
ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করা হলেও, মোদী সরকারের সময়কালে এ রাষ্ট্রের আচরণ অনেক ক্ষেত্রেই ভয়াবহ, নিষ্ঠুর এবং অমানবিক রূপ নিয়েছে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, অর্থনৈতিক শোষণ, সংখ্যালঘুদের উপর দমন-পীড়ন—এসবই ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর আধিপত্যবাদী মনোভাবকে স্পষ্ট করে তোলে। নিচে এই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হলো:
সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম চিত্র
ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (BSF) বহু বছর ধরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে চলেছে। ২০১১ সালের ফেলানি হত্যাকাণ্ড আজও বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে আছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর তথ্যমতে, ২০০০-২০২০ সাল পর্যন্ত বিএসএফ প্রায় ১,২০০ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র সীমান্তবাসী। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়াই মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ: এক আধিপত্যবাদী কৌশল
মোদী সরকারের অধীনে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ আরও বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন, নেপালের সংবিধান প্রণয়ন, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের রাজনৈতিক অস্থিরতায় একের পর এক হস্তক্ষেপ ভারতের "গার্জিয়ান সিনড্রোম"-এর প্রতিচ্ছবি। ২০১৫ সালে নেপালের উপর একতরফা অবরোধ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে স্থায়ী বৈরিতা
চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল—কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গেই মোদী সরকারের অধীনে টেকসই সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। সীমান্ত হত্যা, পানি চুক্তি নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা, বা ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব—এসব বিষয়ে ভারতের শাসকগোষ্ঠীর একচোখা ও দায়িত্বহীন আচরণ দ্বিপাক্ষিক আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি করেছে।
বাণিজ্যে বৈষম্যমূলক ও শোষণমূলক সম্পর্ক
বাংলাদেশ ভারতের পণ্য আমদানিতে অত্যন্ত নির্ভরশীল হলেও রপ্তানিতে বৈষম্যের শিকার। প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভারতীয় পণ্যের বিপরীতে বাংলাদেশ রপ্তানি করতে পারে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বিদ্যুৎ খাতে আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তিও প্রশ্নবিদ্ধ, যা অর্থনৈতিক অনিয়ম ও শোষণের আশঙ্কা বাড়ায়।
সংখ্যালঘুদের উপর নিষ্ঠুরতা: এক অভ্যন্তরীণ সংকট
ভারতের ভেতরে মোদী সরকারের আমলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন প্রকট হয়েছে। গুজরাট দাঙ্গা, সিএএ-এনআরসি, বাবরি মসজিদের বিচারহীনতা এবং কাশ্মীরে দমননীতি—এসব ঘটনা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চেহারায় প্রশ্ন তুলেছে। কাশ্মীরে প্রতিটি মোড়ে সশস্ত্র সেনা মোতায়েন কাশ্মীরকে যেন একটি অঘোষিত কারাগারে রূপ দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে মোদী সরকার
সংখ্যালঘু নিপীড়ন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি ইস্যুতে মোদী সরকারের সমালোচনা করেছে জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা। এসব ঘটনা ভারতীয় গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
উপসংহার:
ভারত একসময় দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও শান্তির প্রতীক হওয়ার স্বপ্ন দেখালেও, মোদী সরকারের সময়কালে তা এক অসহিষ্ণু, আধিপত্যবাদী ও আঞ্চলিক শক্তির প্রতিযোগিতামূলক চেহারায় পরিণত হয়েছে। এই পথ পরিহার করে ভারত যদি সত্যিকারের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পরিণত হতে চায়, তবে তার জন্য প্রয়োজন ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও অংশীদারিত্বমূলক কূটনীতি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




