somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

জীবনের গল্প: মায়া, মামনি! অনন্ত নক্ষত্র হয়ে থেকে যেও, দেখা হবে জান্নাতের সিঁড়িতে!

১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রচন্ড মেধাবী ছোট বোন প্রাথমিক সমাপনি পরিক্ষায় অসাধারন রেজাল্ট করার পরেও কিছুটা সামাজিক কুসংস্কার আর কিছুটা তখনকার দিনের গাও গ্রামের অব্যবস্থার ফলে পড়াশোনাটা থামিয়ে দেয়া হয়। গ্রাম গঞ্জের রীতি অনুসারে একটা সময়ে অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্তে বিয়েও হয়ে যায় প্রিয় বোনটির। জমি জিরাত ভালোই ছিল। চাষবাস করে সংসার বেশ ভালোভাবেই চলে যেত। বোন সন্তান সম্ভবা হন। প্রথম ছেলে সন্তান জন্মের পরপরই মারা যায়। প্রচন্ড আঘাত পান বোন। এবং এটাই বুঝি তার প্রথম আঘাত।

নদীর পাড় থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ছিল এই বোনের বাড়ি। নদী ভাঙ্গনের ফলে একটা সময়ে বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হন তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ভিটে বাড়ি সব কেড়ে নিয়ে গেল নদী। গাছপালা, পুকুর ভর্তি মাছ, সোনালী ধানের হাসিভরা মাঠ, সব সবই কেড়ে নিয়ে গেল সর্বনাশা নদী। নদীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিইবা করার আছে? নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এগিয়ে আসছে। চোখের সামনে যেদিন বাড়ির সামনের পাকা প্রাচীন মসজিদখানাও নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখলেন আমার সরলমতি বোনটি দ্বিতীয়বারের মত বুঝি শোকাহত হলেন।

নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে গেল একটি পরিবার। নি:স্বতারও একটা সীমা থাকে। আগুনে পুড়ে গেলে তো ভিটে মাটিটা অন্তত: থাকে। নদী তো কিছুই রেখে গেল না। বাপ দাদার কবরের নিশানাটাও হারিয়ে গেল জলের অথৈ ধারায়। গ্রামের স্বচ্ছল কৃষক পরিবারটি চলে আসে রাজধানী ঢাকায়। ততদিনে বড় মেয়ে মুক্তার বিয়ে হয়ে গেছে। মেঝ মেয়ে মায়া ক্লাশ এসএসসি পরিক্ষা তখনও দেয়নি। বাবা মায়ের অভাবের সংসার। দেখে। সবকিছুই বুঝে। বুঝেও কিছু করতে না পেরে মর্মযাতনায় ভোগে কঁচি মন। বোঝা হয়ে থাকা যেন সম্মানে বেধে যায় ওর। সিদ্ধান্ত নেয় চাকরি করবে। চুপি চুপি মাকে বলে। মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। তাকে নানাভাবে বুঝায়। 'মা, তোমার সংসারে অভাব থাকতে দেব না। তোমাদের কষ্ট করতে দেব না। আমি চাকরি করলে তোমাদের অভাব দূর হবে।'

একটা সময় মেয়ের মন রক্ষার জন্য সম্মতি দেন। মায়া চাকরি নেয় প্রাইভেট একটি কোম্পানীতে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শুনি, মায়া অসুস্থ। পেটে ব্যথা। পেটে প্রচন্ড ব্যথা।

কয়েক দিন পর্যন্ত ব্যস্ততার কারনে যেতে পারিনি। ফোনে খোঁজ খবর নিয়েছি। হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছে তাও জেনেছি। সকাল বিকাল মোবাইলে ফোন করে অবস্থা অবহিত হয়েছি। চিন্তা ছিল, একটু ফ্রি হয়ে মায়াকে দেখতে যাব। কিন্তু ঘূনাক্ষরেও বুঝিনি, এই দেখাই শেষ দেখা।

অবশেষে মায়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। মায়াকে দেখেছিলাম। কিন্তু সে অন্য মায়া। ঢাকা মেডিকেলের বেডে নিথর মায়া। কষ্টে নীল হয়ে যাওয়া কঁচি সোনা মুখ। মায়া চলে গেছে। আমাকে না বলেই। মায়াকে পেয়েছি। মায়াকে পাইনি। মায়াকে পেয়েছি কিন্তু মায়া কথা বলেনি। টিয়ে পাখির মত মায়ার মিষ্টি মধুর ডাকে বিমোহিত হতে পারিনি। আর হতে পারবো না কোনো দিন। লিভারের সমস্যা মায়াকে অন্য জগতের বাসিন্দা করে দিয়েছে। পাশে উপবিষ্ট দু:খিনী বোন আমার। বাকরুদ্ধ। হতভম্ব। ভাগ্যের কাছে বারবার পরাজিত পৃথিবী সেরা এক নারী। অশ্রুভেজা ফোলা ফোলা চোখ। কান্না করতেও যেন ভুলে গেছে সরলা অবলা বোন আমার। এই বুঝি বোনের বুকে তৃতীয় এবং সবচে' বড় আঘাতটি সযতনে আসন গেড়ে বসলো।

গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল মায়াকে। পুকুর পাড়ের হিজল গাছের তলে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হল মায়া মামনিকে। সাথে ঘুমিয়ে গেল তার দেখা বাবা-মায়ের দু:খ-অভাব দূর করার স্বপ্নগুলোও।

একটি ফুল পাঁপড়ি মেলে মুকুলিত হবার আগেই যেমন ঝড়ে যায় তেমনি ঝড়ে গেল মায়া মামনিও। মায়া, মামনি! অনন্ত নক্ষত্র হয়ে থেকে যেও, দেখা হবে জান্নাতের সিড়িতে!

মায়া মামনিটার জন্য কবিতার ক'টি লাইন-

মায়া, মামনিটা, ঘুমিয়ে থাকো, হিজল শাখের তলে,
তোমার কবর পানে মেঘের ছায়া পড়বে গলে গলে।
কেউ তোমাকে জাগাবে না, ভাঙ্গাবে না তোমার ঘুম,
প্রার্থনা সকাতর, জান্নাত এসে দিক তোমাকে স্নিগ্ধ চুম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৪০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×