আমি যেখানে কাজ করি, জায়গাটার নাম কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ। লোকটাকে প্রায়ই সেখানে দেখি। অফিসে যাওয়ার সময় দেখি। অফিস থেকে ফেরার সময়ও দেখি। এমন কি অফিসে বসেও দেখি। ওপর থেকে। কাচের দালানে বসি, ঘাড় ঘোরালেই দেখা যায়।
ওপর থেকে খুব ক্ষুদ্র লাগে তাঁকে। বারবার যখন টাকাগুলো বের করে গোনেন, তখন অসহায়ও। প্রতি বারই তিনি হয় তো ভাবেন, কোনও অলৌকিক উপায়ে টাকার পরিমাণ বেড়ে যাবে। সেটা হয় না। টাকা বাড়ে না, অপেক্ষা বাড়ে। রাস্তায় সন্ধ্যাবাতি জ্বলে উঠলেও তিনি বসে থাকেন। গামছা দিয়ে যত্ন করে মোছেন যন্ত্রটা। ল্যামিনেট করা কাগজটা: মাত্র দুই টাকায় ওজন মাপা হয়।
ফুটপাথের এক কোণায় জায়গা তাঁর। হঠাৎ কোনও দিন হাজির হয় টমটম, টগবগ করে ঘোড়াগুলো যায়। মাঝে মাঝে সিনেমার বিজ্ঞাপন: ভাই সব...। আচমকা কোনও দিন শূন্য হয়ে যায় রাস্তাঘাট। তেমন কিছু না, প্রধানমন্ত্রী যাবেন। পুলিশগুলো ব্যস্ত হয়ে ওঠে, ‘সাইডে চাপেন, সাইডে...’। কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না, কিছুই না।
বেলা চড়লে বৃদ্ধ ছায়ার নীচে চলে যান। এক পিচ্চি এক কাপ চা রেখে যায়। টাকা নেয় না। পাশে দাঁড়িয়ে শসা বেচে যে লোকটা, কাগজে করে দু’টুকরো শসা এগিয়ে দেয়। বিনা পয়সায়। আমি আপন মনে মাথা নাড়ি। নাহ, পৃথিবীতে এখনও কিছু ভালো লোক আছে।
শুধু যখন বৃষ্টি হয়, তখন আর তাঁকে দেখা যায় না। আমি লাঞ্চের পর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ভাবি, ‘কে জানে, আজকে চাচার খাওয়া হলো কি না!’

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


