somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুঁজি পাচারকারী কোটিপতিগণ! : ড. মইনুল ইসলাম

১৪ ই মে, ২০১২ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ড. মইনুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রাক্তন সভাপতি। তাঁর এ লেখাটি দৈনিক প্রথম আলো, ১২ মে ২০১২ -তে প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটি সবার সাথে শেয়ার করলাম।]

পুঁজি পাচারকারী কোটিপতিগণ!

২০১১-১২ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট এক হাজার ৬১ কোটি ৪১ লাখ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পথে দেশে পাঠিয়েছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য ৩ মে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ৩০ জুন অর্থবছর সমাপ্ত হলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ এ বছর ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স গত ৩০ বছরে এ দেশের অর্থনীতির প্রধান শক্তির উপাদান ও ভরসার স্থলে পরিণত হয়েছে, এটা সবার জানা। কিন্তু সত্যান্বেষী গবেষক হিসেবে এই রেমিট্যান্সের আড়ালের বৈদেশিক অভিবাসনের বিভিন্ন বাহ্যিকতা সম্পর্কেও যেহেতু গভীর অনুসন্ধানের সুযোগ আমার হয়েছে।

বাহ্যিকতা বলতে অর্থনীতিতে বোঝানো হয় এমন সব বাহ্যিক সুবিধা ও অসুবিধা, যেগুলোর দায়ভার ওই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (কিংবা অন্য ধরনের এজেন্টরা) বা ভোক্তারা বহন কিংবা সুবিধা ভোগ করে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের সতত ইতিবাচক ও নেতিবাচক বাহ্যিকতার অস্তিত্বকে স্বীকার করে পথ চলতে হয়, যদিও বিষয়টির ব্যাখ্যা আমরা বেশির ভাগ মানুষই বুঝি না। (আমার পাশে বসে আরেকজন ধূমপান করলে আমারও ধূমপান করা হয়ে যায়। এটা নেতিবাচক বাহ্যিকতার একটা উদাহরণ।)

সরকারিভাবে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হিসেবে অবস্থান করছেন। অনাবাসী বাংলাদেশিদের একটা ক্ষুদ্র অংশ অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে, কিন্তু এর বাইরে আরও ৪০ থেকে ৫০ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হয়। এই এক কোটি ১৫ থেকে ২৫ লাখ মানুষের শতকরা ৯৫ জনের সঙ্গেই তাঁদের পরিবার-পরিজন-স্বজনদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রয়েছে এবং বিশ্বের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিপ্লবের কল্যাণে এই যোগাযোগ দিন দিন সুলভ ও ব্যয়-সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, এ দেশের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ (কিংবা তারও বেশি প্রবাসী শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী নিয়মিতভাবে হুন্ডি পদ্ধতিতে তাঁদের পরিবার-পরিজন-আত্মীয়স্বজনদের কাছে অর্থ প্রেরণ করে থাকেন) জাল বিস্তার করে রেখেছে অভিবাসী অর্থ প্রেরণকারীদের বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়ের জন্য। যেহেতু বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ক্রমবর্ধমান হারে অবাধ এবং বৈধভাবে বাজারব্যবস্থার অধীনে ন্যস্ত হয়ে গেছে, তাই বিশ্বের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশে এভাবে বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় বেআইনি নয়। এমনকি বাংলাদেশসহ যেসব দেশে এখনো মুদ্রার বিনিময়যোগ্যতা পুরোপুরি বৈধ করা হয়নি, সেসব দেশেও আনষ্ঠানিক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের পাশাপাশি বা সমান্তরালে ইনফর্মাল বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের আওতা ও দাপট বেড়ে চলেছে; বরং বলা চলে, লেনদেন ব্যালেন্সের মূলধনি খাতে টাকার বিনিময়যোগ্যতাকে নামকাওয়াস্তে অবৈধ রেখে ফর্মাল-ইনফর্মাল দুই ধরনের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে অপব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কায়েমি স্বার্থকে উৎসাহিত করার জন্য। বিশ্বের দেশে দেশে হুন্ডিওয়ালারা যেসব বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করছে, তার ৯০ শতাংশই রূপান্তরিত করা হয় ডলারে। কারণ, যারা ডলার কিনতে আগ্রহী, তাদের চাহিদা পূরণ করাই হুন্ডিওয়ালাদের মুনাফার প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচ্য। এ জন্য ফর্মাল বাজারের চেয়ে ইনফর্মাল বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর টাকায় দুই, তিন এমনকি পাঁচ টাকা বেশি পাওয়া যায় চাহিদা ও জোগানের ওঠানামা এবং ডলারের মৌসুমি চাহিদাস্ফীতির কারণে।

কারা এই বাজারের প্রধান ক্রেতাগোষ্ঠী? গবেষণায় দেখা গেছে, চোরাচালানিরা এ দেশে হুন্ডি ডলারের বড় ক্রেতার ভূমিকা পালন করে চলেছে। চোরাচালান মানে শুধু চোরাইপথে, রাতের আঁধারে, সবার অগোচরে অবৈধ পণ্য আমদানি বোঝানো হয় না। আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং, মিথ্যা ঘোষণা, মিথ্যা শ্রেণীকরণ, ওজনে কম-বেশি দেখানো, ভুল ট্যারিফ ভ্যালুর ব্যবহার—এসব অবৈধ পদ্ধতি চোরাচালানের রকমফের মাত্র। তাই স্বীকৃত নৌবন্দর, স্থলবন্দর, বিমানবন্দর, শুল্ক স্টেশন বা অভিবাসন পয়েন্টগুলোর মাধ্যমেই চোরাচালানের ৮০ শতাংশেরও বেশি পরিবাহিত হয়ে থাকে। চোরাচালানের কেতাবি নাম সে জন্যই ‘অবৈধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য’, শুধু গোপন বা চোরাইপথের বাণিজ্য নয়, এ ক্ষেত্রে দেশের বিদ্যমান আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক, সারচার্জ, অগ্রিম আয় কর, অন্যান্য কর—এগুলো ফাঁকি দেওয়া বা কম দেওয়া যেমন চোরাচালানকারীর উদ্দেশ্য, তেমনি বিভিন্ন পরিমাণগত বাধা-নিষেধ, অশুল্ক বাধা-নিষেধ কিংবা নিষিদ্ধ পণ্য আমদানিও চোরাচালানকে উৎসাহিত করে থাকে। এক শ্রেণীর শুল্ক বা ভ্যাট কর্মকর্তা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য , চাঁদাবাজ-মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সংশ্লিষ্ট আমলা—সবাই চোরাচালানের বিশ্বস্ত অংশীদার হয়ে থাকেন। এ জন্য দিনেদুপুরে রাজপথ দিয়ে চোরাচালানের পণ্য পরিবাহিত হতে অসুবিধে হয় না, যার যার ভাগ যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে মর্মে সিগন্যাল আদান-প্রদানের ব্যবস্থাটাই মুখ্য। চোরাচালানের জন্য রাতের আঁধার অপরিহার্য নয়।

১. বাংলাদেশে হুন্ডি ডলারের সবচেয়ে বড় খদ্দের আন্ডার ইনভয়েসিং পদ্ধতি ব্যবহারকারী আমদানিকারকেরা। দেশের আমদানি বাণিজ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল ঠিকই বুঝতে পারবেন, আমদানিকারকদের বৃহদংশই নিয়মিতভাবে কিংবা প্রায়ই আন্ডার ইনভয়েসিং পদ্ধতি ব্যবহার করে শুল্ক, মূসক, সম্পূরক কর, সারচার্জ ইত্যাদি ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি আদায়কারী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে। দেশের গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যাক-টু ব্যাক এলসি এবং শুল্কমুক্ত গার্মেন্টস পণ্য আমদানির সুযোগের অপব্যবহার করে আন্ডার ইনভয়েসিং পদ্ধতির মাধ্যমে অতিরিক্ত কাপড় আমদানি করার প্রমাণ মিলেছে আমার গবেষণায়। যে কাপড় যথাস্থানে ঘুষ-নজরানা দিয়ে বন্ডেড ওয়্যারহাউস এবং ফ্যাক্টরি থেকে বের করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই দুই নম্বরি কারবারেরই আরেক নাম ‘লিকেজ’। গার্মেন্টস মালিকদের বেশির ভাগ এই দুনম্বরি কারবারের কারবারি। এমনিভাবে আন্ডার ইনভয়েসিং কম-বেশি সব পণ্য আমদানিতেই ব্যবহূত হয় শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়ার জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসেবে, আর অতিরিক্ত পণ্যের ‘এক্সট্রা মূল্য’ পরিশোধে প্রয়োজন পড়ে হুন্ডি ডলারের। উচ্চহারে শুল্ক-কর থাকলেই আন্ডার ইনভয়েসিং বেশি হয়।

২. হুন্ডি ডলারের আরেক বড় খদ্দের পুঁজি পাচারকারী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পুঁজি পাচারকে ইংরেজিতে বলা হয় ক্যাপিটাল ফ্লাইট। যেসব ব্যবসায়ী রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের অনার্জিত ও অপ্রদর্শিত কালোটাকার বড় অংশ বিদেশে ঘরবাড়ি-জায়গাজমি কেনার জন্য, বিদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করার জন্য, বিদেশে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য বা দোকানপাট-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্রয় ও পরিচালনার জন্য পাচার করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এ দেশের ‘পলাতক পুঁজির’ প্রধান গন্তব্য। মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচি এ ক্ষেত্রে নাকি সাম্প্রতিক কালে আকর্ষণীয় টার্গেটে পরিণত হয়েছে। যেসব রাজনীতিক দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতির কল্যাণে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যান কিংবা যেসব আমলা আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির ফায়দাভোগী, তাঁরা তাঁদের অনার্জিত অর্থের নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে বিদেশে পুঁজি পাচারকে বেছে নেওয়াটাই স্বাভাবিক মনে করেন। হুন্ডি ডলারের চাহিদার স্ফীতি ২০১১ সালে ইনফর্মাল বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ডলারের দাম ৯০ টাকার ওপরে নিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ওই সময়ের মহা ধস যেসব রাঘব বোয়াল পুঁজি লুটেরা ঘটিয়েছিল, তাদের লুণ্ঠিত পুঁজি দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছিল ব্যাপক হারে। অনেকেই জানেন না, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, নেপাল, ভারত, মালয়েশিয়া, দুবাই—এসব দেশে বাংলাদেশি পুঁজিপতিদের মালিকানাধীন অনেক শিল্পকারখানা, নির্মাণপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে গত তিন দশকে! হুন্ডি পদ্ধতি ব্যবহার করেই এসব পুঁজিপতি তাঁদের বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছেন, এটা কি সরকার জানে না? এদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন।

৩. বিদেশে চিকিৎসা করানোর জন্য হুন্ডি পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার করা হয়, এটাও ওপেন সিক্রেট। প্রায় লক্ষাধিক বিত্তবান পরিবারের ছেলেমেয়ে বিদেশে লেখাপড়া করছে। তাদের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য হুন্ডি পদ্ধতিরই আশ্রয় নিতে হয়।

৪. মানি লন্ডারিং করার জন্যও হুন্ডি ডলার দেদার ব্যবহূত হচ্ছে। নিচের উদাহরণটা দেখুন:
অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী পুলিশ সার্জেন্ট, কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট কিংবা আয়কর পরিদর্শক দেশে বাড়ি বানাতে চাইলে বা অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চাইলে, বিদেশে অভিবাসী তাঁর ভাই-বেরাদরের সহায়তায় বিদেশ থেকে হুন্ডি ডলার কিনে ফর্মাল চ্যানেলের (ব্যাংক বা অন্যান্য চ্যানেল) মাধ্যমে ওই ডলার প্রেরণ করলে, সেটা আর কালোটাকা থাকে না, বৈধ রেমিট্যান্স হয়ে যায়। তারপর ওই ডলারের সমপরিমাণ টাকা যে ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করা হোক, ওই অর্থের উৎস নিয়ে আর প্রশ্ন তোলা যায় না। এ ধরনের লেনদেনই মানি লন্ডারিংকে সহজসাধ্য করে তুলেছে এ দেশে।

এ আলোচনায় উদাহরণসহ যা বলতে চেয়েছি তা হলো, হুন্ডি পদ্ধতির মূল আকর্ষণটা আসছে হুন্ডি ডলারের চাহিদা কাঠামোর ব্যাপকতা ও চাহিদার ক্রমবর্ধমান স্ফীতি থেকে। ডলারে দুই বা তিন বা পাঁচ টাকা বেশি পেয়ে যেসব প্রবাসী হুন্ডি নেটওয়ার্কের জালে ধরা দিচ্ছেন, তাঁদের দোষারোপ করে এ সমস্যার সমাধান মিলবে না। ব্যাংকের মাধ্যমে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণকে যতই সহজ ও সময় সাশ্রয়ী করা হোক না কেন, হুন্ডি নেটওয়ার্কের দাপট তাতে তেমন কমানো যাবে না। বৈদেশিক অভিবাসনের একটা বড়সড় নেতিবাচক বাহ্যিকতা হিসেবে হুন্ডি পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। তবে এটুকু বলা যায়, বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে হুন্ডি পদ্ধতির জনপ্রিয়তা অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের চেয়ে অনেক বেশি, যার মূল কারণ নিহিত রয়েছে বাংলাদেশে চোরাচালান, পুঁজি পাচার, মানি লন্ডারিং এবং ইনফর্মাল বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার স্ফীতির মধ্যেই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফর্মাল অর্থনীতির পাশাপাশি ‘কালো অর্থনীতি’র সাম্রাজ্য ক্রমপ্রসারমান। দুর্নীতিতে পাঁচ-পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। গত পাঁচ বছরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে দাবি করা হলেও তা খুব জোরালো নয়। দুর্নীতির অর্থনীতির চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনেই ব্যবহূত হচ্ছে হুন্ডি পদ্ধতি। ডলারের তুলনায় টাকার অবচয়ন হতে দিলেই এ সমস্যার সমাধান মিলবে না।

যদি প্রশ্ন ওঠে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ফর্মাল রেমিট্যান্স ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে তার সঙ্গে ইনফর্মাল চ্যানেলগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ যোগ করলে প্রকৃত মোট রেমিট্যান্স কত দাঁড়াবে? কারও কাছেই এই হিসাবটা সঠিকভাবে পাওয়া যাবে না বোধগম্য কারণেই। কিন্তু ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার যদি ফর্মাল-ইনফর্মাল রেমিট্যান্সের সম্ভাব্য যোগফল দাঁড়ায়, তাহলে তো অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব উভয়ই প্রধান গুরুত্বের দাবি রাখে। বাজারে মূল্যস্ফীতির আগুন, জমিজমার দামের মহাউল্লম্ফন, হাজারে হাজারে কোটিপতির সংখ্যাবৃদ্ধি—এগুলো যেমন এ দেশের বাস্তবতা, তেমনি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পালে যে হাওয়া লেগেছে, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে।
কথা হচ্ছে, লাখ লাখ অদক্ষ, আধাদক্ষ অভিবাসীর রক্ত আর ঘামের বিনিময়ে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল অংশ যেভাবে এ দেশের পুঁজি পাচারকারী, চোরাচালানি, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ এবং আমলারা দখল করে নিচ্ছেন, সেই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের নীতি-প্রণেতারা কেন প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন না?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১২ রাত ১২:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×