ডিজিটাল যুগে আমাদের জীবন যত সহজ হয়েছে, বিপদের পথও তত প্রশস্ত হয়েছে। আগে চোর-ডাকাতের ভয় ছিল ঘরের বাইরে, এখন ভয় অনলাইনের অদৃশ্য জগতে। আমরা যখন মোবাইলে ব্যাংকিং করি, ফেসবুকে মতামত দিই, ইমেইলে তথ্য পাঠাই কিংবা অনলাইনে কেনাকাটা করি—তখনই নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য ফেলে দিই এমন এক ময়দানে, যেখানে প্রতিপক্ষ শুধু হ্যাকার নয়, আছে প্রযুক্তি-সক্ষম রাষ্ট্র, আছে নজরদারি, আছে গোপন তথ্য চুরি করার অসংখ্য ফাঁদ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা মানে শুধু হ্যাকিং বা ভাইরাস থেকে বাঁচা নয়। এর অর্থ—নিজের তথ্য, পরিচয়, মতামত এবং ভার্চুয়াল কর্মকাণ্ড যেন অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে। আজকাল একটি ফেক লিংকে ক্লিক করলেই পুরো মোবাইল ফোন হ্যাক হয়ে যেতে পারে। ফেসবুকে একটি ব্যক্তিগত পোস্ট দিলেই মামলা হতে পারে। কোনো সন্দেহ ছাড়াই আপনার লোকেশন ট্র্যাক করা যেতে পারে। প্রযুক্তির সুবিধার আড়ালে আমরা আসলে অনেকটাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছি।
এই বাস্তবতায় আমাদের উচিত—নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেই নেওয়া। দুর্বল পাসওয়ার্ড নয়, বরং অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন দিয়ে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড গঠন করা জরুরি। ২-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখা উচিত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে। অপরিচিত ইমেইল, লিংক বা অ্যাপ কখনোই বিশ্বাস করা যাবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ঠিকানা, ব্যক্তিগত ছবি বা চলাফেরার তথ্য খোলামেলা প্রকাশ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা এখন আর বাড়তি সতর্কতা নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ।
বাংলাদেশে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ হয়। উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই আইন অনেক সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে সমালোচনা আছে। ফলে সাধারণ মানুষ যেমন হ্যাকারদের ভয় পায়, তেমনি কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় নজরদারির শঙ্কায়ও থাকে।
আজকের দিনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আর বিলাসিতা নয়—এটি মৌলিক অধিকার। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে যতই প্রযুক্তির জোয়ারে ভেসে চলি না কেন, আমরা প্রতিদিন আরও অরক্ষিত, আরও হুমকির মুখে পড়ছি। তাই সময় এসেছে ডিজিটাল সচেতনতা ও নিরাপত্তাকে জীবনের অপরিহার্য অনুশীলনে পরিণত করার।
মনে রাখতে হবে—রেগে গেলেই যেমন হেরে যেতে হয়, তেমনি অসতর্ক হলেই আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, মত, পরিচয়—সবকিছু হারিয়ে ফেলতে পারি। ডিজিটাল পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে, নিজেকেই নিজের নিরাপত্তার প্রহরী হয়ে উঠতে হবে।
ডিজিটাল জগতে আমরা অনেকটাই অরক্ষিত। নিরাপদ থাকতে প্রযুক্তির পাশাপাশি সচেতনতা জরুরি। নিজের তথ্য নিজে আগলে রাখা এখন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আপনার মতে, বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা কতটা শক্তিশালী? আপনি কীভাবে নিজের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন? আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:১০