ড. মুহাম্মদ ইউনুস, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং সমাজ সংস্কারক, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে তিনি দুর্নীতি হ্রাস, অর্থপাচার রোধ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তবে, তাকে কমপক্ষে পাঁচটি বছর সময় দেওয়া হলে বাংলাদেশে আরও গভীর পরিবর্তন আনয়ন সম্ভব হতো। বাংলাদেশ সুইডেন বা নরওয়ে হতো না, কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত এই দেশে তার নেতৃত্বে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন ঘটতে পারত।
ইতোমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনুস দুর্নীতি কমিয়েছেন। তার স্বচ্ছতার নীতি পূর্ববর্তী লুটপাটের সংস্কৃতিকে ধাক্কা দিয়েছে। ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের মাধ্যমে তিনি সরকারি সেবা, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে শুরু করেছেন, যা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়ক হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, অর্থপাচার বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ স্থিতিশীল করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে ঋণ প্রদান এবং নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন তরুণদের মধ্যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হয়েছে।
পাঁচ বছর সময় পেলে এই অগ্রগতি আরও টেকসই হতো। দুর্নীতি দমনে সংস্কার কমিশনগুলো প্রশাসনকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ করত। অর্থনৈতিক সংস্কার ক্ষুদ্র উদ্যোগকে অর্থনীতির মেরুদণ্ডে পরিণত করত এবং কর্মসংস্থান বাড়ত। শিক্ষায় সংস্কার, বিশেষ করে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলত, বাংলাদেশকে উদ্ভাবন-চালিত অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করত। সামাজিক ন্যায়বিচারে ড. ইউনুস সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সমতা নিশ্চিত করেছেন। পাঁচ বছরে তার নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রীতি জোরদার করত। রাজনৈতিক সংস্কারে তিনি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতেন, যা জনকল্যাণমুখী রাজনীতির পথ প্রশস্ত করত। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার নেতৃত্ব বাংলাদেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যেত, জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নে বিশ্ব সমর্থন আদায় করত।
তবে, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থপরতা, যেমন বিএনপি ও জামায়াতের দ্রুত নির্বাচনের চাপ, সংস্কারে বাধা সৃষ্টি করছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জও তার পথে বাধা। তবুও, তার সততা ও জনগণের প্রতি অঙ্গীকার তাকে এগিয়ে নিয়েছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি “নতুন বাংলাদেশ” হিসেবে এগিয়ে চলেছে। আরও সময় পেলে তিনি স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতেন। তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশ একটি পরিবার,” এবং এই পরিবারকে ঐক্যবদ্ধ করে সমৃদ্ধ জাতিতে রূপান্তরের স্বপ্ন পূরণ করতে পারতেন। তার অবদান চিরস্মরণীয় থাকবে, এবং তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:২৭