প্রায় ১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনার অপশাসনের সময়টা ছিল এক অলিখিত আধিপত্যবাদের ছায়া। সাধারণ নাগরিকদের এক কাপ চা পান করতেও গুণতে হতো বাড়তি টাকা। চিনির দাম দ্বিগুনেরও বেশিতে গিয়ে ঠেকেছিল। ৬০/ ৭০ টাকার চিনি কিনতে হতো ১৪০/ ১৫০ টাকায়। দেশের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় প্রভূদেশের পরামর্শই ছিল তার একমাত্র পথনির্দেশ। এই 'প্রেসক্রিপশন নির্ভর' শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে চিনিকলগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। পরিকল্পিতভাবে লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় একের পর এক চিনিকল। আখচাষিদের ঋণ বন্ধ করে, উৎপাদন অব্যবস্থা সৃষ্টি করে এবং বাজার একচেটিয়া করে বেসরকারি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা ছিল দৃশ্যমান।
তবে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন-পলায়নের পর রাষ্ট্রীয় শিল্পখাতে বইতে শুরু করে পরিবর্তনের সুবাতাস। যার ফলশ্রুতিতে ২০২৪–২৫ মাড়াই মৌসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনস্থ সাতটি চিনিকল মিলিতভাবে ৪৬,১৮৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫,০০০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১,১৮৭ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন—a ঐতিহাসিক সাফল্য।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ—আখচাষিদের ৩৫০ কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ, ৪০০ কোটি টাকা পরিচালন ঋণ সহায়তা এবং আখের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ। ফলে কৃষকদের আস্থা ফিরেছে, উৎপাদনে এসেছে গতি। নাটোর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহীসহ অধিকাংশ মিলই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। চিনি আহরণের হারও বেড়ে হয়েছে ৫.৫০%।
পূর্ববর্তী সরকারের সময় চিনিকল আধুনিকায়নের কোনো বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় অর্থপাচারে জড়িত বহুল বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের সঙ্গে করা অন্যায্য চুক্তি বাতিল করে বর্তমান সরকার সেই প্রক্রিয়ার অবসান ঘটিয়েছে।
বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ মিলগুলো পুনরায় চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের এই পুনর্জাগরণ দেশের কৃষি ও শিল্প খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২২