somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

সালামের নামে কদমবুচি বা পদচুম্বন করা নিয়ে কিছু কথা...

২৮ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

সালামের নামে কদমবুচি বা পদচুম্বন করা নিয়ে কিছু কথা...

আমাদের সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠ বা মুরব্বি শ্রেণির ব্যক্তিবর্গের পা ছুঁয়ে কাউকে কাউকে সালাম করতে দেখা যায়। কদমবুচিও বলা হয় এই কাজটিকে। প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলামে এর বৈধতা কতটুকু? কিংবা, ইসলামী শরিয়ত এই কাজটি করার অনুমতি আদৌ দেয় কি না।

কদমবুচির এই প্রচলন এক সময় ব্যাপকাকারে ছিল আমাদের সমাজে। সমাজের কথা বলি কেন! আমাদের বৃহত্তর পরিবারেও দেখেছি এই কুপ্রথাটির প্রচলন। আমি একেবারেই ছোট তখন। শৈশব পার করিনি হয়তো। তবু, ঘটনাটি মনে আছে পষ্টই, কোনো এক বিয়ের অনুষ্ঠানে মুরব্বি সম্পর্কীয় এক আত্মীয়কে কদমবুচি না করার কারণে কঠিন তিরষ্কারের মুখে পড়তে হয়েছিল নববধুকে। সামাজিক প্রথা ভঙ্গ বলে কথা! বউ বেচারিকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দঘন দিনটিতে মান-সম্মান হারানোর পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়েছিল। মাথায় নিতে হয়েছিল 'বেআদব' -এর তকমা। অনাকাঙ্খিত তিরষ্কার, অসহনীয় ভর্ৎসনা আর অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে লজ্জা, অপমান আর অপদস্ততায় ন্যূজ বেদনাহত এবং অশ্রুসিক্ত নববধুর দুর্দশা দর্শনে ব্যথিত না হয়ে উপায় ছিল না আমাদেরও।

যাক, আলহামদুলিল্লাহ, দিন আস্তে আস্তে পাল্টেছে। পাল্টাচ্ছে দিনকে দিন। আশার কথা হচ্ছে, দিন বদলের এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার আলো যত ছড়িয়েছে, কুশিক্ষার অন্ধকার ততই দূরিভূত হয়েছে সমাজ বক্ষ থেকে। সামাজিক ভ্রান্ত অনেক রুসম রেওয়াজ এবং কুসংস্কারের মূলোৎপাটন হয়েছে শিক্ষা-দীক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথেই। সঙ্গত কারণে, গোড়ামির আশ্রয় নয়, উদার হতে হবে আমাদের। পুরাতনকে আগলে ধরে থাকার মধ্যেই সঠিকতা এবং সফলতা- এই ধারণা কোনো কোনো বিষয়ে সঠিক হলেও সকল ক্ষেত্রে নয়।

আধুনিকতাকে বহুভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। তবে, কল্যানকর নতুন কিছুর আগমনকে স্বাগত জানানোর মানসিকতাকেই আধুনিকতা বলা যায় কি না, ভেবে দেখা যেতে পারে। আমরা না জানার কারণে একটা সময়ে আরবি হরফ ভুলভাবে উচ্চারণ করতাম। 'বে', 'তে', 'সে' পড়তাম। 'বে', 'তে', 'সে' -এর দিন শেষ হয়ে নতুন করে 'বা', 'তা', 'সা' -এর সবক যখন আমাদের সামনে এসেছে, আমরা কি তা গ্রহন করিনি? আমাদের দেশে নামের শুরুতে এক সময় 'শ্রী' যুক্ত করার চল ছিল। এক সময়ে 'শ্রী'-এর স্থানে যখন 'মুহাম্মদ' যুক্ত হয়েছে তখন কি আমরা তা বরণ করে নিইনি? ধুতির পরিবর্তে লুঙ্গি যখন লজ্জা নিবারণ ও সৌন্দর্য্য বর্ধনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জায়গা করে নিয়েছে তখন কি আমরা তা গ্রহণ করে নেইনি? এরকম অসংখ্য প্রথা এবং চল বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের আচরিত জীবনে একটা সময়ে স্থান করে নিয়েছিল। দিনকে দিন আমরা আধুনিকতার দিকে এগুচ্ছি, লেখা পড়া জানা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, আগেকার মত এখন আর চিঠির পাঠ শুনতে আরেক বাড়ি কিংবা গ্রামে যেতে হয় না, সবার চোখ ক্রমে খুলে যাচ্ছে, আগে নিজের গ্রাম আর পার্শ্ববর্তী হাট-বাজার দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল অনেকের পৃথিবী, এখন ছোট্ট শিশুও পৃথিবীর সঠিক পরিধি জানা, সে ইউরোপ চেনে, আমেরিকা চেনে, গ্রহ-নক্ষত্র, সাগর-নদী চেনে, পাহাড়-ঝর্ণা চেনে। জ্ঞানের এই অব্যাহত আলোর বিকিরণ আমাদের দেখতে সাহায্য করছে, আবদ্ধ অন্ধকারগুলো আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে, ফলে সেগুলো বর্জন করাও সহজ হচ্ছে। এগুলোর মতই কদমবুচির প্রচলনটিও ইসলামের রীতি না হওয়ায়, কুরআন হাদিসের শিক্ষার বিপরীত প্রথা হওয়ায় দিনকে দিন হারিয়ে গেছে সমাজ থেকে। বাদ বাকি যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তারও আশু অপনোদন ক্রমান্বয়ে লক্ষনীয় ইনশাআল্লাহ।

হাদিস এবং সুন্নাহর মানদন্ডে অনুত্তীর্ণঃ

বস্তুতঃ পা ছুঁয়ে সালাম করা, কদমবুসি করা বা পায়ে চুমু খাওয়া, পদধূলি নেয়া – এর প্রতিটি কাজই হচ্ছে হাদিস এবং সুন্নাহর মানদন্ডে অনুত্তীর্ণ সামাজিক প্রথা। উপরন্তু এটি শিরকে লিপ্ত একটি সম্প্রদায়ের অনুকরণে নিকৃষ্ট বিদআ’ত। মূলতঃ বিগত শতাব্দিগুলোর অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর কুসংস্কারের ফল ছিল এগুলো। কবর এবং মাযার পূজারী কিছু অসাধূ ব্যবসায়ী মুসলমানদের মাঝে এই কুপ্রথা ঢুকিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এসব লোক কবর, মাযার ও তাদের তথাকথিত পীরদেরকে (সত্যিকারের পীর বুজুর্গদের আমরা শ্রদ্ধা করি এবং তারা এইসব শরিয়ত বিরোধী কাজ কখনোই নিজেরাও করেন না এবং কাউকে করার জন্য অনুমোদনও দেন না) সিজদাহ পর্যন্ত করে থাকে (নাউযুবিল্লাহ)। সুতরাং, পা ছুঁয়ে সালাম করা এদের কাছে কোন ব্যাপারই নয়।

কিছু লোক সালামের চেয়ে কদমবুসীকে বেশি গুরুত্ব দেনঃ

আমাদের সমাজে কিছু লোককে দেখা যায়, তারা মুখে সালাম দেয়ার চেয়ে কদমবুসীকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেন। কেউ কেউ আবার কদমবুসীকেই সালাম করা বলে থাকেন। কোনো কোনো লোককে মুখে সালাম না করে শুধু কদমবুসী করতে দেখা যায়। অথচ একজন মুসলমানের সাথে অন্যের দেখা সাক্ষাৎ হলে মুখে সালাম দেয়া এবং শুনিয়ে স্পষ্টভাবে উত্তর প্রদান করা ইসলামী শরিয়তের নির্ধারিত আমল এবং এটাই পারস্পারিক সম্ভাষনের সুন্নাত পদ্ধতি।

মতভিন্নতা যতই থাক, সুন্নাতে রাসূলই মুসলমানদের একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শঃ

আমরা যদি ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের কথা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের তাকাতে হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসৃত নীতি এবং আদর্শের দিকে। আমাদের ফিরে যেতে হবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায়। জেনে নিতে হবে, কেমন ছিল তাঁর আমল, কেমন ছিল তাঁর সাহচর্য্য-সোহবতপ্রাপ্ত সাহাবায়ে কেরামের আমল, কেমন ছিল ইসলামের সোনালী যুগগুলোর উত্তম সময়ের বিজ্ঞ, বিচক্ষন এবং জ্ঞানী ব্যক্তিগণের আমল। বস্তুতঃ খাইরুল কুরূনের কোনো যুগের মুহাক্কিক, মুত্তাকি কোনো অনুসরণীয় ব্যক্তি থেকেই কদমবুচির কোনো প্রমান পাওয়া যায় না। যাবে কি করে? তারা তো অনুসরণ করতেন রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে এই কাজটি কখনো করেননি। শুধু তিনিই নন, তাঁর কোনো সাহাবি থেকেও এই আমলটির প্রমান পাওয়া যায় না। কারণ, তাঁর সান্নিধ্য, সাক্ষাৎ এবং সাহচর্য্যলাভের উদ্দেশ্যে সুদীর্ঘ তেইশ বছরের নবুয়ত জীবনে তাঁর দরবারে ধারণা করা যায়, কমবেশি লক্ষাধিক সাহাবীর আগমন ঘটেছে। এসব সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ দু'একবার এসেছেন। কেউ কেউ বেশি সংখ্যকবার প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সান্নিধ্য এবং সাক্ষাতলাভে ধন্য হয়েছেন। কেউ হয়তো হাজার বার কিংবা তারচেয়েও বেশি সংখ্যকবার সাক্ষাতপ্রাপ্তির সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

দেখা-সাক্ষাতর সুন্নত সালাম, মুসাফাহা এবং মুআনাকাঃ

কিন্তু লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, এ সকল ক্ষেত্রে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সাক্ষাতের প্রাক্কালে তাঁদের আচরিত সার্বক্ষনিক আমল ছিল সালামের আদান প্রদান। কখনো কখনো দেখা হলে তাঁরা সালামের পরে হাত মিলিয়েছেন অথবা আরেক ধাপ অগ্রসর হয়ে মুসাফাহা করেছেন। এর বাইরে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দু'একটি ক্ষেত্রে তাঁরা একজন আরেকজনের হাতে বা কপালে চুমু খেয়েছেন। এর বেশি, বড় জোর মুআনাকা বা কোলাকুলি করেছেন। অতএব, হাদিসের কিতাবগুলোর বর্ণনানুসারে, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল হিসেবে সালাম, মুসাফাহা বা করমর্দন, হাতে বা কপালে চুম্বন এবং মুআনাকা বা কোলাকুলি করা সুন্নত। পরস্পর দেখা সাক্ষাতকালে আমল হিসেবে এগুলোই সুন্নত হিসেবে সুসাব্যস্ত। এর বাইরে সাক্ষাতকালে একে অপরকে কুর্নিশ করা, প্রণাম করা, কদমবুচি বা পদধূলি নেয়া, মাথা নিচু করা, জোড় হাত কপালে তুলে আত্মসমর্পনের ভঙ্গিতে সম্মান প্রদর্শন করা, সিজদার মত ভঙ্গি করে ভক্তি বা শ্রদ্ধা প্রকাশ করা ইত্যাদি প্রতিটি কাজই সুন্নত পরিপন্থি এবং কোনো কোনোটি অন্যান্য ধর্ম ও মতের আচরণ হওয়ায় অধিকন্তু এগুলোর সাথে শিরক, বিদআতসহ অন্যবিধ পাপের বিষয় জড়িত থাকায় এগুলো সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। শিরক এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ্‌ তাআ’লা বলেন,

إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তাআ’লা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন আর তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেন। আর জালিম (মুশরিকদের) জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। -সূরা আল-মায়িদাহঃ আয়াত ৭২ এর অংশ

কদমবুচি যদি জায়েজই হতো, সাহাবায়ে কেরামই প্রথম করতেন এই কাজটিঃ

সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম এর কাছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন নিজেদের জান মাল সবকিছুর উপরে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার পাত্র। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভালোবাসায় তারা অকাতরে নিজেদের জীবন দানে সামান্যতম কুন্ঠা বোধ করতেন না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশে তারা এমনও দেখা গেছে যে, নির্ঘাত মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখেও ঝাঁপিয়ে পড়তেন জিহাদের ময়দানে। সাহাবায়ে কেরাম রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মর্যাদা জানতেন। তাদের এও জানা ছিল যে, রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোবারক জিসম এর সামান্য একটু পরশ এবং স্পর্শও মহামূল্যবান। তাদের ভালো করেই জানা ছিল যে, রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একটু ছুঁয়ে নিতে পারাও সৌভাগ্য এবং বুলন্দ কিসমতের বিষয়। কিন্তু কই? হযরত আবু বাকার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, ফাতিমা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা, বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুসহ তাঁদের মত প্রথম কাতারের সাহাবীগণকে একবারও রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কদমবুচি করতে দেখা যায়নি! অথচ, তাদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দরবারে বারংবার এসেছেন। বারবার দেখা সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু কেউ কখনো একটিবারের জন্যও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কদম মুবারকে চুমু খাননি বা সেখানে হাত রেখে সেই হাতেও চুমু খাননি। কদমবুচি যদি জায়েজ কিংবা উত্তম কোনো কাজই হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরামগণেরই তো এই কাজ সর্বাগ্রে এবং সবচেয়ে বেশি করার কথা। কারণ, রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পা মোবারকের চেয়ে বরকতময় পা আর কার থাকতে পারে? আর তাঁর পায়ের ধুলির চেয়ে উত্তম এবং মর্যাদাপূর্ণ ধূলি কার পায়ে থাকতে পারে? সাহাবায়ে কেরাম যদি এই কাজকে জায়েজ কিংবা উত্তম বলে বিশ্বাস করতেন তাহলে তো অবস্থা এই দাঁড়াতো যে, রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পা মোবারকে চুমু খাওয়ার জন্য, কদমবুচি করার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে রীতিমত যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিত। তাই সাহাবায়ে কেরাম যেহেতু পিয়তম রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবচেয়ে বেশি মুহাব্বত করার পরেও তাঁর কদমে চুমু খাওয়া বা কদমবুচি করার কাজটি কস্মিনকালেও করেননি, সঙ্গত কারণে জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রেরই বুঝে নেয়া অতি সহজ যে, কদমবুচি বা পা ছুঁয়ে সালাম করা ইসলামী সংস্কৃতি বা কালচারের অংশ নয়, বরং পরস্পর সাক্ষাতকালে নিঃসন্দেহে এটি অমুসলিমদের একটি প্রথা। আর বলা বাহুল্য, যেটা ইসলাম ধর্মের কালচার বা সংস্কৃতিই নয়, সেটাকে সালাম বলা রীতিমত অন্যায়, সাযুজ্য বিবেচনায় এটিকে বরং প্রনাম বলাই যুক্তিসিদ্ধ।

দুই চোখের মাঝে কপালে চুম্বন করা বৈধঃ

এতদ্ব্যতিত, মুসলিমদের জন্য সম্ভাষনের এমন কোনো রীতি বা প্রথা বৈধ হতে পারে না যেখানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সামনে মাথা নত করতে হয়। এমনকি, সালাম ও মুসাফাহাহ করার সময়ও মাথা নত করা বৈধ নয়। সালামের পর বিশেষ শ্রদ্ধা, সম্মান বা হৃদ্যতা প্রদর্শনের লক্ষ্যে দুই চোখের মাঝে কিংবা কপালে চুম্বন করা বৈধ। এই ধরণের চুম্বনের বিষয়য় হাদিস দ্বারা প্রমানিত। যেমন- জাফর বিন আবু তালিব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হাবশা থেকে ফিরে এলে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথে মুআনাকা করে তার দুই চোখের মাঝে কপালে চুম্বন দিয়েছিলেন। -ইবনে উসাইমিন; সিলসিলাহ সহিহাহঃ ৬/১/৩৩৮

আফসোস! হায় আফসোস!

হায় আফসোস! অন্য জাতির অন্ধ যত অনুকরণ দেখা যায় মুসলিমদের মধ্যে! অন্য ধর্মের কোনো লোককে দেখা যায় না, মুসলমানদের কোনো কিছুকে অন্ধভাবে আকড়ে ধরতে, ভালোবেসে তার অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে। এই কারণে হৃদয়ে ব্যথার ঢেউ ওঠে, অন্তরে বেদনার হাহাকার লুটোপুটি খায়, প্রশ্নের পরে প্রশ্ন জাগে- দিক ভ্রান্ত মুসলিম জাতি কোন পথে চলছে আজ? কেন তারা অন্যদের প্রতি এত আসক্ত? অপরের সংস্কৃতি ও কালচার ফলো করার জন্য কেন তারা এত অস্থির? কেন এত অধীর? কেন এমন ব্যগ্র এবং উদগ্র?

মাথা নত হবে কেবল আল্লাহ তাআ'লার সামনেইঃ

প্রসঙ্গতঃ পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেলে মাথা নোয়াতে হয়। কোনো মানুষের সামনে মাথা নোয়ানো বা ঝুঁকানো শিরক। মুসলমানদের মাথা শুধুমাত্র এক আল্লাহর সামনেই নত হয়। নামাযের রুকু ও সিজদায়। অন্য কারো জন্য নয়। অন্য কোথাও নয়। বাদশাহর সামনে নয়। রাজার সামনে নয়। বাবার সামনে নয়। শিক্ষকের সামনে নয়। কারও সামনেই নয়। সমস্যা হচ্ছে সমাজের অজ্ঞ লোকদেরকে নিয়ে। এরা জানে না ইসলাম একফোটা। জানে না কুরআন হাদিস। জানে না শরিয়তের নির্দেশনা। জানে না দ্বীনের সঠিক বিধি-বিধান। কিন্তু ফতোয়ার বেলায় ওস্তাদ। বড় বড় ফতোয়া দিয়ে নিরীহ বউ বেচারীকে পর্যন্ত দাসী-বাঁদিতে পরিণত করে নেন নিজেদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আর ভোগ উপভোগের পথকে নিষ্কন্টক করার জন্য। ইসলামকে এরা মানুষের সামনে ভুলভাবে উপস্থাপন করেন নিজেদের আরাম আয়েশ আর সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে নিরুপদ্রব করার লক্ষ্যে। এই শ্রেণির লোকেরাই বউকে দিয়ে, কাজের লোকদের দিয়ে, পীরের বেশ ধারণ করে মুরিদদের দিয়ে, অধীনস্তদের দিয়ে কদমবুচি গ্রহণ করেন। শুধু কদমবুচিই নয়, নিয়ে থাকেন নানাবিধ খেদমতও। তৃপ্ত পরিতৃপ্ত হওয়ার চেষ্টায় রত হন বৈধ এবং অবৈধ বহুবিধ সেবায়।

গঞ্জিকাসেবীদের কাছে কদমবুচির বড় কদরঃ

গঞ্জিকাসেবীদের কাছে কদমবুচির বড় কদর। জ্বি, গাজা সেবনের উপযুক্ত এবং নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিগণিত আমাদের দেশের তথাকথিত বাবাদের দরবারগুলো। মাযার কেন্দ্রিক এসব দরবারে ইসলামের আদর্শবিচ্যুত লোকদের মিলন মেলা জমে ওঠে। ইসলামের মূল শিক্ষা এবং আদর্শবিহীন এক দল মানুষ, ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নত- কোনোকিছুরই যাদের কাছে কোনো মূল্য নেই, সাধারনতঃ সেসব লোকই এসব মাযারের সাথে ঘনিষ্ট। ইসলামে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দাপালনকে ফরজ করা হলেও এরা এই ফরজের ধার ধরার প্রয়োজন আদৌ মনে করেন না। বউকে নিয়ে যান প্রদর্শনীর জন্য। বাবার দরবারে। মাজারের মজমায়। ওরশের নামে, জশনে জুলুসের নামে এরা যেসব কাজকর্ম করে থাকেন, সেসবের দূরতম কোনো সম্পর্ক ইসলামের সাথে নেই। এরা এদের স্ত্রী কন্যাদের দিয়ে বাবার পায়ে কদমবুচি করান, যা অনেকগুলো হারাম কাজকে একত্রিত করে। এরা মূলতঃ সরলা, অবলা নিজেদের পরিবারভুক্ত নারীদেরকে এইসব অপকর্মে বাধ্য করে থাকেন। এরাও এক জাতের কঠিন তেলবাজ বৈকি! ধারণা করা অমূলক নয় যে, সম্ভবতঃ এই ধরণের লোকেরাই আল্লাহ তাআ'লাকে সিজদা দেয়ার পরিবর্তে কালে ভদ্রে মানুষকে সিজদা দিতেও কার্পণ্য করেন না। এরা আল্লাহ তাআ'লাকে খুশি করার পরিবর্তে মানুষকে খুশি করার জন্য বেশি তৎপর হয়ে থাকেন। ধর্মীয় বিধি-বিধানকে উপেক্ষা করে আত্মমর্যাদা ও স্বকীয়তাবিবর্জিত এরাই এর ওর পায়ের ধূলা নেয়ার জন্য অন্যের পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়তেও সামান্য দ্বিধাবোধ করেন না।

বস্তুতঃ এসব লোকদেরকে ইসলাম শেখানো জরুরী। এদের মূর্খতার কারণে পুরো সমাজ কলুষিত হচ্ছে। বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে ঘরে বাইরে। কারণ, এদের নিয়ে সমস্যা দ্বিমুখী। একে তো এরা নিজেরা ইসলাম জানে না – দ্বিতীয়তঃ অন্যদের ইসলাম পালনে বাঁধার সৃষ্টিও করে থাকে এরাই। কিন্তু প্রিয় পাঠক, সমাজে পাপ এবং অনাচারের সয়লাব ঘটতে থাকলে এর ফলে যদি শাস্তি আসে, ভালো-মন্দ তা সকলকেই স্পর্শ করে। তাই সমাজ থেকে শিরক, বিদআত, কুসংস্কার ও পাপাচার উৎখাত করার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের দাওয়াত এবং দ্বীনের সহিহ পয়গাম প্রতিটি মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেয়ার প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হওয়া ব্যতিত অন্য কোনো পথ নেই।

আনুগত্যের সঠিক পথ ও পন্থাঃ

প্রসংঙ্গতঃ পিতা-মাতা এবং শ্বশুড়-শ্বাশুড়িসহ মুরব্বি শ্রেণির আত্মীয়-স্বজনের মন রক্ষায় তাদের আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি পালন করার চেষ্টা করা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ভালো একটি গুণ। কিন্তু অবৈধ কোনো কাজের ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাশা বা আদেশ-নির্দেশ মেনে চলার সুযোগ নেই। এগুলো ইসলাম জায়েজ করেনি। এমনকি, হারাম কাজে শুধু তাদের নয়; স্বামীর আদেশও মান্য করা যাবে না। ইসলামের বিধান হচ্ছেঃ জায়েজ কাজে পিতা-মাতা, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি কিংবা স্বামীর আনুগত্য করতে হবে। পক্ষান্তরে, পিতা-মাতা, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি কিংবা স্বামী যদি এমন কোনো কাজের নির্দেশ দেন, যা কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীত তাহলে সেটা মানা যাবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যায়, আজকাল অনেক স্বামীই (মুসলিম!) এটা পছন্দ করেন না যে, তার স্ত্রী পর্দা করুক। প্রকৃতপক্ষে এই ধরণের বিষয়াদিতে স্বামীর অনুগত্য করার নূন্যতম অবকাশ নেই। কারণ, স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

﴿ وَإِن جَٰهَدَاكَ عَلَىٰٓ أَن تُشۡرِكَ بِي مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٞ فَلَا تُطِعۡهُمَاۖ وَصَاحِبۡهُمَا فِي ٱلدُّنۡيَا مَعۡرُوفٗاۖ ﴾ [لقمان: ١٥]

আর তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে শিরক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে। -সূরা লুকমান, আয়াত: ১৫

আর এ প্রসংগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা হচ্ছে-

« إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوفِ » . (متفق عليه).

আনুগত্য চলবে শুধু সৎকাজে। -বুখারী, হাদিস নং- ৬৮৩০; মুসলিম, হাদিস নং- ৪৮৭১

অর্থাৎ, দ্বীন বিরোধী, শরিয়ত বিরোধী কোনো কাজে কারও আনুগত্য করা যাবে না।

রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:

« لا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيةِ الخَالِقِ » . (رواه أحمد و الحاكم).

স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। -আহমাদ ও হাকেম রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং হাদিসটিকে সহীহ বলেন

আর কেউ যদি মানুষকে খুশি করার জন্য আল্লাহর আদেশ অমান্য করে তাহলে তার পরিণতি সম্পর্কে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( مَنِ الْتَمَسَ رِضَى اللَّهِ بِسَخَطِ النَّاسِ ، رَضِيَ الله عَنْهُ ، وَأَرْضَى النَّاسَ عَنْهُ ، وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَا النَّاسِ بِسَخَطِ اللَّهِ ، سَخَطَ اللَّهُ عَلَيْهِ ، وَأَسْخَطَ عليه الناس ) رواه ابن حبان "الإحسان في تقريب صحيح ابن حبان" (1 /510) ، والترمذي (2414) بلفظ : ‏( ‏ مَنِ الْتَمَسَ رِضَاءَ اللَّهِ بِسَخَطِ النَّاسِ كَفَاهُ اللَّهُ مُؤْنَةَ النَّاسِ ، وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَاءَ النَّاسِ بِسَخَطِ اللَّهِ وَكَلَهُ اللَّهُ إِلَى النَّاسِ ) .

وقد اختلف في رفع هذا الحديث إلى النبي صلى الله عليه وسلم ، ووقفه على عائشة .
وقد صحح الإمام البخاري ، كما في العلل الكبير للترمذي (332) ، وأبو زرعة ، وأبو حاتم ، كما في العلل لابن أبي حاتم (5/59) ، وغيرهم وقفه . وقال الدارقطني رحمه الله : " ورفعه لا يثبت" . انتهى، من "العلل" (14/182) .
وينظر " سلسلة الأحاديث الصحيحة " ، للألباني ( 5 / 392 )

কোনো ব্যক্তি যদি মানুষকে সন্তুষ্ট করার দ্বারা আল্লাহ তাআ’লাকে অসন্তুষ্ট করে, তাহলে আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। পরিণতিতে আল্লাহ তাআ’লাকে অসন্তুষ্ট করে যাদেরকে সে সন্তুষ্ট করেছিল, তারাও অসন্তুষ্ট হয়। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআ’লাকে সন্তুষ্ট করার কারণে মানুষকে অসন্তুষ্ট করে, আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং আল্লাহ তাআ’লাকে সন্তুষ্ট করার ফলে যাদেরকে সে অসন্তুষ্ট করেছিলো, তাদেরকেও আল্লাহ তাআ’লা ঐ ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন। এমনকি সেসব অসন্তুষ্ট লোকদের দৃষ্টিতে আল্লাহ তাআ’লা তাকে উত্তম করে দেন, সেই ব্যক্তির কথা ও কাজকে তাদের দৃষ্টিতে শোভণীয় করে দেন। -সুনানুত-তিরমিযী, হাদিস ২৪১৪, সহিহ ইবনে হিব্বান, প্রথম খন্ড, হাদিস ৫১০,

উপস্থাপিত হাদিসের মান: যদিও এই হাদিস নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার বর্ণনার বিষয়ে কোনো কোনো আলেমের মধ্যে আপত্তি রয়েছে। তবে, ইমাম বুখারি রহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং ইমাম তিরমিযি রহ. তাঁর ইলালিল কাবির লিত তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। একইভাবে আবু যুরআহ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং আবু হাতিম তাঁর ই'লালু লি ইবনি আবি হাতিম গ্রন্থেও এটিকে সহিহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পরষ্পর সাক্ষাতকালে করণীয় সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনাঃ

এই বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য নিচের হাদিসখানা গুরুত্ববহ-

حَدَّثَنَا سُوَيْدٌ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا حَنْظَلَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ أَيَنْحَنِي لَهُ قَالَ ‏"‏ لاَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ قَالَ ‏"‏ لاَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ قَالَ ‏"‏ نَعَمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, কোন একসময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কোন ব্যক্তি তার ভাই কিংবা বন্ধুর সাথে দেখা করলে সে কি তার সামনে ঝুঁকে (নত) যাবে? তিনি বললেনঃ না। তিনি আবার প্রশ্ন করেন, তাহলে কি সে গলাগলি করে তাকে চুমু খাবে? তিনি বললেনঃ না। তিনি আবার বললেন, তাহলে সে তার হাত ধরে মুসাফাহা (করমর্দন) করবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। -হাসানঃ ইবনু মা-জাহ (৩৭০২), জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৭২৮, মিশকাত হা/৪৬৮০ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, মুছাফাহা ও মু‘আনাক্বা অনুচ্ছেদ-৩

উপস্থাপিত হাদিসের বিষয়ে একটি ভ্রান্তি নিরসনঃ

এ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা নোয়াতে এবং চুমু খেতে নিষেধ করেছেন। অত্র হাদিসে চুমু খেতে নিষেধ করা হলেও অন্য হাদিসে চুমু খাওয়ার প্রমান রয়েছে। বস্তুতঃ এতে বিভ্রান্তির কিছু নেই। কারণ, এই হাদিসে মূলতঃ সাক্ষাতের প্রাক্কালে সকলের জন্য পালনীয় সহজ আমল শেখানো হয়েছে, যা সর্বোচ্চ মুসাফাহা পর্যন্ত করা যেতে পারে। এখানে লক্ষনীয় যে, এই হাদিসে মুআনাকা বা কোলাকুলির অনুমোদনও দেয়া হয়নি। অথচ, মুআনাকা জায়েজ হওয়ার পক্ষে অন্যান্য হাদিস রয়েছে। মুআনাকা সর্বাবস্থায় পালনীয় কোনো আমল নয়। বিশেষ বিশেষ অবস্থা এবং সময়েই সাধারণতঃ মুআনাকা বা কোলাকুলি করা হয়ে থাকে। চুম্বন করার ক্ষেত্রটি আরও সংক্ষেপিত। বিশেষ মুহাব্বতের ব্যক্তিকে ঐকান্তিক সম্মান বা স্নেহ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে চুম্বন সাধারণতঃ কালে ভদ্রেই করা হয়ে থাকে। সুতরাং, মুআনাকা বা কোলাকুলি এবং চুম্বন করা সকলের জন্য সার্বক্ষনিক পালনীয় আমল নয় বলেই এই হাদিসে এগুলোর অনুমোদন প্রদান করা হয়নি।

কদমবুচি বা পদচুম্বনকে শর্তসাপেক্ষে কেউ কেউ জায়েজ বললেও

কদমবুচি বা পদচুম্বনকে শর্তসাপেক্ষে কেউ কেউ জায়েজ বলেছেন। যারা এটিকে জায়েজ বলেছেন তাদের যুক্তি কি? কিংবা, তাদের উপস্থাপিত যুক্তির গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু? বিষয়গুলো বুঝার জন্য সামান্য আলোকপাতের প্রয়োজন মনে করছি। বস্তুতঃ তাদের আরোপিত শর্ত মোতাবেকই প্রশ্নের মুখে পড়ে কদমবুচি বা পদচুম্বন জায়েজ হওয়ার বিষয়টি। কারণ, মুষ্টিমেয় সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ যারা বলেছেন যে, সম্মানার্থে পদচুম্বন করা জায়েজ; তারাও তাদের এ কথার সাথে সাথে এই শর্তারোপ করেছেন, যেন চুমু খেতে গিয়ে রুকু কিংবা সিজদার সূরত না হয়ে যায়। যদি রুকু অথবা সিজদার সূরত হয়ে যায়, তাহলে তা জায়েজ হবে না। -আল মুজতাবা-৪/২০৫, আল মুহীতুল বুরহানী-৮/১১৮, ফাতাওয়া আলমগীরী-৫/৩৬৯

এখন বুঝার বিষয় হচ্ছে, কারও পা ছুঁতে গেলে কিংবা কদমবুচি করতে গেলে অথবা পদচুম্বন করতে গেলে রুকু কিংবা সিজদার সূরত না হওয়া ব্যতিত তা করার কোনো উপায় থাকতে পারে কি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুব বেশি পেরেশান হবার প্রয়োজন নেই- এ কথা সম্ভবতঃ প্রত্যেকেই স্বীকার করবেন। অর্থাৎ, এর সহজ উত্তর হচ্ছে, থাকে না। তাই সহজভাবে বুঝে নেয়া প্রয়োজন যে, এই কারণে, এটি করার কোনো যুক্তিও থাকতে পারে না।

অধিকাংশ আলেমের মতেই কদমবুচি বা পদচুম্বন করা নাজায়েজ যেসব কারণেঃ

ফুকাহায়ে কেরাম এবং মুহাক্কিকীনদের অধিকাংশের মতেই কদমবুচি বা পদচুম্বন করা জায়েজ নয়। এর অন্যতম একটি কারণ, বর্তমান প্রচলিত কদমবুচিতে রুকুর হালাত এবং সিজদার হালাত হওয়া স্পষ্ট। কারণ, বিষয়টি তো আর এমন হওয়া সম্ভব নয় যে, যার কদমবুচি করা হবে, তিনি এই পরিমান উঁচু স্থানে থাকাবস্থায় তার কদমবুচি করা হবে, যাতে যারা কদমবুচি করবেন তাদের বুক কিংবা মুখমন্ডল বরাবর উঁচুতে তার পায়ের অবস্থান থাকার কারণে তাদের সামনের দিকে ঝুঁকে কাজটি করতে না হয়। সেই সাথে এর পেছনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ, এটি অন্য ধর্মাবলম্বীগণের একটি প্রতীক। তাদের আচরিত প্রথা এটি। যদিও অন্যদের ধর্মীয় আচার আচরণের প্রতি সম্মান বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য, তথাপি হাদিসে অন্য ধর্মাবলম্বীগণের আচরণ, অভ্যাস, স্বভাব ইত্যাদির অনুকরণ ও অনুসরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে যার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যাবলীর পরিপূর্ণ রূপ যাতে প্রতিটি কথা এবং কাজে পরিষ্ফুটিত ও প্রতিভাত হয়ে ওঠে। উপরন্তু, এর আরেকটি কারণ, হাদিসে এই কাজটি করার পক্ষে আদৌ কোনো অনুমোদন নেই। এতসব কারণে তাদের মতে, কদমবুচি বা পদচুম্বনসহ এই ধরণের রুসম রেওয়াজ ও সামাজিক প্রথাসমূহ, যেসবের কোনো অনুমোদন ইসলামী শরিয়তে নেই, এগুলো স্পষ্টতঃ হারাম এবং বর্জনযোগ্য।

অনুকরণ হবে যার, অনুসারীও হতে হবে তারইঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'মান তাশাব্বাহা বি ক্বাওমিন ফা হুয়া মিনহুম', অর্থাৎ, 'কোন ব্যক্তি যেই জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য হবে।' এখানেও একটি প্রশ্ন কারও কারও জাগ্রত হতে পারে যে, আমাদের বাবা-দাদাসহ পূর্ববর্তী যারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন, তারা তো কদমবুচি এবং পদধূলি নেয়াকে বৈধ মনে করতেন এবং এই কাজটি করতেনও, তাদের কি হবে?

এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, আল্লাহ তাআ'লা একের বোঝা অন্যের উপরে চাপিয়ে দিবেন না। এটা পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট ঘোষনা। পূর্ববর্তীগণের আমলের বিষয়ে আমরা নই বরং, তারা নিজেরাই জিজ্ঞাসিত হবেন। তারা যদি নিছক না জানার কারণেই এসব আমল করে থাকেন এবং তাদের সহিহ বিষয়গুলো জানারও কোনো পথ যদি তখন না থেকে থাকে তাহলে এমন ক্ষেত্রে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআ'লা হয়তো তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু সত্য প্রকাশ হবার পরে, সঠিক বিষয় সামনে আসার পরেও যদি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হয়, এই অযুহাতে যে, এগুলো পূর্ব পুরুষদের রীতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে ফায়সালা কি হতে পারে, বিজ্ঞ পাঠকের কাছেই সেই ভার রেখে দিলাম।

পরিশেষে প্রশ্ন, আমরা তাহলে যাব কোন পথে?

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় মতটিকে প্রাধান্য দেয়াই সময়ের দাবি। কারণ, কদমবুচি করা এ উপমহাদেশে মৌলিকভাবে অন্য জাতি ধর্মে বিশ্বাসী একটি সম্প্রদায়ের রুসম, রেওয়াজ বা চল। তাদের কাজ তারা করবেন, তাতে আমাদের আপত্তি থাকার কথা নয়। নেইও। কিন্তু, তাদের কোনো কাজকে আমাদের বলে ধরে নিয়ে, আমাদের ঈমান, আকিদা এবং শিরক বা অন্যান্য গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ার মত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া আমাদের জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমন কাজ কোনো অব্স্থায় করা উচিতও নয়। কারণ, প্রিয় পাঠক, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, অন্যান্য কিছু ধর্ম এমন রয়েছে যে, সেগুলোতে বিশ্বাসীগণ উপাসনা, আরাধনা বা প্রার্থনা মনে করে যেসব কাজ, প্রথা ও পদ্ধতি পালন করে থাকেন, আমাদের কাছে সেসবের অনেক কাজই স্পষ্টভাবে শিরক বা স্রষ্টার সাথে অংশীদারি সাব্যস্ত করার মত অমার্জনীয় অপরাধ; যাকে পবিত্র কুরআনের ভাষায় সবচেয়ে বড় পাপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই, প্রিয় পাঠক, বিনীতভাবে বলতে চাই, তারা তাদের ধর্ম পালন করুন, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণও তাদের স্ব স্ব ধর্ম পালন করুন, তাতে আমাদের সামান্য আপত্তি নেই; আপত্তি শুধু একটি ক্ষেত্রে, আমরা যেন হাস্যকর উদারতা দেখানোর নাম করে আমাদের ধর্মীয় স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে অন্যদের রুসম, রেওয়াজ এবং প্রথা ও পদ্ধতিগুলোকে নিশ্চিন্তে ও নির্ভাবনায় পালন করতে অতি তৎপর হয়ে না উঠি। আগ পাছ না ভেবে এমনটা করার ফলাফল আমাদেরকেই ভোগ করতে হবে। প্রিয় পাঠক, আমাদের মনে রাখতে হবে, না জেনে, শুধু দেখে দেখে, শুধু শুনে শুনে, কারও অন্ধ অনুকরণে কিংবা বাবা দাদাসহ পূর্ব পুরুষের পালনীয় সামাজিক রীতি-নীতি গ্রহণ এবং পরিপালনের মধ্যে প্রকৃত সফলতা, কল্যান এবং কামিয়াবি নেই; বরং, সফলতা, কল্যান এবং কামিয়াবি নিহিত দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করে, ইসলামী শরিয়তের সঠিক ফায়সালা জেনে নিয়ে বাস্তব জীবনে তা পরিপালনের মধ্যে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে সঠিকভাবে প্রতিটি বিষয় অনুধাবন করে প্রকৃত সত্য পথের অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করুন।

ব্লগার সোহানাজোহা -কে উৎসর্গ করছি লেখাটি। মূলতঃ তার একটি অনুরোধ রক্ষার্থেই এই লেখার অবতারণা। তাকে কথা দিয়েছিলাম যে, তার জানার বিষয়টি পোস্ট আকারে দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। সে ইচ্ছে অবশেষে পূরণ করার তাওফিক দিয়েছেন মহান মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা। অসংখ্য শুকরিয়া তাঁর কাছে, সে কারণে। আর শুভকামনা সোহানাজোহার প্রতি। সম্মানিত প্রিয় পাঠক! অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনার প্রতিও, সময় ব্যয় করে লেখাটি পাঠ করার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৪৮
২৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×