষ্টকারিতার সম্মুখে নির্বাক মৃতের মতো ভূমিকা পালন করা অসম্ভব। এই ধরণের নিরবতা ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর ও অমার্জনীয় অপরাধ, রীতিমত কবিরা গুণাহ। অতএব, চারিচন্দ্রভেদের এই দিশারী ত্রিবেণীতে মিন ধরা এই গুরু সাধক যে "রসরতি" "নীর-ক্ষীর" বা ‌"রজঃশত্র“ নাদ বিন্দুর গুপ্ত তত্ব নিয়ে এক মরমিয়া আবহ সৃষ্টি করে, আমরা তাকে মিথুনাত্নক এক গূঢ় সাধন প্রক্রিযা বলে অভিহিত করতে পারি; আমরা বলতে পারি, অদীক্ষিতের কাছে এটা যাই মনে হোক, আসলে এই দেহবাদের অন্তঃস্থলে রয়েছে অসীম অনন্ত এক আধ্যাত্নিক পিপাসা ও যুক্তি।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, যত যাই বলি, বস্তুত এটা এক চুড়ান্ত ভ্রান্তি ও কুৎসিত যৌনাচার ও কামাকীর্ণ অশ্লীলতা। এবং এটা আরো বেশী মারাত্নক এই জন্য যে, নিষিদ্ধ কামক্রীড়ার প্রতি মানুষ এমনিতেই বড় দুর্বল। তদুপরি সর্বতোভাবে হারাম এই প্রিয় কর্মটি যদি সম্পূর্ণ হারাম হওয়া সত্বেও ধর্মের ছদ্মবেশে সজ্জিত হয়, পরিধান করে হকিকত-তরিকতের কপট আলখাল্লা, তাহলে সেটা কত যে বিপজ্জনক, ইসলামকে যারা নুন্যতম মাত্রাও ভালবাসেন তাদের উচিত এটা অনুধাবন করা।

কোন কোন ধর্মে আছে, মানুষের তৃপ্তি দান আসলে স্বয়ং নারায়নকেই সুখী করা; কারণ অলক্ষ্যে স্বয়ং নারায়নই তৃপ্তিলাভ করেন, অতএব এটা বিশুদ্ধ পূর্ণকর্ম। কিন্তু আমাদের আলোচ্য লালন এক্ষেত্রে আরও অনেক বেশী অগ্রসর হয়ে লাভ করেছেন পূর্ণ কামিয়াবী; যিনি কিছু মানুষকে প্রায় অকেশে বোঝাতে সম হয়েছেন যে, এই গুপ্ত শরীরী ফাঁদের এতই মেঘচুম্বী মহিমা যে, অধর চাঁদ, শুধু নিকট অলক্ষ্যে থেকে তৃপ্তি সুখই সম্ভোগ করেন না, ত্রিবেণীসঙ্গমে সশরীরে দৃশ্যমান হয়ে হাওয়ার ঘরে তিনি ধরাও দেন। কারণ, ব্রক্ষ্মবিষ্ণু নর-নারায়ণ সেই ফাঁদে পড়েছে ধরা। প্রকৃত পক্ষে লালন যে মিথুনাত্নক প্রক্রিয়ার মধ্যে বিরাট কিছু রয়েছে বলে বলে আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, তার সাঙ্গীতিক ও পারিভাষিক রূপ যত রহস্যময়ই হোক, আসলে তা লাম্পট্য। এবং পুরো লালনগীতির আদ্যোপান্ত এই লাম্প্যটেরই কথা কথা, যা কোন মুসলমানের কাছে প্রশয় পেতে পারে না।

আল্লাহ পাক বলেন, ওয়ালা তাকরাবুজ্জিনা ইন্নাহু কানা ফাহিশাতান ওয়া ছাআ ছাবিলা অর্থাৎ তোমরা জ্বিনার নিকটবর্তী হয়ো না, নিশ্চয়ই এই অশ্লীলতা ও কুপথ। এই কুকর্মটি এতই ভয়াবহ যে, পবিত্র বোখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, প্রকাশ্য ব্যভিচার কেয়ামতের একটা অন্যতম আলামত।

অথচ যত সুভাষণই প্রয়োগ করি, যত কথাই বলি, লালনের সর্বাত্নক সাধনার মূল কেন্দ্রই হলো ব্যভিচার; ইসলামী বিধানে যে ব্যভিচার বা জ্বিনার শাস্তি হলো নিপ্তি প্রস্তরাঘাতে প্রাণদন্ড। অতএব যে মুসলমান ইসলাম থেকে পুরোপুরি খারিজ হয়ে যেতে চান না, তিনি কি স্বপ্নেও কখনো লালনকে সুফী বা আউলিয়া বা মরমী মহাসাধক বলে ভাবতে পারেন!

অথচ কি দুর্ভাগ্য আমাদের আল্লাহপাকের পথ নির্দেশ ও রাসূল (সাঃ) এর জীবনাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত এ মুশরিক ও বিদআতীকে, আমরা গভীর অনুরাগে গ্রহণ করলাম মারেফাত জগতের এক সুফীতাত্বিক রাহবাররূপে। মুসলমানের কলব কতখানি ব্যাধিগ্রস্থ হলে এই রকমের বেশরম অশ্লীলতাকে আধ্যত্নিক মুক্তির উপায় বলে বিবেচনা করতে পারে, সপ্রীতি প্রশ্রয় দিতে পারে, সে সত্যই ভেবে দেখার মতো একটি জরুরী বিষয়।

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:৫৮
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×