
নদীর এপাড় ভাঙ্গে, ওপাড় গড়ে—নদীর চিরকালীন খেলা এটাই! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এই খেলা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পলাতক দোসরদের মুখে ঝাঁঝালো চপেটাঘাতের মতো এসে পড়েছে। একদা কোণঠাসা, নির্যাতিত, অপবাদে জর্জরিত ইসলামী ছাত্রশিবির আজ ডাকসু নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় নিয়ে এসেছে। ফ্যাসিবাদী ছায়া ধুলোয় মিশে গেছে, ক্যাম্পাসে বইছে নতুন হাওয়া। তবে এই বিজয়ে উল্লাসের কিছু নেই, বরং এটাই ছিল শিবিরের পাওনা—তাদের ধৈর্য আর ত্যাগের ফল। শিবিরের বিজয়ে আনন্দিত হয়ে আমি হাসিনি, তবে যারা গর্তে লুকিয়ে এখনও ফ্যাসিস্টদের ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে, তাদের মনে কী ঝড়টাই না বয়ে চলেছে, সেটা ভেবে ক্ষানিকক্ষণ না হেসে পারিনি!
যাই হোক, একসময় শিবিরের নাম শুনলেই আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা ঘেউ ঘেউ করে উঠতো। শিবিরের নামে অপবাদে তারা ছাত্র হত্যা এবং নির্যাতনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। শিবির আখ্যায়িত করে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রাতভর নির্মম নির্যাতনে শহীদ করেছে ছাত্রলীগের খুনিরা! শিবিরকে ‘ভিলেন’ বানিয়ে নিজেদের ‘হিরো’ ভাবলেও, তারা ছিল ফ্যাসিবাদী ডাকাত, ক্যাম্পাসকে তারা লুটের ময়দান বানিয়েছিল। এখন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, তাদের নেতা-সন্ত্রাসীরা দেশে-বিদেশে পলাতক। তাদের ‘লীগ’ এখন ‘লুজার্স লীগ’। শিবির ফিনিক্সের মতো উঠে এসেছে, আর ফ্যাসিস্টদের ছায়া ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেছে। হায়রে পলাতক দোসররা, তোমাদের ‘ফ্যাসিজম’ এখন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে!
ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট টর্নেডো তুলেছে, ফ্যাসিস্টদের স্বপ্ন ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে শিবির জয়ী হয়েছে। ভিপি, জিএস এবং এজিএসসহ ১২টি সম্পাদকীয় পদের ৯টিই তাদের দখলে। পাশাপাশি, ১৩টি সদস্যপদের ১১টিতেও তারাই জয়ী হয়েছে। ২৮টি পদের বাকি ৫টি পদ স্বতন্ত্রদের, কিন্তু ছাত্রলীগের নাম-নিশানা নেই। থাকবে কীভাবে? তারা তো মাঠেই নেই। কারণ, বিস্তর অপকর্মের দায় নিয়ে তারা তো এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ সংগঠন!
আর ছাত্রদল? তারা অংশ নিয়েও একটি পদে জয়ী হতে পারেনি। অতি আত্মবিশ্বাসে ভর করে, গণতন্ত্রের চর্চা না করে, আদর্শহীন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হলে এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এমনকি, ভিপি প্রার্থীকে দেখা গেছে, নির্বাচনের দিন উপাচার্যকে তিনি ধমক দিয়ে কথা বলছেন। এটাই কি ছাত্রদলের আদর্শ? এটাই যদি তাদের আদর্শ হয়ে থাকে, তাহলে ধরেই নেওয়া যায়, এই আদর্শের কারণেই তারা হেরেছে। এ যেন ক্রিকেটে অলআউট দলের বিশ্বকাপ জয়—কিন্তু এখানে ফ্যাসিস্টরা আর ছাত্রদল ট্রেনের নিচে পড়ে ‘ট্র্যাক’ হারিয়েছে!
পলাতক ফ্যাসিস্টরা আজ কোথায়? নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও কোনো নির্জন, নিরিবিলি এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন গুহায় লুকিয়ে, শিবিরের বিজয় শুনে বিষম খেয়ে কাশছে! ক্যাফেটেরিয়ায় ‘বিজয়ের শরবত’ বিক্রি হবে, ফ্যাসিস্টরা যেন অ্যাসিড গিলেছে। আরমান হোসেন মাঠে গোল উৎসব করবেন, পলাতকরা ‘গোল’ হারিয়েছে। আসিফ আব্দুল্লাহ বাসে ‘শিবির ডিসকাউন্ট’ দিলে, ফ্যাসিস্টরা পাবেন ‘জেলের টিকিট’। এম এম আল মিনহাজ ক্যাম্পাস সবুজ করবেন, আর ফ্যাসিস্টরা কালো অতীতের ধোঁয়ায় ডুবে থাকবেন। হায়রে দোসররা, তোমাদের ‘লীগ’ এখন ‘লুজার্স লীগ’!
শিবিরের উত্থান কি শুধুই ফ্যাসিস্টদের পতনের ফল? না, এর পেছনে রয়েছে শিবিরের ত্যাগ এবং ধৈর্য্য। বলা চলে, ফ্যাসিস্টদের হত্যা-নির্যাতনের ইতিহাস বুমেরাং হয়ে ফিরেছে। শিক্ষার্থীরা শিবিরের উপরে ভরসা রেখেছে, কারণ ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল দুঃস্বপ্ন। শিবিরের দায়িত্ব এই ভরসাকে রক্ষা করা, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা—যা ফ্যাসিস্টরা কখনো চায়নি। ছাত্রদলেরও শিক্ষা নেওয়ার সময় এখনই, চাঁদাবাজি, মাস্তানি এবং ধান্ধাবাজি ছাড়ারও তাদের এটাই মোক্ষম সময়, নইলে তাদের ভাগ্যে ‘পলাতক লীগ’ এর পরিণতি অপেক্ষা করছে!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



