somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

ইরানের পারমাণবিক ঘোষণা: একটি ঐতিহাসিক অপরিহার্যতা

২০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ইরানের পারমাণবিক ঘোষণা: একটি ঐতিহাসিক অপরিহার্যতা

ছবি এআইয়ের সহায়তায় তৈরি।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ইরানের জন্য পারমাণবিক শক্তি অর্জন ও ঘোষণা কেবল একটি বিকল্প নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অপরিহার্য শর্তে পরিণত হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে জাতি নিজের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে না, সে জাতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কখনোই সম্মানজনক অবস্থান ধরে রাখতে পারে না। ইরান আজ যদি দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী, তবে তা হবে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এক যুগান্তকারী ঘটনা।

পারমাণবিক শক্তি কেবল একটি সামরিক হাতিয়ার নয়, এটি একটি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রতীক। বিশ্বের বর্তমান শক্তি কাঠামো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যেসব দেশ পারমাণবিক শক্তির অধিকারী, তাদের বিরুদ্ধে কখনোই সরাসরি আক্রমণ চালানো হয় না। ইরানের জন্য এই শক্তি অর্জন তাই জাতীয় নিরাপত্তার গ্যারান্টি। ইরান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে পারমাণবিক শক্তিধর হিসেবে ঘোষণা করে, তবে তা ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতিকে স্তব্ধ করে দেবে, আমেরিকার একতরফা হুমকিকে অকার্যকর করে তুলবে এবং আঞ্চলিক শক্তি সমীকরণে ইরানকে একটি অনন্য অবস্থানে নিয়ে যাবে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তির অধিকাংশ উপাদান আয়ত্ত্ব করেছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া, ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের দক্ষতা - সবই ইঙ্গিত দেয় যে ইরান চাইলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদনও স্বীকার করে যে ইরান পারমাণবিক প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

কিন্তু প্রশ্ন জাগে, ইরান কেন এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দিচ্ছে না? এর পেছনে রয়েছে বহুমুখী কৌশলগত ও রাজনৈতিক বিবেচনা। প্রথমত, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বলয় থেকে মুক্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো। দ্বিতীয়ত, JCPOA চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমানোর চেষ্টা। তৃতীয়ত, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেইয়ের পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কিত ধর্মীয় অবস্থানের কৌশলগত ব্যাখ্যা।

এই ঘোষণার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন। একদিকে যেমন ইসরায়েল ও আমেরিকার তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকি রয়েছে, অন্যদিকে আরো কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ইরান যদি পরোক্ষভাবে কিন্তু স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তারা পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করেছে, তবে তা হবে এক অভিনব কৌশলগত সাফল্য, যা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা এনে দেবে।

চূড়ান্ত বিশ্লেষণে বলা যায়, ইরানের জন্য পারমাণবিক শক্তি ঘোষণা একইসাথে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের সমন্বয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে যখন পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর, তখন ইরানের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়ের দাবি। এই ঘোষণা কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, সমগ্র বিশ্ব রাজনীতির গতিধারা পরিবর্তন করে দেবে। একটি পারমাণবিক শক্তিধর ইরানকে আর উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না, বরং প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামে ইরানের অবস্থানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঔদ্ধত্য ও ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতির মুখে ইরানের এই ঘোষণা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশ্বের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠবে এই সিদ্ধান্ত। ইতিহাসের এই মোড়ে দাঁড়িয়ে ইরানের সামনে একটিই পথ - পারমাণবিক শক্তির পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা। এটি ইরানের জন্য কেবল একটি অধিকারই নয়, বরং জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার অপরিহার্য শর্ত। এই ঘোষণাই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ, এবং ইরানকে নিয়ে যাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি অনন্য উচ্চতায়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৩৬ জুলাই আন্দোলনে সাবেক আর্মি অফিসারদের অবদান

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৯ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৩

ফাছিহ তখন সিলেটে মুভ করছে, হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। আহত আন্দোলনকারীদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ঠিক তখন, তার মুঠোফোনে কল আসে আর্মির একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের মোবাইলফোন থেকে। তিনি বললেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চীন সফরের রাজনীতি ও বাংলাদেশের দ্বিধাদ্বন্দ্ব: বিএনপি-জামায়াত কী খুঁজছে চীনে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:০৫


বাংলাদেশের রাজনীতি যখন নির্বাচনী অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের নিচে পিষ্ট, তখন একের পর এক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চীন সফর এক ধরনের কৌশলগত স্পর্ধার ইঙ্গিত দেয়। বিএনপি ইতোমধ্যে চারবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঠারো শতকে বাংলায় ইহুদি বণিক: এক বিস্মৃত অধ্যায়

লিখেছেন কিরকুট, ০৯ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:২৪





বাংলার ইতিহাসে মুসলিম, হিন্দু, ইংরেজ এবং আর্মেনীয় ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি নিয়ে বহু আলোচনা হলেও, একটি স্বল্পপরিচিত গোষ্ঠী — ইহুদি বণিকরা — প্রায় নজরের বাইরে থেকে গেছে। ১৮শ শতকে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জরিপঃ আপনি কি চান ব্লগার ওমর খাইয়াম আপনার পোস্টে কমেন্ট করুন?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১০ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:২৪



ব্লগার ওমর খাইয়াম একটু কঠিন মন্তব্য করেন। অনেকের পক্ষেই তা সহ্য করা সম্ভব হয় না। কেউ তাকে ব্যান করেন, আবার কেউবা রিপোর্ট করেন। আপনি যদি তাকে কখনো বলেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ পরিচালনায় জামায়াত কতটা দক্ষতা দেখাতে পারে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১০ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:০৭



জামায়াত শিবির একটি সুসংগঠিত সংগঠন। সেই তুলনায় বিএনপি, জাতীয়পার্টি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত আম্লিগ সুসংগঠিত নয়। জামায়তের সংগে বিএনপি, জাতীয়পার্টি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত আম্লিগের বিশাল ফারাক লক্ষ করা যায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×