মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’—সমগ্র সৃষ্টির জন্য করুণার উৎস। তাঁর জীবন ছিল শান্তি, সহনশীলতা, ন্যায় ও মানবতার অপূর্ব আদর্শ। তিনি কখনো আগ্রাসন বা সংঘাতের পথ বেছে নেননি। তবু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছিল—শত্রুদের চাপিয়ে দেওয়া আক্রমণ প্রতিহত করতে, নিজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এবং ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণীকে টিকিয়ে রাখতে। প্রায়শই কেউ কেউ জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞতাবশত প্রশ্ন তোলেন: যিনি শান্তির দূত, তিনি কেন যুদ্ধ করলেন? এই নিবন্ধে ইসলামের প্রধান যুদ্ধগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রশ্নের যৌক্তিক ও তথ্যনির্ভর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে, যাতে মহানবী (সা.)-এর প্রতিরক্ষামূলক ও মানবিক আদর্শ সকলের সামনে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ইসলাম ও যুদ্ধ: মূলনীতি ও দর্শন
ইসলাম যুদ্ধকে শেষ অবলম্বন হিসেবে বিবেচনা করে। এটি শান্তি, সমঝোতা, এবং সংলাপের পথকে অগ্রাধিকার দেয়। কুরআন কারিমে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
“যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, কিন্তু সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” — সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯০
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলামে যুদ্ধ অনুমোদিত শুধুমাত্র প্রতিরক্ষার জন্য, এবং তাও ন্যায় ও সংযমের সীমার মধ্যে। মহানবী (সা.) এই নীতির পূর্ণ অনুসরণ করেছেন। তিনি কখনো নিজ উদ্যোগে যুদ্ধ শুরু করেননি; বরং শত্রুদের আক্রমণের মুখে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।
মক্কার ১৩ বছর: নির্যাতন ও সহনশীলতার অধ্যায়
মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের প্রথম ১৩ বছর মক্কায় ছিল নির্মম নির্যাতন ও অত্যাচারের সময়। তিনি ও তাঁর সাহাবিরা মক্কার কুরাইশদের কাছ থেকে অকথ্য নিপীড়নের শিকার হন। হযরত বিলাল (রা.)-কে রোদে পুড়ানো, হযরত সুমাইয়া (রা.)-কে হত্যা, এবং শু’আইব গোত্রের তিন বছরের সামাজিক বয়কট—এসব ঘটনা ইসলামের প্রাথমিক সংগ্রামের নীরব সাক্ষী। এই দীর্ঘ সময়ে মহানবী (সা.) কখনো প্রতিশোধ বা সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ বেছে নেননি। তিনি ধৈর্য ও সহনশীলতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মদিনায় হিজরত করেন, শান্তির পথে অটল থেকে।
মদিনার যুদ্ধ: প্রতিরক্ষার ইতিহাস
মদিনায় হিজরতের পরও মক্কার কুরাইশরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখে। ইসলামের তিনটি প্রধান যুদ্ধ—বদর, উহুদ, এবং খন্দক—এই প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধগুলো বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, মহানবী (সা.) কখনো আগ্রাসী ছিলেন না; তিনি শুধুমাত্র প্রতিরক্ষার জন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।
১. বদরের যুদ্ধ (৬২৪ খ্রি.): প্রতিরোধের প্রথম মাইলফলক
ইসলামের প্রথম বড় যুদ্ধ, বদর, মক্কার কুরাইশ বাহিনী ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘটিত হয়। বদর মক্কা থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার এবং মদিনা থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কুরাইশরা প্রায় ১,০০০ সৈন্যের শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়। তাদের লক্ষ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়কে নির্মূল করা। এই আক্রমণের মুখে মহানবী (সা.) মাত্র ৩১৩ জন সাহাবির একটি ছোট, অপ্রস্তুত বাহিনী নিয়ে বদরে অবস্থান নেন। অলৌকিকভাবে মুসলিমরা বিজয়ী হন, যা ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার প্রথম মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয় যা মুসলিমদের আত্মবিশ্বাসের নতুন অধ্যায় তৈরি করেছিল। এই যুদ্ধে মহানবী (সা.) আগ্রাসী ছিলেন না; তিনি মদিনার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বাধ্য হয়েছিলেন।
২. উহুদের যুদ্ধ (৬২৫ খ্রি.): মদিনার দ্বারপ্রান্তে প্রতিরক্ষা
দ্বিতীয় বড় যুদ্ধ, উহুদ, মদিনার নিকটবর্তী উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে সংঘটিত হয়। বদরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে কুরাইশরা ৩,০০০ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনার দিকে অগ্রসর হয়। মুসলিমরা, মাত্র ৭০০ সৈন্য নিয়ে, শহরের প্রতিরক্ষার জন্য উহুদে অবস্থান নেন। যুদ্ধে মুসলিমরা প্রাথমিক সাফল্য পেলেও কৌশলগত ভুলের কারণে পরাজয়ের মুখোমুখি হন। তবুও এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট স্পষ্ট: মক্কার আক্রমণ থেকে মদিনাকে রক্ষা করা ছিল এর একমাত্র উদ্দেশ্য। মহানবী (সা.) এখানেও প্রতিরক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন।
৩. খন্দকের যুদ্ধ (৬২৭ খ্রি.): মদিনার চূড়ান্ত প্রতিরক্ষা
খন্দকের যুদ্ধ, যা ‘আহযাব’ নামেও পরিচিত, মদিনা শহরে সংঘটিত হয়। কুরাইশ ও তাদের মিত্র গোত্রগুলো মিলে ১০,০০০ সৈন্যের বিশাল জোট গড়ে মদিনা আক্রমণ করে। মুসলিমরা, মাত্র ৩,০০০ সৈন্য নিয়ে, মহানবী (সা.)-এর নেতৃত্বে শহরের চারপাশে খন্দক খনন করে উদ্ভাবনী প্রতিরক্ষা কৌশল গ্রহণ করে। এই যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয়ী হন, যা মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি ছিল সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ, কারণ শত্রুরা মদিনার দ্বারপ্রান্তে এসে আক্রমণ চালিয়েছিল।
শান্তির বিজয়: হুদাইবিয়া ও মক্কা বিজয়
মহানবী (সা.)-এর জীবন শুধু যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি শান্তির স্থপতি ছিলেন। হুদাইবিয়ার সন্ধি (৬২৮ খ্রি.) তাঁর শান্তিপ্রিয় মনোভাবের অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এই সন্ধিতে তিনি কুরাইশদের সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যদিও এর শর্তগুলো মুসলিমদের জন্য প্রাথমিকভাবে অসুবিধাজনক ছিল। এই চুক্তি রক্তপাত রোধ করে এবং ইসলামের প্রসারের পথ সুগম করে।
মক্কা বিজয় (৬৩০ খ্রি.) মহানবী (সা.)-এর মানবিকতার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ। তিনি ১০,০০০ সৈন্য নিয়ে মক্কা প্রবেশ করেন, কিন্তু কোনো রক্তপাত ছাড়াই শহরটি জয় করেন। তিনি প্রতিশোধের পরিবর্তে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, বলেন:
قَالَ: لا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ، اذْهَبُوا فَأَنْتُمُ الطُّلَقَاءُ
আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেই, তোমরা মুক্ত। — সহীহ বুখারি, হাদিস নং: ৪২৮৭
এই ঘটনা ইতিহাসে বিরল, যেখানে একজন বিজয়ী শাসক প্রতিশোধের পরিবর্তে ক্ষমা ও করুণার পথ বেছে নিয়েছেন।
প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর: যুদ্ধ কেন?
যারা প্রশ্ন তোলেন, “মহানবী (সা.) যদি শান্তির দূত হন, তবে তিনি কেন যুদ্ধ করলেন?” তাদের জন্য উত্তর স্পষ্ট। মহানবী (সা.) যুদ্ধ চাননি; তাঁকে যুদ্ধে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁর প্রতিটি যুদ্ধ ছিল:
প্রতিরক্ষামূলক: তিনি কখনো মক্কার দিকে অগ্রসর হয়ে আক্রমণ করেননি। সব যুদ্ধ মদিনা বা তার নিকটবর্তী এলাকায় সংঘটিত হয়েছে।
ন্যায়নিষ্ঠ: তাঁর যুদ্ধ ছিল নিপীড়িতদের রক্ষা, অত্যাচার বন্ধ, এবং ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য।
সংযমী: তিনি কখনো সীমালঙ্ঘন করেননি। যুদ্ধের মধ্যেও তিনি নারী, শিশু, এবং অসামরিক ব্যক্তিদের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মুসলিমরা সংখ্যায় ও অস্ত্রে সবসময় দুর্বল ছিলেন। বদরে ৩১৩ বনাম ১,০০০, উহুদে ৭০০ বনাম ৩,০০০, এবং খন্দকে ৩,০০০ বনাম ১০,০০০—এই সংখ্যাগত দুর্বলতা প্রমাণ করে, মুসলিমরা আগ্রাসী ছিলেন না; তারা বাধ্য হয়ে প্রতিরোধ গড়েছিলেন। আর এই সংখ্যাগত ব্যবধান ইসলামে 'যুদ্ধের কৌশল'ও নয়, বরং 'আল্লাহর ওপর নির্ভরতা' এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে সংগ্রামের শিক্ষা দেয়।
মানবতার আদর্শ: যুদ্ধে, বিপন্ন পরিস্থিতিতেও করুণা
মহানবী (সা.)-এর যুদ্ধ ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অপরিহার্য পদক্ষেপ। তিনি যুদ্ধ করেছেন জুলুম বন্ধ করতে, নিপীড়িতদের মুক্তি দিতে, এবং ন্যায়ের পতাকা উড্ডীন করতে। তাঁর যুদ্ধে মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ:
তিনি যুদ্ধে গাছ কাটা, ফসল ধ্বংস, বা অসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন।
তিনি বন্দিদের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন, অনেককে মুক্তি দিয়েছেন বা শিক্ষা প্রদানের বিনিময়ে মুক্ত করেছেন।
মক্কা বিজয়ে তিনি শত্রুদের ক্ষমা করে মানবতার শ্রেষ্ঠ নজির স্থাপন করেছেন।
তায়েফে রক্তাক্ত অবস্থায় নবীজি (সা.)-এর দোয়া: করুণা ও আশীর্বাদের অশ্রুপ্রবাহ
নবীজী মুহাম্মাদ (সা.) যখন তায়েফবাসীদের হাতে নির্মমভাবে অপমানিত ও আঘাতপ্রাপ্ত হন, তখন তিনি তাঁর রবের দরবারে এক অন্তরবিদারক দোয়ায় আশ্রয় নেন। এই দোয়ায় তাঁর অন্তরের অতল দয়ার, আত্মসমর্পণের এবং আল্লাহর প্রতি নিরঙ্কুশ নির্ভরতার নিখুঁত প্রকাশ দেখা যায়।
আরবি পাঠ:
اللَّهُمَّ إِلَيْكَ أَشْكُو ضَعْفَ قُوَّتِي، وَقِلَّةَ حِيلَتِي، وَهَوَانِي عَلَى النَّاسِ، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، أَنْتَ رَبُّ الْمُسْتَضْعَفِينَ، وَأَنْتَ رَبِّي، إِلَى مَنْ تَكِلُنِي؟ إِلَى بَعِيدٍ يَتَجَهَّمُنِي؟ أَمْ إِلَى عَدُوٍّ مَلَّكْتَهُ أَمْرِي؟ إِنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ عَلَيَّ غَضَبٌ فَلَا أُبَالِي، وَلَكِنْ عَافِيَتُكَ هِيَ أَوْسَعُ لِي، أَعُوذُ بِنُورِ وَجْهِكَ الَّذِي أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وَصَلَحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، مِنْ أَنْ يَحِلَّ عَلَيَّ غَضَبُكَ، أَوْ يَنْزِلَ بِي سَخَطُكَ، لَكَ الْعُتْبَى حَتَّى تَرْضَى، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ
বাংলা অনুবাদ (আপনি সম্বোধনে):
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অভিযোগ জানাচ্ছি আমার শক্তির দুর্বলতা, আমার কৌশলের অভাব এবং মানুষের কাছে আমার অপমানিত অবস্থার। হে সর্বাধিক দয়ালু, আপনি তো অসহায়দের প্রতিপালক, আপনিই তো আমার প্রতিপালক। আপনি আমাকে কাহার নিকট সমর্পণ করছেন? এমন কোনো দূরবর্তী শত্রুর নিকট, যে আমার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করবে? নাকি এমন কোনো শত্রুর নিকট, যাঁর হাতে আপনি আমার ব্যাপারসমূহ সোপর্দ করেছেন? যদি আপনি আমার প্রতি রুষ্ট না হন, তবে আমি কিছুতেই পরোয়া করি না। তবে আপনার ক্ষমা ও নিরাপত্তাই আমার জন্য শ্রেয়তর। আমি আপনার সেই মুখমণ্ডলের আলোর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার দ্বারা অন্ধকার দূর হয় এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত বিষয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়—যেন আপনার ক্রোধ আমার ওপর না আসে, অথবা আপনার অসন্তোষ আমাকে আচ্ছন্ন না করে। আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনার দরবারে বিনয় প্রকাশ করে যাব। আর আপনার সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই।” — সূত্র: ইবনে হিশাম, সীরাতুন নবী; ইবনে কাসীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া; আলবানি, সহীহুল জামে, হাদীস নং: ১২৮৪।
এই দোয়া শুধু ইতিহাস নয়, এটি প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ের জন্য এক অসীম প্রশান্তি ও আত্মসমর্পণের বার্তা।
উহুদের ময়দানে রক্তাক্ত নবী (সা.)-এর আর্তি: যারা আঘাত করল, তাঁদের জন্যই দোয়া!
উহুদের যুদ্ধে প্রিয় সাহাবিদের শাহাদাত, নিজের মুখমণ্ডল রক্তাক্ত, দাঁত ভেঙে গেছে, বুকের ওপর পাথরের মতো বেদনা—তবু প্রতিশোধ নয়, অভিশাপ নয়, বরং করুণার জলধারায় তিনি আকাশমুখী হয়ে শুধুই বললেন:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
"হে আমার প্রভু! আমার জাতিকে আপনি ক্ষমা করুন। তারা জানে না—তাই তো করেছে এমন অন্যায়।" —সহীহ বুখারি: ৪৩৮৭, সহীহ মুসলিম: ১৭৯২
এ যেন ক্ষমার অমর আদর্শ—যিনি ক্ষমা করেছেন, তিনি নিজেই ক্ষতবিক্ষত। যিনি রক্তাক্ত হয়েছেন, তিনিই চেয়েছেন যেন শত্রুরা হেদায়েত পায়।
উপসংহার
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনের যুদ্ধগুলো ছিল আত্মরক্ষা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, এবং শান্তির পথ খুলে দেওয়ার সংগ্রাম। বদর, উহুদ, এবং খন্দকের যুদ্ধগুলো প্রমাণ করে, তিনি কখনো আগ্রাসনের পথ বেছে নেননি; বরং শত্রুদের আক্রমণ থেকে নিজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করেছেন। তাঁর জীবন শেখায়, শান্তি ও প্রতিরক্ষা একসাথে চলতে পারে। তিনি ছিলেন ইতিহাসের একমাত্র সেনাপতি, যিনি যুদ্ধ জয় করেও ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন, রক্তপাতের পরিবর্তে মানবতার পতাকা উড্ডীন করেছেন। যারা তাঁর যুদ্ধ সম্পর্কে সংশয় পোষণ করেন, তাঁদের প্রতি বিনীত অনুরোধ—আসুন নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইতিহাস অধ্যয়ন করি। তাহলেই মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ আমাদের কাছে স্বচ্ছ ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে ধরা দেবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৬