প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে—যেমন রূপকথার গল্পে ড্রাগনকে শেষমেশ পরাজিত করা হয়, এই অভূতপূর্ব দিনে, নিকৃষ্ট ফ্যাসিবাদ নামক জানোয়ারটির লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। হ্যাঁ, আমরা যাকে চিনি "বাল"/ "BAL" অর্থাৎ, (Bangladesh Awami League) "বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ" নামে, সেটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। “নিষিদ্ধ” শব্দটির মধ্যেই যেন এক মুক্তির সুর—বাতাস যেন হালকা হয়ে গেছে। কে জানে, এই জাতি আবার কবে এমন একটি সুসংবাদ শুনতে পারবে? হয়তো যেদিন পদ্মায় সোনার খনি মিলবে, কিংবা ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম হঠাৎ নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে।
ফ্যাসিবাদ বলতে বোঝানো হয় এমন একটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে সরকার ভিন্নমত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও জনগণের মতামতকে সম্পূর্ণরূপে দমন করে। মার্কিন ইতিহাসবিদ রবার্ট প্যাকস্টন তাঁর বই The Anatomy of Fascism-এ বলেছেন, “Fascism is marked by obsessive preoccupation with community decline, humiliation or victimhood… and the abandonment of democratic liberties.” অর্থাৎ, “ফ্যাসিবাদ এমন এক মানসিক ও রাজনৈতিক প্রবণতা, যা সমাজের অবনতি, জাতিগত অপমান বা নিপীড়নের আখ্যানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়—এবং যার পরিণতি ঘটে গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।”
গত ১৬ বছর ধরে BAL, দিল্লির প্রভুদের নির্দেশনায়, বাংলাদেশকে শোষন করেছে, এদেশের জীবনীশক্তিকে শুষে নিয়েছে—ঠিক যেন একটি রক্তলোভী মশার মতো। এই স্বঘোষিত অপশাসকরা শাসনকে রূপ দিয়েছে এক করুণ-হাস্যকর নাটকে, যার মূল সুর ছিল, “আজ কতটা লুট করা যায়?” তাদের চিত্রনাট্য রচিত হতো নয়াদিল্লির প্রাসাদে, আর অভিনেতারা ছিল একদল চামচা—আনুগত্যে অটল, মেরুদণ্ডহীন, প্রভুদের সামনে সদা মাথা নত। এরা আমাদের খেয়েছে, আমাদের পড়েছে, এবং তারপর এদেশের সেই চাষাভূষা গরিব অসহায় মানুষদের সঙ্গেই বেঈমানি করেছে, যারা তাদের পুষেছে।
BAL-এর শাসন ছিল শোষণের এক মহাকাব্য। এটি ছিল এক সার্কাস, যেখানে দর্শকদের জোর করে তালি দিতে বাধ্য করা হতো। তারা কেবল লুট করেনি; করেছে অতি দক্ষতায়। নির্বাচন? সেগুলো ছিল কোনো গণতান্ত্রিক অনুশীলন নয়, বরং “ভোয়ালা!”—এক জাদু, যেখানে ব্যালট রাতের অন্ধকারে নিখোঁজ হয়ে যেত, আর ফিরে আসত পূর্বনির্ধারিত ফলাফলে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সাল- তিনটি জাতীয় নির্বাচনই ছিল ভুয়া, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোও একে ‘নির্বাচনের ছদ্মবেশ’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। বিচারব্যবস্থা? এক ঝুলন্ত পুতুল, যার সুতো টানতো দলের ক্ষমতাধরেরা। আর অর্থনীতি? ব্যাংকগুলোকে বানানো হয়েছে ব্যক্তিগত গোল্লাব্যাংক—টাকা উধাও, বাজার ধ্বস্ত, রিজার্ভ হাহাকার।
এছাড়াও গুম, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধে এরা ছিল রাষ্ট্র মদদপুষ্ট—এ যেন এক ভয়ংকর চিত্রকল্প, যেখানে জনগণ শিকার। তারা শুধু শাসন করেনি; ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশকে পরিণত করেছে এক ভোজসভায়, যেখানে খাওয়ার অধিকার ছিল কেবল তাদের।
কিন্তু গতকাল, এই চিত্র পাল্টে গেছে। ড্রাগন এখন কেবল আহত নয়, বন্দী। BAL-এর নিষেধাজ্ঞা কেবল একটি আইনি ঘোষণা নয়; এটি জাতির প্রতি একটি অঙ্গীকার, যে আর কোনো মধ্যরাতের ভোট বা নিখোঁজ কর্মীর গল্পে ঘুম ভাঙবে না। চামচাদের বিদায় জানানো হয়েছে, আর তাদের দিল্লি-রচিত স্ক্রিপ্ট বুড়িগঙ্গায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে।
অবশ্য BAL-এর অনুসারীরা এখন গণতন্ত্রের উপর আক্রমণের বুলি আওড়াবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—তারা কি আদৌ কখনো গণতন্ত্রকে সম্মান করেছে? যারা ভোটকে ক্যাসিনোর চিপ বানিয়ে তুলেছিল, তারা কি এখন গণতন্ত্রের পাঠ পড়াবে? না, এটি গণতন্ত্রের প্রতিশোধ—বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে উচ্চারিত “চেকমেট।”
তাই, আসুন গতকালের ঐতিহাসিক দিনটির জন্য একটি গ্লাস বোরহানি হয়ে যাক। যেদিনটির সূর্যটা একটু উজ্জ্বল ছিল, বাতাসে ছিল ন্যায়ের সুবাস, আর BAL-এর মিথ্যার দুর্গ বালির প্রাসাদের মতো ভেঙে পড়েছিল। উৎসর্গ করি ভবিষ্যতের জন্য—যেখানে বাংলাদেশ হবে তার জনগণের, কোনো বিদেশি-তোষণকারী ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর নয়। আর BAL-এর জন্য? যেমন বিদায়বেলায় বলা হয়, “বিদায় ভাই, দরজায় ধাক্কা না লাগে—এই কামনা।”
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩