somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

হাদিস এবং সুন্নাহর আলোকে তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

হাদিস এবং সুন্নাহর আলোকে তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বিষয়ে আলোকপাত করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তারাবিহ নামাজ কি সেই বিষয়ে বলতে হয়। তাই তারাবিহ আলোচনার শুরুতে তারাবিহ নামকরণের কারণসহ কিছু বিষয় জেনে নিব ইনশাআল্লাহ।

নামাজের নাম 'তারাবিহ' যে কারণেঃ
'তারাবিহ' নামাজে যেহেতু প্রতি চার রাকাআত পরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দুআ পাঠ করা হয় তাই এই নামাজকে 'সালাতুত তারাবিহ' বা 'তারাবিহ নামাজ' বলা হয়।

রমজানের দুই আমল সিয়াম ও কিয়ামঃ
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান চলছে এখন। এই মাসের প্রধান দু'টি আমল হলো সিয়াম ও কিয়াম

এর মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ, 'সিয়াম' বা 'রোজা' হলো, আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে বেঁচে থাকা।

আর দ্বিতীয়তঃ 'কিয়াম' বা 'দন্ডায়মান হওয়া' দ্বারা বুঝানো হয় রাতের তারাবিহ নামাজকে। 'তারাবিহ' শব্দটি আরবি 'তারভিহাতুন' থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ বিশ্রাম করা, প্রশান্তি লাভ করা।

তারাবিহর সময়:
তারাবিহ নামাজ ইশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর এবং বিতিরের আগে আদায় করা হয়।

তারাবিহ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ:
তারাবিহ নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। যেটা গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি।

তারাবিহ নামাজের ফজিলত:
তারাবিহর ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকীর আশায় কিয়ামুল লাইল তথা তারাবিহ আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।' (বুখারী ও মুসলিম)

রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন তা উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝা সহজ। উপরন্তু তারাবিহ নামাজ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত নামাজ তা উপলব্ধি করা যায় নিম্নোক্ত হাদিস থেকে। তারাবিহ নামাজ উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এবং উম্মতের তা আদায়ে কষ্ট হতে পারে, এই চিন্তায় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহ নামাজ জামাআতে না পড়ে একা একা ঘরে আদায় করেছেন, যা নিম্নোক্ত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

হজরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ তারাবিহ আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তাঁরা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো কিন্তু রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিলো, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী)

তারাবিহ নামাজের রাকাআত:
তারাবিহ ২০ রাকাআত সুন্নাত। এটা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামদের আমল দ্বারা এটি সুপ্রমাণিত।

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে ২০ রাকাআত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)

সব সাহাবীদের আমলও ২০ রাকাআত ছিল। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাতি হজরত হাসান ইবনে আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর নির্দেশে লোকদের নিয়ে উবাই বিন কাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু ২০ রাকাআত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ)

এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুমসহ সব সাহাবীদের ঐক্যমতে ২০ রাকাআত তারাবিহ পড়া হয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মক্কা ও মদিনা শরীফে সাহাবায়ে কেরামের যুগ হতে আজ পর্যন্ত সবসময় ২০ রাকাআত তারাবিহ খতমে কোরআনসহ জামাতের সঙ্গে পড়া হয়। তারাবিহ নামাজে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ করাও সুন্নত।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকী অর্জন করবে এবং একটি নেকীকে দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।' (তিরমিজি)

কোরআনে কারীম তেলাওয়াতের নেয় শ্রবণ করাও একই সওয়াব। এজন্য তারাবিহ নামাজে পরিপূর্ণ আদবের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে হবে।

২০ রাকাআত না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়ঃ
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব লাভ হবে।' (তিরমিজি)

মুসল্লিদের থেকেও সচেতনতা কাম্যঃ
বিগত কিছু দিন যাবত আতঙ্কিত বিশ্ববাসী। করোনা আতঙ্ক সবকিছুকে থামিয়ে দিয়েছে। থমকে গেছে আমাদের আচার-আচরণ এবং জীবনের অনেককিছুই। সংক্রমণ এড়াতে মসজিদে জামাআতে নামাজ আদায়সহ অনেক কিছুতে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে সতর্কতার জন্য। তারাবিহ নামাজে সর্বোচ্চ ১২ জন অংশ নিতে পারবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সকলের এই নির্দেশনা মেনে রমজানের আমলগুলো করা উচিত।

আলহামদুলিল্লাহ, এ কারণে দেশের অধিকাংশ মুসল্লি সচেতনতার পরিচয় দিয়ে নিজ নিজ ঘরে ইশা ও তারাবিহ নামাজ আদায় করছেন। এসময়ে সন্মানিত মুসল্লিবৃন্দদের অনুরোধ, ব্যক্তিগতভাবে তেলাওয়াত, জিকির ও দুআ দরুদের পরিমান বৃদ্ধি করুন। এসবের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআ'লার রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করুন যেন আল্লাহ পাক অতি দ্রুত এই বিপর্যয়ের হাত থেকে গোটা বিশ্ববাসীকে মুক্ত করেন।

পরিশেষেঃ
মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত পূর্ণ আমল তারাবিহ নামাজ আদায়ে কোনোভাবেই অবহেলা নয়। আসুন, আমরা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তারাবিহ নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×