কয়েকদিন আগে ক্লাস করছি। ম্যাডাম লেকচার দিচ্ছে। সময় দুপুর। হঠাৎ অসম্ভব প্রশ্রাবের বেগ। আমি ক্লাসে ডিস্টার্ব হবে মনে করে দরজার দিকে যাচ্ছি। এমন সময় ম্যাডাম বললেন, কোথায় যাচ্ছ ? উত্তরে বললাম, বাথরুমে যাচ্ছি। অবস্থা বেগতিক। তিনি অনুমতি দিলেন।
কঠিন অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে ক্লাসে ঢুকলাম। ম্যাডাম বললেন, ক্লাসে একজন শিক্ষক আছে আর তুমি অনুমতি নেবার প্রয়োজন বোধ করলে না ? ভবিষ্যতে অনুমতি নিয়ে যাবে। তখন ক্লাসের এক বন্ধু ম্যাডামকে বলল, আমাদের অন্য দু-একজন শিক্ষক ক্লাসে ডিস্টার্ব হয়, তাই অনুমতি নিতে মানা করেছেন। ম্যাডাম বললেন, আমি তো অন্য দু একজনের মতো বলিনি। আমার ক্লাসে অনুমতি নিয়ে যাবে।
বিষয়টি বুকের ভেতরটায় খচখচ করছিল। একজন ছাত্রের নিজের ইচ্ছেমতো বাথরুমে যাবার অধিকার নেই ? পায়খানা-প্রশ্রাব অতি মানবিক ব্যাপার। এই কাজটি করতেও আমাদের অনুমতি নিতে হয়! কঠিন অবস্থা। এটা শিশুতোষ ব্যাপারও হতে পারে।
আজ পর্যন্ত ছাত্র হিসেবে শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করার চেষ্টা কখনো করিনি। যাদের কাছে অন্তত একটা শব্দ হলেও শিখেছি, আজ পর্যন্ত সম্মান দেবার চেষ্টা করি। অবশ্য যার কাছে কিছু শিখিনি, তাকে শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতেও খুব একটা ভালো লাগে না। আমি নিজেও একজন শিক্ষক পরিবারের ছেলে। আমার দাদা-আব্বা-আম্মা-চাচা-চাচী-ফুফা-খালু কেউ না কেউ শিক্ষক ছিল। শিক্ষকদের সম্মানের স্থানটা কতো উঁচু স্থানে, তা আমি বুঝি।
বাথরুমে যাবার অনুমতি চাওয়া নিয়ে আমার কোন প্রতিবাদ নেই। একজন শিক্ষক এটাকে অপরাধ মনে করছেন, এটা অপরাধ। ছাত্র হিসেবে তা আমার মেনে নিতেই হবে। ক্লাসে শিক্ষকদের হুকুমটাই মুখ্য।
পাদটীকাঃ খুবই বিনীতভাবে তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। এটা আমার একান্ত একটা ভাবনা, যা-তে আপনাদের মহান পেশাকে ছোট করার কোন দুঃসাহস নেই। আপনাদের পেশাটা মহান পেশা। আপনারা জ্ঞান দান করেন। তাও বলছি একটু আগে মনে হল, আমাদের দেশের কিছু শিক্ষক— ক্লাসে আসেন; বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০২