somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান ও প্রাসঙ্গিক কিছু আলোচনাঃ

১৭ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

পৃথিবীর নানান ভাষায় দাড়িঃ

পুরুষের মুখমন্ডলে গজানো দাড়ির রয়েছে নানান ভাষায় বৈচিত্র্যপূর্ণ নাম। বাংলা ভাষায়ও এর শ্রুতিমধুর সমার্থবোধক শব্দ রয়েছে। যেমন- শ্মশ্রু, এছাড়া আরও কিছু ভাষায় দাড়ির অর্থ জেনে নিই, আসুন, স্পেনিশরা দাড়িকে বলে Barba (বার্বা), ডাচরা বলে Baard (বার্ড), আরবি ভাষায় দাড়ি অর্থ- اللحية (Al Lihyatun/ Al Lihya, আল লিহইয়াতুন/ আল লিহইয়া), জাপানিজদের কাছে দাড়ি পরিচিত ひげ (Hi-ge, হি-জি) নামে, চাইনিজদের তো দাড়ি তেমন গজাতেই দেখা যায় না। অতি অল্প পরিমানে যা গজায় তা-ও তারা সহ্য করে না। উইঘুর মুসলিমদের দাড়ি কর্তনে বাধ্য করার ঘৃণ্য নজির রয়েছে চাইনিজদের বিরুদ্ধে। কম করে হলেও জিনজিয়াং প্রদেশের প্রায় দশ লক্ষাধিক উইঘুর মুসলিমকে বন্দি শিবিরে বছরের পর বছর ধরে আটকে রাখা চাইনিজরা দাড়িকে বলে 胡子 (Húzi, হুজি)। এককালের প্রতাপশালী মুসলিম সালতানাতের ঐতিহ্যবাহী ধারক তুরস্ক আবার তার হারানো সোনালী দিনগুলো যেন ফিরিয়ে আনছে। বর্তমান বিশ্বের হাতে গোনা দু'জন হাফেজে কুরআন রাষ্ট্রপতির একজন এরদোগান। তার সুললিত কন্ঠে কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত আনন্দিত করে। এমন রাষ্ট্রনায়ক পেয়ে তুরস্কবাসীর নিশ্চয়ই গর্ব হওয়ার কথা। একইসাথে তাদের যিনি রাষ্ট্রপতি তিনি মসজিদেরও ইমাম। এমনটা সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। তুর্কিরা দাড়িকে বলেন Sakal (সাকাল), মারাঠি ভাষায় বলা হয়- दाढी (দাড়ি), কাজাখস্তানবাসী তাদের ভাষায় বলেন- Сақалды (Saqaldi, সাকালডি), মালয় ভাষায়- Janggut (জাঙ্গুট), ফ্রেঞ্চ ভাষায়- Barbe (বার্বে), জার্মানরা বলে- Bart (বার্ট), ফার্সিতে- ریش, (রিশ), গ্রিক ভাষায়- Γενειάδα (Geneiáda, (জেনেইআদা)। মিয়ানমার কর্তৃক জবরদস্তিমূলকভাবে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার সময় টু-শব্দটি উচ্চারণ করে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে না করা আমাদের পার্শ্ববর্তী নিকটতম বন্ধু(!) দেশটির কয়েক কোটি লোক কথা বলে হিন্দি ভাষায়। তো হিন্দি ভাষায় দাড়িকে বলে- दाढ़ी (দাড়ি)। আর উর্দু? হ্যা, উর্দুতে দাড়িকে داڑھی, (দাড়ি) -ই বলা হয়। পর্তুগিজ, রোমান, বসনিয়া, স্পেনিশ, ল্যাটিন এবং ইতালিয়ানরা তাদের ভাষায় দাড়িকে বলে Barba (বার্বা)। ইন্দোনেশিয়ানরা বলে Jenggot (জেঙ্গট), নেপালিরাও দাড়িকে (दाह्री) দাড়িই বলে। ফিলিপিনোরা বলে Balbas (বালবাস)। মিয়ানমারবাসী তাদের ভাষায় দাড়িকে বলে မုတ်ဆိတ် (motesate, মোতেসাতে)। তুর্কমেনিস্তানে বলা হয়- Sakgal (সেকগাল)। সুইডিশরা বলে Skägg (স্কাগ)। থাইল্যান্ডে เครา (Kherā, খেরা ), রুশ ভাষায় борода (boroda, বোরোডা), সোমালিয়ান ভাষায় Gadhka (গাদকা), এবং নরওয়েজিয়ানরা বলে Skjegg (স্কেজেগ)।  

ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান ও প্রাসঙ্গিক কিছু আলোচনাঃ

নিতান্ত অপারগ হয়ে কিছু বিষয়ের আলোচনা সামনে আনতে হয়। দাড়ির বিষয়টিও এমনই। অনেকেরই এই ব্যাপারটিতে আবছা আবছা জ্ঞান থাকলেও সঠিক মাসআলা জানেন খুব কম মানুষই। এজন্য কোনো বিষয় আপনি-আমি মেনে চলতে পারবো তখনই যখন তা সঠিকভাবে জানা থাকবে। প্রতিটি বিষয়ের সঠিক জ্ঞান অর্জন বড় একটি বিষয়।

আমাদের সমাজে এমন অনেককেই দেখা যায় যাদের মুখে দাড়ি নেই কিন্তু বাহ্যিকভাবে তাদের চালচলন এবং আচার-আচরণে প্রতীয়মান হয় তাদের অন্যান্য অনেক আমল ভালো। তারা নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, হজ পালন করেন। মোটকথা, ইসলাম ধর্মের আবশ্যিক সব ব্যাপারেই তারা উৎসাহী, আগ্রহী, উদ্যমী এবং অনুরাগী। এসব ভাইদেরকে লজ্জা দেয়া, হেয় করা কিংবা কষ্ট দেয়ার (যদিও বিশ্বাস করি, তাদেরকেসহ কাউকেই কষ্ট দেয়ার অধিকার আমাদের নেই) জন্য নয়; বরং তাদেরসহ প্রত্যেকের জানার পরিধিকে আরও বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টারই অংশ বক্ষমান নিবন্ধ। আর সঠিকভাবে দাড়ি রাখার বিষয়ে ইসলামী দিকনির্দেশনার অন্তর্নিহিত মর্ম বোধগম্য হলে বিষয়টির উপরে আমল করা তাদেরসহ আমাদের সকলের জন্যই সহজ হয়ে উঠবে ইনশা-আল্লাহ, আশা করা যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নিকট প্রতিটি নেক আমলের জন্য বিনীত অন্তরে তাওফিক প্রার্থনা করছি। ক্ষুদ্র এই লেখাটিকে তিনি অনেকের জন্য পথনির্দেনা বানিয়ে দেন এবং আমাদের পক্ষ থেকে এই কাজকে দ্বীন প্রচারের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে নিন।

দাড়ি রাখা সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা দূর করা প্রয়োজনঃ

দাড়ি রাখা সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত একটি কথা রয়েছে, আর এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, অধিকাংশ দেশেই এই ভ্রান্ত ধারণা আসন গেড়ে বসেছে যে, ''দাড়ি রাখা সুন্নত; অতএব দাড়ি রাখলে ভাল, আর না রাখলে তেমন কোন সমস্যা নেই, একটা সুন্নত পালন করা হল না এই আর কি!'

আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে জেনে রাখতে হবে, উপরোল্লিখিত কথাটি সম্পূর্ণ ভুল একটা ধারণার ভিত্তিতে বলা হয়ে থাকে। কারণ, দাড়ি রাখাকে সুন্নাত বলে হাল্কাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়ি রেখেছেন বলে এটিকে সুন্নাত বলা হয়ে থাকে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল হিসেবে এটিকে সুন্নাত আমল বলা যায় কিন্তু ইসলামী শরিয়া মোতাবেক দাড়ি রাখার মর্যাদা শুধু সুন্নাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং দাড়ি রাখার বিষয়টিকে ইসলামিক স্কলারদের কেউ কেউ ফরজ সাব্যস্ত করেছেন, কেউ আবার ওয়াজিব বলেছেন। তবে এ বিষয়ে সর্বসম্মত এবং গ্রহনযোগ্য সিদ্ধান্ত হচ্ছে- দাড়ি রাখা ওয়াজিব। দাড়ি মুন্ডানো বা কর্তন করা হারাম। কবিরাহ গোনাহের কাজ।

দাড়ি ইসলাম এবং মুসলিম নির্দশনঃ

দাড়ি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার মহান ও বড় একটি নিআমত। পুরুষের মুখমন্ডলে দাড়ি প্রদান করে এর দ্বারা তিনি পুরুষের দেহাবয়বকে সুশোভিত করেছেন। দাড়িকে তার চেহারার সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলার মাধ্যম বানিয়েছেন। তার ভেতরের পৌরুষত্বকে তুলে ধরার পন্থা জারি রেখেছেন। মুখমন্ডলে দাড়ি গজানোর অনন্য সিস্টেম জারি করে তার প্রতি অনুগ্রহ করে তাকে নারী জাতি থেকে ভিন্নতর বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছেন। দাড়ি শুধুমাত্র মুখমন্ডলের উপর কয়েকটি কেশগুচ্ছই নয়; বরং ইহা বাহ্যিকভাবে ইসলামের বড় একটি নিদর্শনও বটে। দাড়ি ছেড়ে রেখে এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নৈকট্যলাভ করতে পারি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,

ﺫَﻟِﻚَ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﻌَﻈِّﻢْ ﺷَﻌَﺎﺋِﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺗَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏِ

'এই কারণে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই পরিচয়।' -সূরা হাজ্জ- ৩২

দাড়ি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসৃত নীতির একটি অন্যতম পরিচয়। তিনি দাড়ি ছেড়ে দিতে ও লম্বা করতে আদেশ করেছেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, দাড়ির প্রতি এত গুরুত্ব ও তার প্রতি সম্মানের নির্দেশ থাকা সত্বেও অধিকাংশ মুসলিম বিষয়টিকে অতি নগন্য ও তুচ্ছ মনে করে। প্রতিদিন তা ছেঁচে ফেলতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারা মুন্ডন করে না তারা আরেক ষ্টাইলে তার সাথে খেলা-ধুলা করে। কেউ শুধুমাত্র থুতনীর উপর ছোট ছোট করে রাখে। আবার কেউ খুবই হালকা করে কাল একটি রেখার মত করে রাখে। কেউ আবার দাড়িকে গোঁফের সাথে মিলিয়ে দিয়ে গোলাকৃতির মত করে রাখে।

এই চিত্রগুলো দেখলে একদিকে যেমন দুঃখ হয়, অন্যদিকে তা হয়ে ওঠে হাসিরও বিষয়। যে মুসলমানকে দাড়ি ছেড়ে দিতে আদেশ করা হয়েছে, দাড়িকে সম্মান করতে বলা হয়েছে, সেই মুসলমান তো দূরের কথা কোন বিবেকবানের পক্ষেও এরকম আচরণ করা শোভনীয় নয়।

বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা যে আকৃতিতে দাড়িকে সৃষ্টি করেছেন সে অবস্থাতেই তা নিজ মুখমন্ডলে অবশিষ্ট রেখে ইসলামী শিষ্টাচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী এরকম সভ্য মানুষের সংখ্যা আজ খুবই বিরল। (লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্)

দাড়ি মুন্ডন হারাম হওয়ার দলীলঃ

আল্লাহ্ বলেন,

ﻭَﻟَﺂَﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ

“(শয়তান বলে) আমি অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, তারা তখন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দিবে।” -সূরা নিসাঃ ১১৯

দাড়ি মুন্ডন করা বা কর্তন করা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার শামিল। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "দশটি জিনিস স্বভাবজাত। তম্মধ্যে তিনি গোফ কর্তন করা ও দাড়ি ছেড়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।" -সহিহ মুসলিম, ১/১২৯

অতএব গোঁফ লম্বা করা আর দাড়ী কেটে ফেলা সুস্থ স্বভাববিরোধী কাজ।

ইবনে ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﻭَﻓِّﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠِّﺤَﻰ ﻭَﺃَﺣْﻔُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏَ

'তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি ছেড়ে দাও এবং গোঁফ ছোট কর।' -সহিহ বুখারী, ২/৮৭৫ ও সহীহ মুসলিম: ৬২৫

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ﺟُﺰُّﻭﺍ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏَ ﻭَﺃَﺭْﺧُﻮﺍ ﺍﻟﻠِّﺤَﻰ ﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤَﺠُﻮﺱَ

'গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর আর এর মাধ্যমে অগ্নিপুজকদের বিরোধিতা কর।' - মুসলিম শরিফ, ১/১২৯

হযরত আবুহুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশরাদ করেন, 'দাড়ি বাড়াও, গোফ কাট এবং এক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা।' -মুসনাদে আহমদ

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, উক্ত হাদিসের নির্দেশ মান্য করে যাবতীয় বিষয়ে মুশরিক, অগ্নিপুজক এবং অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর রীতি ও স্বভাব পরিহার করে নিজস্ব ধর্মীয় স্বকীয়তা বজায় রেখে চলা প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব।

এ জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ 'যারা কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।' -আবু দাউদ, মুসনাদে ইমাম আহমাদ, হাদীছ সহীহ

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺧُﺬْ ﻣِﻦْ ﺷَﺎﺭِﺑِﻪِ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ

'যে ব্যক্তি গোঁফ কাটে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।' -তিরমিযী, নাসাঈ, হাদীছ সহীহ

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নির্দেশ ওয়াজিব বা আবশ্যকতার দাবী রাখে। অন্যদিকে দাড়ি মুন্ডন করার মাধ্যমে নিজেকে নারীদের কাতারে শামিল করা হয়। কেননা নারীরা দাড়িবিহীন। কোন নারী যদি পুরুষের আকৃতি ধারণ করে এবং কোন পুরুষ যদি নারীর আকৃতি ধারণ করে তবে তারা লা’নতপ্রাপ্ত।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 'রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষকে এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারীনী নারীকে অভিশাপ করেছেন।' -ছহীহ আবু দাউদ, তিরমিযী

দাড়ি রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবেঃ

দাড়ি রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং মেনে চলতে হবে; তা হলো-

(১) দাড়ি রাখা,

(২) দাড়ি লম্বা করা,

(৩) অন্তত একমুঠো পরিমাণ পর্যন্ত রাখা।

দাড়ি রাখা ওয়াজিব, না সুন্নাত?

এ নিয়ে কিছু মানুষ মতোবিরোধ করলেও দাড়ি রাখা যে ওয়াজিব সেটাই প্রনিধাণযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য কথা। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়ি রেখেছেন বলেই ইহা নবীজীর সুন্নাত বলে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা নবীজী দাড়ি নিজে রেখেছেন। শুধু নিজে রেখেছেন এতটুকুই নয়। বরং দাড়ি রাখার গুরুত্ব অধিক হওয়ায় তা রাখার জন্যে নির্দেশও দিয়েছেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ মেনে চলা উম্মতের জন্য একান্ত আবশ্যক, অপরিহার্য্য। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা কোনো বিধি-বিধানকে মানবজাতির জন্য যেমন ফরয করেছেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তেমনি যে কোনো বিধি-বিধান ফরয বা ওয়াজিব করতে পারতেন। তার কারণ হচ্ছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো নিজের কল্পনাপ্রসূত কোন কথা বলতেন না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাঁর নিকট যা ওহী করতেন তিনি কেবল তাই বলতেন।

ইরশাদ হচ্ছে,

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى

এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।

إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى

কুরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। -সূরা আন নাজমঃ আয়াত ৩ এবং ৪

তাছাড়া নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়ির বিষয়ে যে সকল আদেশসূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার বিপরীতে এমন কোন হাদিস খুঁজে পাওয়া যাবে না যা দ্বারা দাড়িকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব সাব্যস্ত করা যেতে পারে।

তিরমিযী শরিফের একটি হাদিসে বলা হয়েছেঃ

ﻛﺎﻥ ﻳﺄﺧﺬ ﻣﻦ ﻟﺤﻴﺘﻪ ﻣﻦ ﻋﺮﺿﻬﺎ ﻭﻃﻮﻟﻬﺎ

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের দিক থেকে তাঁর দাড়ি কাটতেন।”

এ হাদিসটি মওযু বা জাল, যার কোন ভিত্তি নেই। ইমাম তিরমিযী হাদিসটি বর্ণনা করার পর নিজেই একথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। -দ্রঃ ছহীহ তিরমিযীঃ হা/২৭৬২

দাড়ি রাখার ব্যাপারে মুসলিম পন্ডিতদের অভিমতঃ

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, দাড়ি মুন্ডন করা হারাম। ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন, দাড়ি মুন্ডানো, উঠানো বা কর্তন করা কোনটাই জায়েয নয়।

শায়খ বিন বায (রঃ) বলেন, দাড়িকে সংরক্ষণ করা, পরিপূর্ণ রাখা ও তা ছেড়ে দেয়া ফরয। এই ফরযের প্রতি অবহেলা করা জায়েয নয়।

শাইখ ইবনে উসাইমীন (রঃ) বলেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব, উহা মুন্ডন করা হারাম বা কাবীরা গুনাহ।

প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণও দাড়ি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দুররে মুখতারে বলা হয়েছেঃ পুরুষের জন্য দাড়ি কর্তন করা হারাম। -দুররে মুখতার, ২য় খন্ড/৪৫৯ পৃঃ

নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ''দাড়ি এক মুষ্টির বেশি হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশি কর্তন করা যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ি সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের লোক, ইহূদী, অবিশ্বাসী ও মুশরিকদের কাজ।”

মালেকী মাযহাব মতে দাড়ি কাটা হারাম। -আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী ৮ম খন্ড ৮৯ পৃঃ

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ তে উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ি কর্তন করা হারাম। শাফেঈ মাযহাবের আলেম আযরাঈ বলেনঃ সঠিক কথা হচ্ছে, কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড় মুন্ডন করা হারাম। -হাওয়াশী শারওয়ানী ৯ম খন্ড ৩৭৬ পৃঃ

হাম্বলী মাযহাবের বিদ্বানগণও দাড়ি মুন্ডনকে হারাম বলেছেন। -ইনসাফ, শরহে মুন্তাহা

অতএব দাড়ি মুন্ডন আর নয়ঃ

অতএব, দাড়ি মুন্ডন করা বড় ধরণের একটি গোনাহের কাজ। এই গোনাহের কাজটিতে জেনে অথবা না জেনে যারা এতদিন লিপ্ত ছিলাম, আমাদের উচিত অতিদ্রুত, এখনই এই বদ স্বভাব এবং পাপের কাজ থেকে তওবা করা। অবশ্য দাড়ি মুন্ডন করা ও কেটে ছোট করার পাপ এক সমান নয়। যদিও উভয়টিই পাপের কাজ। অনেক মানুষ দাড়ি মুন্ডন করাটাকে খুবই ছোট ও তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু ইহা মুন্ডন করা কোন সময় সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। কেননা, এটা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম। আর প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে তওবা না করলে হতে পারে দাড়ি মুন্ডনকারী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার কাছে ক্ষমা পাবে না। কেননা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ﻛُﻞُّ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻣُﻌَﺎﻓًﻰ ﺇِﻻ ﺍﻟْﻤُﺠَﺎﻫِﺮِﻳﻦَ

“আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।” -সহিহ বুখারী ও মুসলিম

তাছাড়া কোন মানুষ যদি দাড়িকে অপছন্দ করে বা তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে অথবা দাড়িওয়ালা মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে,
তবে সম্ভাবনা আছে এ কারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কুফুরীতে লিপ্ত হবে এবং মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা বা ব্যঙ্গ করা বা তা ঘৃণা ও অপছন্দ করা ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,

ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢُ ﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﺍ ﻣَﺎ ﺃَﺳْﺨَﻂَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻛَﺮِﻫُﻮﺍ ﺭِﺿْﻮَﺍﻧَﻪُ ﻓَﺄَﺣْﺒَﻂَ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻬُﻢْ

“এই কারণে যে, তারা এমন বস্তুর অনুসরণ করেছে যার প্রতি আল্লাহ্ রাগাম্বিত। আর তারা তাঁর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করেছে। ফলে তিনি তাদের আমলগুলো বরবাদ করে দিয়েছেন।” -সূরা মুহাম্মাদঃ ২৮

অতএব, আমাদের সাবধান হতে হবে। সতর্ক হতে হবে। কথা বলতে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কারণ, কথা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কথা অর্থাৎ কালিমার বাণী পাঠের মাধ্যমে মানুষ ঈমানের ঘরে প্রবেশ করে। আবার তার একটিমাত্র অবান্তর কথাই তাকে ঈমানহীন করে দিতে পারে। তাই প্রিয় ভাই, নিজের আমল বরবাদ করবেন না, বা অজ্ঞতাবশতঃ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না।

প্রিয় ভাই! নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ফরজ এবং ওয়াজিব বিষয়ে আপনি যেমন আপনার পালনকর্তার আনুগত্য করেন। কোনো প্রশ্ন তোলেন না। বিনা বাক্যব্যায়ে সেগুলো পালন করেন। বলেন না যে, আমার নামাজ পড়তে ভালো লাগে না। আমার রোজা রাখতে ইচ্ছে হয় না। অথবা, হজ আমার পছন্দ নয়। তাহলে প্রিয় ভাই, দাড়ি রাখার এই বিষয়টিতে কেন প্রশ্ন তুলছেন? কেন গড়িমসি করছেন? কেন ইচ্ছে-অনিচ্ছার প্রশ্নকে পাত্তা দিচ্ছেন? কেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতায় লিপ্ত হচ্ছেন? দাড়ি রাখার বিষয়ের আদেশপ্রদানকারীও তো স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই, তাই নয় কি? তাহলে কোথায় তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন? কোথায় আপনার ঈমানের বলিষ্ঠতা ও সত্যতা? শরীয়তের বিধান নিয়ে কেন এই গাফিলতি? কেন এই নির্লিপ্ততা?

দাড়ি রাখার কিছু সুফলঃ

ইসলাম ধর্মে দাড়ি রাখার অনেক ফজিলত বা উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে। নিচে তার কিছু তুলে ধরা হলো-

(১) দাড়ি রাখলে মহান আল্লাহ পাক ও তার রাসূল খুশি হন।

(২) দাড়ি রাখলে হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের দিন নবীজির শাফায়াত লাভ হওয়ার আশা করা যায়।

(৩) দাড়ি রাখলে সকল নবী-রাসূলগণের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হয়, যা আল্লাহ তাআ'লার নিকট পছন্দনীয় কাজ।

(৪) দাড়ি চেহারার সৌন্দর্য্য বাড়ায় ও বীরত্বের পরিচয় বহন করে।

(৫) কিয়ামতের দিন অন্ধকার সময়ে মুমিনের দাড়ি নূরে (আলোয়) পরিণত হবে,

(৬) ঈমান ও আমল ঠিক থাকলে দাড়িওয়ালা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ এবং হাশর হবে নবী ও ওলীদের সঙ্গে।

(৭) দাড়ি একজন মুসলমানকে অনেক পাপ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

(৮) দাড়ি ইসলামী সভ্যতার নিদর্শন এবং মুসলমানের অন্যতম প্রতীক। দাড়ির মাধ্যমে একজন মুসলিমকে সহজে মুসলিম বলে চিনে নেয়া যায়।

(৯) হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী দাড়ি রাখলে কবরে প্রশ্নকারী ফেরেশতা মুনকার-নাকীরের সওয়াল-জাওয়াব সহজ হয়।

(১০) হাদিসের খোশখবরি অনুযায়ী দাড়ি রাখলে কবরের আজাব থেকে মুক্তিপ্রাপ্তির আশা করা যায়।

ইসলামে দাড়ি রাখার প্রতি এত জোর দেয়ার ধর্মীয় কিছু ফায়দা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে; তবে দাড়ি রাখাটা শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই উপকারী বিষয়টা এমন নয়। শারীরিকভাবে, অর্থাৎ মানব মুখমন্ডলের জন্যেও যে এটা প্রভূত উপকারী সেই বিষয়েও রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে দাড়ি নিয়ে গবেষণা চালানো হয়, যার ফল প্রকাশিত হয় ‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশন’ নামে এক ম্যাগাজিনে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে যে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে দাড়ি কামানো পুরুষদের ত্বকেই মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফ অরিয়াস বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সেটি ৩গুন বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে।

যার কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে ঘষা লাগে, তা ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ। অন্যদিকে দাড়ি ব্যাক্টেরিয়ার এই সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।

লন্ডনের গবেষক ড: অ্যাডাম রবার্ট এক গবেষণায় দেখেছেন, দাড়িতে এমন কিছু ‘মাইক্রোব’ থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

এগুলো ছাড়াও দাড়ির আরো কিছু উপকারী দিক রয়েছে। সেগুলো হলো-

(১) দাড়ির অস্তিত্ব যৌন শক্তিকে বৃদ্ধি করে।

(২) লম্বা দাড়ি ক্ষতিকর জীবাণু থেকে আমাদের রক্ষা করে।

(৩) পাইরিয়ার মতো মারাত্বক রোগের জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

(৪) দাড়ি রাখলে অনর্থক সময় ও অর্থ অপচয় রোধ করা যায়।

(৫) শারীরিক সৌন্দর্য্য ও আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।

(৬) দাড়িতে ক্ষুর বা ব্লেড ব্যবহারের কারণে চোখের জ্যোতি কমে যায় এবং মুখমন্ডলের চামড়া শক্ত হয়ে যায়। দাড়ি রেখে দিলে এসব ক্ষতিকর দিক থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

এক নজরে দাড়ি রাখার কিছু কুফলঃ

এতক্ষণ দাড়ি রাখার সুফল বা উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। পরিমানে অনেক সংখ্যক হলেও দাড়ি না রাখার কুফল বা ক্ষতির খতিয়ানটাও সামান্য আকারে তুলে না ধরলে ইনসাফের পাল্লায় গড়মিল দেখা দিতে পারে। আশা করছি, যারা দাড়ি শেভ বা মুন্ডন করছি তারা এই আলোচনায় মনঃক্ষুন্ন হবেন না। আসলে দাড়ি না রাখার অনেক কুফল রয়েছে। কারণ, দাড়ি যদি কেউ না রাখে তার দ্বারা ইসলামের অনেক বিধান লঙ্ঘিত হয়। যেমন-

(১) দাড়ি না রেখে রাসূলের অবাধ্যতা করা হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি লম্বা করো।’ (বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য)

(২) দাড়ি না রেখে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা করা হয়। কারণ: মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন যে-
‘যে রাসূলের আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৮০)

(৩) মহানবী (সা.) দাড়ি রাখতেন এবং তার উম্মতকেও রাখতে বলতেন। আর তাই কেউ যদি দাড়ি না রাখে সে রাসূলের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেল।

(৪) যে দাড়ি রাখে না সে মুমিনদের পথ থেকে বিচ্যুত। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ১১৫ নং আয়াতে বলেন যদি কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে তাহলে তার জায়গা হবে জাহান্নাম।

(৫) দাড়ি মুসলিমদের বিশেষ পরিচয়বাহক বৈশিষ্ট্য বা নিদর্শন। এটা অবিশ্বাসীদের থেকে আলাদা হিসেবে চিন্হিত করে। তাই দাড়ি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক কুফল ও কঠোর শাস্তি রয়েছে দাড়ি না রাখার। তাই অবশ্যই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইসলামের বিধান অনুযায়ী দাড়ি রাখা।

পুরুষের সৌন্দর্য্য দাড়িতেঃ

পুরুষের সৌন্দর্য্য দাড়িতে; দাড়ি মুন্ডানোতে নয়। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে নারী জাতি থেকে আলাদা ও বিশেষ বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন। পৌরুষত্বের পরিচয় দাড়ি প্রদান করে তার সৌন্দর্য্যকে প্রস্ফুটিত করেছেন। বুঝে আসে না, কিভাবে মানুষ তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাতে পরিবর্তন এনে নিজেকে নারী জাতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করতে চায়? কি করে ইসলামের শত্রুদের সাথে নিজেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে চায়? আর ধারণা করে যে, এতেই রয়েছে অতিরিক্ত সৌন্দর্য্য ও ব্যক্তিত্ব!? দাড়ি মুন্ডন না করলে বা না কাটলে যেন পুরুষের সৌন্দর্যই ফুটে উঠে না। পুরুষকে দাড়ি দিয়ে যেন আল্লাহ ভুল করেছেন (নাউযুবিল্লাহ্)। তাই সেই ভুল শোধরাতে তারা যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। আল্লাহ পাক আমাদের ক্ষমা করুন।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেনঃ

ﺃﺃﻧْﺘُﻢ ﺃﻋْﻠَﻢُ ﺃﻡِ ﺍﻟﻠﻪُ

“তোমরাই কি বেশী জ্ঞান রাখ না আল্লাহ্ অধিক জ্ঞান রাখেন?” [ সূরা বাকারাঃ ১৪০]

আমাদের মনে রাখা উচিত যে, মুখমন্ডলে দাড়িহীন পুরুষ যদি অধিক সুন্দর হতো তবে পুরুষকে দাড়িবিহীনভাবে সৃষ্টি করতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা অপারগ ছিলেন না। কিন্তু তিনি পুরুষের মুখমন্ডলে দাড়ি প্রদানের মাধ্যমে পুরুষকে নারীর তুলনায় ভিন্ন আকৃতি দিয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করতে চেয়েছেন। তাই, প্রিয় ভাই! তারপরেও আপনি কি আপনার সুন্দর পুরুষালী চেহারাকে নারীদের মত করে দাড়িবিহীন করে রাখার এই চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন?

শেভ করায় আসলেই কি কোনো ফায়দা আছে?

সম্মানিত ভাই! আপনার এই কাজে কি দুনিয়াবী কোন উপকার আছে কি? পাবেন কি আখেরাতে কোন সাওয়াব বা নেকী? না কি আখেরাতে ঠিক তার বিপরীত প্রতিদানপ্রাপ্তির কথাই আমরা হাদিসের আলোকে অবহিত হতে পেরেছি? তাহলে কেন আপনি নিজেকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ক্রোধের সম্মুখিন করছেন? কেন আপনি প্রতিদিন একটি অযথা পরিশ্রমে নিজেকে ক্লান্ত করছেন? প্রিয়তম ভাই আমার! কেন সময় ও অর্থের অপচয় করছেন?

প্রাসাংগিক আরো কিছু কথাঃ

দাড়ি যা-ই হোক, যতটুকুই হোক- প্রকৃত মুসলমান দাড়ি রাখবে, এটাই স্বাভাবিক।

এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কাটার সুযোগ শরীয়তে রয়েছে। হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ও হযরত আবু হুরায়রা রা. এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটেছেন।

আবু যুরআ রাহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাঁর দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯)

কিন্তু কোনো সহীহ বর্ণনায় এক মুষ্ঠির ভিতরে দাড়ি কাটার কোনো অবকাশ পাওয়া যায় না।

এখন আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আপনি কি করবেন। আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মানবেন নাকি সমাজের মানুষের কাছে লজ্জার ভয়ে কিংবা কাফির-মুশরিকদের অন্ধ অনুসরণ করবেন?

দাড়ি রাখার বিষয়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে?

দাড়ি রাখা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? নাকি আপনার মুখভর্তি দাড়ি আসলে নানারকম রোগ-জীবাণুর এক বিরাট আস্তানা? এ নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বিজ্ঞানী আর গবেষকদের মধ্যে।

বিবিসির এক অনুষ্ঠান, “ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর” সম্প্রতি ঠিক এই প্রশ্নে একটা ছোট্ট পরীক্ষা চালিয়েছিল। তার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্লিন শেভড পুরুষের চেয়ে দাড়িওয়ালাদের মুখে রোগ-জীবানু বেশি, এমন কোন প্রমাণ তারা পাননি।

যারা দাড়ি রাখেন, তারা এর মধ্যে নানা রোগ-জীবাণু বহন করে চলেছেন এমন ভয় অনেকের মধ্যেই কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতাল সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণা চালায়। তাদের গবেষণার ফল অনেককেই অবাক করেছে।

‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে’ প্রকাশিত এই গবেষণার ফলে বলা হচ্ছে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে বরং দাড়ি কামানো পুরুষের মুখেই তারা বেশি রোগ-জীবাণু পাওয়া গেছে।

গবেষকরা বলছেন, মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফ অরিয়াস (এমআরএসএ) বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, সেটি দাড়িওয়ালাদের চাইতে দাড়ি কামানোদের মুখে তিনগুণ বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে।

দাড়ি ও আধুনিক বিজ্ঞানঃ

দাড়ি রাখা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দাড়ি না রাখার এই বিধানটি পরিপালন না করা প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্যবিধি পালন না করার শামিল। দাড়ির উপকারিতা এবং সৌন্দর্য সূর্যালোকের মতই স্পষ্ট। এখানে দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা বিষয়ক উপকারিতা এবং শেভ করার কিছু ক্ষতি তুলে ধরা হলো-

ডাক্তার মূর -এর অভিমতঃ

বর্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর মূর শেভ, ব্লেড এবং সাবান সম্পর্কে বহু বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে অর্জিত দিল্লির স্বাস্থ্য বিষয়ক সামিয়িকী “ছেহেত” এ নিচের অভিমত ব্যক্ত করেছেন-

ত্বকের রোগঃ

শেভ করার কারণে ত্বকের যে পরিমাণ ক্ষতি হয় সম্ভবত অন্য কোন কারণে এতো ক্ষতি হয় না। শেভ করার জন্য ব্যবহার করা ব্লেড বারবার ত্বকের উপর চালানো হয়। দাড়ি যারা মুন্ডন করেন, সাধারণত তাদের প্রত্যেকেই চান, যাতে তার চেহারায় একটিমাত্র দাড়িও অবশিষ্ট না থাকে। তাদের ধারণা, এতে তাদের চেহারার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে। চেহারার লাবণ্য আরও বেশি করে ফুটে উঠবে। এ উদ্দেশ্যে বারবার ধারালো অস্ত্র তথা, ব্লেড বা রেজর দিয়ে চেহারার ত্বক পরিষ্কার করা হয়। এতে চেহারার ত্বক স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে এবং নানারকম রোগ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

কম ধারালো ব্লেড দিয়ে শেভ করা হলে ত্বক খরখরে হয়ে যায়। চেহারা জখম হয়। খালি চোখে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেসব জখম হয়তো দেখা যায় না। তবে জ্বালা বা জ্বলন কিন্তু ঠিকই অনুভূত হয়। দীর্ঘ দিন এভাবে শেভ করার ফলে এতে মূলতঃ ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ক্ষতিগ্রস্ত এই ত্বকের চামড়া উঠে গেলে সেসব স্থান দিয়ে জীবাণু শরীরের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পায়। যারা নিয়মিত এবং দীর্ঘ দিন যাবত দাড়ি শেভ করে থাকেন এভাবেই তারা নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের অনেকের চেহারায় প্রথমে মামুলি ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পর্যায়ক্রমে সে ফুসকুড়ি সাইকোসিস বারবেক -এর মতো মারাত্বক চর্মরোগে পরিণত হতেও দেখা যায়।

এছাড়া দীর্ঘ দিন নিয়মিতভাবে দাড়ি শেভ করার ফলে চেহারা এবং দেহের অন্যান্য জায়গায় যেসব রোগ দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে- একনে, ডেন্ডরাফ সিবোরহোয়েস, একনে রোসাকিয়া, রিনোপাইমা, বয়েলস, একজিমা, এলার্জি ইত্যাদি।

আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতিঃ

আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি অনুভুমিশীল ত্বকের জন্য খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়। কারণ, এ রশ্মি সূর্যকিরণের সাথে মিশে দেহের ত্বকে খুব শীঘ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে ত্বকের রং কালো হয়ে যায়। এছাড়া নানারকম রোগ দেখা দেয়।

ক্রমাগত শেভ-এর প্রতিক্রিয়াঃ

ক্রমাগত শেভ করার ফলে পিটুইটারি গ্লান্ডে মারাত্বক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ গ্লান্ডের সৃষ্টির কারণে নার্ভ সিস্টেম এবং যৌন জীবন প্রভাবিত হয়। অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত শেভ করার অভ্যাস যারা ত্যাগ করেছেন তারা উল্লিখিত রোগ এবং অন্যান্য রোগ থেকে মুক্ত জীবনযাপনে সক্ষম হয়েছেন।

এর কারণ কি?

গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে হালকা ঘষা লাগে, তা নাকি ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। অন্যদিকে দাড়ি নাকি সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। বিবিসির “ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর” অনুষ্ঠানে বেশ কিছু পুরুষের দাড়ি থেকে ব্যাকটেরিয়ার নমূনা সংগ্রহ করে একই ধরণের পরীক্ষা চালানো হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের গবেষক ড: অ্যাডাম রবার্ট এই গবেষণার ফল দেখে বলছেন, দাড়িতে এমন কিছু ‘মাইক্রোব’ আছে, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে সাহায্য করে।

দাড়ি সকল নবী-রাসূলের অন্যতম সুন্নাতঃ

পৃথিবীতে আগত নবী-রাসূলের সংখ্যা কত? বলা হয়ে থাকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। নবী-রাসূলের সঠিক সংখ্যা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার কিংবা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার যেটাই হোক, এই সংখ্যাটা অথেন্টিক না হলেও এর দ্বারা একটি বিষয় অনুধাবন করা সহজ, পৃথিবীতে আগত নবী-রাসূলগণের সংখ্যা বিপুল। সে সংখ্যাটা লক্ষাধিক যে হয়েই থাকবে সেটা অন্ততঃ অনুমান করা যায়। তো, মজার বিষয় হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক এই নবী-রাসূলগণের প্রত্যেকেই কিন্তু দাড়ি রেখেছেন। কেউই এমন ছিলেন না, যিনি কি না দাড়ি কর্তন বা মুন্ডন করেছেন।

হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশরাদ করেছেন, 'দশটি বিষয় সকল নবী-রাসুলগণের সুন্নাত, তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা অন্যতম।' -মুসলীম শরীফ, ১/১২৯

তাই প্রিয় ভাই, আসুন, দাড়িটা ইনশা-আল্লাহ রেখে দিই। কারণ, দাড়ি রাখা শুধু আমাদের নবীজীর রেখে যাওয়া আমল নয়, এটি পৃথিবীতে আগত সকল নবী-রাসূলের পক্ষ থেকে রেখে যাওয়া অন্যতম সুন্নাত।

দাড়ি কাটা কবিরা গোনাহঃ

প্রিয় পাঠক, দাড়ি কাটা কবিরা গোনাহ, কথাটা শুনে কষ্ট নিবেন না দয়া করে। এটাই মুসলিম স্কলারদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। আপনি বা আমি মেনে চলি অথবা না চলি, সঠিক বিষয়ের জ্ঞানটুকু তো আগে থাকা চাই। দাড়ি কাটা যে এত বড় একটি পাপের কাজ এই কথাটা আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই। আমার বিশ্বাস, এটা জানা থাকলে অনেক মানুষ কষ্ট করে দাড়ি কেটে অনর্থক এই পাপের বোঝা ভারী না করে নিজের কল্যান চিন্তা করে এমনিতেই দাড়ি রেখে দিতেন। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি ঘটনা শুনুন, একবার পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। এরা ছিল দাড়ি মুন্ডিত অবস্থায় কিন্তু তাদের গোঁফ ছিল বড় বড়।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাদের এই অবয়ব এতই কুৎসিত লেগেছিল যে, তিনি মুখ অন্যদিকে চেহারা ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ধ্বংস হোক, এমনটি করতে তোমাদের কে বলেছে?

তারা উত্তর দিল, 'আমাদের প্রভু কিসরা'।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উত্তর দেন, 'আমার রব্ব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত, তিনি আদেশ করেছেন, যেন আমি দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছোট রাখি'।

যারা দাড়ি কাটেন তাদের আমলনামায় কবিরা গোনাহ লেখা হয়। যতক্ষণ তিনি দাড়িবিহীন থাকবেন এ গোনাহ লেখা হতে থাকবে। আর যেহেতু রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি কর্তনকারীদের 'কুৎসিত' বলেছেন এতে প্রমান হয় দাড়ি কাটলে চেহারার সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়।

পুরুষদের দাড়ি রাখতে প্রেরণা দিয়ে নারীদেরও সাওয়াব অর্জনের সুযোগঃ

সম্মানিত সেসব নারীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, যারা স্বামীর দাড়ি রাখাকে পছন্দ করেন না বা রাখতে দেন না বা কেটে ফেলতে বাধ্য করেন, মেহেরবানি করে এ কাজটি থেকে আপনারা বিরত হোন। ইসলামের অন্যতম একটি শেআর তথা নিদর্শন দাড়িকে গুরুত্ব দিন। আপনার ছেলে, ভাই, বাবা এবং অন্যান্য পুরুষ আত্মীয়দের দাড়ি রাখতে যথাসাধ্য উদ্বুদ্ধ করুন। উৎসাহিত করুন। অনুপ্রাণিত করুন। আপনার প্রেরণায় তাদের কেউ দাড়ি রেখে থাকলে আপনিও সাওয়াবের অংশীদার হবেন ইনশা-আল্লাহ।

আসুন, দাড়িটা রেখে একটি সুন্নাত জীবিত রাখি, একটি সুন্নাত অন্ততঃ পালন করিঃ

প্রিয় ভাই! আসুন, দাড়িটা রেখে একটি সুন্নাত জীবিত রাখি, একটি সুন্নাত অন্ততঃ পালন করি। দাড়ি রাখবো, কি রাখবো না এই ব্যাপারে আর সন্দেহ-সংশয়ের বেড়াজালে ঘুরপাক না খেয়ে তাওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে ফিরে আসি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নিকট। রব্বে কারিমের সাথে চুপিচুপি ওয়াদা করি যে, জ্ঞাতসারে কখনো আর দাড়ি কর্তন-মুন্ডনের মত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কাছে ঘৃণিত কাজ করবো না। দাড়ি রাখার অনন্য এই আমলটি সুন্নাত তরিকায় পালন করার তাওফিক প্রার্থনা করি তাঁর নিকট। কায়োমনোবাক্যে ফরিয়াদ জানাই তাঁর দরবারে আলিশানে।

দাড়ি রেখে দিই আজ থেকে। জ্বি ভাই, আজ থেকেই ইরাদা করি দাড়ি রাখার। যেনতেন নয়, পাক্কা এবং শক্তভাবে নিয়্যাত করি। কারো সামান্য উপহাসেই যেন ভেঙ্গে না পড়ে আমার সেই নিয়্যাতের কাঠামো! বন্ধুর হালকা তাচ্ছিল্যে যেন নড়বড়ে হয়ে না যায় নিজের সাথে আমার বোঝাপড়া! যেন ছুটে না যায়, যেন টুটে না যায়- আল্লাহ তাআ'লার সাথে কৃত আমার গোপন ওয়াদা! আর অলসতা-উদাসীনতা-গাফলতের নিদ্রা নয়। সুন্নাতকে পাশ কাটিয়ে আর সোসাইটি ম্যানেজ করা নয়। আর লুকোচুরি-আত্মপ্রবঞ্চনা নয়। দোদুল্যমানতায় সিদ্ধান্তহীন থাকা আর নয়। পাছে লোকে কিছু বলে'র চিন্তায় এলোমেলো পথচলা আর নয়। পথ তো আমাদের একটিই। কুরআনের ঐশী আলোয় আলোকিত-উদ্ভাসিত প্রিয়তম রাসূলের পথ। প্রিয় নবীজীর রেখে যাওয়া সুন্নাতের মায়াময় জান্নাতের পথ। উত্তম আদর্শ এখানেই। কল্যান এখানেই। ইহ-পারকালিন মুক্তি এই পথেই। তাই আসুন, এই পাপ ও ফিতনাসংকুল জীবনে দাড়িটা সঠিক নিয়মে সুন্নাত মোতাবেক রেখে দিয়ে অন্তত একটি হাদিসের শ্রবণকারী ও অনুসরণকারীদের তালিকায় নিজেকে অন্তর্ভূক্ত করি। এর মাধ্যমে হয়তো মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার সন্তুষ্টি এবং তাঁর হাবীবের সুপারিশের আশা অন্তরে জাগিয়ে রাখতে পারবো। না হলে তো আমাদেরকে শেষ বিচারের দিন অস্বীকারকারীদের দলে দাঁড়াতে হবে। একটু ভেবে দেখি- আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কাজের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়ার পরেও আমরা সেই কাজটি করলাম না- এটা কি ক্ষমার যোগ্য?

কারণ, আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'অস্বীকারকারী ব্যতিত আমার উম্মতের সকলেই বেহেস্তে যাবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, অস্বীকারকারী কে? আল্লাহর হাবীব উত্তরে বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য অবলম্বন করে চলবে সে বেহেস্তে যাবে, আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করবে সে অস্বীকারকারী সাব্যস্ত হবে।'

শেষের প্রার্থনাঃ

আল্লাহ তাআ'লার কাছে রাসূলের সুন্নাতকে অস্বীকারকারী হওয়ার মত এমন দুর্ভাগ্য থেকে পানাহ চাচ্ছি। হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের সবাইকে আপনার সন্তুষ্টিমূলক কাজ করার তাওফিক দান করুন এবং যে কাজে আপনার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ রয়েছে তা থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকার শক্তি প্রদান করুন৷দাড়ির মত গুরুত্বপূর্ণ আমল সুন্নাতের আলোকে প্রত্যেককে পরিপালন করার ইচ্ছে, সাহস, সক্ষমতা এবং সুযোগ প্রাদন করে ধন্য করুন।

ভাই সাড়ে চুয়াত্তর এর দাড়ি রাখা কি ঐচ্ছিক? পোস্টটির প্রেক্ষিতে এই লেখা। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

এই পোস্ট সাড়ে চুয়াত্তর এবং মোঃ খুরশীদ আলমকে নিবেদিত- যারা দু'জনই ভালো লিখছেন। তারা লিখছেন ইসলাম বিষয়ে। কুরআন-হাদিসের আলোকে। সহজভাবে। তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। করে যাচ্ছেন। আল্লাহ পাক তাদের কবুল করুন।

দীর্ঘ নিবন্ধ পাঠ এবং সাথে থাকার জন্য আবারও কৃতজ্ঞতা। সকলে ভালো থাকুন। সকলকে কুশলে রাখুন মহান প্রতিপালক আল্লাহ জাল্লা জালা-লুহ। আমাদের তো তেমন কোনো উত্তম আমল নেই; অতি সামান্য, অতি নগণ্য যা-ও আছে, সেসবের কারণে নয়; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাঅ'লার অসীম দয়ার কারণেই শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন- এই প্রত্যাশায়...।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৮:৩৬
৯টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×