সর্বনাশা পরকীয়া; অনৈতিক এই ফিতনা থেকে মুক্তির উপায় কি?
পরকীয়া আসলে কি?
ইদানিংকালে সংবাদপত্রের পাতাগুলোর অনেকটা অংশ জুড়ে থাকে পরকীয়া বিষয়ক নানান দু:সংবাদ। গনমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে পরকীয়া সম্পর্কে প্রায় প্রতিনিয়ত: বিভিন্ন খবর প্রচার হয়ে থাকে। পরকীয়ার জেরে খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সচেতনতার জন্য আমাদের জানতে হবে, পরকীয়া কি এবং নারী পুরুষ পরকিয়ায় কিভাবে জড়িয়ে পরে। আর এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর পর্যায়ক্রমে দেয়ার চেষ্টা করা হবে এখানে। পরকীয়া হচ্ছে একটি ব্যধি। এটি একটি পরিবার, একটি সাজানো গোছানো সংসার মুহূর্তেই ধ্বংস করে দেয় এই পরকীয়া এবং ভয়ঙ্কর অপরাধের জন্ম দিয়ে সমাজ জীবনকে কলুষিত করে দেয়। পারিবারিক জীবনে অশান্তি তৈরি করে। আত্মীয়তার বন্ধন, সামাজিক রীতি নীতি, সম্পৃতি, বিশ্বাস সবকিছু ভেঙ্গে চূড়ে চূরমার করে দিয়ে, সবকিছুর মূলে কুঠারাঘাত করে এই পরকীয়া। কোনো নারী কিংবা পুরুষের ভিন্ন নারী কিংবা পুরুষের প্রতি বিবাহ বহির্ভূত পন্থায় অনৈতিকভাবে আকৃষ্ট হওয়া ও একে অপরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়াকেই পরকীয়া বলে।
পরকীয়া কেন হয়?
পরকীয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় করা কঠিন। ব্যক্তিত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান এবং প্রেক্ষাপট ইত্যাদি বিবেচনায় নেয়া হলে এগুলোর বিভিন্ন কারণ অনুসন্ধান করা যেতে পারে। তবে নিচের কারণগুলোও উল্লেখযোগ্য-
এক. স্বামী স্ত্রী একে অপরের চাহিদাকে গুরুত্ব না দেওয়া:
স্বামী কিংবা স্ত্রী পরস্পরের চাহিদাকে গুরুত্ব না দেওয়া। যেমন- একজন অন্যজনকে সময় না দেয়া, একজন অন্যজনের সাথে ভালো আচরণ না করা, শারীরিক সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া। স্ত্রী স্বামীর চাওয়া পাওয়ার প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া। তাঁর মধ্যে হতে পারে স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার না করা, শারীরিক সম্পর্কে অস্বীকৃতিসহ স্বামীর যৌন কার্যে সাড়া না দেওয়া। এসব কারণে বিবাহিত নারী পরপুরুষ ও বিবাহিত পুরুষ পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। কেননা, একজন নারী কিংবা পুরুষ যদি তাঁর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দিয়ে তাঁর প্রত্যাশা বা মনের চাহিদা পূরণ করতে না পারে তাহলে তখনই তাঁর বিপরীত কাউকে খুঁজে নিতে সচেষ্ট হয়।
একটি উদাহরণ দিলে সম্ভবত: বিষয়টি আরও ক্লিয়ার হবে। ধরে নিন, ফজলু মিয়া বিয়ে করেছেন কয়েক বছর আগে। কর্ম ব্যস্ততার কারণে তাকে স্ত্রী পরিবার থেকে দূরে অবস্থান করতে হয়। একারনে তিনি স্ত্রীর চাহিদা অনুযায়ী সময় দিতে পারেন না বলে তাঁর স্ত্রী একাকিত্ববোধ করেন। ফলে তিনি কারও সাথে গল্প গুজব করতে পারেন না। মনের কথা বা চিন্তা-ভাবনা স্বামীর সাথে শেয়ার করার সুযোগ পান না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সুবিধাবাদী পুরুষেরা এ ধরণের সুযোগগুলোকে কাজে লাগায়। তাঁরা এরূপ নারীদেরকে টার্গেট করে থাকে। প্রথম প্রথম নানান কলা-কৌশলে তাঁদের মনে জায়গা করে নিতে চেষ্টা করে। একটি সময় দেখা যায়, এই একটু আধটু আলাপ সালাপই প্রেমে পরিণত হয় এবং এটি যৌন সম্পর্কের দিকে গড়াতে থাকে।
এমনটি লক্ষ্য করা যায় বিবাহিত পুরুষদের ক্ষেত্রেও। তারাও অব্যাহতভাবে স্ত্রীদের অবহেলার স্বীকার হয়ে পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্য কোনো নারী তাঁর সাথে উত্তম আচরণ করেছে, তাঁর কাজে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যুগিয়েছে, কিংবা নিজের একাকিত্বকে ভাগাভাগি করে নেয়ার সুপ্ত ইচ্ছে পূরণের লক্ষ্যে অন্য কোনোভাবে তাকে কাছে টেনে নিতে চেষ্টা করেছে, এতে করে ঐ পুরুষ ঐ নারীর প্রতি ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে উঠতে পারেন। এরপরে চলতে থাকে প্রেম, এমনকি যৌন সম্পর্কের দিকেও তা গড়াতে পারে। এ বিষয়গুলো নারী পুরুষদের মনে নেশার মতো কাজ করে। একটি পর্যায়ে অবস্থা এমনই গুরুতর আকার ধারণ করে যে, তাঁরা কি করছে সেসব দিকে তাদের খেয়াল থাকে না। তারা যে অন্যায় করছে, তারা যে অপরাধে লিপ্ত এই অনুভূতিটুকুও তাদের থেকে হারিয়ে যায়। আর এর ফলশ্রুতিতে এসব থেকে তাঁরা সহজে বের হতেও পারে না। অপরদিকে নিজেদেরকে পরস্পর একান্ত করে কাছে পাবার প্রবল আশঙ্কা জাগে মনে। তাঁদের মনের প্রবল আকঙ্খা পূরণে তখন বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তিবর্গকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না কখনো কখনো। এ কারণেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরকীয়ার বলী হতে দেখা গেছে, শিশু সন্তান থেকে শুরু করে স্বামী, স্ত্রীসহ অনেককেই।
দুই. পশ্চিমা অপসংস্কৃতির খপ্পড়ে পড়ে বিপদগামী হয় কেউ কেউ:
অনেক সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির ধাঁচ নিজেদের মধ্যে আনতে চায়, তখন পরকীয়া বাড়ে। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, দূরত্ব ইত্যাদির জন্যও অন্যের প্রতি আগ্রহ, আসক্তির ঘটনা ঘটে।
তিন. বয়সের অপরিপক্কতা:
বয়সের অপরিপক্কতা কখনো কখনো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক তরুণ তরুণী কম বয়সে বিয়ে করে ফেলে। এই সময়ে ছেলে বা মেয়ের মধ্যে মানসিক বুদ্ধি-চিন্তা কাজ করে না। যুক্তির চেয়ে আবেগই বড় হয়ে দেখা দেয়। যার কারণে বিয়ের কিছুদিন পরই সেইসব স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন রকমের মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং এই সময়েই সেই স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফলে, একসময় এই বিবাহিত জীবন ডিভোর্স এর পর্যায় চলে যায়।
চার. বয়সগত অসামাঞ্জস্যতার ফলে সৃষ্ট সমস্যা:
বিবাহিত জীবনে এটি হচ্ছে প্রধান সমস্যা। স্বামী ও স্ত্রী সমবয়সী হলে অথবা স্বামীর থেকে স্ত্রী বয়সে বড় হলে এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে অল্প বয়স্ক স্বামীর ভেতরে একটি অতৃপ্তি হয়তো কাজ করে থাকতে পারে। তিনি তার থেকে কম বয়সী সঙ্গী খুঁজে তৃপ্তি পেতে চেষ্টা করতে পারেন। যার কারণে সেসব স্বামী বা স্ত্রী বাইরের অন্য কারো সাথে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে।
পাঁচ. বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের পছন্দ বা মতামতকে গুরুত্ব না দেয়া:
এই সমস্যাটি সাধারণত: বেশি দেখা যায় অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ বা অভিভাবকের পছন্দানুযায়ী বিয়েগুলোর ক্ষেত্রে। অনেক সময় অভিভাবকরা তাদের নিজেদের কথাই ভাবেন এবং ভাল-মন্দ কোনো কিছু না দেখে, না শুনে অনেক তাড়াহুড়ো করেই তাদের সন্তানদের বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু ছেলে-মেয়ের পছন্দ বা মতামতকে তারা গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। যার ফলে এসব ছেলে-মেয়েদের বিবাহিত জীবন সুখের হয় না। আর তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পরবর্তীতে তারা পরকীয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
ছয়. বিয়ের পরপরই সন্তানের বাবা মা হওয়া:
এই কথাটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রীর ভেতরের মধুর সম্পর্কে তখনি ব্যাপক পরিবর্তন আসে, যখন তারা সন্তানের পিতা মাতা হয়ে যান। একটা সন্তান পরিবারে আসার পর মূলত: সন্তানের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সন্তানকে নিয়ে অতি ব্যস্ত থাকার কারণে স্বামী-স্ত্রী কেউই একে অপরকে সময় দিতে পারেন না। যার কারণে আগের মত সেই মায়া, মহব্বত এবং ভালোবাসা তাদের ভেতরে থাকে না। তখনই সেসব পুরুষ বা নারীদের মন বাইরে চলে যায় অর্থাৎ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার এটাও একটি কারণ হয়ে ওঠে তখন।
সাত. ক্যারিয়ার উন্নয়নের ভাবনা কাউকে বিপদগামী করে তোলে:
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে কিছু পুরুষ বা নারী তাদের ক্যারিয়ার দ্রুত উন্নয়নের জন্য কর্মস্থলের উর্ধ্বতন বা অধ:স্তন কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হন। কারণ তারা মনে করেন এতে করে তারা জব এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবেন। কিন্তু এটা সম্পূর্ণই ভুল চিন্তা! উল্টো এটা একটা মানুষের ব্যক্তিস্বত্তা, তার চরিত্র স্বত্তাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়। এসব সম্পর্কও যেমন বেশিদিন টিকে না, ঠিক তেমনিভাবে চাকরি হারানোর আশঙ্কা থাকে ১০০%। পরবর্তীতে এগুলোর প্রভাব পড়ে পরিবারের সন্তানদের উপর। বিশ্বাস, ভালবাসা, সম্মান সবকিছুই বিনষ্ট হয়ে যায়, এই সাময়িক পরকীয়া সম্পর্কের কারণে।
আট. স্টার জলসা, জি বাংলা গ্রুপের তালিমকেও গণায় ধরতে চান কেউ কেউ:
অবাধ, উম্মুক্ত আর খোলা আকাশ সংস্কৃতির এই সময়টাতে এসে আমরা ভিনদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকারও কম না। অনেকের ধারণা, আমাদের দেশের টিভি মিডিয়ার অবাধ প্রবেশাধিকার না থাকলেও ভারতের স্টার জলসা, জি বাংলা গ্রুপের বিভিন্ন চ্যানেল এদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকমতোই। তাদের প্রচারিত নাটক, সিরিয়ালে পরকীয়ার তালিমকে যেভাবে গুরুত্বসহকারে উস্কে দেয়া হয়, আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের পেছনে সেগুলোকেও গণায় ধরতে চান কেউ কেউ।
নয়. ডিআরডিফোর জিন:
মেডিকেল সায়েন্সের গবেষকদের দাবি, কারো মধ্যে যদি ডিআরডিফোর জিনের উপস্থিতি বেশি হয়, তাদেরও পরকীয়া বা বাড়তি সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা থাকতে পারে।
দশ. মানসিক সমস্যা:
মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ পরকীয়ায় জড়াতে পারে। যাদের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার আছে, তাদের পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। তারা কোনো কিছুর মধ্যে স্থিরতা খুঁজে পায় না।
এগারো. পশ্চিমা অপসংস্কৃতির আগ্রাসন:
পশ্চিমা অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার নারী পুরুষের সংখ্যাও কম নয়। অনেকেই পশ্চিমা সংস্কৃতির ধাঁচ নিজেদের মধ্যে আনতে গিয়ে পরকীয়ার ফাঁদে পড়ে যান। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, দূরত্ব ইত্যাদির জন্যও অন্যের প্রতি আগ্রহ, আসক্তির ঘটনা ঘটে।
বারো. শখ থেকে পরকীয়া:
অনেকে শখ থেকেও পরকীয়ায় জড়ায়। অন্য আরেকটি শরীর কেমন, একে জানার একটি আগ্রহ থাকে। অনেকে আবার ভাবে, ‘ওরা কি সুখী! এই মানুষটির সঙ্গে থাকতে পারলে হয়তো আমার অনেক সুখ লাগত।’ এ থেকেও অনেকে ওই ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ অনুভব করে।
তেরো. দূরত্ব ও শূন্যতা:
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে। হয়তো স্বামী বা স্ত্রীর আর আগের মতো করে কথা বলে না বা আদর করে না। যত্ন কম নেয়। এই বিষয়গুলোর কারণে অন্যের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়।
পরকীয়ার জন্য ইসলামে কঠোর বিধান:
পরকীয়ার এই ভয়াবহ পরিণতি বিবেচনা করেই ইসলাম ব্যভিচারের জন্য অত্যন্ত কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছে। হত্যাজনিত অপরাধের পরেই ইসলামে অপরাধের মাত্রা এবং ভয়াবহতা বিচারে ব্যভিচারের শাস্তির অবস্থান। ইসলামে অবিবাহিত নারী পুরুষের ব্যভিচারের শাস্তি বেত্রাঘাত হলেও বিবাহিত নারী কিংবা পুরুষের অবৈধ প্রণয় বা সম্পর্ক অথবা পরকীয়ার শাস্তি পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা।
কেস স্টাডি-০১
১. রিনা (ছদ্মনাম)। বয়স ৩৪। একদিন হঠাৎ করে স্বামীর মোবাইল ফোনে তাঁর অফিসের সহকর্মীর একটি খুদে বার্তা (এসএমএস) দেখতে পান। সেখানে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা লেখা আছে। বিষয়টি স্বামীর কাছে জানতে চাইলে প্রথম দিকে অস্বীকার করলেও পরে ঘটনাটি স্বীকার করে নেন। জানান, একটি মেয়ের সঙ্গে বছর দুয়েক ধরে সম্পর্ক চলছে তাঁর। রিনা যেন আকাশ থেকে পড়েন। দম আটকে আসতে চায়। ভেতরটা যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়। ভেবে কূল পান না, কী করবেন? স্বামীকে ছেড়ে চলে যাবেন, নাকি এত দিনের সংসার টিকিয়ে রাখতে মেনে নেবেন সবকিছু?
কেস স্টাডি-০২
২. তাহমিনা (ছদ্মনাম)। বয়স ২৮। ঘরে একটি সন্তান। স্বামীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই পাঁচ বছর ধরে। শুরু থেকেই স্বামী একটু কেয়ারলেস ছিলেন। বহু চেষ্টার পরও স্বামী কোথায় আছেন, সেটি জানতে পারেন না তাহমিনা। জীবনযুদ্ধের এ লড়াইয়ে একপর্যায়ে তাঁর জীবনে আসেন আলম (ছদ্মনাম)। আলম বিবাহিত মধ্যবয়স্ক পুরুষ। আলমের কথা বলার ধরন, মানসিকভাবে সহযোগিতা করতে চাওয়ার কিছু বিষয় তাহমিনাকে এতটাই মুগ্ধ করে যে তিনিও তাঁর প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতে থাকেন। অনেক ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর একসময় তাহমিনা চান আলমকে বিয়ে করতে। কিন্তু আলম তাঁর পজিশন আর স্ট্যাটাস থেকে সরে আসতে চান না। ভয় পেয়ে সরে যান তাহমিনার কাছ থেকে। তীব্র যন্ত্রণা আর অপমান নিয়ে তাহমিনা সরে আসেন আলমের কাছ থেকে। আলমকে তিনি ভালোবেসেছিলেন, আশ্রয় ভেবেছিলেন। ঘটনাটি সহ্য করা তাঁর জন্য এতটাই কষ্ট আর যন্ত্রণার হয়ে ওঠে যে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরকীয়া থেকে কিভাবে স্বামী তার স্ত্রীকে বাঁচাবে এবং স্ত্রী কিভাবে তার স্বামীকে বিষাক্ত পরকীয়া থেকে বা পরনারী আসক্ততা থেকে রক্ষা করবে সেরকম কিছু পয়েন্ট নিচে তুলে ধরা হলো-
এক. স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে দূরে রাখতে যে কাজগুলো করা যেতে পারে:
ক. কিছুটা সময় স্ত্রীকেও দিনঃ
আমাদের সমাজে যে চিত্রটি হরহামেশা চোখে পড়ে, পুরুষ মানেই চাকরি-বাকরি, ব্যাবসা-বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত একজন মানুষ। পুরুষ মানেই ব্যস্ত। পুরুষ মানেই দৌড়ঝাঁপ। পুরুষ মানেই যেন দেশ-বিদেশে পড়ে থাকা। পুরুষ মানেই যেন নানান কাজে ব্যস্ত অন্যরকম একটি জীবন। এই ব্যস্ততা ভালো। কাজের ব্যস্ততায় নিয়োজিত থাকা নি:সন্দেহে ভালো বিষয়। বেকার থাকা, ঘরে বসে থাকা বরং নিন্দনীয়। কিন্তু অধিকাংশ পুরুষ মানুষকেই দেখা যায়, নিজের চাকরি, ক্যারিয়ার বা ব্যবসা নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে পরে যে স্ত্রীকে দেয়ার মতো একটু সময় তার হাতে থাকে না। অফিস আদালত চাকরি বাকরি ব্যাবসা বানিজ্য ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করে সারা দিন পরে বাসায় ফিরে রাতে দেখা যায় স্ত্রী- সন্তানকে দেয়ার মত কোনো সময় আর তার হাতে নেই। এমনকি স্ত্রী সন্তান একটু কাছে ঘেঁষে একটু সময় একটু ভালোবাসা সুলভ আচরণ প্রত্যাশা করলে সেটাকেও বাড়াবাড়ি ভেবে বসেন অনেকে। তাদের ঘরের অব্স্থা কেমন হতে পারে, ভাবুন একবার।
কিছু লোক তো পৃথিবীতে আসেই অর্থের পেছনে ছুটে বেড়ানোর জন্য। জমি জমা বাড়ি ঘর বন্ধক রেখে হলেও এরা বিদেশ যাবে। ভাবখানা এমন যেন, বিদেশ মামার বাড়ি। গেলেই কাড়ি কাড়ি টাকা ভর্তি ব্যাগ আর বস্তা পাওয়া যায়! কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এরা বিয়ের আগে বাড়ির বাইরে কোথাও একরাত না কাটালেও বিয়ের পরে ব্যাপক সাহসী হয়ে ওঠে। সে হিসেবে বিয়েপূর্ব জীবনটা এরা সম্ভবত: ঘুমিয়েই কাটায়। যেই না বিয়েটা করে ফেললো, অমনি মাথায় চেপে বসে বিদেশে যাওয়ার ভূত। ব্যস, আর কথা নেই, বিয়ের এক দেড় মাসের মাথায় ভো দৌড়। এক দৌড়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সউদি আরব, কুয়েত, লিবিয়া, ওমান, ইরাক আরও কত কত দেশ! শুরু হয় নতুন জীবন। কামলাগিরির তিক্ত অভিজ্ঞতা। বাড়িতে রেখে আসা নতুন বউয়ের খবর নেওয়ার সময় তখন অার খুব একটা থাকে না। সময় হতে হতে ততক্ষনে পেরিয়ে যায় অন্তত: বছর দুয়েক। তারপর একদিন বাড়িতে ফেরার টিকেট কাটে। কিন্তু ততদিনে যা হবার তা হয়ে যায়। পরকীয়া মরকীয়া সবকিয়া সারা।
খ. বেশী বেশী ভালবাসুন স্ত্রীকে:
স্ত্রীকে ভালোবাসুন। তার জন্য হৃদয়টাকে আরেকটু খুলে দিন না। ভাবুন, বাবা মা ভাই বোন সবাইকে ছেড়েইতো আপনার কাছে এসেছে। তাই অনেক অনেক বেশী ভালবাসুন তাকে। তবে শুধু মনে মনে এমনভাবে ভালোবেসে যাবেন না যে, আপনার স্ত্রী বুঝতেই পারছেন না যে আপনি তাকে অনেক ভালোবাসেন। বরং আপনার আচরণ, কথাবার্তা সব কিছুতেই যেন সে ভালোবাসার বহি:প্রকাশ ঘটে। কারণ, অনেক স্বামী এমন আছে যে মুখে বলে, স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসে; কিন্তু কাজের সময় দেখা যায় যে স্ত্রীকে ধমকা-ধমকির মধ্যে রাখে, বিনা কারণে তাকে বকা-ঝকা করে, তার কথার কোন মূল্যায়ন করে না। আবার অনেক স্বামী এমন আছে যে স্ত্রীকে শুধু মনে মনে বোকার মতোই ভালোবেসে গেল। এতোটাই লাজুক ও অন্তর্মুখী স্বভাবের যে স্ত্রী বুঝেই না তার স্বামী আদৌ তাকে ভালোবাসে কি না? কাজেই স্ত্রীকে সত্যিকারার্থে ভালবাসুন এবং আপনি যে ভালোবাসেন সেটা স্ত্রীকে বুঝার সুযোগ করে দিন। আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন। ডিসকাশন করুন। মুখ ফুটিয়ে কিছু কথা বলতে হয়। আরেহ, বোকাদের দুনিয়ায় জায়গা নেই। নিজের খেয়ে আর কাহাতক! কাহাতক অার জ্ঞান গলধ:করণ করানো যায়! কথায় আছে না, না কাঁদলে মা সন্তানকেও দুধ দেয় না!
গ. তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুনঃ
যদি আপনি বুঝতে পারেন কোন ছেলে হোক সেটা আপনার বন্ধু বা প্রতিবেশী আপানর স্ত্রী প্রতি দুর্বল বা আপনার স্ত্রী তার প্রতি দুর্বল তাহলে এটা চেপে না রেখে স্ত্রীর সাথে খোলামেলা কথা বলুন এবং বাজে কিছু যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে তাকে সাবধান করে দিন। অথবা যদি স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে যায়ও এ নিয়ে তার সাথে খোলামেলা কথা বলুন। তাকে দ্রুত ফেরান। হোক সেটা মৃদু শাসন বা ভালোবাসার মাধ্যমে।
ঘ. স্ত্রীর চাওয়া-পাওয়ার মূল্যায়ন করুনঃ
প্রেমিকা হিসাবে একটা মেয়ে একজন প্রেমিকের কাছে যেমন মূল্যায়ন পায় স্ত্রী হিসাবে কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে অধিকাংশ স্ত্রী সেরকম মূল্যায়ন এবং মর্যাদা পায় না। এমনকি বিয়ের আগে যে পুরুষ প্রেমিক ছিল তার সাথে বিয়ের পর সেই পুরুষও কিন্তু স্বামী হিসাবে পূর্বের প্রেমিকা যে এখন স্ত্রী তাকে সেভাবে মূল্যায়ন বা মর্যাদা প্রদান করে না। তাই তো প্রমের বিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সেভাবে টিকে না। হয়তো পুরুষের স্বেচ্ছাচারিতা বা বিয়ের পরে বদলে যাওয়া আচরণের কারণেই এমনটা হয়। তাই স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে বাঁচাতেই শুধু নয়, বরং সুন্দর, সুষ্ঠু দাম্পত্য জীবন এবং শান্তিপূর্ণ সংসার পেতে স্ত্রীর চাহিদার মূল্যায়ন করুন।
ঙ. স্ত্রীর গতিবিধির উপর খেয়াল রাখুনঃ
স্ত্রীর গতিবিধির উপর খেয়াল রাখবেন মানে এমন না যে সারাক্ষণ তার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করবেন। তার সব কিছুতে সন্দেহের দৃষ্টি ছুঁড়বেন, বরং তা না করে স্ত্রী কোথায় যায়? কার সাথে মেশে? আপনার বাসায় কে আসে? এসব বিষয়ে কৌশলে খবর রাখুন তাহলে দেখবেন স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ানোর আগেই তাকে সে জঘন্য বিষয় থেকে ফেরাতে পারবেন।
চ. তাকে শালীনতার শিক্ষা দিনঃ
অনেক স্বামীই আছে দেখা যায় বিয়ের পর নতুন বউকে অকারণে যখন তখন নিজের বন্ধু, কাজিন যেমন মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, নিজের ভাই এদের কাছাকাছি ঠেলে দেয়। স্ত্রীর আপত্তি থাকার সত্ত্বেও যখন তখন নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাসায় আশার পরিবেশ তৈরি করে দেয়। এমনকি নিজের অনুপস্তিতিতেও। প্রথম প্রথম অনেক স্বামী ও তার পরিবার একটু মেশার জন্যই পীড়াপীড়ি করে। ভাবে এটুকু মেশায় কি এমন ক্ষতি। বরং বউ সোশ্যাল হয়ে উঠবে। যেসব শালীন মেয়ে ধর্মীয় বা স্বভাবগত কারণেই স্বামীর এমন বন্ধু ও কাজিনের সাথে মিশতে চায়না তাদেরকে কোন কোন স্বামী বা তার পরিবার আন কালচারড, আন সোশ্যাল বলে আখ্যায়িত করে। স্ত্রীকে নিজের বন্ধু, কাজিন, প্রতিবেশী পুরুষ, তার এক্স বয়ফ্রেন্ড (যদি বিয়ের আগে তার কোন প্রেমিক থেকে থাকে) থেকে দূরে রাখুন। আর তাদের সামনে যদি বিশেষ প্রয়োজনে যেতেও হয় তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই শালীনভাবে উপস্থাপিত হতে সহায়তা করুন। কারণ সাধারণত স্ত্রীদের পরকীয়া দূরের, রাস্তার কারও সাথে হয় না। উপরে উল্লেখিত শ্রেণীর পুরুষদের সাথে হবার সম্ভাবনাই বেশী।
ছ. স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ করুনঃ
অনেকেই হয়তো এমন কথায় হেসে উঠবেন যে, স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ করুন- এ আবার কি কথা? নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করার সময়ই তো স্ত্রীর চাহিদাও পূরণ হবার কথা। কিন্তু দিব্য দৃষ্টিতে তাই মনে হলেও বিষয়টার সমাধান কিন্তু এমন সোজা-সাপটা কথায় দেয়া সম্ভব না। বাংলাদেশী নারীরা সাধারণত লাজুক প্রকৃতির তাই নিজের চাহিদা মিটে কি না বা মিটাতে চাইলেও সেটা কিভাবে মেটাবে স্বামী সেটা তারা হয়তো লজ্জায় বলতে চায় না। স্বামী যখন যেচে নিজের চাহিদা মিটাতে স্ত্রীর কাছে আসে তখনই কেবল স্ত্রী চাহিদা মেটানোর আশা রাখে। নিজে থেকে খুব কম স্ত্রী স্বামীর প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়। আর যেহেতু নারী নিজের চাহিদা সেভাবে দেখায় না তাই স্বামীও সেভাবে কোন সিস্টেম ফলো না করে স্ত্রীর দেহ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের চাহিদা পূরণ করে নেয়। সে সময় স্ত্রীর চাহিদা পূরণে অপূর্ণতা থাকলো কি না বা স্ত্রীর চাহিদা পূরণ না হলেও তার চাহিদা কিভাবে পূরণ করা সম্ভব এই দিকটা বিবেচনায় নেয় না। কাজেই নিজের যৌন চাহিদা পূরণের সময় স্ত্রীর যৌন চাহিদাও সম্পূর্ণরূপে পূরণ করার চেষ্টা করুন। না করতে পারলেও আপনি যে চেষ্টা করছেন আপনি যে তাকে অনেক ভালোবাসেন সেটা স্ত্রীকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিন। দেখবেন দৈহিক চাহিদার অপূর্ণতা থাকলেও আপনার অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণেই পরকীয়ায় আসক্ত হবে না বা আসক্ত হলেও ফিরে আসবে আপনার ভালোবাসা, সন্তান ও সংসারের প্রতি খেয়াল রেখে।
দুই. স্বামীকে পরকিয়া প্রেম থেকে দূরে রাখার উপায়:
ক. মনমানসিকতা শক্ত রাখুন, স্বামীর প্রতি আন্তরিক হোন:
বেশিভাগ মেয়েই বিয়ের পর একদম আগাগোড়া বদলে যান, আর সন্তান হবার পর তো সেই পরিবর্তন আরও ভয়াবহ। একেবারেই যেন অন্য মানুষ হয়ে ওঠেন। একটা জিনিস মনে রাখবেন, প্রিয় পুরুষটি কিন্তু বিয়ের আগের আপনাকে দেখেই ভালোবেসেছেন। তাই বিয়ের পর নিজেকে ধরে রাখুন। এতটাও বদলে যাবেন না যে স্বামীর কাছে আপনাকে অচেনা মনে হয়।
খ. অহেতুক সন্দেহ পরিহার করুন:
বিনা কারণে অমূলক সন্দেহ করা বন্ধ করুন বা সন্দেহ করে কথা শোনানো বন্ধ করে। এই অমূলক সন্দেহ করার প্রবণতা স্বামীর মনে আপনার প্রতি অনীহা ও অন্য নারীর প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
গ. স্বামীকে ভালোবাসায় আগলে রাখুন, শাসন করে নয়:
স্বামীকে ভালোবাসায় আগলে রাখুন, আদর সোহাগ দিয়ে তার মন জয় করার চেষ্টা করুন। স্বামীকে শাসন করার চেষ্টা করবেন না। সর্বদা এটা করো, সেটা করো বলতে থাকবেন না। তিনি আপনার জীবনসঙ্গী, বাড়ির কাজের লোক নন। অতিরিক্ত শাসন করলে মানুষটা নিশ্চিত আপনার প্রতি মন খারাপ করবেন। আর এই মন খারাপের মত বিষয়গুলোই আস্তে আস্তে বড় আকার ধারণ করে তাকে অন্য নারীর দিকে দৃষ্টি দিতে উতসাহিত করে তুলবে।
ঘ. প্রাণভরে ভালোবাসুন স্বামীকে:
স্বামীকে ভালোবাসুন। তাকে ঘিরে রাখুন ভালোবাসায়। প্রেমিকার মত ভালবাসুন। মিষ্টি রোমান্টিকতায় ভরে রাখুন তাঁর মন যেন আপনাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসের বন্ধন অটুট থাকে আজীবন।
ঙ. সংসারটাকে সাজিয়ে তুলুন:
নিজের সংসারকে করে তুলুন এক টুকরো শান্তির নীড়, যেন দিন শেষে এখানে ফিরে আপনারা মনের মাঝে খুঁজে পান অনাবিল প্রশান্তি। সংসারে সুখ আছে যেসব পুরুষের, তাঁরা বাইরের দিকে আকৃষ্ট হয় না।
চ. অন্যের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা রাখবেন না:
একটা কথা মনে রাখবেন, দাম্পত্যের ক্ষেত্রে তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে চোখ বুজে বিশ্বাস করবেন না। যতই হোক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বা প্রিয় কাজিন, কারো কথাই চোখ বুঝে বিশ্বাস করবেন না ও কাউকে নিজেদের দাম্পত্যে কথা বলার সুযোগ দেবেন না।
ছ. স্বামীর আত্মীয়দের নিজের আত্মীয় জ্ঞানে ভালোবাসুন:
নিজের শ্বশুরবাড়ির সবাইকে ভালবাসুন, সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। চেষ্টা করুন মানিয়ে নিতে। আপনি তাঁর পরিবারকে ভালো না বাসলে এটা খুবই স্বাভাবিক যে স্বামী আপনার প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলবেন।
জ. স্বামীকে খোটা দিয়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে হেয়প্রতিপন্ন করবেন না:
কখনো এমন কিছু বলবেন না যাতে স্বামীকে অক্ষম বলা হয়। তাঁর বেতন, চাকরি বা অন্য কিছু নিয়ে খোটা দেবেন না। বা এমন বলবেন না যে- 'আমি ছাড়া তোমাকে আর কে বিয়ে করবে'? এইসব কথায় পুরুষেরা রেগে গিয়ে স্ত্রীকে 'উচিত শিক্ষা' দেয়ার জন্য পরকীয়া করে বসেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে পরকীয়া:
পৃথিবীতে মানবতাবিরোধী যতগুলো অপরাধ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি অপরাধ হচ্ছে পরকীয়া। এটার সূত্রপাতই ঘটে থাকে বিকৃত মানসিকতা থেকে। মানবিক ধর্ম হিসেবে ইসলামে পরকীয়ার কোনো স্থান নেই। কারণ, পরকীয়ার মত সমাজবিধ্বংসী অমানবিক এবং গর্হিত কোনো কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ স্বীয় স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে কোনও ধরণের সর্ম্পক কিংবা অবিবাহিত নারী পুরুষের বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মত গর্হিত কর্মকে কীভাবে ইসলাম সমর্থন করতে পারে? যদিও পাশ্চাত্যের অনেক দেশের মত আমাদের আশপাশের কোনো কোনো দেশও সভ্যতার ছদ্মাবরণে এসবের অপচর্চায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে। যেমন- সমকামিতার পর সম্প্রতি এ নিকৃষ্টতর কাজটিরও বৈধতা দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
পরকীয়া সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে:
পরকীয়া নামের এ বিকৃত কর্মের অসারতা বিবেককেও রীতিমত ধিক্কার দেয়। মানসিকভাবে সুস্থ, স্বাভাবিক এবং রুচিশীল কোনো মানুষ এই নোংড়া কাজের কথা ভাবতে পারে না। নিজ স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করবে, সুস্থ বিবেকবান কোনো মানুষের পক্ষে এটা মেনে নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ কর্মের কারণে সমাজ যেমন শৃঙ্খলতা হারায়, তেমনি পারিবারিক বন্ধনেও ধরে ফাটল। পর্যুদুস্ত হয়ে পড়ে সামাজিক সকল রীতিনীতি। সমাজে ছড়িয়ে পড়ে হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ আর কলহ বিবাদের মহামারি।
প্রতিকারের উপায় কি?
আমাদের সমাজে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে পরকীয়া। পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ে পরকীয়ার খবর। পরকীয়ার ফাঁদে আটকা পড়ে আত্মহনন করছেন অগণিত নারী-পুরুষ; বলি হচ্ছেন নিরপরাধ সন্তান, স্বামী অথবা স্ত্রী। পরকীয়ার পথে বাধা হওয়ায় সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করছে মমতাময়ী মা। স্নেহময়ী মাকে রাক্ষসীতে পরিণত করছে এ পরকীয়া। আশংকাজনকভাবে বাড়ছে পারিবারিক কলহ। প্রতিদিনই স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্ত্রীর হাতে স্বামী, সন্তানের হাতে পিতা-মাতা এবং পিতা-মাতার হাতে সন্তানের প্রাণ হরণের ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি, ভেঙে যাচ্ছে সংসার। ক্রমেই যেন মহামারী আকার ধারণ করেছে পরকীয়া। এর প্রতিকারের উপায় কি?
মেনে চলতে হবে ধর্মীয় অনুশাসন; নারীদের কন্ঠস্বরও সতরের আওতাভুক্ত:
এ কাজের বিষময় কুফল মানবাজাতি কয়েক যুগ ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে আসছে। ইসলাম হলো নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। নারীদের কথার আওয়াজকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত করে অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে ইসলাম ধর্মে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহজাবের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।
শুধু নারীগনই নন, ধর্মীয় বিধান নারী পুরুষ সবার জন্য:
শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপাত্রে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে হারাম করে সবটুকু সৌন্দর্য স্বামীর জন্য নিবেদনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, স্বামী তার স্ত্রীর সৌন্দর্যে মোহিত হলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে মোহিত করার পথ অবারিত করলে তা কেবল বিপদই ডেকে আনবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে নবী! আপনি মুমিন পুরুষদের বলে দেন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে। এটিই তাদের জন্য সর্বৎকৃষ্ট পবিত্র পদ্ধতি। তারা যা কিছু করে আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন। আর হে নবী! আপনি মুমিন নারীদের বলে দেন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে। আর তাদের সাজসজ্জা যেন প্রকাশ না করে যা নিজ থেকেই প্রকাশ হয়ে যায়। আর তারা যেন ওড়না দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে... নিজেদের যে সৌন্দর্য লুকিয়ে রেখেছে তা লোকদের সামনে প্রকাশের উদ্দেশে তারা যেন সজোরে পদক্ষেপ না ফেলে। হে মুমিনরা! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। [সূরা নূর, ৩০-৩১।]
স্মার্ট ফোন ব্যবহারে চাই সতর্কতা:
বর্তমানে অধিকাংশ পরকীয়ার সূত্রপাত ঘটে ফোনালাপ কিংবা অনলাইন চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে। সুস্থ, সুন্দর ও শান্তিময় সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ইসলাম এ ব্যাপারে দিয়েছে চমৎকার নির্দেশনা। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে নবী পত্নীরা! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পর পুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বল না, যাতে মনে রোগ আছে এমন কোনো ব্যক্তি তোমাদের প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে; বরং তোমরা পরিষ্কার সোজা ও স্বাভাবিকভাবে কথা বল। [সূরা আহজাব, ৩২।] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরে কেরামরা বলেছেন, যদিও এখানে নবী [সা.] এর পবিত্র স্ত্রীদের সম্বোধন করা হয়েছে; কিন্তু সব মুসলিম পরিবারই এ খোদায়ী ফরমানের অন্তর্ভুক্ত। নবীর পবিত্র স্ত্রীদের সম্বোধন করার কারণ হল- যখন রাসূল [সা.] এর ঘর থেকেই এ পবিত্র জীবন ধারার সূচনা হবে তখন অন্যান্য সব মুসলিম ঘরের মহিলারা নিজ থেকেই এর অনুসরণ করবে। [ইবনে কাসির, তাফসিরে কাবীর]
পর্দা প্রথা মেনে চলতে হবে:
আমাদের এ উপমহাদেশে অধিকাংশ পরকীয়ার পেছনেই জড়িত দেবর-ভাবীর সম্পর্ক। ইসলাম দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার ব্যাপারেও লাগাম টেনে ধরেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসূল্লাহ [সা.] বলেছেন, সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না। এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজী [সা.] বললেন, দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য। [বুখারি, মুসলিম]। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি [রহ.] বুখারি শরিফের বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফতহুল বারিতে লিখেছেন, এখানে মৃত্যুর সমতুল্য অর্থ দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। [ফাতহুল বারী]
পরকীয়ার ভয়াবহতা থেকে দেশ, জাতি ও বিশ্বকে মুক্ত করতে হলে আল কোরআনের বাতলে দেয়া পথের বিকল্প নেই। সরকারিভাবে পার্ক, ফাইভ স্টার হোটেল, নাইট ক্লাব কিংবা বিনোদন কেন্দ্রগুলোর লাগাম টেনে ধরতে হবে। সর্বত্র শালীন পোশাক পরিধানে আইন চালু করার পাশাপাশি বিদেশী চ্যানেল ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে।
পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)
ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা নুর, ২)
হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)
হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারিঃ ৭৬৫৮)
হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’
এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম, ২৪৪৫)
হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো হারাম।’ আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ। এসবের শাস্তি হিসেবে রজম ও দোররার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। যাতে কোনো নারী ও পুরুষ যেন এধরনের ভয়াবহ কর্মে লিপ্ত না হয়।
পরকীয়ায় লিপ্ত নারীদের সুপথে ফেরানোর জন্য কিছু আমল:
আপনার স্বজন কোনো নারী যদি কোনো কারণে বিপথে চলে গিয়ে থাকেন, পরকীয়ার মত অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে থাকেন, তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। আর-
প্রথমত: নিজে দ্বীনের উপর অটল থাকুন। বিপদগামী সেই বোন কিংবা মায়ের জন্য দুআ করুন। সেই সাথে তাকে বুঝানোর কাজটিও অব্যাহত রাখুন। ইনশাআল্লাহ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত: চেষ্টা করুন দাওয়াত ও তাবলীগের মাস্তুরাত জামাতের সাথে তাকে কোনোভাবে জুড়ে দিতে। তালীম ও দাওয়াতের মেহনতে আশা করি তার ভেতরে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে।
হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ, ইমাম গাজালী রহঃ, মদিনা পাবলিকেশন্স প্রকাশিত অনেকগুলো কিতাব এবং হযরত হাকীম আখতার সাহেব রহঃ এর লিখিত বিভিন্ন বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এসব কিতাব কিনে পড়তে দিতে পারেন। বিশেষ করে ফাযায়েলে আমাল এবং ফাযায়েলে সাদাকাতের দ্বিতীয় খণ্ডটি পড়তে দিন। সেই সাথে ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ এর সীরাতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বইটি যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বাংলা হয়েছে। এটিও পড়তে দিন। বইগুলো পড়লে জীবনে পরিবর্তন আশা করা যায়। এছাড়া ধর্মীয় বিষয়ে নির্ভরযোগ্য লেখকদের অন্যান্য কিতাবাদি যতবেশি পাঠ করার সুযোগ হবে, আল্লাহ তাঅা'লার কথা, পরকালের অন্তহীন জীবনের কথা ততবেশি স্মরণ হবে। এটা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম মাধ্যম।
বিপদগামী কোনো মা বোন দ্বীনের উপর আমল না করার করণে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। তাদের হক আদায়ে যত্নবান হতে হবে। হিকমতের সাথে তাদের বুঝানোর কাজ চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, হেদায়াত সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআ'লার হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছে তাকেই তা দান করেন।
পরিশেষে মহান প্রতিপালকের নিকট বিনীত প্রার্থনা রাখতে চাই, তিনি যেন পরকীয়ার মত নিকৃষ্টতম সামাজিক ব্যধি থেকে আমাদের বেঁচে থাকার তাওফিক দান করেন। আমাদের সমাজটাকে ঘৃণ্য এই পাপাচার থেকে মুক্ত রাখেন। সকল পরিবারে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হয়, সেই লক্ষ্যে তিনি আমাদের দান করুন উন্নত এবং উত্তম চারিত্রিক সৌন্দর্য্য।
তথ্যসূত্র:
১. Click This Link
২. https://www.jagonews24.com/opinion/news/188491
৩. Click This Link
৪. অন্যান্য।
ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১০:১৬