সৌদি কর্তৃপক্ষের অন্যায় খাহেশ এবং মহামান্য(!) ট্রাম্পের অনৈতিক আস্ফালনঃ
সৌদি কর্তৃপক্ষের অন্যায় খাহেশঃ
সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের হিসেবে তাদের দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা তথা মিয়ানমারের আরাকানের নাগরিকদের সংখ্যা ৫৪০০০ জন। এই বিপুল সংখ্যক আরাকানি রোহিঙ্গার অধিকাংশরেই কোনো দেশের বৈধ পাসপোর্ট নেই। এই রোহিঙ্গারা ৩০-৪০ বছর কিংবা আরও বেশি সময় ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছে এবং সৌদি আরব নিজেই এর মধ্যে অনেককে নিয়ে গিয়েছিল। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশের ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরবে গিয়েছেন। সৌদি আরবে বসবাস করা এই ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে সৌদি সরকার। এমনকি রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট না দিলে সেখানে অবস্থানরত ২২ লাখ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
মানবিক কারণ দেখিয়ে ৮০/৯০ সালের দিকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয় সৌদি আরব। আশ্রিত সেসব রোহিঙ্গা নাগরিক সৌদি আরবে ঘরবাড়ি বানিয়ে সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে যুগের পর যুগ ধরে থাকছেন, ব্যবসা বানিজ্য করছেন, বিয়ে শাদি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাদের অনেকে সৌদি আরবের লোকদের মতই আরবি ভাষাভাষী। তাদের ছেলে মেয়েরা সৌদি আরবের স্থানীয়দের সাথে বিবাহ শাদি করে আত্মীয়তা পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ইদানিং তাদের ৮০/৯০ সালের দিককার সেই মানবিকতায় ভাটা পড়তে দেখা গেছে। এখন এত বছর পরে এই পর্যায়ে এসে তারা যখন দেখলেন যে, বাংলাদেশ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, তো বাংলাদেশকে দুর্বল ভেবে, গোটা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক বোঝা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন বাংলাদেশের কাঁধে। আহ, কি মজা! সৌদি সরকারের ঘৃণিত এই অপচেষ্টা সফলতার মুখ দেখলে অত্যাচারী, নির্যাতক মিয়ানমারের চেয়ে তাদেরকে খারাপ বলার সুযোগ থাকে কোথায়? ঘোলা পানিতে মাছ শিকার সম্ভবতঃ একেই বলে!
অন্যদিকে আগে থেকে অবস্থানরত ৩ লাখসহ প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস এখন বাংলাদেশে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে সৌদি আরবের এই অন্যায় আব্দার। এক্ষেত্রে সৌদি সরকারের বুদ্ধিদাতা যে ইসরায়েল তা বলারই অপেক্ষা রাখে না। ইসরায়েলের সাথে সৌদি রাজ পরিবার বিশেষতঃ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের গত কয়েক বছরের গভীর সখ্যতা একথা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। ইসরায়েল হঠাৎ করে কোনো কিছু করে না। কাউকে মারতে চাইলে প্রথমে কৌশলে এগোয়। তারপরে ঘরে ঢুকে, অন্তরে-অন্ধরে-কোন্দরে ঢুকে তাকে শেষ করে, তিলে তিলে চেটেপুটে খেয়ে নিঃশেষ করে। যেমনভাবে ছলেবলে কৌশলে ফিলিস্তিনকে গ্রাস করেছে। অতঃপর যুগ যুগ ধরে, কালে কালে, পর্যায়ক্রমে, দেখেশুনে, বেছে বেছে, গুণে গুণে, ধরে ধরে সেখানকার বৈধ ভূমিপুত্রদের উৎখাত করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া অভিশপ্ত এই ইসরায়েলের পরামর্শেই হয়তো সৌদি কর্তৃপক্ষ ঠান্ডা মাথায় নতুন ফন্দি ফেদে এগুনোর চিন্তা করছেন। তারা তাদের দেশে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের বোঝা যে কোনো উপায়ে নিজেদের মাথা থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন। সকল দিকের সুবিধা অসুবিধা যোগ বিয়োগ করে, ভেবে চিন্তে শেষমেষ অসহায় দুর্বল বাংলাদেশকেই তাদের পছন্দ হয়েছে। এর জন্যই অবশেষে বাংলাদেশের কাছে এই অন্যায় আব্দার! এর জন্যই এই কূট কৌশল! তারা এখনই বাংলাদেশকে বলছেন না যে, ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশকে ফেরত নিতে হবে। তারা বাংলাদেশকে শুধু পাসপোর্ট দিতে আব্দার করছেন।
আহ! কি মজার নাটকীয়তা! কেউ একজন পরম শুভাকাঙ্খী সেজে আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বুদ্ধি দিচ্ছেন, 'তুমি শুধু তোমার পৈত্রিক ভিটার এই অংশটুকু আমার নামে দলিল করে দাও। আমি তোমার ঐ জমিতে এখনই বসবাসের উদ্দেশ্যে আসছি না।'
আহ! কি মহানুভবতা! কি দয়া আপনার প্রতি! কি বিশাল উদারতা! আপনি আপনার পৈত্রিক জমি তার নামে বিনামূল্যে দলিল করে দিলে সমস্যা কি? তিনি তো আর এখনই আসছেন না আপনার জমিতে!
এখনই আসছেন না, কিন্তু যখনই দরকার হবে তখনই তিনি যে আসবেন, সেটা আর বলছেন না ভদ্রলোক।
সৌদি কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক আব্দারের পেছনে লুকিয়ে থাকা মহানুভবতাও এই লোকটির মহানুভবতার সাথে একেবারে মিলে যায়! বাংলাদেশের প্রতি সৌদি সরকারের এই মহানুভবতা পরিমাপেরই যোগ্য নয়। এটা এতটাই গভীর যে এর তুলনাও হয় না। কিন্তু সত্যিকারের সত্যটা হচ্ছে, সত্যিকারের স্বার্থবাদী ভবঘুরের মুখ যদি কেউ দেখতে চায় তাহলে তার উচিত অপরিনামদর্শী এই উল্লসিত যুবরাজের দিকে তাকানো।
অশীতিপর বৃদ্ধ কর্মক্ষমতাহীন বর্তমান সৌদি বাদশাহ সালমানের আড়ালে থেকে কলকাঠি নেড়ে চলা সকল অপকর্মের হোতা এই যুবরাজের হাতেই হয়তো সৌদি আরবের বর্তমান রাজপরিবারের পতন তরান্বিত হবে।
মহামান্য(!) ট্রাম্পের অনৈতিক আস্ফালন : শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিতে পারছেন না তিনিঃ
নভেম্বরের নির্বাচনে হারলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ভাষ্য, নির্বাচনে হারলে দেখতে হবে কী হয়েছে!
ডাকযোগে ভোটের ব্যাপারে ট্রাম্প তাঁর সন্দেহ আবারও প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করার সময় ট্রাম্পের কাছে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন, তিনি কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, মহামারির সময় ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে তিনি বিশ্বাস করেন, ক্ষমতা হস্তান্তরেরই কোনো দরকার হতো না।
ডাকযোগের ব্যালট সরিয়ে নিলে সবই শান্তিপূর্ণ হতে পারে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরেরই কোনো প্রয়োজন হবে না।
ইনি হচ্ছেন বিশ্ব মোড়ল। তার ভাষা এবং ভাষ্য দেখুন। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে তিনি কত সুন্দর করে বলতে পারলেন যে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর তার কম্ম নয়! আহা, বিশ্ব শান্তির মোড়লকে যে এমন হতেই হবে!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৯