somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

প্রাত্যহিক জীবনে إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও বিধান এবং এটি না বলার পরিণাম, সাথে গরু কিনতে যাওয়া ফজলু মিয়ার 'ইনশা-আল্লাহ' না বলার বিখ্যাত সেই গল্পটিঃ

১১ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রাত্যহিক জীবনে إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও বিধান এবং এটি না বলার পরিণাম, সাথে গরু কিনতে যাওয়া ফজলু মিয়ার 'ইনশা-আল্লাহ' না বলার বিখ্যাত সেই গল্পটিঃ

প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহ তাআ'লার জন্যঃ
সকল প্রশংসা সেই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমাদেরকে, অর্থাৎ মানবজাতিকে আশরাফুল-মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করে অন্যান্য সকল সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছেন। বিবেক-বুদ্ধি, ইচ্ছা শক্তি এবং পথ চলার জন্য তিনি আমাদের দিয়েছেন স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা। কিন্তু আল্লাহ তাআ'লার ইচ্ছার বাইরে আমরা কোনো কাজ করতে পারি না। আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ করেন,
وَمَا تَشَاؤُونَ إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

অর্থ: ‘তোমরা ইচ্ছা পোষণ করতে পার না, যদি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছা না করেন ‘ (সূরা: তাকভীর, আয়াত: ২৯)।

যেহেতু আল্লাহ তাআ'লার ইচ্ছে ব্যতিত বান্দার পক্ষে কার্য সম্পাদন সম্ভব নয়, তাই আমাদের উচিত প্রতিটি প্রতিটি কাজ করার সংকল্প গ্রহণের পূর্বে إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলে নেয়া।

إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ এর অর্থ:
তিনটি শব্দ দ্বারা গঠিত এই বাক্যটির প্রথম শব্দটি শর্তবাচক إن ‘ইন’। إن ‘ইন’ শব্দের অর্থ: যদি, যদ্যপি, شاء ‘শাআ’ শব্দটি এই বাক্যে ক্রিয়া বা Verb হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ: ইচ্ছা করেন, চেয়ে থাকেন, (সম্মত, সন্তুষ্ট বা রাজী থাকা বুঝাতে) এবং বাক্যটির শেষ শব্দ الله ‘আল্লাহ’ হচ্ছেন এই বাক্যের কর্তা বা Subject. মহান স্বত্তার নাম। তাহলে পুরো বাক্যটির অর্থ দাড়ায়: যদি আল্লাহ চান বা ইচ্ছে করেন। আরবি ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী এটি একটি শর্তবাচক বাক্য। যার পরে বক্তার ইচ্ছাকৃত কাজটি উহ্য আছে। যেমন: কোনো ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছা করে বলল, ‘ইনশা- আল্লাহ’ অর্থাৎ যদি আল্লাহ চান তবে আমি হজ করবো। পবিত্র কুরআনে এসেছে, وَإِنَّا إِن شَاء اللَّهُ لَمُهْتَدُونَ

অর্থ: ‘ইনশা- আল্লাহ (আল্লাহ চাহে তো) আমরা অবশ্যই সঠিক পথের দিশা পাব।’ (সূরা: বাকারাহ, আয়াত: ৭০)।

যেভাবে লেখা উচিত إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বাক্যটি:
আগেই বলেছি, إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বাক্যটিতে তিনটি শব্দ রয়েছে। ইংরেজিতে এর অর্থ হচ্ছে- If Allah wills। বাক্যটি আরবি ভাষার হওয়ায় একমাত্র আরবিতেই এটি যথাযথভাবে লেখা সম্ভব। অন্য কোনো ভাষায় যেটা কঠিন বৈকি। তবে যেহেতু আমরা বাংলাভাষাভাষীসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠী এই বাক্যটি আরবি ভাষা ছাড়াও নিজ নিজ ভাষায় প্রকাশ করেন, লিখে থাকেন, তাই জেনে নেয়া প্রয়োজন, অন্য ভাষায় কিভাবে লিখলে বাক্যটি মোটামুটি সহিহ হতে পারে। অনেকে ইংরেজিতে বাক্যটি InShaaAllah তিনটি শব্দ মিলিতভাবে একইসাথে লিখে থাকেন, এভাবে লেখা ঠিক নয়। শব্দগুলো আলাদা করে In Shaa Allah অথবা হাইফেন দিয়ে দিয়ে এভাবে In-Shaa-Allah লেখা যেতে পারে। তবে, শুদ্ধতার ক্ষেত্রে In Shaa Allah হল Closest to the Arabic. আর In Shaa’ Allah হল আসল উচ্চারন।

আর বাংলায় লিখলে 'শ' এর পরে একটি হাইফেন অথবা এপস্ট্রপি কমা দিলে ভাল হয়। কারণ, এখানে চার আলিফ পরিমান লম্বা টান দেয়ার একটি বিষয় রয়েছে। 'শা' এর সাথে এই হাইফেনটি মূলতঃ অক্ষরটিকে দীর্ঘায়িত করে উচ্চারণ নির্দেশ করে। তাই বাংলায় বাক্যটি ‘ইনশা- আল্লাহ’ বা ‘ইনশা' আল্লাহ’ লেখা যেতে পারে।

আরেকটা ব্যাপার, আমাদের দেশে এটা সমস্যা হয় না। তবে বাহিরের দেশে, যেখানে ইংরেজি মাতৃভাষা বা অফিসিয়াল ভাষা সেখানে কোন মুসলিম যখন In Shaa Allah লিখেন তখন সেটা অনেক ক্ষেত্রে confusing হয়ে দাঁড়ায় অমুসলিমদের জন্য, তারা In কে preposition ধরে নিয়ে পড়ে যায়..। যার ফলে মাঝে মধ্যে সমস্যা হয়। আর সেক্ষেত্রেই অর্থগত সমস্যাটা বড় হয়ে দাঁড়ায়। সম্ভবতঃ এজন্যই একটা সময়ে মুসলিমরা মিলিতভাবে Inshallah লিখা শুরু করেন। যদিও এক্ষেত্রেও অর্থগত কোন সমস্যা নেই।

আসল বিষয় হচ্ছে, যাকে বলছেন সে বুঝতে পারছে কি না, আর আপনি যা মনে মনে বলছেন বা মিন করছেন সেটা ঠিক আছে কি না সেটাই হল বিবেচ্য বিষয়। কেউ কেউ In Sha Allah এর শর্ট ফর্ম হিসেবে ISA বা i’A ব্যবহার করে থাকেন। এইভাবে In Sha Allah কে শর্টকাট করে ব্যবহার করার যুক্তি নেই। এগুলো অতি আধুনিকতা। আর অতি আধুনিকতা/ অত্যাধুনিকতা বা আল্ট্রা মডার্ণ সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। তাই ইংরেজিতে লিখতে চাইলে তিনটি শব্দ আলাদা করে In Shaa Allah লেখাই উত্তম।

‘ইনশা- আল্লাহ’ এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
ইসলামী শরীয়তে ভবিষ্যতে কোনো কাজ বাস্তবায়নের দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করার সময় ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলার গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ

অর্থ: (হে নবী) কখনোই আপনি কোনো বিষয়ে এ কথা বলবেন না যে, আমি এটা আগামীকাল করবো, যতক্ষণ না ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলেন।’(সূরা: কাহফ, আয়াত: ২৩,২৪)।

‘ইনশা- আল্লাহ’ বলার স্থান, সময় ও বিধান:
বাক্যটি শর্তবোধক হওয়ায় তা ভবিষ্যত কালের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সূরা কাহফের ২৩ নম্বর আয়াতে ব্যবহৃত শব্দের দ্বারা ভবিষ্যৎ বুঝানো হয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যৎ কালে কোনো কাজ সম্পাদনের দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করার সময় ‘ইনশা আল্লাহ’ বলতে হবে। ইনশাআ-ল্লাহ বলা সুন্নাত।

إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলা যাবে না যেসব স্থানেঃ
মনে রাখতে হবে, বৈধ কাজে إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলা ফজিলতপূর্ণ হলেও যে কোনো অবৈধ কাজ করার আশা ব্যক্ত করে সেই প্রত্যাশা পূরণের নিমিত্তে তার সাথে إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বাক্যটিকে সম্পর্কযুক্ত করা নিতান্ত গর্হিত কাজ। যেমন চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার ইচ্ছা পোষন করে إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলা সম্পূর্ণ হারাম এবং গোনাহের কাজ।

একইসাথে স্মরণ রাখা প্রয়োজন, কোনো কোনো বৈধ কাজেও إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বাক্যটি যোগ করা যাবে না। যেমন- এমন ভাষায় দোয়া করা যে, 'হে আল্লাহ, আপনি চাইলে আমাকে অমুক জিনিসটি দান করুন। আপনার মর্জি হলে আমাকে আরোগ্য দান করুন। আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন' ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবে বলা বারণ এই কারণে যে, এর মধ্যে এক ধরনের অবজ্ঞা প্রতিফলিত হয় এবং এ্ই ধরণের দোয়ায় নিজের প্রার্থনার দুর্বলতার দিকটি প্রতিভাত হওয়ার সাথে সাথে আন্তরিকতার অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'তোমাদের কেউ যেন দোয়ায় এভাবে না বলে যে, হে আল্লাহ, আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি চাইলে আমার প্রতি দয়া করুন। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে দোয়া করো; কারণ, আল্লাহ যা চান তা-ই করেন। তাঁকে বাধ্য করার মতো কেউ নেই।' (বুখারি, মুসলিম)

إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলার গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
মূলতঃ এই বাক্যটি বলার মাধ্যমে বান্দা তার সব কর্মকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পণ ও সোপর্দ করে নিজেকে তাঁর সমীপে দুর্বল হিসেবে উপস্থাপন করে। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাকে এভাবেই বলার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী, وَأُفَوِّضُ أَمْرِي إِلَى اللَّهِ অর্থ: ‘আমি আমার বিষয় আল্লাহর নিকট অর্পণ করছি।’ (সূরা: মু‘মিন,আয়াত: ৪৪)।

إن شاء الله ‘ইনশা- আল্লাহ’ না বলার পরিণাম:
বান্দার ইচ্ছার বাস্তবায়ন যেহেতু আল্লাহর চাওয়া এবং তাওফিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই ‘ইনশা আল্লাহ’ বলার মাধ্যমে সেই তাওফিক কামনা করা বাঞ্ছণীয়। অন্যথায় তার ইচ্ছায় বাস্তবায়ন অসম্ভব। যার বহু দৃষ্টান্ত কোরআন, সুন্নাহ এবং বাস্তব জীবনে পরিলক্ষিত হয়। এরূপ কিছু ঘটনা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো-

এক. মক্কার মুশরিকরা রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসহাবে কাহফ, রূহ এবং বাদশা যুলকারনাঈন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ‘ইনশা- আল্লাহ’ না বলেই তাদের আগামীকাল জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। নবী রাসূলদের সামান্য সামান্য বিষয়ও আল্লাহ তাআ'লার নিকট অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। আল্লাহ পাকের কাছে এই 'ইনশা-আল্লাহ' না বলাটা হয়তো পছন্দ হয়নি। যার প্রেক্ষিতে তৎপরবর্তী ১৫ দিন যাবৎ ওহি আসা ব'ন্ধ থাকে এবং এর ফলে তিনি পরের দিন জবাব দিতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে প্রশ্নের জবাব দিতে ওহি নাজিল হয়। সেই সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত'র্ক করে দিয়ে বলেন, وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ

অর্থ: (হে নবী) কখনোই আপনি কোনো বিষয়ে এ কথা বলবেন না যে, আমি এটা আগামীকাল করবো, যতক্ষণ না ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলেন।’(সূরা: কাহফ, আয়াত: ২৩,২৪)।

দুই. সূরা ক্বলামে বর্ণিত বাগানের মালিকদের ঘটনা। তারা মিসিকিনদের ফল না দেয়ার উদ্দেশ্যে বাগানের ফল প্রাতঃকালে আহরণ করবে বলে রাতে কসম করে। কিন্তু তারা ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলতে ভুলে যায়। যার কারণে আল্লাহ তায়ালা সেই রাতেই তাদের বাগান ভস্মিভূত করে দেন এবং সকালে তারা তা ছাই রূপে দেখতে পায়। (সূরা: ক্বলাম, আয়াত ১৭-৩৩)।

তিন. একদা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এ মনোভাব ব্যক্ত করলেন যে, রাতে আমি আমার সব স্ত্রী (৯০ কিংবা ১০০ জন) এর সঙ্গে মিলিত হবো। যেন প্রত্যেক স্ত্রীর গর্ভ থেকে একটি করে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে এবং তারা আল্লাহর পথে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে জিহাদ করে। কিন্তু এসময় তিনি ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলেন। নবীর এ ত্রুটি আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করলেন না।

ফলে মাত্র একজন স্ত্রীর গর্ভ থেকে একটি অপূর্ণাঙ্গ ও মৃত শিশু ভূমিষ্ঠ হলো। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, যদি সুলাইমান (আ.) ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলতেন, তাহলে তিনি যা চেয়েছিলেন তাই হত। (মুক্তাফাকুন আলাই, বুখারী হা: ৬৬৩৭)।

চার. ইয়াজুজ মাজুজকে অবরুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে পুরাকালের শক্তিমান বাদশা যুলকারণাঈন কর্তৃক নির্মিত প্রাচীর তারা প্রতিদিন খনন করতে থাকেন। যখন তারা এটাকে ভেদ করার কাছাকাছি এসে যায় তখন তাদের সর্দার বলে, ফিরে চল, কাল সকালে এটাকে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলব। একথা বলে তারা চলে যায়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা রাতে প্রাচীরকে পূর্বের ন্যায় পূর্ণা'ঙ্গ করে দেন। তারা প্রতিদিন এভাবে এই প্রাচীর খুঁড়তে থাকে। অবশেষে কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে আল্লাহ তাআ'লা যখন তাদের মুক্তি দিতে চাইবেন, তখন তাদের সর্দার বলবে, আজ চল ‘ইনশা আল্লাহ’ আগামীকাল আমরা এই দেয়াল ভেঙ্গে ফেলব। ‘ইনশা আল্লাহ’ বলার ফলে গতকাল দেয়ালটি তারা যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিল, ফিরে এসে ঠিক সে অবস্থায় পাবে এবং দেয়াল ভেঙ্গে জনপদে ছড়িয়ে পড়বে। (তিরমিযী-৩১৫৩, ইবনে মাজাহ-৪০৮০)।

‘ইনশা আল্লাহ’ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কতিপয় ঘটনা:
বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘ইনশা আল্লাহ’ শব্দটি পবিত্র কুরআন মাজিদে ছয় বার এবং হাদিসে বহু জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। যা ‘ইনশা- আল্লাহ’ বলার দিকে ইঙ্গিত করে।

কয়েকটি ঘ'টনা নিম্নরুপ:

এক. বনী ঈসরাইলের জনৈক যুবক চাচার অগাধ সম্পত্তির লাভের আশায় একমাত্র চাচাত বোনকে বিবাহ করে। কিন্তু চাচা সম্পদ প্রদানে রাজি না হওয়ায় গোপনে তাকে হত্যা করে নিজেই বাদী সেজে মূসা (আ.) এর নিকট মোকাদ্দামা পেশ করে। মূসা (আ.) আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ফায়সালা দেন যে, তোমরা একটি গাভী জবেহ করে এক টুকরো গোশত দ্বারা মৃতের শরীরে আঘাত কর। কওমের লোকেরা গাভীর রং, ধরন ও আকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে কয়েক দফা জিজ্ঞাসা করে সর্বশেষ বলল, وَإِنَّا إِن شَاء اللَّهُ لَمُهْتَدُونَ অর্থ: ‘ইনশা আল্লাহ’ এবার আমরা অবশ্যই সঠিক দিশা পেয়ে যাব।’(সূরা: বাকারাহ, আয়াত ৬৭-৭১)।

অতঃপর তারা নির্দে'শিত বৈশি'ষ্টের গাভী পায় এবং তা জবে'হ করে হ'ত্যাকারীকে সনা'ক্ত করতে সক্ষ'ম হয়।

দুই. আবুল আম্বিয়া এবং মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনের অন্যতম একটি পরীক্ষা ছিল স্থহস্তে পুত্র কোরবানী করা। স্বপ্নাদেশ অনুসারে তিনি যখন ১৩/ ১৪ বছরের কলিজার টুকরা পুত্র ইসমাঈলকে নিয়ে কুরবানগাহ মিনায় উপস্থিত হলেন। সেখানে পৌঁছে পিতা পুত্রকে তার স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলেন এবং পুত্রের অভিমত জানতে চাইলেন। পুত্র তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ

অর্থ: ‘হে পিতা! আপনাকে যা নির্দেশ করা হয়েছে তা কা'র্যকর করুন, ‘ইনশা আল্লাহ’ আপনি আমাকে ধৈ'র্যশীলদের অন্তর্ভূক্ত পাবেন।’ (সূরা: সাফফাত, আয়া: ১০২)।

প্রিয় পাঠক, চলুন, পেছনে ফিরে যাই একটু। 'ইনশা-আল্লাহ' বলার বিস্তারিত আলোচনা পড়তে পড়তে বোর লাগছে বোধ হয় কিছুটা। সামান্য কৌতুকমিশ্রিত গরুর হাটে গরু কিনতে যাওয়া লোকটির 'ইনশা-আল্লাহ' না বলার বিখ্যাত সেই গল্পটি দিয়ে শেষ করছি 'ইনশা-আল্লাহ' বলার আজকের আলোচনা। আসুন, সমস্বরে আরও একবার বলে নিই 'ইনশা-আল্লাহ'-

গরু কিনতে যাওয়া ফজলু মিয়ার 'ইনশা-আল্লাহ' না বলার বিখ্যাত সেই গল্পটিঃ
সে অনেক অনেক আগেকার কথা। ফজলু মিয়া নামে এক লোক ছিলেন কোনো এক গ্রামে। একদিন তিনি গরুর হাটে গমনের চিন্তা করলেন। উদ্দেশ্য, মোটাতাজা দেখে ভালো জাতের একটি গরু কিনবেন। গরু পালনের বহুদিনের শখ তার। শুধু তার কেন? তার বউয়েরও দীর্ঘদিনের দাবি, একটি গরু তাকে কিনে দিতেই হবে।

বাইরে দারুন আবহাওয়া। ঝলমলে রোদ। সাথে হালকা বাতাস। অন্যরকম একটা পরিবেশ।

বউয়ের সোহাগভরা হাতে বানানো এক খিলি পান মুখে পুরে দিয়ে হাটের দিকে রওনা হলেন ফজলু মিয়া। পকেট ভর্তি করে টাকা নিয়েছেন তিনি। তার মেজাজ মর্জিও আজ অন্যরকম, বেশ ফুরফুরে। অন্যসময় তিরিক্ষি থাকে। আজ সেরকম নয়। কেন জানি, আজ আনন্দ তার বুকে ধরে না। গায়ে হাওয়া লাগাতে লাগাতে হেলে দুলে এগিয়ে চলেছেন গরুর হাটের দিকে।

কিছু দূর যাওয়ার পরে তার সাথে সাক্ষাত হয় মক্তবের মৌলভী সাহেবের। মৌলভী সাহেব তার চলার ধরণ দেখেই থমকে গেলেন। ফজলু মিয়ার উদ্দেশ্যে মুখ ফসকে তার বেরিয়ে গেল-

'কি ব্যাপার, দুলামিয়ার মত একেবারে হেলেদুলে হাটছেন যে! কোথায় রওনা দিয়েছেন? শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছেন না কি?'

ফজলু মিয়া বললেন- 'আরে না, গরু কিনতে হাটে যাচ্ছি।'

'বেশ ভালো কথা। ভাল কাজে 'ইনশা-আল্লাহ' বলতে হয়। 'ইনশা-আল্লাহ' বলেছেন তো?' -বললেন মৌলভী সাহেব।

'এতে আবার ইনশাআল্লাহ বলার কি আছে? আমার পকেটে টাকা আছে, হাটে আছে গরু। যাবো আর কিনবো। এতে আবার ইনশা-আল্লাহ বলতে হবে কেন?' -ফজলু মিয়ার ঝটফট উত্তর।

বেচারা মৌলভী সাহেব চুপ হয়ে গেলেন।

অতঃপর হাটে গিয়ে ফজলু মিয়া একটি গরু পছন্দ করলেন। দাম-দর ঠিক করে টাকার জন্য পকেটে হাত দিলেন। পকেটে হাত ঢুকাতেই তার আক্কেল গুড়ুম! একি! তার হাত শুধু নিচের দিকে নামছেই! আশ্চর্য! হাত তো পকেটের নিচ দিয়ে একেবারে বেরিয়েই পড়লো। হায় হায়! টাকাও তো নেই্! এতক্ষনে হুঁশ হলো তার! সর্বনাশ! পকেটমার তার পকেট কেটে নিয়ে গেছে! তিনি 'ইনশা-আল্লাহ' বলে চিৎকার করে উঠলেন! বলেই চলেছেন- 'হায়রে ইনশা-আল্লাহ! একি হলো ইনশা-আল্লাহ! পকেট কাটা গেল ইনশা-আল্লাহ! আমার সর্বনাশ হয়ে গেল ইনশা-আল্লাহ!'

ছেঁড়া পকেটে হাত ঢুকিয়ে ম্লান মুখে নত মস্তকে বাড়ির দিকে ফিরছিলেন ফজলু মিয়া।

রাস্তায় সেই মৌলভী সাহেবের সাথে আবার দেখা। জিজ্ঞেস করলেন- 'কি হে ফজলু মিয়া, আপনার গরু কেনা হয়েছে?'

ফজলু মিয়া বিড়বিড় করে বললেনঃ 'কি আর বলবো...., ইনশাআল্লাহ.......'

টাটকা কথার মানুষ ফজলু মিয়ার হঠাৎ বিষন্ন বদন এবং আমতা আমতা করে কথা বলা দেখেই মৌলভী সাহেবের সন্দেহ হল। তিনিও উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞেস করলেন- 'কেন? কি হয়েছে?'

ফজলু মিয়াঃ 'হাটে গেলাম ইনশা-আল্লাহ।'

মৌলভী সাহেবঃ 'তারপর?'

ফজলু মিয়াঃ 'গরু পছন্দ করলাম ইনশাআ-ল্লাহ। দর-দাম ঠিক হলো ইনশাআ-ল্লাহ। টাকার জন্য পকেটে হাত দিয়েছি ইনশা-আল্লাহ। কিন্তু পকেটমার পকেট কেটে টাকা নিয়ে গেছে ইনশাআ-ল্লাহ। গরু কেনা হয়নি ইনশা-আল্লাহ। বাড়ী ফিরে যাচ্ছি ইনশা-আল্লাহ।'

এইভাবে হাত দুলাতে দুলাতে এবং 'ইনশাআ-ল্লাহ' বলতে বলতে বাড়ী ফিরে গেলেন ফজলু মিয়া।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এখন আর ইনশা-আল্লাহ বলে কি হবে? এখন শতবার ইনশা-আল্লাহ বললেও কি পকেটমার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে যাবে? সুতরাং, ইনশা-আল্লাহ আগেই বলা উচিৎ ছিল। সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়।

আসুন, ফজলু মিয়ার মত ভুল না করে যথাসময়ে আমরা ইনশা-আল্লাহ বলার অভ্যাস গড়ে তুলি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই সুন্দর বাক্যটি আমাদের জীবনের প্রযোজ্য সকল স্থানে প্রিয় নবীজীর সুন্নত হিসেবে ব্যবহার করার তাওফিক প্রদান করুন।

ছবিঃ সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪০
১২টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×