সম্মানিত নবী-রাসুলগণ প্রত্যেকেই ছিলেন কর্মঠ এবং নিজ হাতে উপার্জনকারী; যেসব পেশায় নিযুক্ত ছিলেন তারাঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানব জাতির হেদায়েত এবং পথপ্রদর্শনের লক্ষ্যে সর্বযুগে প্রত্যেক জাতির কাছে নবী-রাসুল আলাইহিমুস সালামদের প্রেরণ করেছেন। সম্মানিত নবী-রাসুলগণ প্রত্যেকেই ছিলেন কর্মঠ, সৎকর্মশীল এবং নিজ হাতে উপার্জনকারী। গোটা মানবজাতির জন্য তারা ছিলেন পথপ্রদর্শক এবং আদর্শ। তারা ছিলেন জগতের একেকজনন শ্রেষ্ঠ মানব। তাদের জীবনাচার কেমন ছিল, তাদের আদর্শ, অভ্যাস, পেশা ও কাজকর্ম সম্মন্ধে অবগতিলাভ করার ভেতরে মানবজাতির জন্য নিঃসন্দেহে শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। নবী-রাসুলগণকে প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে কুরআনুল হাকিমে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন,
وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ
‘প্রতিটি জাতির জন্য পথ-প্রদর্শনকারী রয়েছে।’ -সুরা আর রাদ, আয়াত, ৭
অন্যত্র ইরশাদ করেছেন,
وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا
‘আমি রাসুল প্রেরণ না করে কাউকে শাস্তি দিই না।’ -সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত, ১৫
সব নবী-রাসুলগণ ছিলেন মানবজাতির প্রতি প্রেরিত শিক্ষকতুল্য এবং আদর্শ। তারা কারও কাছে হাত পাতবেন, কারও উপরে ভরসা করে চলবেন, এমনটা হতে পারে না। তাই তাদের প্রত্যেকেরই ছিল কোনো না কোনো পেশা। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন উপার্জনকারী। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতেন না তারা। বরং স্বীয় হস্তে অর্জিত খাদ্যপানীয় গ্রহন করাকে পছন্দ করতেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন ধরনের উপার্জন উত্তম ও শ্রেষ্ঠ? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ব্যক্তির নিজ হাতে কাজ করা এবং সৎ ব্যবসা। -ইমাম জালালুদ্দিন আস সুয়ুতি, আদদুররুল মানসুর, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২২০
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হালাল রুজি অর্জন করা ফরজের পর একটি ফরজ।’ -সহিহ বুখারি ও মুসলিম
ঈসা আলাইহিস সালাম এক ব্যক্তিকে অসময়ে ইবাদতখানায় দেখে প্রশ্ন করলেন, তুমি এখানে বসে ইবাদত করছো, তোমার রিজিকের ব্যবস্থা কে করে?
লোকটি বলল, আমার ভাই আমার রিজিকের ব্যবস্থা করে।
ঈসা আলাইহিস সালাম তাকে বললেন, সে তোমার চেয়ে অনেক উত্তম। -হেদায়াতুল মুরশিদিন
কবির ভাষায়, ‘নবীর শিক্ষা কোরো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।’
নবী-রাসুলগণ হলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তাই তাদের পক্ষে অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে জীবন ধারণ করা কোনোক্রমেই মানানসই নয়। সঙ্গত কারণে তাঁরা স্বহস্তে অর্জিত সম্পদে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন তো আর বর্তমান সময়ের মত এত এত আধুনিক পেশা ছিল না। প্রাচীন পেশাসমূহেই ভরসা করতে হয়েছে তাদের। চলুন, প্রিয় পাঠক, দেখে নিই কোন নবী এবং রাসূল কোন পেশায় যুক্ত ছিলেন-
আদম আলাইহিস সালামঃ
আদম আলাইহিস সালাম ছিলেন একজন কৃষক। তিনি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর ছেলেদের পেশাও ছিল চাষাবাদ। তা ছাড়া তিনি তাঁতের কাজও করতেন। কারো কারো মতে, তাঁর পুত্র হাবিল পশু পালন করতেন। কৃষিকাজের যন্ত্রপাতির নাম আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহর বাণী,
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا
‘আর আল্লাহ আদমকে সব নামের জ্ঞান দান করেছেন।’ -সুরা আল বাকারাহ, আয়াত ৩১
শিস আলাইহিস সালামঃ
শিস আলাইহিস সালামও কৃষক ছিলেন। তাঁর পৌত্র মাহলাইল সর্বপ্রথম গাছ কেটে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করেন। তিনি শহর, নগর ও বড় বড় কিল্লা তৈরি করেছেন। তিনি বাবেল শহর প্রতিষ্ঠা করেছেন। -ইবনে কাসির
ইদরিস আলাইহিস সালামঃ
ইদরিস আলাইহিস সালাম -এর পেশা ছিল কাপড় সেলাই করা। কাপড় সেলাই করে যে অর্থ উপার্জন করতেন, তা দিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইদরিস শব্দটি দিরাসা শব্দ থেকে নির্গত। তিনি বেশি পরিমাণে সহিফা পাঠ করতেন বলে তাঁকে ইদরিস বলা হয়। পড়াশোনার প্রথা তাঁর সময় থেকে চালু হয়। একদল পণ্ডিত মনে করেন, হিকমত ও জ্যোতির্বিদ্যার জন্ম ইদরিস আলাইহিস সালাম -এর সময়ই হয়েছিল।
নুহ আলাইহিস সালামঃ
নুহ আলাইহিস সালাম ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নৌকা তৈরির কলাকৌশল শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে তিনি নৌকা তৈরি করেছিলেন। আল্লাহর বাণী—‘আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহি অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ করো।’ -সুরা হুদ, আয়াত ৩৭
তিনি ৩০০ হাত দীর্ঘ, ৫০ হাত প্রস্থ, ৩০ হাত উচ্চতাসম্পন্ন একটি বিশাল নৌকা তৈরি করেন।
হুদ আলাইহিস সালামঃ
হুদ আলাইহিস সালাম -এর জীবনী পাঠান্তে জানা যায় যে তাঁর পেশা ছিল ব্যবসা ও পশু পালন। ব্যবসা ও পশু পালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
সালেহ আলাইহিস সালামঃ
সালেহ আলাইহিস সালাম -এর পেশাও ছিল ব্যবসা ও পশু পালন।
লুত আলাইহিস সালামঃ
লুত আলাইহিস সালাম -এর সম্প্রদায়ের লোকেরা চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল। এতে প্রতীয়মান হয় যে তিনিও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতেন চাষাবাদের মাধ্যমে।
ইবরাহিম আলাইহিস সালামঃ
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম -এর জীবনী পাঠান্তে জানা যায় যে তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য কখনো ব্যবসা, আবার কখনো পশু পালন করতেন।
ইসমাইল আলাইহিস সালামঃ
ইসমাইল আলাইহিস সালাম পশু শিকার করতেন। তিনি ও তাঁর পিতা উভয়ই ছিলেন রাজমিস্ত্রি। পিতা-পুত্র মিলে আল্লাহর ঘর তৈরি করেছিলেন।
ইয়াকুব আলাইহিস সালামঃ
ইয়াকুব আলাইহিস সালাম -এর পেশা ছিল ব্যবসা, কৃষিকাজ করা ও পশু পালন।
ইউসুফ আলাইহিস সালামঃ
ইউসুফ আলাইহিস সালাম রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বেতন হিসেবে রাষ্ট্রীয় অর্থ গ্রহণ করতেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছেন।’ -সুরা ইউসুফ, আয়াত ১০১
শোয়াইব আলাইহিস সালামঃ
শোয়াইব আলাইহিস সালাম -এর পেশা ছিল পশু পালন ও দুধ বিক্রি। পশু পালন ও দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর কন্যারা চারণভূমিতে পশু চরাতেন।
দাউদ আলাইহিস সালামঃ
দাউদ আলাইহিস সালাম ছিলেন রাজা ও নবী। সহিহ বুখারির ব্যবসা অধ্যায়ে রয়েছে যে দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন, হে আল্লাহ! এমন একটি উপায় আমার জন্য বের করে দিন, যেন আমি নিজ হাতে উপার্জন করতে পারি। অতঃপর তাঁর দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহ তাআলা তাঁকে লোহা দ্বারা বর্ম ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করার কৌশল শিক্ষা দেন। শক্ত ও কঠিন লোহা স্পর্শ করলে তা নরম হয়ে যেত। যুদ্ধাস্ত্র, লৌহ বর্ম ও দেহবস্ত্র প্রস্তুত করা ছিল তাঁর পেশা। এগুলো বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
সোলায়মান আলাইহিস সালামঃ
সোলায়মান আলাইহিস সালাম ছিলেন সমগ্র পৃথিবীর শাসক ও নবী। তিনি তাঁর পিতা থেকে অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। তিনি নিজেও অঢেল সম্পদের মালিক ছিলেন। ভিন্ন পেশা গ্রহণ করার চেয়ে নিজ সম্পদ রক্ষা ও তদারকি করাই ছিল তাঁর প্রদান দায়িত্ব। মানব-দানব, পশু-পাখি, বাতাস ইত্যাদির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব ছিল। তাঁর সাথি ঈসা ইবনে বরখিয়া চোখের পলক ফেলার আগে বিলকিসের সিংহাসন সোলায়মান আলাইহিস সালাম -এর সামনে এনে হাজির করেন।
মুসা আলাইহিস সালামঃ
মুসা আলাইহিস সালাম ছিলেন একজন রাখাল। তিনি শ্বশুরালয়ে মাদায়েনে পশু চরাতেন। সিনাই পর্বতের পাদদেশে বিরাট চারণভূমি মাদায়েনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। লোকজন সেখানে পশু চরাত। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুসা আলাইহিস সালাম। আট বছর তিনি স্বীয় শ্বশুর শোয়াইব (আ.)-এর পশু চরিয়েছেন।
হারুন আলাইহিস সালামঃ
হারুন আলাইহিস সালাম -এর পেশাও ছিল পশু পালন। পশু পালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
ইলিয়াস আলাইহিস সালামঃ
ইলিয়াস আলাইহিস সালাম -এর পেশাও ছিল ব্যবসা ও পশু পালন।
আইউব আলাইহিস সালামঃ
আইউব আলাইহিস সালাম -এর পেশা ছিল গবাদি পশু পালন। তাঁর প্রথম পরীক্ষাটি ছিল গবাদি পশুর ওপর। ডাকাতরা তাঁর পশুগুলো লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। -আনওয়ারে আম্বিয়া, ই. ফা. বাংলাদেশ
ইউনুস আলাইহিস সালামঃ
ইউনুস আলাইহিস সালাম -এর গোত্রের পেশা ছিল চাষাবাদ। সুতরাং কারো কারো মতে, তাঁর পেশাও ছিল চাষাবাদ।
জাকারিয়া আলাইহিস সালামঃ
জাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে মহানবী (সা.) বলেছেন, জাকারিয়া আলাইহিস সালাম কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাই তাঁর শত্রুরা তাঁর করাত দিয়েই তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে। -সহিহ বুখারি
ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামঃ
ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে তিনি জীবনের একটি সময় জঙ্গলে ও জনহীন স্থানে কাটিয়েছিলেন। আহার হিসেবে তিনি বৃক্ষের লতাপাতা ভক্ষণ করতেন। -আনওয়ারে আম্বিয়া
জুলকিফল আলাইহিস সালামঃ
জুলকিফল আলাইহিস সালাম -এর পেশা ছিল পশু পালন।
ইয়াসা আলাইহিস সালামঃ
ইয়াসা আলাইহিস সালাম -এর পেশা ছিল ব্যবসা ও পশু পালন।
ঈসা আলাইহিস সালামঃ
ঈসা আলাইহিস সালাম ও মরিয়ম আলাইহিস সালাম -এর আবাসস্থল প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَجَعَلْنَا ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ آيَةً وَآوَيْنَاهُمَا إِلَىٰ رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَمَعِينٍ
‘আমি তাদের উভয়কে এক উচ্চ ভূমি প্রদান করেছিলাম, যা সুজলা ও বাসযোগ্য ছিল।’ -সুরা আল মুমিনুন, আয়াত ৫০
এই উচ্চ ভূমি হলো ফিলিস্তিন। তিনি ফিলিস্তিনে উৎপন্ন ফলমূল খেয়ে বড় হয়েছেন। তিনি ঘুরে ঘুরে অলিতে-গলিতে দ্বিনের দাওয়াতি কাজ করতেন। যেখানে রাত হতো, সেখানে খেয়ে না খেয়ে নিদ্রা যেতেন। তাঁর নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না।
মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামঃ
মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে।’ -আদ্দুররুল মানসুর, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২০
তিনি গৃহের কাজ নিজ হাতে করতেন। বকরির দুধ দোহন করতেন। নিজের জুতা ও কাপড় সেলাই ও ধোলাই করতেন, গৃহ ঝাড়ু দিতেন। মসজিদে নববী নির্মাণকালে শ্রমিকের মতো কাজ করেছেন। খন্দকের যুদ্ধে মাটি কেটেছেন। বাজার থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতেন।
নবী-রাসুলদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য এই যে বৈষয়িক ধন-সম্পদের প্রতি তাঁদের কোনো আকর্ষণ ছিল না। তাঁরা কখনো ধন-সম্পদ সঞ্চয় করতেন না এবং সঞ্চয় করা পছন্দও করতেন না। তথাপি যেহেতু তাঁরা মানুষ ছিলেন, সেহেতু বৈষয়িক প্রয়োজনে যতটুকু জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজন, ততটুকু সম্পদ অর্জনে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেছেন। সদা-সর্বদা নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে ভক্ষণ করা পছন্দ করতেন। মানুষদের থেকে কখনো তাঁরা নজর-নেওয়াজ, এমনকি বেতনও গ্রহণ করতেন না। বরং যথাসম্ভব নিজেদের উপার্জন থেকে গরিব ও দুস্থদের সাহায্য করতেন। সব নবী-রাসুল ছাগল চরাতেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এমন কোনো নবী নেই, যিনি ছাগল চরাননি।’
জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও কি ছাগল চরিয়েছেন? প্রত্যুত্তরে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিও মক্কায় অর্থের বিনিময়ে ছাগল চরিয়েছি।’ বলা বাহুল্য যে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাহাবিরা অনেকেই ব্যবসা করতেন। বিশেষ করে মুহাজিররা ছিলেন ব্যবসায়ী আর আনসাররা ছিলেন কৃষক।
আমাদের হয়েছে ঘোড়া রোগঃ
হাত পা গুটিয়ে বসে বসে কিংবা পায়ের উপরে পা ফেলে চলার বদ স্বভাবে পেয়েছে আমাদেরকে। কোনো কাজই ভালো লাগে না। আসলে আমাদের কষ্ট সহ্য হয় না। কষ্ট করতে ইচ্ছে হয় না। আমরা আরামপ্রিয় জাতি।
গত ক'দিন আগের কথা। পরিচিত একজন তার ভাগ্নের জন্য কোনো একটি চাকরির ব্যবস্থা করা যায় কি না, একটু দেখতে অনুরোধ করলেন। ভাগ্নে ট্রিপল ই নিয়ে অনার্স। তখন ভদ্রলোকের পেছনের কথা আমার মনে পড়ে গেল যে, তিনি গত কয়েক মাস পূর্বেও একবার ভাগ্নের কর্মসংস্থানের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন।
কিছুটা আশ্চর্য্য হলাম। মনে মনে একটু কষ্ট লাগলো এই ভেবে যে, এত দিন পর্যন্ত ছেলেটা বেকারই রয়ে গেল? এত দিনেও কোনো একটা কাজের ব্যবস্থা করতে পারলো না!
তাকে সিম্পল কিছু পরামর্শ দিয়ে বললাম যে, ভাগ্নেকে ১০ টা সিভি বানিয়ে ১০ জায়গায় সেগুলো পাঠাতে বলেন। এই কাজটা তো এখন আরও সহজ। বিভিন্ন কোম্পানি এবং অর্গানাইজেশনের ইমেইলে সিভি পাঠিয়ে অতি সহজেই চাকরির জন্য তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করা সম্ভব।
আমার ধারণা, এই কাজ করলে তাকে অন্ততঃ দু'য়েকটা জায়গা থেকে ডাকবে। কোথাও না কোথাও তার একটা জব হয়েই যাবে। শেষে বললাম, যদি কোথাও না হয়, আমি ব্যবস্থা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
ভদ্রলোকের সাথে তারপরে আর আমার আর দেখা হয়নি। দেখা হলে জানতে পারবো যে, ভাগ্নের কোনো কুল কিনারা হলো কি না।
আসলে অলসতার চাদর মুড়ি দিয়ে বিভোর আত্মনিমগ্নতায় নিদ্রাচ্ছন্ন অবস সময় কাটাচ্ছি আমরা। সময়ের দাম নেই। জীবনের মূল্য নেই আমাদের কাছে। বিনা কষ্টে, কাজকর্ম ছাড়াই আমরা বড় কিছু পেতে চাই। বড় কিছু হতে চাই। এও কি কখনো, কোনো কালে সম্ভব?
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত দামীঃ
অলসতা কিংবা বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে কর্মহীন এবং উচ্ছন্নতার সন্যাস বা বেকার জীবন ইসলাম সমর্থন করে না। অকর্মণ্য হয়ে থাকার কোনো নজির সম্মানিত নবী রাসূলগণের কারও জীবনে ছিল না। আমাদেরও উচিত সেই শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনকে কাজে লাগানো। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যে অত্যন্ত দামী- তা বুঝে অমূল্য সময়ের মূল্যায়নে যত্নবান হয়ে সঠিক কর্মে নিজেদের নিয়োজিত রাখার প্রতি মনযোগী হওয়া।