শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকার বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
উল্কি বা ট্যাটু আসলে কী?
উল্কি হলো ‘শরীরের চামড়ায় সুঁই বা এ জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রং দিয়ে নকশা করা। এ ধরনের ট্যাটু বা উল্কি সাধারণত স্থায়ী হয়ে থাকে এবং সহজে ওঠানো যায় না।’
এগুলোই এখন এক শ্রেণির লোকের ফ্যাশনঃ
শরীরে উল্কি বা ট্যাটু আঁকা পশ্চিমাবিশ্বে সাধারণ ফ্যাশন। ইদানীং আমাদের দেশেও কিছু মানুষের কাছে এটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন চিত্রশিল্পী, গায়ক ও খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানা রঙ ও বর্ণের বিভিন্ন ধরনের উল্কি কিংবা ট্যাটু দেখা যায়।
জার্মানিতে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের পাঁচজনের মধ্যে একজনের গায়ে ট্যাটু আঁকা রয়েছে। আর এখন এসে দেখা যাচ্ছে, নতুন করে শুরু হয়েছে আরবি ভাষায় বিভিন্ন প্রকারের উল্কি-ট্যাটু আঁকার প্রবণতা। কিছু লোক আবার কালিমাসহ কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন বাণী ব্যবহার করে ট্যাটু করছেন।
কিভাবে আঁকা হয় উল্কি বা ট্যাটু?
স্বাভাবিকভাবে এই উল্কি-ট্যাটু আঁকা হয় বিদ্যুৎচালিত একটি যন্ত্রের সাহায্যে। যেটা দেখতে অনেকটা ডেনটিস্টের ড্রিল মেশিনের মতো। মেশিনের মাথায় রয়েছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম সুঁই। সুঁইয়ের মাথায় রং লাগানো থাকে। প্রতিবার সুঁইকে যখন চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করানো হয়, সেই সঙ্গে রংও ভেতরে প্রবেশ করে। রঙের পরিমাণ এক মিলিলিটারেরও কম হয়। চামড়ার যে স্তরে রংটি লাগানো হয়, তার নাম ডের্মিস।
ভয়ংকর রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি করা হয় উল্কির রং
এফা মারিয়া কাটস নামে একজন গবেষক একটি গবেষণাগারে কাজ করছেন। শরীরে অঙ্কিত উল্কির জন্য তৈরীকৃত রঙের রাসায়নিক পদার্থ কতটা ক্ষতিকারক, তা নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী থেকে শুরু করে উল্কি আঁকার কালি নিয়ে গবেষণা করি। ২০১০ সালে আমরা বেশ কিছু ট্যাটু-পার্লার থেকে প্রায় ৩৮ ধরনের কালি আমরা সংগ্রহ করি।
অনেক রং বা কালি এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়, যা কোনো প্রাণীর জন্য ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এর মধ্যে একটি পদার্থের নাম এজো ডাই। রংটি এমনিতে কোনো ক্ষতি করে না, কিন্তু অন্য কোনো কিছুর সংস্পর্শে এলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। এ ছাড়া আরও অনেক রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা ব্যবহারে কোনো নিষেধ নেই। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তা মানবদেহে ব্যবহার করা সংগত নয়। এই পদার্থগুলো মানবদেহে ঢকে কী কী ক্ষতি করতে পারে, তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।’
বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনায় দেখা গেছে, বর্তমানের মতো আগেকার যুগে নারীরাই বেশি উল্কি অঙ্কন করাত। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা যায়, বিশ্বের ৫৮ শতাংশ নারীর শরীরে অন্তত একটি ট্যাটু রয়েছে। সে তুলনায় পুরুষের রয়েছে ৪১ শতাংশ। ট্যাটুর পথ ধরে অশ্লীলতা চর্চার খবরও দেশ-বিদেশে প্রকাশ পেয়েছে। এসব কারণে তুরস্ক, ইরান ও আরব আমিরাতে উল্কি আঁকানো নিষিদ্ধ।
উল্কি বা ট্যাটুর অধিকাংশ উপাদানই বিপজ্জনকঃ
২০১০ সালে জার্মানির ফ্রাইবুর্গ ও কার্ল্সরুয়ের স্বাস্থ্যবিষয়ক তদারকি দপ্তরগুলি উল্কির রঙে ক্ষতিকর পদার্থের ব্যাপারে সতর্ক করেছিল৷ ট্যাটুতে ব্যবহৃত ৩৮ উপাদানের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরই অনুমোদন নেই৷অর্ধেক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে৷এর মধ্যে রয়েছে অ্যারোমাটিক অ্যামিন, নাইট্রোসেমাইন ও ফেনোল নামের রাসায়নিক পদার্থ৷এইগুলিকে ক্যানসার উদ্দীপক বলেও মনে করা হয়৷ বির্গিট বিন্সলে জানান, ‘‘কিছু কিছু পদার্থ থেকে তৈরি রঙ এমন সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যার নাম থেকেই বোঝা যায় এটি কী৷যেমন ‘ফেরারি রোট'৷গাড়ি রঙ করার জন্য ব্যবহার করা হয় এই রঙ৷যার সন্ধান পাওয়া যায় ট্যাটুর রঙের মধ্যেও৷''
পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এই রঙের উপাদান মানবদেহের লসিকা গ্রন্থির মধ্যে জমা হতে পারে৷বিন্সলে বলেন, ‘‘লসিকা গ্রন্থির প্রক্রিয়াটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷বিশেষ করে শরীরের বিশুদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে৷এই রাসায়নিক পদার্থ শরীরে থাকাটা বেশ বিপজ্জনক৷''
উল্কি দূর করতেও ঝুঁকিঃ
অনেকে উল্কি আবার দূর করাতেও চান৷এজন্য নিতে হয় লেসার রশ্মির সাহায্য৷এক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ত্বকে আঁকা রঙের উপাদান ধ্বংস হওয়ার পর শরীরে কী প্রতিক্রিয়া ঘটে, তা কেউ জানেনা৷তবে বিন্সলের মতে, ট্যাটুর রঙের ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রমাণ এখনও মেলেনি৷
অনেক দেশের বিশেষজ্ঞরা এখন চিন্তা ভাবনা করছেন, সংশ্লিষ্টদের কীভাবে এ বিষয়ে সচেতন করা যায়৷উল্কি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামানো হয়নি এতদিন৷বড় কোনো কোম্পানি থেকে নয় বরং ছোট ছোট সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কেনা হয় উল্কির সামগ্রী৷নিয়ন্ত্রণের বাধ্যবাধকতাও তাদের নেই৷ইদানীং বিশেষ করে চীন থেকেই আসছে উল্কি আঁকার সরঞ্জাম৷
উল্কি বা ট্যাটু নিয়ে জার্মানিতে নতুন আইনঃ
জার্মানিতে ২০০৯ সাল থেকে ট্যাটু সংক্রান্ত একটি জাতীয় বিধিবিধান চালু হয়৷সম্প্রতি জার্মান সংসদের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাট'এ বিষয়টির ওপর একটা দিক নির্দেশনা দেয়া হয়৷এতে বলা হয়েছে, উৎদনকারীদের প্রমাণ করতে হবে যে, ট্যাটুতে ব্যবহার করা পদার্থ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়৷এছাড়া এমন সব পদার্থের একটা তালিকা তৈরি করতে হবে, যেগুলি ক্ষতিকারক নয়৷
উল্কি বা ট্যাটু শরীরে আজীবন থেকে যায় কেন?
একটি প্রশ্ন অনেকেরই। উল্কি বা ট্যাটু কীভাবে এমন স্থায়ী হয়? একবার শরীরে আঁকালে সারা জীবনে আর মুছে যায় না। এর কারণ কী?
চলুন, জানার চেষ্টা করি এই প্রশ্নের উত্তর। আমরা সবাই জানি, আমাদের শরীরের ত্বক কয়েকদিন পর পর পরিবর্তিত হয়। ত্বকের পরিবর্তনের মধ্যেও কীভাবে এই ট্যাটু স্থায়িত্ব পায়?
আমাদের ত্বক আসলে দুটি স্তর নিয়ে গঠিত। বাইরের স্তরের নাম ‘এপিডার্মিস’। আর ভেতরের স্তরের নাম ‘ডার্মিস’। সাধারণত ত্বক পরিবর্তিত হওয়া বলতে আমরা এপিডার্মিসের পরিবর্তনকে বুঝি। এপিডার্মিসের স্তরের সর্ববাহিরে থাকে মরা কোষের স্তর, যা স্ট্রাটাম কর্নিয়াম নামে পরিচিত। এপিডার্মিস স্তরে ক্যারাটিনোসাইড কোষের সৃষ্টির ফলে স্ট্রাটাম কর্নিয়ামের স্তরটি আস্তে আস্তে ওপরের দিকে ওঠে এবং একসময় তা মরা কোষ হিসেবে উঠে যায়। এই পরিবর্তনটি সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহ পর পর নিয়মিতভাবে হয়।
কিন্তু ভিতরের স্তর অর্থাৎ ডার্মিস স্তরটির কোনো পরিবর্তন হয় না, যদি না কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। ট্যাটু আঁকা হয় সাধারণত আমাদের ত্বকের এই ভেতরের স্তরটিতে। ট্যাটু তৈরির মেশিনের সুঁইটি সেকেন্ডে ৫০ থেকে ১৫০ বার ওঠানামা করে আমাদের ত্বকের ডার্মিস স্তরটিতে কালি ফেলে। যেহেতু ডার্মিস স্তরটির কোনো পরিবর্তন হয় না। তাই এই ট্যাটুটি আমাদের দেহে স্থায়ী হয়ে যায়। এক থেকে দুই মাস পরে যখন সুইয়ের আঘাত শুকিয়ে যায় তখন কালি কিছুটা হালকা হয়ে যায়। কারণ, তখন মরা কোষের একটি স্তর উঠে যায়। তবে অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই উল্কি বা ট্যাটু অধিকাংশ লোকের ক্ষেত্রেই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থেকে যায়।
উল্কি আঁকানোর অপকারিতাঃ
শরীরে উল্কি আঁকানোর বৈজ্ঞানিক কোনো উপকারিতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। উল্টো উল্কি ব্যবহারে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। হেপাটাইটিস, টিউবারকিউলোসিস ও টিটেনাস ইত্যাদি রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উল্কির রংও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কারণ উল্কি আঁকার রাসায়নিক পদার্থ চামড়ার ভেতরের স্তরে প্রবেশ করে। আর যেহেতু এই উল্কি সারা জীবন শরীরে থাকবে, তাই ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থও সারা জীবন দেহাভ্যন্তরে থেকে যাবে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ এমনকি ক্যানসার হওয়াও অসম্ভব কিছু না।
উল্কি আঁকার ব্যাপারে ইসলামী শরিয়ার বক্তব্যঃ
শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা অধিকাংশ ফিকাহবিদদের মতে হারাম। (হাশিয়াতু ইবনে আবিদিন, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা : ২৩৯) কারণ মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কৃত্রিমভাবে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা ইসলামে নিষিদ্ধ ও গর্হিত। পাশাপাশি আলাদা চুল লাগানো, ভ্রু কেটে ফেলা ইত্যাদি ইসলামে নিষিদ্ধ।
কেননা এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট অঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়; যা তিনি অপছন্দ করেন। কিয়ামতের দিন এই লোকদের তিনি তার সামনে তার সৃষ্টিতে পরিবর্তন করতে বলবেন।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামো দিয়ে।’ (সুরা তিন, আয়াত : ০৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللّهِ
‘আর তারা আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি করবেই।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৯)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, إِن يَدْعُونَ مِن دُونِهِ إِلاَّ إِنَاثًا وَإِن يَدْعُونَ إِلاَّ شَيْطَانًا مَّرِيدًا لَّعَنَهُ اللّهُ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا وَلأُضِلَّنَّهُمْ وَلأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الأَنْعَامِ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللّهِ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا
‘তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে। যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বলল আমি অবশ্যই আপনার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে অবলম্বন করবো। তাদের পথভ্রষ্ট করব, তাদের আশ্বাস দেব; তাদের পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদের আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৭-১১৯)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
‘যখন আল্লাহ ও তার রাসুল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই। আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্যতা করে সে সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতায় লিপ্ত হয়।’ (সুরা-আহজাব, আয়াত : ৩৬)
উল্কি বা ট্যাটু আঁকার ব্যাপারে হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে-
لَعَنَ رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ
'যেসব মহিলা নকল চুল ব্যবহার করে এবং যারা অন্য মহিলাকে নকল চুল এনে দেয়, যেসব মহিলা উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।' (বুখারী : ৫৫৯৮, মুসলিম : ৫৬৯৩)
বুখারী শরীফে বর্ণিত আরেক হাদিসে বলা হয়েছে-
لعن الله الواشمات والمستوشمات والمتنمصات والمتفلجات للحسن المغيرات خلق الله
আবদুল্লা ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যেসব নারী সৌন্দর্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে, যেসব মহিলা ভ্রু উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহতায়ালা তাদের অভিসম্পাত করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬০৪)
সুনানে আবু দাউদ বর্ণিত আরেক হাদিসে এসেছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}
মুসলিম শরীফের এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِى الْحَسَنِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ إِنِّى رَجُلٌ أُصَوِّرُ هَذِهِ الصُّوَرَ فَأَفْتِنِى فِيهَا. فَقَالَ لَهُ ادْنُ مِنِّى. فَدَنَا مِنْهُ ثُمَّ قَالَ ادْنُ مِنِّى. فَدَنَا حَتَّى وَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ قَالَ أُنَبِّئُكَ بِمَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ ». وَقَالَ إِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ نَفْسَ لَهُ.
হযরত সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে এসে বলল, আমি চিত্রকর। এবং চিত্র অংকন করি। এতএব এ সম্পর্কে আমাকে শরীয়তের বিধান বলে দিন। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তাঁর কাছে গেল। তিনি পুনরায় বললেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তার এত কাছে গেল যে, ইবনে আব্বাস রা তাঁর হাত ঐ ব্যক্তির মাথার উপর রাখলেন, এবং বললেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনাচ্ছি, যা আমি রাসূল সাঃ এর কাছে শুনেছি। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, “সকল চিত্রকরই দোযখে যাবে। আর প্রত্যেক চিত্রের পরিবর্তে জীবিত এক ব্যক্তিকে বানানো হবে, যা দোযখে তাকে শাস্তি দেবে”। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, যদি তোমাকে এরূপ করতেই হয়, তাহলে গাছ-পালা বা এমন বস্তুর ছবি তৈরী কর যা প্রাণী নয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৬২}
মোদ্দাকথা, শখের বসেই হোক কিংবা ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে হোক আল্লাহর সৃষ্টিতে হস্তক্ষেপ ও পরিবর্তন করে উল্কি-ট্যাটু ইত্যাদি আঁকা হারাম। তবে যদি চিকিৎসার জন্য ট্যাটু আঁকার বাস্তবিক প্রয়োজন পড়লে তা তখন বৈধ হবে।
উল্কি বা ট্যাটু শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ তা নয়; বরং বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকের পাশাপাশি বেশ কিছু শারীরিক অসুবিধা ও সমস্যাও এতে তৈরি হয়। যেমন-
উল্কির কারণে অজু-গোসলে অসুবিধাঃ
উল্কির কারণে চামড়ায় পানি পৌঁছাতে যদি বাধার সৃষ্টি হয়, তাহলে অজু আদায় হবে না। আবার ফরজ গোসলও সম্পন্ন হবে না। ফলে সব সময় অপবিত্র শরীর বয়ে বেড়াতে হবে। তাই শরীরে উল্কি না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ছবিঃ সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৩৩