somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধিভৌতিক ঘটনা-ধনেশ পাখির ঠোঁট (দ্বিতীয়াংশ)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গল্পের প্রথমাংশের পর......

গণেশ সাধু দুইটা কারণে চমকে উঠেছিলো। মেয়েটার স্বপ্নের বর্ণনা হুবহু তার দেখা স্বপ্নের সাথে মিলে গেছে। ব্যাপারটা এমন যে পূর্ণিমার সৌন্দর্য কেউ ছাদে বসে দেখছে আর কেউ বিছানায় শুয়ে দেখছে। কিন্তু কাগজটা দেখে সে কেবল চমকেই উঠেনি বরং প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। কারণ কাগজের এই তথ্য তো কারো জানার কথা না। সে পরিষ্কার বুঝতে পারলো তার অজ্ঞাতেই, হয়তো তার কারণেই কোথাও কোন মারাত্মক ভুল হয়ে যাচ্ছে। সে মেয়েটিকে নিচের তলায় পিসিমার ঘরে বসতে বললো। অতঃপর দরজা বন্ধ করে গভীর ধ্যানে বসে গেলো। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার সামনে পুরো সত্যটা আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে লাগলো। ছেলেটি তার কাছে মিথ্যে বলেছে। মেয়েটিকে (অর্থাৎ তার স্ত্রীকে) মেরে ফেলার আসল কারণ এই বিশাল সম্পত্তি করতলগতকরণ। সেক্ষেত্রে গতানুগতিক পন্থার হত্যাকাণ্ডে নিশ্চিতভাবে সে ফেঁসে যাবে। তাই এই ছক কষা। এতে কারো পক্ষেই তাকে দোষ দেওয়ার কোন উপায় থাকবে না। একই সাথে আরও যা জানতে পারলো – অফিসের যে মেয়ের সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক সে এটার সাথে জড়িত আছে। মারণ বাণের বুদ্ধি তারই দেওয়া। ষড়যন্ত্রের আরও গভীরে সে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু তা সহ্য করার ক্ষমতা আজ তার হারিয়ে গেছে। ধ্যানে ভঙ্গ দিয়ে সে দ্রুত একতলায় চলে গেলো। মেয়েটিকে তার পরনের লাল শাড়িটা বদলাতে বললো। কিন্তু সে তাতে কিছুতেই রাজি হল না। তার একটাই কথা – তার স্বামীর আদেশ(!) এটা। সে তার স্বামীর সাথে কথা না বলে কিছুই করবে না। উপরন্তু তান্ত্রিকের অনুরোধে পিসিমা জোরাজুরি করাতে বেশ বিরক্ত হয়েই সে সেখান থেকে চলে গেলো। বিকালের কিছু পরে পিসিমা চলে গেলো হাসপাতালে তান্ত্রিকের মেয়ের ওখানে। প্রতিদিন এই সময় সে হাসপাতালে যায়। সারারাত থেকে পরদিন দুপুরের আগে বাসায় ফেরে।

অষ্টমী তিথির রাত। তান্ত্রিক গণেশ সাধু এক কঠিন সাধনায় বসলো। তার ছোড়া মারণ মন্ত্রবাণ তাকেই ফেরাতে হবে। কিন্তু এতে তার (তান্ত্রিকের) জীবননাশের সমূহ আশংকা থাকে। থাকলে থাকুক। তার অসুস্থ মেয়েও বিপদে পড়তে পারে। পড়লে পড়ুক। আজ সে কোন কিছুই পরোয়া করে না। মারণ বাণ মারার পদ্ধতি যতটা না কঠিন তার থেকে বহুগুণ কঠিন তা ফেরানো। সেই কবে এক কুয়াশাভরা পূর্ণিমার রাতে হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে আসামের এক নির্জন গ্রামে এক কুমারী মেয়ের উপর করা মারণ বাণ সে ফিরিয়েছিল। কিন্তু আজ পরিবেশ, পরিস্থিতি, ক্ষেত্রবিশেষ সবই ভিন্ন। বাইরে কালো মেঘে ঢাকা আকাশে বিদ্যুৎ গর্জন আর ভিতরে কালো ধোঁয়ায় ঢাকা ঘরে মন্ত্র পঠন সমান তালে চলতে লাগলো।

দুর্যোগঘন ঝড়ের রাত। সবাই যার যার ঘরে দরজা বন্ধ করে আছে। কিন্তু মনে হচ্ছে সবার বাড়িতেই আজ ডাকাত পড়েছে। দমকা বাতাসে দরজা জানালা থর থর করে কাঁপছে। এমন সময় গণেশ সাধুর ঘরের দরজা তার থেকেও জোরে শব্দ করে কেঁপে উঠলো। ভেঙে গেলো মারণ মন্ত্রবাণ ফেরানোর অতিকঠিন সাধনা। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না আজ রাতে কি ঘটতে যাচ্ছে। ক্লান্ত সাধু উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো তার বয়সী এক লোক বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে আছে। মুখভর্তি কালো দাড়ি। দু’এক জায়গায় পাকন ধরেছে। কিন্তু একে তো আমি চিনি না। সাধু অনেক চিন্তা করে দেখলো – না, একে আমি কোথাও দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না। সাধুর চিন্তায় ছেদ পড়লো। শ্মশ্রুমণ্ডিত লোকটি তাকে জানালো যে, তার মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। ডাক্তার বলেছে - আজ সন্ধ্যার পরপরই অবস্থা হঠাৎ খারাপ হতে শুরু করে। ঝড়-বাদল শুরু হওয়ায় কেউ আপনাকে খবরও দিতে পারেনি। কিন্তু এখন আর না এসে পারলাম না। আর আপনি শরীরের একি হাল করেছেন। সাধু এক মনে সব শুনে গেলো। কিছুই বললো না। শেষে কেবল একটা কথাই বললো, “চলুন যাই। বৃষ্টিতে এগুলো এমনিতেই ধুয়ে চলে যাবে।

ছেলেটার কাছ থেকে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা পেয়েই সে তার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট হাঁটু পানির নিচে, বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার শহর, শূন্য পথে কোন যানবাহনও নেই যে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল যাওয়া যাবে। হাসপাতালে পৌঁছাতে বেশ সময় লেগে গেলো। ইতোমধ্যে বৃষ্টি থেমে গেছে। বেডে শুয়ে আদরের মেয়ে ছটফট করছে। পাশে পিসিমা মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে আর সমানে কেঁদে চলেছে। বাপ-বেটি তার রক্তের সম্পর্কের কেউ না। কিন্তু যুদ্ধে সবাইকে হারিয়ে যখন সে সম্পূর্ণ একা তখন এরা তার শূন্য জীবন পূর্ণ করতে কোথা থেকে যেন হাজির হয়। ভেবেছিলো বাকি যে কয়েকটা দিন ভগবান বাঁচিয়ে রাখবেন এদের নিয়েই থাকবেন। কিন্তু আজ যে সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ডে ডাক্তার তেমন কেউ নেই। এক কমবয়সী ডাক্তার গণেশ সাধুকে সব বিস্তারিতভাবে বললো।

ক্লান্ত তান্ত্রিক এক সময় হাসপাতালের বেঞ্চিতে ঘুমিয়ে পড়লো। সে অনেক চেষ্টা করেছিলো যাতে ঘুম না আসে। কারণ সে জানতো এটা অন্যান্য দিনের মতো সাধারণ কোন ঘুম না। একে বলে কালঘুম। অতি কাছের মানুষ যখন দূরে অনেক দূরে চলে যায়, যে যাত্রার ধরণ একমুখী তখন মানুষকে এই ঘুমে ধরে। জুজু ধরার মতো এই ঘুমের অমোঘ আকর্ষণ ছিন্ন করার সাধ্য খুব কম মানুষেরই আছে। ঘুমের মধ্যে গণেশ সাধু একটা স্বপ্ন দেখলো। সেই একই স্বপ্ন যা সে বিগত দু’দিন ধরে দেখে আসছে। একই দৃশ্যপটে আজ সে কোন ধোঁয়াটে ছায়ামূর্তি না, বরং সম্পূর্ণ মানুষ, পরিপূর্ণ গণেশ সাধু। প্রচণ্ড বৃষ্টি পড়ছে, বজ্রবৃষ্টি। কালো আকাশের নিচে সেই বাড়িটাকে আজ ভৌতিক লাগছে। পাশ দিয়ে বয়ে চলা লেকের পানিটাকে মিশমিশে কালো মনে হচ্ছে। রাস্তার কুকুরগুলো এই বৃষ্টির মধ্যেও ঘেউ ঘেউ করছে। তান্ত্রিকের পূর্ণ অবয়ব বাড়ির গেটে এসে দাঁড়ালো। ভিতর থেকে এক মেয়ের আর্তচিৎকার শুনতে পেলো। তান্ত্রিক গেট খুলে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। সেই বেডরুমে গিয়ে দেখলো বিছানায় সেই লাল শাড়ি পরা মেয়েটি একলা শুয়ে ব্যথায় চিৎকার করছে। পাশের রুমে তার স্বামী কার সাথে যেন হেসে হেসে টেলিফোনে কথা বলছে। গণেশ সাধু পাগলের মতো এ ঘর থেকে সে ঘর করছে। এক সময় মেয়েটা তাকে বাবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। মেয়েটার ঘর্মাক্ত কপালে হাত বুলাতেই আস্তে আস্তে সে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। অসহ্য যন্ত্রণা থেকে চিরমুক্তি মিললো। মর্ত্যলোকের জটিল জীবন থেকে এক অসহায় মেয়ে চিরবিদায় নিলো।

হঠাৎ কারো ধাক্কায় তান্ত্রিকের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে দেখলো সেই দাড়িওয়ালা লোকটি। পাশে সেই তরুণ ডিউটি ডাক্তার। ডাক্তার জানালেন, একটু আগে তার মেয়েটা মারা গেছে। মারা যাবার আগে তার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। গত দু’দিন ধরেই হচ্ছিলো। আমরা এটাকে তেমন অস্বাভাবিক ভাবিনি। ভাবার মতো ছিলও না। রাতে বেশি করতো। দিনে তুলনামূলক কম। কিন্তু একটু আগে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। যন্ত্রের মতো কথাগুলো বলে ডাক্তার চলে গেলো। ওহ! যাবার আগে তারা যে অতিশয় দুঃখিত সেটাও বলে গেলো। দাড়িওয়ালা লোকটি তান্ত্রিককে মেয়ের লাশের কাছে নিয়ে আসলো। পাশে বসে পিসিমা বুক চাপড়িয়ে কাঁদছে। তান্ত্রিক একটুও কাঁদলো না। কাছে গিয়ে মেয়ের কপালে হাত বুলিয়ে দিলো। মেয়ের ঘামে ভেজা কপাল তার চোখ ভিজিয়ে দিলো। পিসিমার কাছ থেকে জানতে পারলো মারা যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে সে নাকি তার বাবাকে চিৎকার করে ডাক দেয়।

সেই রাতে তান্ত্রিক হঠাৎ উধাও হয়ে গেলো। ফিরলো ঠিক এক সপ্তাহ পরে। চেহারায় বিধ্বস্তভাব প্রকট, চোখ কোটরে দেবে গেছে, চুলগুলো উস্কখুস্ক – এক কথায় জীবন্মৃত। মেয়ে মারা যাবার পর গনেশ সাধু আর এক মাসের মতো বেঁচে ছিল। জীবনের শেষ কটা দিন সেই দাড়িওয়ালা লোকটির সাথে থাকতো। তার বাড়িও এই পুরান ঢাকাতেই। চেনে না জানে না, কোনোদিন দেখেনি এমন একটা লোকের সাথে কেন থাকতো তার ব্যাখ্যা অনেক বড়। এটা কমলের দাদা আমাকে বলেননি। পরে কোন একদিন সময় পেলে বলবেন বলে কথা দিলেন। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হল কমলের দাদা আমাকে অনেক কিছুই বলেননি। অনেক কিছুই বাদ দিয়ে দিয়ে গেছেন। কারণ কিছু জায়গায় ঘটনাপ্রবাহে বেশ ফাঁক রয়ে গেছে যা কিনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।

গণেশ সাধুর সপ্তাহখানেকের অন্তর্ধান সবার কাছে চিররহস্যময় হয়ে আছে। মৃত্যুর পর গণেশ সাধুকে দাহ করা হয় না বরং তাকে মশানস্থ করা হয়। হিন্দুদের যে জায়গায় পোড়ানো হয় তাকে শ্মশান বলে আর যেখানে কবরস্থ করা হয় তাকে মশান বলে। কমলের দাদা আমাকে ঘটনাটা বলে বেশ খারাপ কাজই করেছিলো। কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস উনি আমাকে সবকিছু বলেননি। কিছু গোপন রেখেছেন। যদি গোপন রাখবেনই তো কাহিনীটা বলার দরকার কি ছিল। ঘটনাটা আমাকে বেশ ভাবাতো। দিনরাত কেবল ঐ জিনিসই ভাবতাম। মাঝে মাঝে ধানমণ্ডির বিভিন্ন রাস্তায় রাতবিরাতে ঘুরতাম। এতে আমার কৌতূহল তো মেটেইনি, উল্টো এক রাতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মোবাইল আর ৪৩০ টাকা (৩০ টাকা মোবাইলের ব্যাল্যান্স) খোয়াতে হয়। অবশ্য আমি একেবারে খালি হাতে ফিরিনি। ধানমণ্ডির গুণধর ইয়াবা সেবনকারী নবাবপুত্তুররা ভার্সিটির হলে যাবার জন্য ১৭ টাকা আর সাথে কিছু কিল-ঘুষি দিয়ে বাপের নতুন কেনা বিএমডব্লিউ নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে যায়। এরপর প্রায় এক বছর কেটে গেলো। এই একটা বছর আমার জীবনে এক রকম ঝড় বয়ে যায়। কিছু ঘটনায় আমার জীবন প্রায় ওলটপালট হয়ে গেলো। একদিন কমল এসে জানালো তার দাদা আমাকে যেতে বলেছেন। উনি নাকি খুব অসুস্থ। আমার সাথে একটু কথা বলতে চান। কিন্তু আমি আর সেই আমি নেই যে কিনা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আগ্রহ নিয়ে পায়ে ঝি ঝি ধরিয়ে এক অশীতিপর বৃদ্ধের ফোকলা দাঁতের প্রায় দুর্বোধ্য গল্প শুনবো। তাই ওনার অসুস্থতার কথা শুনেও কমলকে মুখের উপর না করে দিলাম।

এক রাতের ঘটনা। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার মোবাইলে ফোন এলো। কথা বললাম। পরদিন আমি কমলের দাদাবাড়ি গেলাম। উনি আমাকে ওনার ছোট ছেলের নাম্বার থেকে গতরাতে ফোন করেছিলেন। স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী কমলের দাদা আমাকে কিছু কথা বললেন যা তার অনেক আগেই বলা উচিৎ ছিল। আমিও আমার কিছু ঘটনা তার সাথে শেয়ার করলাম। যে রাতে গণেশ সাধুর মেয়ে মারা যায় সেই রাতেই সে (গনেশ সাধু) ধানমণ্ডির ঐ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাড়িটা দেখে স্বপ্ন আর বাস্তবকে পৃথক করা কঠিন। স্বপ্ন আর বাস্তব হুবহু এক। ভোরবেলাতেই বাড়ির সামনে গাড়ির ভিড়। ভিতরে যেয়ে দেখলো সারা বাড়ি শোকে পাথর হয়ে আছে। একজনের কাছ থেকে জানতে পারলো এ বাড়ির এক মেয়ে নাকি আজ রাতে বাচ্চা প্রসবের সময় মারা গেছে। কাল রাতে ঝড় হওয়াতে হাসপাতালেও নেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু সাধু তো আসল জিনিস ঠিকই বুঝতে পারলেন। দুনিয়ার তাবৎ মানুষ একে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু বললেও এটা যে এক নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড তা তার থেকে ভালো আর কেইবা জানে। ভিতরে গিয়ে দেখলো মেয়েটার স্বামী বুক চাপড়ে কান্নাকাটি করছে। আশেপাশের কোন দিকে তার খেয়াল নেই। এরপর যথারীতি মেয়েটাকে দাহ করা হল।

তান্ত্রিক দাহকার্যের সময় পাশেই ছিল। ছাই সংগ্রহ করার কাজটা সে নিজে থেকেই করলো। তাকে স্থানীয় পুরোহিত ভালভাবেই চিনতো। ছাই সংগ্রহ করতে গিয়ে সাধু একটা জিনিস খেয়াল করলো। আর তা হল দুইটা নাভি একসাথে জোড়া লাগানো আর তার মাঝে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া একটা ধনেশ পাখির ঠোঁট। ধনেশ পাখির বাঁকানো ঠোঁটটা নাভি দুইটাকে কামড়ে ধরে ছিল। লাশ পড়ানোর সময় কিছু ঘটনা ঘটে। যেমনঃ পাকা বেলের মতো ঠাস করে মাথা ফেটে যাওয়া, চামড়ায় টান পড়ে হাত-পা ভয়ঙ্করভাবে বেঁকে যাওয়া আর লাশ পোড়ান শেষে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও পেটের নাভি অক্ষত থাকা। এই নাভি দুইটা যে মা আর সন্তানের তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু পুড়ে যাওয়া ধনেশ পাখির ঠোঁট আসবে কোথা থেকে! প্রশ্নটা আমার ছিল, গণেশ সাধুর ছিল না। সে ঠিকই জানতো এটা এখানে কিভাবে এসেছে।

তান্ত্রিক মেয়েটাকে কঠিন মারণ বাণে বেঁধে ফেলে। মেয়েটার ছবি দেখে তার আদলে একটা মাটির মূর্তি তৈরি করে। তার গায়ে শাড়ির মতো করে একটা লাল কাপড় পেঁচায়। তারপর পুতুলের নাভি বরাবর একটা ধনেশ পাখির ঠোঁট ছুরির মতো ঢুকিয়ে দেয়। সে পরবর্তীতে তার ভুল বুঝতে পারে। নিজের মারা বাণ ফেরানোর জন্য নিজের শরীর কেটে রক্ত বের করে। নিজের রক্ত দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিধিবাম। সে ব্যর্থ হয়। সে বুঝতে পারে এই অপরাধের কোন ক্ষমা নেই। অভিশাপের প্রতিফল পাওয়ার জন্য সে প্রহর গুনতে থাকে। এক সময় এসেও যায় সেই ক্ষণ। কিছুদিনের ভেতরে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে গণেশ সাধু। পেটে মারাত্মক ব্যথা করতো। পেটে এক্স-রে করানোর পর ডাক্তাররা যারপরনাই অবাক হলেন । পেটের ভেতরে বাঁকানো ছুরির মতো এক অদ্ভুত বস্তুর উপস্থিতিই অবাক হবার কারণ। এরকম জিনিস নাকি ডাক্তাররা আগে কখনোই দেখেননি। তাদের কারো কারো কাছে এটা পাখির ঠোঁটের মতোও লাগছিলো। এক আঁতেল টাইপ জুনিয়র ডাক্তার আবার একে ধনেশ পাখির ঠোঁট বলে সিনিয়র ডাক্তারদের কাছে ধমক খেলো। যাইহোক ডাক্তাররা অপারেশন করানোর পরামর্শ দিলেন। কিন্তু তান্ত্রিক কিছুতেই রাজি হল না। একদিন হাসপাতাল থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে এলেন। জীবনের বাকি কটা দিন সেই দাড়িওয়ালা লোকটির সাথে কাটালেন। মারা যাওয়ার আগে তার অতীত জীবনের সব কথা আর মৃত্যুর পর তাকে দাহ না করে তার মেয়ের মতোই কবর দেওয়ার অনুরোধ করলো। তারপর এক ঝড়ের রাতে কাউকে কিছু না বলে সবার অজান্তে সবার কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলো রহস্যময় তান্ত্রিক গণেশ সাধু।

পরিশেষেঃ গল্পটা কমলের দাদার মুখে শোনার পর থেকে আমার মনের মধ্যে কেবল একটা প্রশ্ন বেশি ঘুরপাক করতো। সেই ছেলেটার পরিণতি শেষ পর্যন্ত কি হয়। আসলে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমি রাতবিরাতে ধানমণ্ডির রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম। মাঝে মাঝে অবশ্য দিনেও ঘুরতাম। কিন্তু দিনে ভার্সিটির ক্লাস আর টিউশনির চাপে শান্তিমতো ঘুরতে পারতাম না। আর আমি ছোটকাল থেকেই নিশাচর প্রাণী ছিলাম। রাত জেগে পড়ার অভ্যাস ছিল আমার। তাই রাতে ঘুরে বেড়াতে কষ্ট হতো না। যে রাতে আমার অভিজাত ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার সৌভাগ্য হয় সেই রাতেই আমি এর উত্তর খুঁজে পাই। ধানমণ্ডির কিছু কিছু জায়গা আজও রহস্যময়। সেরকমই এক জায়গায় চা খেতে খেতে জানতে পারি সেই নরাধমের পরিণতির কথা। গা শিউরানো সেইসব ঘটনা না হয় আরেকদিন বলি?

সবশেষেঃ এটা পুরোপুরি কাল্পনিক গল্প। বাস্তবের সাথে এর কোনই মিল নেই। শাঁখারী বাজার ও ধানমণ্ডির ব্যাপারে যা যা লিখেছি সবই কল্পনাপ্রসূত। তবে একটা তথ্য সত্য। ইয়াবা সেবনকারী নবাবপুত্তুরদের মাঝে মাঝে যে ছিনতাই করার ব্যারাম ওঠে এইটা কল্পিত না, বাস্তব।

উপরের ছবিটা নেট থেকে ধার নেওয়া। কিন্তু গল্পটা না।


আধিভৌতিক ঘটনা-দাবাবোর্ড

আধিভৌতিক ঘটনা-জ্যোৎস্নাচূড়া

আধিভৌতিক ঘটনা-হলজীবন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×