somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা যে মহাবিশ্বে বাস করছি , সেটা আসলে কেবলই একটি বিশাল হলোগ্রাম!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুইনা অবাক হওয়ার কিচ্ছু নাই। এই বিশাল হলোগ্রাম এর কারনেই আমাদের চারপাশে আমরা যা দেখি তা হচ্ছে দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠের প্রজেকশন। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রথমবারের অস্ট্রিয়ান গবেষকরা দেখাতে সক্ষম হয়েছে যে এই হলোগ্রাফিক নীতি আমাদের সৃষ্টির বাস্তবসম্মত মডেলের জন্য সত্য।

সর্বপ্রথম ১৯৮২ সালে এক গবেষকদল পদার্থবিদ এলেন এসপেক্টের নেতৃত্বে হলোগ্রাফিক নীতির উপর এক পরীক্ষা চালান , যা বিংশ শতাব্দির গুরুত্বপূর্ণ গবেষনাগুলোর একটি বলে ধারনা করা যেতে পারে।

তাদের আবিষ্কারটা ছিল যে - নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থীতিতে সাব-এটমিক পার্টিকেল , যেমন ইলেক্ট্রন একে অন্যের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখে , তা একে অন্যের থেকে যত দুরে বা নিকটে থাকুক না কেন। দুরত্ব এখানে কোন সমস্যা নয় , একে অন্যের থেকে ১০ ফুট দুরেই থাকুক বা ১০ হাজার কোটি মাইল দুরেই থাকুক।
তাদের আবিস্কারের মূল বক্তব্য ছিল - বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতার (objective reality) কোন অস্তিত্ব নেই। আমাদের এই মহাবিশ্ব একটা ছায়া মাত্র , এক অতিকায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাজানো চমৎকার ত্রিমাতৃক (3-D) ছবি বা হলোগ্রাম।



আসলে হলোগ্রাম জিনিশটা কি?

হলোগ্রাম হলো লেজার রশ্মির সাহায্যে তোলা ত্রিমাতৃক ছবি। যে বস্তুর ছবি তোলা হবে , তার উপরে একটি লেজার রশ্মি ফেলে প্রতিফলিত করা হয়। ঐ প্রতিফলিত রশ্মির উপরে দ্বিতীয় একটি লেজার রশ্মি ফেলা হয়। এই দুই রশ্মির মিলিত প্যাটার্নকে (the area where the two laser beams commingle) একটি ফিল্মে ধারন করা হয়। তারপরে ঐ ফিল্মকে ডেভেলপ করা হয়। ডেভেলপ করা ঐ ফিল্মের ভিতর দিয়ে লেজার রশ্মি পাঠালেই কেবল ত্রিমাতৃক ছবি দেখা যায়। ত্রিমাতৃকতাই কেবল হলোগ্রামের বৈশিষ্ঠ নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ হলো , হলোগ্রামের প্রতিটি বিন্দুই সম্পুর্ন বস্তুর ছবি ধারন করে।



সহজভাবে বলা যায়, একটি দ্বিমাত্রিক হলোগ্রাম কার্ডে যেভাবে ত্রিমাত্রিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়, আমাদের সমগ্র মহাবিশ্বই এমনভাবে তৈরি। আপনার এ টি এম কার্ডের মধ্যে হলোগ্রাম দেওয়া আছে।



ধরুন আপনি আপনার প্রেমিকার একটি হলোগ্রাম তৈরি করেছেন। এবার এই হলোগ্রামটিকে আপনি কেটে দুভাগ করেন এবং যে কোন একাংশের ভিতর দিয়ে লেজার রশ্মি পাঠান, তাহলে অর্ধেক প্রেমিকা নয় , পুরো প্রেমিকার ত্রিমাতৃক ছবি দেখতেঁ পাবেন , যা আয়তনে অর্ধেক। হি হি হি.........



আমরা জানি যে কোন ঘটনা অথবা বস্তু সম্পর্কে পরম সঠিক তথ্য পেতে হলে অবশ্যই তা সম্বন্ধে চুলচেরা গবেষণা করতে হবে। ডাল্টন এর স্বীকার্যকে উপেক্ষা করে আজ বিজ্ঞানিরা সার্ন এ সৃষ্টির আদিমতম কনা আবিস্কারের জন্য পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকাগুলো প্রতিনিয়ত ভাঙছে।

কিন্তু হলোগ্রাম এর ব্যাপার টা খুবি ভিন্ন , তা হল এই মহাবিশ্বে এমন ও কিছু আছে , যাকে কেটে ছোট করে বিশ্লেষন করা সম্ভব নয়। যদি কোনকিছু হলোগ্রামের মতো করে তৈরি হয়ে থাকে , তবে আমরা কখনই জানব না যে এটা কি দিয়ে তৈরি। কারন আমরা একে যতই ভাগ করি না কেন , আমরা পাব আয়তনে ছোট কিন্তু পুরাটাই (smaller wholes)। কিন্তু এর গভিরতম লেভেল এ কি আছে আমরা কক্ষনই বুঝব না!
তাই তো লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ডেভিড বোহম বলেছেন যে- বাস্তবতার আরো গভিরতর লেভেলে অনেক জটিল মাত্রা (dimension) আছে , যা আমাদের পঞ্চেন্দ্রীয় দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম পদারথবিদ লিওনার্দো সাসকিনড হলোগ্রাফি নীতির জোর সমর্থন জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে যখন পদার্থবিদ হুয়ান ম্যালডেসিনা মহাবিশ্বের অদ্ভুত এক মডেল তৈরি করেন যা দেখে মনে হয় সমগ্র বিশ্ব শুধুমাত্র একটি হলোগ্রাম চিত্র। ম্যালডেসিনার এই মডেলে দেখা যায়, সমগ্র মহাবিশ্বে মহাকর্ষের উৎপত্তি ঘটছে প্রচণ্ড রকমের চিকন, স্পন্দনরত তন্তু থেকে। আমাদের পরিচিত পদার্থবিদ্যার সাহায্য নিয়েই বেশ ভালোভাবে একে ব্যাখ্যা করেন তিনি। তার এই মডেলে রয়েছে স্থানের নয়টি মাত্রা এবং সময়ের একটি । তিনি আশা করছেন এর ওপরে ভিত্তি করেই একদিন আমাদের মহাবিশ্বের মহাকর্ষের রহস্য জানা যাবে। যা আমরা স্ট্রিং তত্ত্ব বলে জানি।




গভীরতর লেভেলে বাস্তবতা হলো একটি সুপার হলোগ্রাম , যেখানে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত একসাথে অবস্থান করে। ধারনা করতে দোষ নেই , ভবিষ্যতে সঠিক প্রযুক্তির উদ্ভব হলে , সুপার হলোগ্রাম লেভেলের বাস্তবতায় যেয়ে সুদুর অতীতের ভুলে যাওয়া কোন দৃশ্য তুলে এনে সকলের সামনে দৃশ্যমান করা সম্ভব হবে। তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারব এই পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব কিভাবে হয়েছিল , মানুষ কিভাবে ধাপে ধাপে জীবের বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল ।


সূত্রঃ ১। Click This Link
২।https://en.wikipedia.org/wiki/Holographic_principle
৩।http://www.bibliotecapleyades.net/ciencia/ciencia_holouniverse04.htm


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫২
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×