somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

৫০০ তম পোস্টে স্বাগত; পবিত্র কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের আসলে তেমন কোনো বিরোধ নেই; কিছু লোক বেহুদাই দু'টোকে আলাদা করে টক্কর লাগাতে চায়......

২৬ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

৫০০ তম পোস্টে স্বাগত; পবিত্র কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের আসলে তেমন কোনো বিরোধ নেই; কিছু লোক বেহুদাই দু'টোকে আলাদা করে টক্কর লাগাতে চায়......

মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বলেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা। সূরা ইয়াসীন এর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে-

وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ

অর্থাৎ, শপথ বিজ্ঞানময় কুরআনের।

তো কুরআন যে বিজ্ঞানময় এক ঐশীগ্রন্থ আল কুরআনের অন্য অনেক আয়াত এর স্বপক্ষে প্রমান বহন করে। কিন্তু কিছু লোক 'কুরআন বিজ্ঞানময়' একথা শুনলেই চোখ বড় বড় করে তাকায়। এটা আবার কি করে হতে পারে? দেড় হাজার বছর আগে যেখানে মানুষ বিজ্ঞানের ছোঁয়া-সংস্পশেরও বাইরে ছিল, সভ্যতা যেখানে থমকে ছিল মধ্যযুগের মরচে ধরা শেকলে- সেখানে সেই সময়ের কিতাব আল কুরআন বিজ্ঞানময় হতে পারে, এটা কিভাবে সম্ভব?

বিশাল এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে খেতে মাথা খারাপ হওয়ার যোগার অনেকের। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, কুরআনের কিছু কিছু আয়াত সম্ভবত বিশেষভাবে তাদের জন্যই। সেসব আয়াত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, আল কুরআন সত্যি সত্যিই বিজ্ঞানময়। বিজ্ঞানের উৎকর্ষ যতই সাধিত হচ্ছে আল কুরআনের প্রতিটি বাণীর সত্যতা মানুষের সামনে ততই উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। মানুষ এখন বিজ্ঞানমুখী। বিজ্ঞানের আশির্বাদে এখন মানুষ কুরআনে উপস্থাপিত প্রতিটি বিষয়ের সত্যতার প্রমান বাস্তবে প্রত্যক্ষ করে কুরআনকে গ্রহণ করে নিচ্ছে। কুরআনের কাছে ফিরে আসছে। সভ্যতার চকচকে মোড়কের আড়ালে ঘূণে ধরা পশ্চিমা বিশ্বে এই ফিরে আসার হার সবচেয়ে বেশি। এটা আনন্দের। এটা প্রশান্তির। সত্যের দিকে মানুষের এই প্রত্যাবর্তন ইনশাআল্লাহ বাড়তেই থাকবে। একসময় গোটা পৃথিবী ফিরে আসবে কুরআনের ছায়াতলে। পৃথিবীতে বয়ে যাবে শান্তির সুবাতাস।

জ্ঞানীগণ কুরআন এবং বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেন না। তারা জ্ঞানের আকর কুরআনের কাছে বারবার ফিরে আসেন। পক্ষান্তরে বিতর্ককারীগণ কুরআন নাযিলের সময় যেমন বিতর্কে লিপ্ত ছিলেন এসময়েও তাদের একশ্রেণির কাজ থেমে নেই। তাদের জন্য শুভকামনা। আসুন, প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বে নাযিল হওয়া আল কুরআনে বর্ণিত কিছু বিষয়ে চোখ বুলিয়ে দেখি যে, বর্তমান বিজ্ঞান এসব ব্যাপারে কুরআনের বক্তব্যের বিপরীত কিছু বলছে কি না-

চাঁদের নিজস্ব আলো না থাকাঃ

বিজ্ঞান মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কার করেছে যে, চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। কিন্তু আল কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاء بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا

কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র। -সূরা আল ফুরক্বান, আয়াত ৬১

চন্দ্র সূর্যের নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্ররিভ্রমনঃ

বিজ্ঞান মাত্র দু'শো বছর আগে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে যে, চন্দ্র এবং সূর্য নির্দিষ্ট কক্ষপথে ভেসে চলে। কিন্তু কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। আল্লাহ তাআ'লা বলেন-

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। -সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৩

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। -সূরা ইয়া সীন, আয়াত ৩৮

وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ

চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। -সূরা ইয়া সীন, আয়াত ৩৯

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। -সূরা ইয়া সীন, আয়াত ৪০

মানুষের আইডেন্টিটি বা পরিচয় শনাক্তকরণে ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবহারঃ

মানুষের আইডেন্টিটি বা পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষে্ত্রে অন্যান্য পদ্ধতির পাশাপাশি ফিঙ্গার প্রিন্ট আজকের আধুনিক পৃথিবীতে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। ইদানিংকালে এই পদ্ধতিটি বিজ্ঞান আবিষ্কার করলেও আল কুরআনে ১৪০০ বছর আগেই জানানো হয়েছে যে, মানুষের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মানুষকে আলাদাভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। প্রত্যেকের আঙ্গুলের ছাপ ইউনিক। একজনের আঙ্গুলের ছাপ অন্যজনের সাথে কখনও মিলবে না। আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-

أَيَحْسَبُ الْإِنسَانُ أَلَّن نَجْمَعَ عِظَامَهُ

মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না? -সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ৩

بَلَى قَادِرِينَ عَلَى أَن نُّسَوِّيَ بَنَانَهُ

পরন্ত আমি তার অংগুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম। -সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ৪

‘বিগ ব্যাং’ থিওরিঃ

ইতিপূর্বে ‘বিগ ব্যাং’ থিওরি ছিল না। কিংবা বলা উচিত, মানুষের জানার বাইরে ছিল। এটি আবিষ্কার হয় মাত্র বছর চল্লিশেক আগে। অথচ কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। ইরশাদ হয়েছে-

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

অবিশ্বাসীগণ কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? -সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩০

পানিচক্রঃ

পানিচক্রের কথা বিজ্ঞান গবেষনার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি বেশি দিন হয়নি। কিন্তু আল কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে-

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَسَلَكَهُ يَنَابِيعَ فِي الْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُهُ حُطَامًا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَذِكْرَى لِأُوْلِي الْأَلْبَابِ

তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। -সূরা যুমার, আয়াত ২১

লবণাক্ত ও মিষ্টি পানি একসাথে মিশ্রিত না হওয়াঃ

বিজ্ঞান এই সেদিন জেনেছে যে, লবণাক্ত ও মিষ্টি পানি একসাথে মিশ্রিত হয় না। কিন্তু আল কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। ইরশাদ হয়েছে-

مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ

তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন। -সূরা আর রহমান, আয়াত ১৯

بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ

উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না। -সূরা আর রহমান, আয়াত ২০

হাদিসের আলোকে ডান কাতে শুয়ে নিদ্রার উপকারিতা চিকিৎসা বিজ্ঞানেও প্রমানিতঃ

রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান কাতে শুয়ে ঘুমাতেন। তিনি আমাদেরকে ডান কাতে শুয়ে ঘুমানোর নির্দেশও প্রদান করেছেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, মেডিকেল সায়েন্সের আধুনিক গবেষণা প্রমান করেছে যে, ডান কাতে শুয়ে ঘুমালে হার্ট সব থেকে ভাল থাকে। হাদিসের ভাষ্য দেখুন-

হযরত সায়ীদ ইবনে আবূ উবাইদা রা: বলেন, হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- 'তোমারা যখন শুয়ার জন্য বিছানায় যাবে তখন প্রথমে অযু করবে, যেমন নামাযের জন্য অযু কর। অতঃপর ডান কাতে শুয়ে পড়বে।' –বুখারী শরীক

পিপীলিকা দলবদ্ধভাবে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন পদ্ধতিঃ

বিজ্ঞান এখন আমাদের জানাচ্ছে পিপীলিকা মৃত দেহ কবর দেয়, এদের বাজার পদ্ধতি আছে। পিপীলিকা দলবদ্ধভাবে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত - কুরআন আমাদের এতদবিষয়ে ধারণা দিয়েছে বহুকাল পূর্বেই। বর্ণিত হয়েছে-

وَحُشِرَ لِسُلَيْمَانَ جُنُودُهُ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوزَعُونَ

সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা
হল। -সূরা নামল, আয়াত ১৭

حَتَّى إِذَا أَتَوْا عَلَى وَادِي النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يَا أَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوا مَسَاكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُودُهُ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। -সূরা নামল, আয়াত ১৮

মদ হারাম হওয়ার যৌক্তিকতাঃ

আল কুরআন মদ পানকে হারাম ঘোষনা করেছে ১৪০০ বছর পূর্বে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও এখন প্রমান করেছে যে, মদ পান লিভারের জন্য ক্ষতিকর। ইরশাদ হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক- যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। -সূরা আল মা-য়িদাহ, আয়াত ৯২

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَآ أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ كَذَلِكَ يُبيِّنُ اللّهُ لَكُمُ الآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ

তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। -সূরা আল বাক্কারাহ, আয়াত ২১৯

শুকরের মাংস লিভার এবং হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকরঃ

ইসলাম শুকরের মাংসকে হারাম করেছে। ইসলাম যখন এটাকে হারাম ঘোষনা করে তখন পৃথিবীতে কোনো ল্যাবরেটরি ছিল না যেখানে পরিক্ষা করে জানা সম্ভব ছিল যে, শুকরের মাংস মানবদেহের জন্য উপকারী না কি ক্ষতিকর। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে আজ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, শুকরের মাংস লিভার এবং হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও কিছু নির্দেশের সাথে শুকুরের মাংস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করে বলেনঃ

ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴْﺘَﺔَ ﻭَﺍﻟﺪَّﻡَ ﻭَﻟَﺤْﻢَ ﺍﻟْﺨِﻨْﺰِﻳﺮِ

তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত প্রাণী, রক্ত ও শুকরের মাংস। -সুরা বাক্কারাহ, আয়াত ১৭৩

ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻣَﻴْﺘَﺔً ﺃَﻭْ ﺩَﻣًﺎ ﻣَﺴْﻔُﻮﺣًﺎ ﺃَﻭْ ﻟَﺤْﻢَ ﺧِﻨْﺰِﻳﺮٍ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭِﺟْﺲٌ

অর্থঃ মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস অপবিত্র। -সুরা আল আনআম, আয়াত ১৪৫

রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদনঃ

রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদনের ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান জেনেছে মাত্র কয়েক বছর আগে। কিন্তু পবিত্র কুরআন এই বিষয়ে বর্ণনা করেছে বহু পূর্বেই। ইরশাদ হয়েছে-

وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُّسقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهَا وَلَكُمْ فِيهَا مَنَافِعُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

এবং তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু সমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই
এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর। -সূরা মুমিনূন, আয়াত ২১

মানুষের জন্মতত্ত্ব, ভ্রুনতত্ত্বঃ

মানুষের জন্মতত্ত্ব, ভ্রুনতত্ত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে বিজ্ঞান জেনেছে মাত্র কিছু দিন আগে। কিন্তু আল কুরআন এই বিষয়ে জানিয়ে গেছে ১৪০০ বছর আগে। বর্ণিত হয়েছে-

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ

পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। -সূরা আলাক, আয়াত ১

خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ

সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। -সূরা আলাক, আয়াত ২

কুরআন বলছে, পুরুষই নির্ধারণ করে থাকে যে, আগন্তুক শিশুটি ছেলে না কি মেয়ে হবেঃ

ভ্রুনতত্ত্ব নিয়ে গবেষনার ফলে বিজ্ঞান আজ জেনেছে, পুরুষই নির্ধারণ করে থাকে যে, আগন্তুক শিশুটি ছেলে না কি মেয়ে হবে। কপাল কুচকে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠতেই পারে। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে- কুরআন এই কথা জানিয়েছে ১৪০০ বছর আগেই। দেখুন, আল্লাহ তাআ'লা কেমন স্পষ্টভাষী!

وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنثَى

এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী। -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৫

مِن نُّطْفَةٍ إِذَا تُمْنَى

একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়। -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৬

أَلَمْ يَكُ نُطْفَةً مِّن مَّنِيٍّ يُمْنَى

সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না? -সূরা আল কিয়ামাহ, আয়াত ৩৭

ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوَّى

অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। -সূরা আল কিয়ামাহ, আয়াত ৩৮

فَجَعَلَ مِنْهُ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنثَى

অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী। -সূরা আল কিয়ামাহ, আয়াত ৩৯

মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায় শিশু প্রথমে কানে শোনার যোগ্যতা লাভ করে পরে প্রাপ্ত হয় চোখে দেখার ক্ষমতাঃ

বিজ্ঞনের আজকের এই জয়যাত্রার কালে এসে আমরা বহু গবেষনার পরে জানতে পারি, একটি শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন সে সবার আগে কানে শোনার যোগ্যতা লাভ করে তারপরে প্রাপ্ত হয় চোখে দেখার ক্ষমতা। ১৪০০ বছর আগের বিদ্যুৎহীন, আধুনিক যন্ত্রপাতিবিহীন এক পৃথিবীতে মাতৃজঠরে ভ্রুনের বেড়ে ওঠার স্তরগুলো নিয়ে কুরআন কত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এবং বিস্তর আলোচনা করেছে, ভাবা যায়?মেডিকেল সায়েন্স গবেষনায় আজ এগুলো অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত!

মহান স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসে, শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। বর্ণিত হয়েছে-

ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ

অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। -সূরা আসসাজদাহ, আয়াত ৯

ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَّكِينٍ

অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। -সূরা আল মুমিনূন, আয়াত ১৩

ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ

এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড
থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। -সূরা আল মুমিনূন, আয়াত ১৪

إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا

আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। - সূরা ইনসান, আয়াত ২

পৃথিবীর আকার-আকৃতি নিয়ে কুরআনের বক্তব্যঃ

পৃথিবী দেখতে কেমন? এক সময় মানুষ মনে করতো, পৃথিবী লম্বাটে, কেউ ভাবতো, পৃথিবী চ্যাপ্টা, সমান্তরাল, নানান ভাবনা। কিন্তু কুরআন ১৪০০ বছর আগে জানিয়ে দিয়েছে, পৃথিবী দেখতে অনেকটা উট পাখির ডিমের মত গোলাকার।

আদিমকাল থেকে মানুষ ধারণা করতো যে, পৃথিবীর আকার হচ্ছে চ্যাপ্টা ।

১৫৯৭ সালে "ফ্রান্সিস ড্রেক" প্রথম পৃথিবীর চারদিকে নৌ-ভ্রমন করে প্রমান করেছিলেন যে, পৃথিবী গোলাকার। আর আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় আমরা জানতে পেরেছি যে, পৃথিবী গোলাকার। সর্বশেষ গবেষণায় স্যাটেলাইট যুক্ত হওয়ায় এর মাধ্যমে আমরা আরো জানতে পেরেছি যে, পৃথিবী আসলে সুষম গোলাকার নয় অনেকটা উপবৃত্তাকার বা উটপাখির ডিমের মত। যদিও এ বিষয়গুলোও আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে।

এ বিষয়ে আল-কুরআন কি বলে?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন-

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى وَأَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِير

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন? -সূরা লুকমান, আয়াত ২৯

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, রাত ধীরে ধীরে এবং ক্রমশ দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিনও ধীরে ধীরে রাতে রূপান্তরিত হয়। এ ঘটনা কেবল পৃথিবী গোলাকার হলেই ঘটতে পারে। পৃথিবী যদি চ্যাপ্টা বা সমতলভূমি হত, তাহলে রাত্রি থেকে দিনে এবং দিন থেকে রাত্রিতে একটা আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে যেত। অর্থাৎ সেকেন্ডের মধ্যে দিন হতো আবার সেকেন্ডের মধ্যেই কিছু বুঝে উঠার আগেই রাতের প্রবেশ ঘটতো।

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ

তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। -সূরা আল যুমার, আয়াত ০৫

এখানে আরবী يُكَوِّرُ শব্দটির অর্থ হচ্ছে “আচ্ছাদিত বা মোড়ানো” বা ”একটি জিনিষ দ্বারা অপর একটি জিনিষকে জড়িয়ে বা মুড়িয়ে দেয়া, যেমন- পাগড়ী যেভাবে পরিধান করা হয়।

এই আয়াতটি আমাদের বলে দেয় যে পৃথিবী সমতল নয় কারন পৃথিবী সমতল হলে পৃথিবীতে আলো হঠাৎ করে উদিত হতো ও হঠাৎ করে নিভে যেত, আর পৃথিবীর আকৃতি কেবল গোলাকার হলেই উপরের আয়াতের ঘটনাটি ঘটা সম্ভব।

কুরআন কিন্তু প্রায় ১৪০০ শত বছর পূর্বে পৃথিবী যে গোলাকার সেই বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়।

রেফারেন্স : ০১

ক) Principles Of Geographic Information , Editor Ott Huisman and Rof A. de , Page no: 192-205.
খ) গুগলে শুধু Earth Geoid Model লিখে সার্চ দিলেই চলে আসবে ।

অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন :

وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا

আর আল্লাহ্ পৃথিবীকে উহার পর ডিম্বাকৃতি করে তৈরি করেছেন। -সূরা আন নাযিয়াত, আয়াত ৩০

এই আয়াতে পৃথিবীর আকার বুঝাতে যে শব্দটি ব্যবহার হয়েছে তা হলো دَحَاهَا ’দাহাহা’। তাফসীর গ্রন্থের পুরনো অনুবাদগুলিতে এই আয়াতের অর্থ করা হয়েছে 'এরপর তিনি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছেন'। যেহেতু তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর আকার-আকৃতি সমন্ধে সে সময়কার মানুষদের তেমন কোন ধারণা ছিল না তাই তারা দাহাহা শব্দটিকে 'দাহবুন' এর সঙ্গে মিল রেখে অনুবাদ করেছেন যার অর্থ দাঁড়ায় প্রসারিত করা বা বিছিয়ে দেওয়া।

কিন্তু দাহা শব্দের অর্থ ‘উটের ডিম’। এক্ষেত্রে বলতে হবে, আরবী একটা শব্দের অনেকগুলো অর্থ থাকে। যেমন বাংলা 'বস' বলতে বুঝায় “প্রভু বা মালিক, আবার 'আসন' বা 'আসন গ্রহন করা' বুঝাতেও এটি ব্যবহৃত হয়। আবার English শব্দ 'Live' এর দুইটা অর্থ সবাই জানি একটা অর্থ “বাস করা অন্যটির অর্থ সরাসরি সম্প্রচার করা’’ এক্ষেত্রে বলতে হবে শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয় অবস্থান বুঝে।

নিম্নে دَحَاهَا দাহাহা’র দুইটি সাধিত শব্দ দেওয়া হলো-

আল-উদহিয়্যু (ا لادحي) = উটপাখির ডিম ০২।

রেফারেন্স ০২ :

دَحَاهَا ’দাহাহা’ এর প্রতিশব্দ “ লিংক ’’

আল-উদহুয়্যাতু (الادحوت) = উটপাখির ডিমের স্থান ।

বর্তমানে বেশীরভাগ লেখক এখন دَحَاهَا ’দাহাহা’ শব্দের অনুবাদ হিসেবে ডিম্বাকৃতি শব্দ ব্যবহার করছেন ০৩।

রেফারেন্স ০৩ :
ক) By Syed Vickar Ahamed And more, He has extended the earth (far and wide also in the shape of an egg (79:30).
খ) By Dr. Kamal Omar And the earth, after this stage, He gave it an oval form (79:30).

আসলে পৃথিবীর ঘূ্র্ণায়ন ও অভিকর্ষের প্রভাবে এটি সুষম গোলক নয়। সম্প্রতি স্যাটেলাইট হতে প্রাপ্ত ছবি ও বিভিন্ন জটিল যন্ত্রপাতির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা সুনিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আমাদের এ পৃথিবী অনেকটা উট পাখির ডিমের ন্যায়। কারন, মেরু অঞ্চলীয় ব্যাসার্ধের চেয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চলের ব্যাসার্ধ একটু বেশী হওয়ায় এটি বর্তুল আকৃতি বা ডিম্ব আকৃতি দেখায়। এইভাবে আল কুরআনে ১৪০০ বছর আগে পৃথিবীর আকৃতির বর্ণনা সঠিকভাবে দেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে। পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণের ব্যাসের তুলনায় নিরক্ষীয় ব্যাসের আপেক্ষিক পার্থক্য এটিকে একটি বর্তুল আকৃতি কিংবা ডিম্ব আকৃতি দান করেছে। আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি গঠনে এই আকৃতিটি কিছুটা বিকৃত হয়েছে, যাকে বলা হয় 'Geoid' যা একটি নাশপাতির অনুরূপ। পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধ্য হল ৬৩৭৮ কিলোমিটার, যেখানে তার মেরু অঞ্চলীয় ব্যাসার্ধ্য হল ৬৩৫৬ কিলোমিটার।

এই আয়াত থেকে একথাও বুঝা যায়, আদিকালে পৃথিবী এই আকৃতির ছিল না। পরবর্তীতেই এই আকৃতি প্রাপ্ত হয়। মহাকাশ বিজ্ঞানে পৃথিবীর বর্তমান আকার সম্পর্কে দুটি মতবাদ রয়েছে। প্রথম মতানুসারে, পৃথিবী ছিল সূর্য থেকে ছিটকে পড়া একটি টুকরো। দ্বিতীয় মতানুসারে, সূর্য ও পৃথিবী উভয়টিই একটি নীহারিকা থেকে গঠিত হয়েছে। উভয় মতই স্বীকার করে, প্রথম যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয় তখন তার বর্তমান আকার ছিল না। পরবর্তী সময়েই এটি ডিম্বাকার লাভ করেছে। এই আয়াতটি উভয় মতের সঙ্গে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।

রাত-দিনের হ্রাস-বৃদ্ধিঃ

পৃথিবীতে রাত-দিনের হ্রাস-বৃদ্ধির রহস্য সম্মন্ধে কুরআন কি বলে? এ বিষয়টি মানুষ জেনেছে খুব বেশি হলে এখন থেকে মাত্র দু'শো বছর আগে। কিন্তু কুরআন এই কথা জানিয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে! অবাক হলেন! অবাক হলেও এটাই বাস্তবতা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন-

رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ

তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক। -সূরা আর রহমান, আয়াত ১৭

فَلَا أُقْسِمُ بِرَبِّ الْمَشَارِقِ وَالْمَغَارِبِ إِنَّا لَقَادِرُونَ

আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের পালনকর্তার, নিশ্চয়ই আমি সক্ষম! -সূরা আল মাআ'রিজ, আয়াত ৪০

رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ

তিনি আসমান সমূহ, যমীনও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা এবং পালনকর্তা উদয়াচলসমূহের। -সূরা আস সফফাত, আয়াত ০৫

দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল কি?

বছরের প্রত্যেক দিনই সূর্য আকাশে ভিন্ন ভিন্ন কোণ (angle) তৈরি করে উদিত ও অস্তমিত হয়। গ্রীষ্ম ও শীতে সূর্যের উদয়াচল ও অস্তাচলের কোণে (angle) সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায়। আয়াতে এই দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বছর জুড়ে সূর্যের গতিপথ কেমন হয় তা নিচের ফিগারে দেখে নিতে পারেন।

উপরের চিত্রে লাল বৃত্ত দিয়ে কোণ (angle) নির্দেশ করা হচ্ছে। সবার বাইরের বৃত্তে ডিগ্রীতে কোণের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর নীল রেখাগুলো হচ্ছে সূর্যের সারাদিনের গতিপথ। নীল দাগগুলোর উপর লম্বা লম্বা ছোট কিছু দাগ রয়েছে। এগুলো দিনের বিভিন্ন ঘণ্টা নির্দেশ করে। বছরের ৬টি দিনে সূর্যের গতিপথ দেখানো হয়েছে। সবার নিচেরটি জুন ২১ এর, আরে সবার উপরেরটি ডিসেম্বর ২১ এর। আর এই পর্যবেক্ষণটি রটারডাম নামক স্থান থেকে গৃহীত। খেয়াল করুন:



জুনের ২১ তারিখ সেখানে ভোর ৪টায় সূর্য উত্তর থেকে ৫০ ডিগ্রী কোণ করে, অর্থাৎ ঠিক পূর্ব থেকে উত্তরে ৪০ ডিগ্রী কোণ থেকে উদিত হয়েছে।

ডিসেম্বরের ২১ তারিখ সেখানে সূর্য উদিত হয়েছে সকাল সোয়া ৮টায়। এবার সূর্য উদিত হয়েছে ঠিক পূর্ব থেকে দক্ষিণে ৪০ ডিগ্রী কোন করে। অর্থাৎ ৬ মাসে সূর্যের উদয়স্থল বা উদয়াচলের পার্থক্য হচ্ছে ৮০ ডিগ্রী।

একইভাবে অস্তাচলের ক্ষেত্রে জুন ২১ ও ডিসেম্বরের ২১ এ ৮০ ডিগ্রী পার্থক্য আছে।

এটাই কুরআনে উল্লিখিত দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের ব্যাখ্যা। উদয়াচল ও অস্তাচল প্রতিদিনই ভিন্ন হয়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও শীতে এর পরিবর্তন ভাল করে বোঝা যায়। তাই দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহজে উপলব্ধির জন্য আয়াতে এই দুই ঋতুর দিকেই ইঙ্গিত রয়েছে।

প্রিয় ভাই ব্লগার নতুন -কে এই ক্ষুদ্র লেখাটি উৎসর্গ করছি।

দীর্ঘ সময় নিয়ে পোস্ট পাঠ করে সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা।

আলহামদুলিল্লাহ, এই আইডিতে এটা ৫০০ তম পোস্ট। সামহোয়্যার ইন ব্লগের প্রতি অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ব্লগের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা, এর পরিচালনার সাথে যুক্ত কা_ভা ভাইসহ প্রত্যেকের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং কল্যানের দুআ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা কুশলে রাখুন সকলকে। সকল সৃষ্টি জগতকে। তাকে চেনার তাওফিক দিন আমাদের। তাকে ভালোবাসারও।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬
২৯টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×