somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

ইসলামের সদাচরণের শিক্ষাই সমুন্নত করতে পারে গৃহকর্মীদের অধিকার

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি: অন্তর্জাল।

ইসলামের সদাচরণের শিক্ষাই সমুন্নত করতে পারে গৃহকর্মীদের অধিকার

বর্তমান পৃথিবীতে বৈধ এবং স্বীকৃত পেশার সংখ্যা কত, সেটার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আছে কি না জানি না। একটা সময় এমন ছিল যখন মানুষের বুদ্ধি জ্ঞানের ব্যাপ্তি ছিল সীমিত, পেশাগত কাজের আওতা এবং পরিধিও ছিল খুবই সীমিত তখন। সময়ের পরিবর্তনে আধুনিকতার স্পর্শে পৃথিবী বদলে গেছে। প্রযুক্তির কল্যানে নিত্য নতুন পেশার উদ্ভব ঘটছে, আবির্ভাব হচ্ছে হাজারও অচেনা অজানা পেশার। নানান পেশা ও কাজে নিয়োজিত মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংগঠন; গৃহীত হয়েছে বহুবিধ আইন ও নিয়ম নীতি। কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম গৃহকর্মী পেশাটি। হ্যাঁ, গৃহকর্মী। অধিকার বঞ্চিত এক মানব শ্রেণি। আদিম যুগের সেই দাস প্রথারই যেন আধুনিক এক সংস্করণ হয়ে আজও টিকে আছে এই একটিমাত্র পেশা। গৃহকর্মীরা অসহায়। তাদের কোনো সংস্থা বা সংগঠন নেই। কমিটি নেই। কমিউনিটি নেই। ফোরাম নেই। অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। সাধারণত: গৃহকর্মীদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠার চিত্রটা একটু ভিন্ন থাকে। তারা এসে থাকেন নিতান্ত অভাবের সংসার হতে। মুখে দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন তুলে দেয়ার মত অবস্থা থাকে না, শীত-গ্রীষ্ম আর বর্ষায় প্রয়োজনীয় বস্ত্র কেনার পয়সা যাদের থাকে না, অসুখ বিসুখে সামান্য ডাক্তার কবিরাজ করার আর্থিক সঙ্গতি যাদের অনুপস্থিত- এমন সব নিঃস্ব এবং নিরতিশয় অসহায় পরিবার থেকেই সাধারণত: ঘটে থাকে গৃহকর্মীদের আগমন। এমনও অনেক শিশু এবং কিশোর-কিশোরী গৃহকর্মী রয়েছে যাদের মা-বাবা নেই, ইয়াতিম অবুঝ এসব ছেলে মেয়েরা অন্যের বাসা বাড়ির কাজে যুক্ত হয়ে নিজেদের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়ে থাকে স্রেফ দু'মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে। তো, এই শ্রেণির লোকেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ফোরাম, সংগঠন আর সংস্থা বা কমিউনিটি গঠনের গুরুত্ব কি বুঝবেন?

আধুনিক যুগের কৃতদাসদের আবার অধিকার?

কেউ কেউ খেয়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম হলেও অনেকেরই বেঁচে ফেরা হয় না বড়লোকের প্রাসোদপম বাড়ির গহীন অন্ধকার হতে। তিলে তিলে নিঃশেষ হতে হতে তাদের অনেকেরই ছোট্ট জীবনের ইতি ঘটে কথিত সব বড়লোকের রান্নাঘর আর বাথরুমের মাত্র কয়েক বর্গমিটারের মেঝেয়। কারণ, তাদের পৃথিবী বলতে এতটুকুই। তাদের ভাগ্যে কদাচিত সূর্য্যের আলো দেখার সৌভাগ্যও খুব কমই জোটে। গৃহকমী নামের অনেককেই বস্তুত: রাখা হয়ে থাকে গৃহবন্দী হিসেবেই। কাজে যোগদানের পরে ফ্লাট বাসা নামের আধুনিক নরকে সেই যে সে ঢুকেছে, বছরের পর বছর পার হলেও তার আর বের হওয়ার সুযোগ থাকে না। তাকে আটকে রাখা হয়, চোখের পলকের জন্যও সে বাইরে যেতে পারে না, মুক্ত বাতাসে যেতে তার বারণ, তাকে চোখে চোখে রাখা হয়, তার জন্য বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। তাকে ফোনের কাছে যেতে দেয়া হয় না, মা বাবা কিংবা অন্য কোনো আত্মীয় স্বজনের সাথে তাকে কথা বলতে দেয়া হয় না, তাদের সাথে দেখা করারও অধিকার থাকে না তার, কারণ সে আধুনিক কৃতদাস, তার জীবনশুদ্ধ তাকে কিনে নেয়া হয়েছে, দু'মুঠো খাওয়ানোর বিনিময়ে তাকে হস্তগত করা হয়েছে, তার আবার অধিকার কিসের?

একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, আমরা তাৎক্ষনিক ব্যথিত হলেও পরে ভুলে যাই সবকিছু:

সত্যিই অবস্থা অবলোকনে মনে হয় গৃহকর্মীদের যেন কোনো অধিকার থাকতে নেই। গৃহকর্মীরা নির্যাতন নিপীড়নে যখন অসাড় হয়ে পড়েন, যখন কাউকে মেরে, পিটিয়ে, দীর্ঘ দিনের লাগাতার নির্যাতন নিপীড়ন সইতে সইতে কঙ্কালসাড় হয়ে পড়েন, আধমরা হয়ে পড়েন, খেতে না দিয়ে, গরম খুন্তি আর চামচের ছ্যাকা দিয়ে দিনের পর দিন স্যাতস্যাতে ভেজা বারান্দা কিংবা বাথরুমের পাশের ফ্লোরে ঘুমুতে দিয়ে তাদেরকে যখন অস্থি:সাড় করে তোলা হয় কিংবা ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিনের পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়, মরণাপন্না সেই হাড্ডিসাড় দু'একজনকে দেখে আমরা কদাচিত আঁতকে উঠি। হাহাকার করে ওঠে আমাদের অন্তর। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠি ক্ষনিকের জন্য। আইন আদালতের টনক নড়ে ওঠে মাঝে মধ্যে। কিন্তু এসব দৃশ্য ক্ষনিকের। পরক্ষনেই দৃশ্যের অন্তরালে চলে গেলে আমরা আর এসব কিছু মনে রাখি না। রাখার চেষ্টা করি না। সবক্ছিু স্বাভাবিক হয়ে যায় আমাদের কাছে।

গৃহকর্মীদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই। কোনো সহৃদয় গৃহকর্তা যদি দয়া করে কোনো গৃহকর্মীকে এই সুযোগ করে দেন, সেটা একান্তই ভিন্ন বিষয় এবং এ ধরণের ঘটনা কালেভদ্রে দেখা গেলেও যেতে পারে। তবে অধিকাংশ শিশু ও কিশোর কিশোরী গৃহকর্মীই যে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনও গৃহকর্মী দেখা যায়, যাদের বয়স সাত বা আট বছর। এরাও কাজ করে, এদের দিয়েও কাজ করানো হয়।

মনে রাখা উচিত, গৃহকর্মীরাও মানুষ:

গৃহকর্মীরাও মানুষ; এটি আমাদের স্বীকার করতে হবে। মানুষ হিসেবে স্রষ্টার কাছে সবাই সমান। সাদা-কালো, ধনী-গরিব, এর কোনো প্রকারভেদ আল্লাহ করেননি। আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদাই সবচেয়ে বেশি, যারা সৎকাজ করে ও ভালো কাজের আদেশ দেয়। তারা আমাদেরই পরিবারের অংশ। অথচ আমরা তাদের মর্যাদা দিতে চাই না। আমরা তাদের বুয়া বলে ডাকি। এটি আমাদের সমাজে একটি হীনবাচক শব্দ। অনেক পরিবারে তাদের খালা বলে ডাকা হয়। এটি মার্জিত এবং সামাজিকভাবে গ্রহণীয় একটি শব্দ। তাদের খালা বলে সম্বোধন করতে কোনো অসুবিধা নেই। বুয়া ডেকে তাদের মানসিকভাবে হেয় করার অধিকার কারও নেই। তারা অর্থের বিনিময়ে শ্রম দেন। এ অর্থের পরিমাণ তাদের শ্রমের তুলনায় অনেক কম। সুতরাং কোনো না কোনোভাবে তাদের মর্যাদা দিতে হবে, হয় আর্থিকভাবে নতুবা সামাজিকভাবে। গৃহকর্মী নির্যাতনকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তারা যেন রেহাই না পান বিষয়টি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। সরকার গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি-২০১৫ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়িত হয়নি। এটি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। নীতিমালা থাকার পরও যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে এক দিকে যেমন তাদের কাজ পেশা হিসেবেস্বীকৃতি পাচ্ছে না, অপর দিকে তারা নানাভাবে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত হচ্ছে। সুবিচার পাচ্ছেন না। ফলে কর্মস্থলে তাদের অমানবিক জীবন কাটাতে হচ্ছে।

১০ বছরে 'কাজটি কেন করেছ' কিংবা 'কেন করনি' প্রশ্নও কোনো দিন করেননি তিনি:

সাহাবি হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু বলেন, আমি ১০ বছর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবায় কাজ করেছি। আল্লাহর কসম! একবারের জন্য তিনি আমাকে ‘উফ’ পর্যন্ত বলেননি, কখনও কঠোর কন্ঠে বলেননি, তুমি কেন এটা করেছ? অথবা তুমি কেন ওটা করোনি? -সহিহ বুখারি

বর্ণিত এই হাদিসে রয়েছে উম্মতের জন্য শিক্ষণীয় অনেক বিষয়। দেখুন, হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেছেন, আমি ১০ বছর ধরে হযরত রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিনতাম, কিংবা বলেননি যে, ১০ বছর তার বাসায় গিয়েছি, বরং তিনি বলেছেন, আমি ১০ বছর তার সেবা করেছি, অর্থাৎ ১০ বছর প্রতিনিয়ত তার সঙ্গে ছিলাম। প্রশ্ন আসতে পারে যে, হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তখন বয়সে অপরিপক্ক ছিলেন। বালক বা কিশোর বয়স তার তখন। তখনকার তার সেই বয়সে তিনি কি এই ১০ বছরে কোনো কাজে কোনো ভুল করেননি? এটা হতে পারে? কিন্তু তারপরও রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবারের জন্যও তাকে ধমক দেয়া তো দূরের কথা, 'কাজটি কেন করেছ' কিংবা 'কেন করনি' প্রশ্নও কোনো দিন করেননি।

স্বামীর চারিত্রিক সততার সার্টিফিকেট স্বীয় স্ত্রীর নিকট হতে গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি:

বস্তুত একজন মানুষ তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে, কাছের মানুষদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করে- তার মাধ্যমে তার প্রকৃত রূপ প্রকাশ পায়। তার ভেতরের চরিত্র ফুটে ওঠে। কারণ, বাইরের বা দূরের মানুষের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা তো সকলেই বলে থাকে। এইজন্যই একজন মানুষের সত্যিকারের পরিচয় জানার জন্য, তার চারিত্রিক সততার প্রমানের জন্য হাদিসে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম'। এই হাদিসের মর্মার্থ গভীরভাবে পর্যালোচনা করলেই বুঝা যায় যে, সারাক্ষণ যাদের সঙ্গে থাকা হয়, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা বেশি কঠিন বিধায়ই প্রিয় নবীজী একজন স্বামীর চারিত্রিক সততার সার্টিফিকেট স্বীয় স্ত্রীর নিকট হতে গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন।

বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, সর্বক্ষণ সেবক হিসেবে কাজ করা হযরত আনাস (রা.)-এর সঙ্গে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ব্যবহার কেমন ধৈর্য্যে পরিপূর্ণ এবং কোমল ছিল। আমরা যদি রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর এই একটিমাত্র গুণকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি, তাহলে মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চিরদিনের জন্য বদলে যাবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা তা করতে পারি না। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার তো পরের কথা, আমাদের বাসা-বাড়িতে যারা কাজ করে, এমন নিকটজন যারা, তাদের সঙ্গেও প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার ও মারধরের ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে দেখা যায়।

পোষা কুকুর বিড়ালের যেভাবে যত্ন নেয়া হয়, তার ছিটেফোঁটাও গৃহকর্মীর বেলায় দেখা যায় না:

পারিবারিক জীবনে আমরা কম-বেশি সবাই গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। দিন দিন বাড়ছে এই নির্ভরতা। আমাদের ছোট ছোট অনেক পরিবারেরই কর্তা এবং কর্ত্রী দু’জনই চাকরিজীবী। তাই তাদের চাকরির প্রয়োজনে দিনের অধিকাংশ সময় বাসার বাইরে থাকতে হয়। ঘরের এবং শিশুদের দেখাশোনার পুরো কাজটি গৃহকর্মীদেরই করতে হয়। বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় গৃহকর্মীরা পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের সহযোগিতায় আমাদের পরিবার সচল এবং ছন্দবদ্ধভাবে চলতে থাকে। কিন্তু তাদের পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক খুবই কম। বাসাবাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও একচোখা নীতি দেখা যায়। বাসাবাড়িতে অনেকে কুকুর-বিড়াল পোষেণ। কুকুর ও বিড়ালের যেভাবে যত্ন নেন, ভালো-মন্দের খোঁজ-খবর রাখেন, তার ছিটেফোঁটাও গৃহকর্মীর বেলায় দেখা যায় না। আমরা গৃহকর্মীর ভালো-মন্দের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ গৃহকর্মী পরিবারেরই অংশ। বাসার যে জায়গাটা সবচেয়ে বেশি বিদঘুটে অন্ধকার, আলো বাতাসের সুবিধা নেই, নোংড়া, এমন জায়গায় তাদের থাকতে দেয়া হয়। সেখানে একজন মানুষ কষ্ট করে হয়তো থাকতে পারে, কিন্তু হাত-পা ছড়িয়ে একটু আরাম করে ঘুমানোর সুযোগ নেই। আমরা যে সময় গভীর ঘুমে বিভোর থাকি ঠিক সে সময় ভোরবেলা তাদের উঠে আমাদের অফিসের জন্য খাবার তৈরি করতে হয়। ছেলে ময়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করে দিতে হয়। অথচ আমরা তাদের সাথে একটু সুন্দর ব্যবহার করতে পারি না। বরঞ্চ সামান্য একটু এদিক-সেদিক হলেই অকথ্য গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। ভালো ব্যবহার, ভালো খাবার, একটু ভালো কাপড়চোপড়, অসুস্থতার জন্য চিকিৎসাটুকু তারা পান না। শুধু কি তাই! এক দিন, এক মাস কিংবা ৩৬৫ দিনেও তাদের ভাগ্যে ছুটি জোটে না। এরপরও তাদের নির্যাতনের অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।

মানুষ হিসেবে তাদেরও প্রাপ্য কিছু অধিকার:

তারা আমাদের ভালো থাকতে সাহায্য করেন। পরিবর্তে তাদের ভাগ্যে জোটে অবহেলা। নির্যাতনের যন্ত্রণা সইতে হয়, অনেকসময় শিকার হতে হয় যৌন হয়রানির। আইন ও সালিশকেন্দ্র (আসক) ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৩৮ জন নারী গৃহকর্মীর সহিংসতার কথা বলেছে। তাদের মধ্যে ১২ জন নিহত আর তিনজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০২০ সালে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৫ জন ও হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন। ধর্ষণের শিকার আটজন। আরেক হিসাবে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে এক হাজার ৭০টি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৫৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা কেন জানি ভুলে যাই তারাও মানুষ। আমাদের মতোই তাদের পেছনে ফেলে আসা সংসার ও পরিবার রয়েছে। পরিবারের প্রতি রয়েছে মমত্ববোধ। আমাদের মতোই তাদেরও রয়েছে মানবিক অনুভূতি। তাদেরও সুখ-দুঃখের চেতনা রয়েছে, রয়েছে হাসি-কান্না-আনন্দ-উল্লাসবোধ। জীবন প্রবাহের গতিধারায় আমরা সবাই সমান। জীবন-মৃত্যুর চক্রে কে গৃহকর্তা কে গৃহকর্মী ভেদাভেদ করে না। আমরা গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, যা ইসলামের দৃষ্টিতে তো বটেই, সাধারণ মানবিক দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশে কত গৃহকর্মী রয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে এ সংখ্যা প্রায় ২০ লাখের কাছাকাছি হবে বলে ধারণা করা হয়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলওর এক প্রতিবেদন বলছে, সারা বিশ্বে গৃহকর্মীর সংখ্যা প্রায় প্রায় ৫৩ মিলিয়ন (পাঁচ কোটি ৩০ লাখ)। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশই নারী। তবে প্রকৃত সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু গৃহকর্মীর সংখ্যা আইএলওর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। ইতোমধ্যে এ সংখ্যা নিশ্চয় কয়েক গুণ বেড়েছে।

গৃহকর্মী নিবন্ধন চালু করা এখন সময়ের দাবি:

গৃহকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহকর্মী নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করা এখন সময়ের অন্যতম দাবি। এর জন্য সুরক্ষার মত এ্যাপস বানানো যেতে পারে। এটি করতে পারলে দেশে বিদ্যমান গৃহকর্মীর সংখ্যা, বয়স, ঠিকানা সবই জানা যাবে। তারা ছুটি পাচ্ছেন কি না, নিয়মিত বেতন পাচ্ছে কি না- তা-ও জানার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়াও নিবন্ধন করা হলে একজন গৃহকর্মী আইনগত সুরক্ষা পাবেন। কোনো গৃহকর্তা অপরাধ করে থাকলে তা-ও দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি আমাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি পরির্বতন করা জরুরি। আমরা যদি গৃহকর্মীদের সামাজিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে আমাদের পরিবার ও সমাজ উপকৃত হবে। সুন্দর, স্বাভাবিক ও গতিশীল একটি সমাজ-রাষ্ট্রের প্রয়োজনে গৃহকর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হলে তা আমাদের মর্যাদাকেই সমুন্নত করবে। আধুনিকতার চরম উৎকর্ষের এই সময়ে আর নয় মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আর নয় একটি গৃহকর্মীর অধিকার হরণ। আর নয় একজন গৃহকর্মীর প্রতি যৌন নির্যাতন। আর নয় গরম খুন্তির ছ্যাকায় তাদের কোমল শরীর ঝলসে দেয়া। আর নয় গৃহকর্মী হত্যার মত বিভৎস নতুন কোনো ঘটনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৩৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×