আলোচিত আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বিতর্ক বর্তমানে চরমে। একদিকে রাজধানীর উত্তরায় পারিবারিক বাড়ির মালিকানা নিয়ে মাকে উচ্ছেদের অভিযোগে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের নিষ্পত্তি ঘটেছে। মা ফিরে পেয়েছেন নিজ বাড়িতে থাকার অধিকার অন্যদিকে, তুরিনের পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া বলে তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ এসেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
মাকে উচ্ছেদের অভিযোগ ও আইনি লড়াই
২০১৭ সালে তুরিন আফরোজ তার মা শামসুন্নাহার বেগম ও ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের একটি পাঁচতলা বাড়ি থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন বলে অভিযোগ। তারা দাবি করেন, ১৯৯১ সালে শামসুন্নাহার জমি কিনে ১৯৯৭ সালে ছেলেকে হেবা করেন এবং ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। অন্যদিকে, তুরিন বলেন—তিনি বাবার কাছ থেকে ১৯৯৪ সালে জমি পেয়েছেন।
এই দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে উভয় পক্ষ দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২০২৪ সালে শামসুন্নাহার ও শাহনেওয়াজকে বসবাসের অধিকার দিয়ে স্থিতাবস্থা বাতিল করে। আপিল বিভাগ ২০২৫ সালের ৫ মে এই রায় বহাল রাখে, ফলে মা নিজের বাড়িতে ছেলেসহ বসবাসের পূর্ণ অধিকার ফিরে পান।
আইনের দৃষ্টিতে নিষ্পত্তি ও পরবর্তী ধাপ
সরকারের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, তুরিন আফরোজ প্রসিকিউটর থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন। আদালত শামসুন্নাহারের পক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে। এখন মালিকানা সংক্রান্ত দুটি মামলা বিচারিক আদালতে চলবে।
ভুয়া ডিগ্রির বিস্ফোরক তথ্য
২০২৫ সালের ৪ মে আপিল বিভাগে আইনজীবী ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার জানান, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস নিশ্চিত করেছে—তুরিন আফরোজ কখনও তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টরেট সম্পন্ন করেননি। অথচ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে তিনি এই ভুয়া ডিগ্রি দেখিয়ে পদে নিয়োগ পান। বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই তার পেশাগত সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে তুরিন যেসব মামলায় লড়েছেন সেগুলোর কী হবে?
তুরিন আফরোজের ভুয়া ডিগ্রি ও পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিতর্ক তার সামাজিক মর্যাদা ও পেশাগত অবস্থানকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির নয়—এটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেবে। মোটা দাগে যে প্রশ্নটি এখন উঠে এসেছে, রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে তুরিন যেসব মামলায় লড়েছেন সেগুলোর কী হবে?
তুরিন আফরোজের মত একজন মিথ্যাবাদী, অসৎ ও জঘণ্য প্রতারককে দলকানা যেসব লোক কোনো ধরণের যাচাই বাছাই ছাড়াই রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর দপ্তরে বিশাল বড় একটি পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি। দেশবাসী তুরিন কান্ডে যুক্ত সকল অপরাধীর বিচার প্রত্যক্ষ করার অপেক্ষায়।
তথ্যসূত্রঃ নিজ বাসায় থাকার অধিকার ফিরে পেলেন তুরিন আফরোজের মা
তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া: আপিল বিভাগে তথ্য-প্রমাণ দাখিল
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০