somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

বাঙালির নৈতিক অধঃপতন ও পলাতক নেতাদের বিলাসী জীবন

০৩ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বাঙালির নৈতিক অধঃপতন ও পলাতক নেতাদের বিলাসী জীবন

ছবি, এআই এর সহায়তায় তৈরিকৃত।

একটি জাতি তখনই নৈতিকভাবে পতিত হয়, যখন অপরাধীর শাস্তির পরিবর্তে তার আশ্রয়দাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আজকের বাংলাদেশে এই চিত্রই স্পষ্ট। যারা মুখে সমাজ পরিবর্তন ও ন্যায়বিচারের কথা বলেন, তারাই যখন ওবায়দুল কাদেরের মতো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আশ্রয় দিয়ে বিদেশে পালাতে সহায়তা করেন, তখন প্রশ্ন ওঠে—এই সমাজ কি সত্যিই সুস্থ? বাঙালির চরিত্র কি তবে দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে?

৫ আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ওবায়দুল কাদের মাসের পর মাস ঢাকার অভিজাত এলাকায় রাজকীয় নিরাপত্তায় আত্মগোপনে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্রভাবশালী ছায়া-গোষ্ঠীর সহযোগিতায় তিনি ভারতের মেঘালয় হয়ে কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনের ডিএলএফ নিউটাউন হাইটস প্লাজায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে আশ্রয় নেন। তাঁর থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার খরচ বহন করছেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, যিনি নিজেও একই কমপ্লেক্সে থাকেন। এই প্রশ্ন তীব্র হয়ে ওঠে—এই ছত্রচ্ছায়া কারা গড়ে তুলেছে? এই নৈতিক অবক্ষয়ের দায় কাদের?

ওবায়দুল কাদের একা নন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণআন্দোলন দমনের অভিযোগ রয়েছে, তারা কলকাতা, লন্ডন, নিউইয়র্ক, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। দেশী বিদেশী নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কলকাতার রোজডেল গার্ডেনের অভিজাত ফ্ল্যাটে সপরিবার রয়েছেন। তিনি রমজানে কলকাতার রেস্টুরেন্টে ইফতার পার্টিতে অংশ নিয়েছেন। ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম টাটা হাউজিং অ্যাভিনিডায় দুটি বিশাল ফ্ল্যাটে থাকছেন, যিনি কানাডার নাগরিক এবং সেখানেও সম্পদের মালিক।

সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক কলকাতার সল্টলেকে অত্যাধুনিক কমপ্লেক্সে সপরিবারে থাকেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম তপসিয়ায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দিন, নসরুল হামিদ, অসীম কুমার উকিল, শাহীন চাকলাদার, ওমর ফারুক চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মির্জা আজম, পংকজ দেবনাথসহ অনেকে কলকাতার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানও নিউটাউনের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে রয়েছেন।

লন্ডনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বেলজিয়াম থেকে এসে গত ঈদুল ফিতরে ঈদ উদযাপন করেছেন। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, যিনি ৫৭২৪ কোটি টাকায় বিদেশে ৬২০টি বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ, সেন্ট্রাল লন্ডনে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। সাবেক মৎস্যমন্ত্রী আবদুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনও লন্ডনে রয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও লন্ডনে আশ্রয় নিয়েছেন।

নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিয়েছেন, এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ কানাডার টরন্টোতে সপরিবারে রয়েছেন, যেখানে তাঁর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সাবেক উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, বিপ্লব বড়ুয়া, সানজিদা খানম ও আমিনুল ইসলামও যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন। সিঙ্গাপুরে রয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, যিনি জাহাজে করে দেশ ত্যাগ করেছেন। সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুবাইয়ে ছেলের কাছে থাকছেন।

শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে সুরক্ষিত আশ্রয়ে রয়েছেন, যেখান থেকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তাঁর বিতর্কিত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক কলকাতা ও দিল্লির মধ্যে আসা-যাওয়া করছেন, লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে।

এই নেতাদের পলায়নে সহযোগিতা করেছে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী—ধনিক ব্যবসায়ী, আমলাতন্ত্রের একাংশ, রাজনৈতিক দালাল ও কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের ব্যাপারে ‘ওয়াকিবহাল’ থাকলেও, কোনো অপরাধ না করলে তাদের ‘হয়রানি’ করা হয় না বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা। এই নেতারা রাজনীতিকে লুটপাটের ক্ষেত্র বানিয়ে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন, যা তাদের বিদেশে বিলাসী জীবনের মূলধন। যদিও তৃণমূল কর্মীদের অধিকাংশই জেলে কিংবা পলাতক।

আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা-নেত্রীরা লুটপাটের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে আয়েশি জীবন যাপন করছে আর দেশে পালিয়ে থাকা সাধারণ কর্মীরা ফেরারি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিন্তু অত্যন্ত আক্ষেপের ব্যাপার হলো, এসমস্ত নির্বোধ কর্মীরা তাদের শীর্ষ নেতাদের অপরাধ, লুটপাট আর অপকর্ম গুলোকে বিশ্বাস করতে চায় না! অনেক অনলাইন প্রচার কর্মীও রয়েছেন এই নির্বোধদের তালিকায়।

প্রশ্ন ওঠে, বাঙালি কি আসলেই খারাপ? উত্তর হচ্ছে- না, পুরো জাতি খারাপ নয়। কিন্তু যারা অপরাধীদের আশ্রয় দেন, গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে অপশাসনের পক্ষে দাঁড়ান, তারাই জাতির নৈতিক অধঃপতনের কারিগর। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এক ভয়ঙ্কর প্রতারণা চালাচ্ছে। এখনো সময় আছে—জনগণের বিবেক জাগ্রত করে অপরাধী ও তাদের রক্ষাকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে, ইতিহাস কেবল ক্ষমতাসীনদের নয়, গোটা জাতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×