রাষ্ট্রপতি ড: ইয়াজ উদ্দিন আহমদকে ১ নভেম্বর ২০০৭ সালে টেলিফোনে জরুরী আইন ঘোষণার প্রথম অনুরোধকারী হিসাবে লে: জে: মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর নামটিই বিশেষ প্রচার পেয়েছে । আসলেই কি তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে জরুরী আইন জারি করার অনুরোধ করেছিলেন? দুই বছরের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে তার ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানা কৌতুহল। এ নিয়ে আমারো কৌতুহল ছিলো অন্য সবার মতোই।
লে: জে: মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী সিডনী আসার পর থেকেই তার সঙ্গে কথা বলার সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। তার সাথে আমার কথা বলার আগ্রহ আরও বেড়ে যায় যখন সিডনীর বি এনপির কিছু নেতা-নেত্রী একান্ত আলাপে তার বিরুদ্ধে তারেক রহমানকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে অকথ্য ভাষায় সমালোচনা করেন।
তাকে ঘিরে নানা কথার সত্যতা ও জরুরী অবস্খা ঘোষণার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমি লে: জে: মাসুদ চৌধুরীর সাথে কয়েকবার একান্ত আলোচনা করি । প্রথম দিকে প্রাণচঞ্চল এই মানুষটি খোলা-মেলা আলাপ করে সহজ ভাষায় সবই বলতেন।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি -কথিত রয়েছে আপনি রাষ্ট্রপতিকে জরুরী অবস্খা ঘোষণার জন্য টেলিফোনে অনুরোধ করেছিলেন ?
উত্তরে বললেন, আমার পদমর্যদায় আমি কি রাষ্ট্রপতিকে ফোন করতে পারি? তাছাড়া ওটা আমার দায়িত্ব বা কর্ত্তব্যের আওতায় পরেনা, আমি একটি গুরুত্বপুর্ণ ডিভিশনের জিওসি ছিলাম তা সত্য, পরে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপ্যাল অফিসার এর দায়িত্বে ছিলাম।
জানতে চাই - আপনার কোন রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল কি ?
লে.জে. মাসুদ: -রাজনীতিবিদদের মতো আমি বা আমরাতো সেনা অফিসার হিসাবেই দেশ সেবা করেছি। তবে সুবিধাবাদী কিছু রাজনীতিবিদ জনাব জে: মঈন কে দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল করার প্রয়াস চালায়। আমি তার ঘোর বিরোধীতা করি। জরুরী অবস্খা জারির পর ৯০ জন বিএনপির ও ১০ জন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা জে: মঈন সাহেবের কাছে বলেছেন ঐ দুই নারীর জন্য আমরা কিছুই করতে পারছিনা ।এরপরই সংবাদ মাধ্যমে প্রচার শুরু হয় মাইনাস টু র্ফমুলার গুজব।
আমি জানতে চাই, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে আপনি নিজে দৈহিক টর্চার করেছেন এমন একটি অভিযোগ আমি একটি ঘরোয়া আলোচনায় শুনেছি । কথাটা কতটা সত্য ?
তিনি বললেন, রাজনৈতিক বা সামরিক যে কোন বিষয়েই বলুন সামরিক বাহিনীতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিংবা দৈহিক ও মানুষিক নির্যাতন করার প্রয়োজন হলে ডিজিএফআই নামে একটি বিভাগ রয়েছে । আমি তো সে বিভাগের কেউ নই, তা ছাড়া কে, কাকে নির্যাতন করলো বা করেছে আমি এ ব্যপারে কিছুই জানিনা বা জানার কথাও নয়।
আমার প্রশ্ন, মার্শাল ল জারি করে দেশ শাসনের ইচ্ছার সাথে আপনি কি একমত ছিলেন ?
তার উত্তর ছিলো, কখনো না, তা ছাড়া দেশেতো আমরা সামরিক সামরিক শাসন জারি করিনি, দেশ চলেছে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত জরুরী আইনে, রাষ্ট্রপতির শাসন ছিলো তখন। রাষ্ট্রপতি সংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের সেনা, নৌ ও বিমান, এই তিনটি সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, তাই সকল সেনাবাহিনীর তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ কমান্ডেন্ট।
বর্তমান রাজনৈতিক ও দেশ শাসনের সফলতা ও ব্যর্থতা মুল্যায়ন করবেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান পদমর্যদায় আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগ। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সামরিক অফিসারদের নিয়ে যেসব সমালোচনা শুরু হয়েছে, তা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে একটি চক্রের সুবিধা আদায়ের চেষ্টা বলে আমি মনে করি। এর মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীতে গড়ে তোলা সুশৃংথলতায় সন্দেহ ঢুকিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লুটতে পারে।
লে.জে মাসুদের কথার ভাষায় অনুমান করা গেল ইতিমধ্যে জে: মঈনের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। জে: মঈনের লেখা বইয়ের সব ঘটনার বিবরনের সাথেও তিনি একমত নন। আলাপচারিতায় কিছু রাজনীতিবিদের আকাশছোঁয়া দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরলেন তিনি। বিশেষ করে এক শীর্ষ রাজাকার ও বর্ণচোরা এক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার নাম ধরেই বললেন। আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, আমরা রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব নই বিধায় কিছু বির্তকিত রাজনৈতিক নেতারাই আমাদের কে দুর্বল ভেবে যা-খুশি তাই বলে বাহবা নিচ্ছে। এসব বির্তকে সরকার তার উন্নয়ন কাজ ঠিক ভাবে করতে পারছেন না বলেও তিনি মনে করেন। ক্ষমতায় থাকা মহাজোট যখন গণতান্ত্রিক ও একটি সুষ্ঠু সরকার ব্যবস্খায় দেশকে নিয়ে যেতে আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে ঠিক তখন জরুরী অবস্খার বিরুদ্ধে সরকারি ও বিরোধীদলীয় কিছু চিহ্নিত রাজনীতিক নানা কথার জালে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করছে বলেও তিনি মত দেন।
সিডনি
মূল প্রতিবেদন
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




