somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

যন্ত্রণার আরেক নাম অনলাইন জন্ম ও মৃত্যুসনদ গ্রহণ

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি: অন্তর্জাল।

যন্ত্রণার আরেক নাম অনলাইন জন্ম ও মৃত্যুসনদ গ্রহণ

হ্যাঁ, বিষয়টি যন্ত্রণারই। অনলাইন জন্ম ও মৃত্যুসনদ গ্রহণ এখন যন্ত্রণারই আরেক নাম। অনলাইন জন্ম ও মৃত্যুসনদ গ্রহণ করতে যারাই সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোতে যান তারাই পড়ে যান ভোগান্তিতে। ইউপি কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যুসনদ নিতেও ভোগান্তি মোটেই কম নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যন্ত্রণার অবসান হবে কিসে? অতিব গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকারের এই দিকটি দেখার যেন কেউ নেই। এই কাজে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার প্রতিনিয়তই হন কিন্তু বলতে পারেন না। কার কাছে বলবেন? অধিকাংশ মানুষ জানেনও না যে, সরকারি অফিসের লোকদের হয়রানির বিরুদ্ধে নালিশ নিয়ে কার কাছে তাদের যাওয়া উচিত। সমস্যা হচ্ছে, ৫০০ কিংবা ১,০০০ টাকা গচ্চা দেয়ার কারণে কেউই আদালতে বিচারপ্রার্থী হওয়ার মত ঝামেলায় যেতে চান না।

এই কারণে অধিকাংশ নাগরিকেরই ভাবনা এমন যে, মশা মারতে কামান দাগিয়ে দরকার কি! নিবন্ধন যেহেতু নিজের কাজের জন্যই প্রয়োজন, অতএব যায় যাক ৫০০ কিংবা ১,০০০ টাকা। যে করেই হোক, তাদের কাজটি প্রয়োজন বিধায় তারা তা করিয়ে নেন এবং নিরবেই সয়ে যেতে বাধ্য হন অত্যাচারের এই খড়গ। অবশ্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সরকারি ফেসবুক পেইজ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ভুক্তভূগী কিছু নাগরিক তাদের কাছ থেকে এসব কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক অর্থ আদায়সহ হয়রানি এবং সেবা না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগগুলো আদৌ আমলে নিয়েছেন কি না, তা যেমন বোধগম্য নয়, তেমনি এসব অভিযোগের বিষয়ে বাস্তবিকপক্ষে তদন্ত সাপেক্ষে এ পর্যন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না, তা জানারও সুযোগ হয়নি।

আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ স্থানীয় সরকারের যত সেবা গ্রহণ করে থাকেন, তার শুরুটা হয়ে থাকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে। ফলে সাধারণভাবেই সেখানে সেবা নিতে ভিড় করেন বেশি মানুষ। বিশেষ করে, জন্ম ও মৃত্যুসনদের জন্য তাদের সেখানে যেতেই হয়। আর নিজের অভিজ্ঞতা এবং একাধিক ভুক্তভূগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই কাজে ভোগান্তির যেন শেষই হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টাকা দেয়া ছাড়া সেবাপ্রাপ্তির কোন সুযোগ আসলে আদৌ এই ক্ষেত্রটিতে নেই বললেই চলে।

নাগরিকের রাষ্ট্রীয় যে কোনো জরুরি কাজে জন্ম ও মৃত্যুসনদের প্রয়োজনীয়তা এখন সর্বজনবিদিত। কিন্তু দেখা যায়, এসব সনদ পেতে মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। জন্মনিবন্ধন করতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ হরহামেশা শোনা যায়। টাকা না দিলে তাদের সেবা দেয়া হয় না। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ অতটা শিক্ষিত এখনও হয়ে ওঠেননি এবং টেকনিক্যাল কাজেও তারা এতটা পারদর্শী নন যে, নিজের জন্মনিবন্ধন অনলাইন করার কাজটি নিজেই অনলাইনে বসে সম্পাদন করে নিবেন। ফলে তাদের এসব কাজে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সহযোগিতা নিতে সেখানে যেতেই হয়। আর গেলেই তারা প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হন নানাবিধ হয়রানির।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গ্রামের সহজ–সরল ও নিরক্ষর মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গেলে সেবা তো দূরের কথা, কোনো তথ্য পেতেও ভোগান্তির শিকার হন। এটা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক, তা সেখানে না গেলে বোঝা যাবে না। একমাত্র ভুক্তভুগীদের পক্ষেই এটা অনুধাবন করা সম্ভব। বিশেষত এখন ডিজিটাল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে দেয়ায় দুর্নীতি ও হয়রানি দুটিই মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিভিন্ন বোর্ডে পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য শিক্ষার্থী এবং তাদের পিতা মাতাদেরও জন্মনিবন্ধন করার প্রয়োজন হয়। ইদনিংকালে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন দেখাতে হচ্ছে। এমনও দেখা যায়, অনেকের জন্মনিবন্ধনে বিভিন্ন ভুল তথ্য রয়েছে। বিশেষ করে যাদের জন্ম ২০০১ সালের পরে, তাদের বাবা–মায়ের জন্মনিবন্ধন করানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই বিভিন্ন প্রয়োজনে জন্মনিবন্ধন অনলাইন করাতে গিয়ে গ্রাহকদের পোহাতে হয় হয়রানি ও দুর্নীতির ধকল।

তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের। যেখানে ৫০ বা ১০০ টাকার সরকারি ফি প্রদান করে একটি ভুল সংশোধন করা সম্ভব, সেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে তা করাতে হয়। গ্রাহকও বাধ্য হন টাকা দিতে। কেননা, জন্মনিবন্ধনে ভুল থাকলে বিশেষ বিশেষ কাজ আটকে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যাঁরা অস্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, তাঁরা সনদ নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার পাঁয়তারা করা হয়।

এটা ঠিক যে, ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন পদ্ধতি হওয়ার বিষয়টি নি:সন্দেহে ইতিবাচক। এর ফলে নাগরিকের সুযোগ বেড়েছে বটে, তবে এর সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতিও বেড়েছে বহুগুণে। প্রাথমিকভাবে এতে ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর লাগে। এরপরে চূড়ান্ত সনদে প্রয়োজন হয় ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর। এ ক্ষেত্রে টাকা নেয়ার অভিযোগ সচরাচর না উঠলেও কার্যালয়ে সময়মতো ইউপি সদস্য এবং চেয়ারম্যান মহোদয়গণকে না পাওয়ার অভিযোগ অহরহ পাওয়া যায়।

এক্ষেত্রেও সাধারণ নাগরিকের অধিকারের বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। জনগণ ভোট দিয়ে ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন। কিন্তু কাজের সময় তাঁদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সময়োপযোগী পদক্ষেপ একান্তভাবেই প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে, সাধারণ নাগরিকের এসব সেবাপ্রাপ্তির অধিকার একান্তভাবেই রয়েছে এবং এগুলো তাদের মৌলিক নাগরিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে।

'দেশ এগিয়ে যাচ্ছে' বলে আমরা যারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে অভ্যস্ত, দেশের অতি সাধারণ জনগণকে যারা তেমন একটা গণনায় ধরার মনে করি না - অবহেলিত এবং অধিকার বঞ্চিত সেই জনগণের মৌলিক ক্ষুদ্র এই অধিকারটি নিয়ে আমাদের একটু হলেও ভাবা প্রয়োজন। ভাবা প্রয়োজন রাষ্ট্রযন্ত্রের মান্যবর কর্তাব্যক্তিদেরও। জনসাধারণের এসব অধিকারপ্রাপ্তির পথকে কন্টকমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের অন্যতম দাবি। পাশাপাশি, যারা জনগণকে হয়রানি করে প্রতিনিয়ত নিজেদের পকেট ভারী করার মত ঘৃণ্য অপকর্মে লিপ্ত, সরকারি কার্যালয়ে জনগণের শ্রমে-ঘামে অর্জিত রাজস্বে প্রতিপালিত এমন দুষ্কৃতিপরায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়াও এখন সময়ের দাবি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×