somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নাজিম হাসান
আমি নাজিম হাসান, জার্মানির কোলন শহরের প্রেমে পড়েছি। পড়ছি যন্ত্র প্রকৌশল এবং কম্পিউটার প্রকৌশলে একসাথে । ভালোবসি ভ্রমন করতে, শখের জন্য গিটার নিয়ে অবসরে টুংটাং।কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক, রান্না করা অনেক পছন্দের কাজ। এতোকিছুর পরও কিছু সময় অবশিষ্ট থেকেই যায়,

ফারো, পর্তুগালে দ্বিতীয় দিন

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফারো তে দ্বিতীয় দিন

দ্বিতীয় দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠার কথা থাকলেও খানিকটা দেরী করে ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে অপরূপ এক রৌদ্রজ্জ্বল সকাল উপহার হিসেবে পেলাম। জার্মানির শীত প্রাককালিন সময়টাতে আকাশ সবসময় মেঘলা থাকে। সূর্যের দেখা পাওয়া যায়না বললেই চলে।এজন্যই অধিকাংশ মানুষের শীতে মন খারাপ থাকতে দেখা যায়। সূর্যের সাথে মন ভালো থাকার সূত্রতা অনেকেই মানে। সাজ্জাদ ভাই এজন্যই বলে জার্মানরা একটু রুক্ষ স্বভাবের। তবে আমার কাছে ব্যাপারটা এমননা। আমার একবছর কেটেছে বার্লিনে, তখন আমিও এমনই ভাবতাম! পুরো ব্যাপারটাই মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা যাকে ইংরেজীতে অবশ্য সবাই চিনবেন এডাপটেশন বলে। যাই হোক চোখ খুলে উজ্জ্বল সকাল দেখে আমরা দুই ভাই তো মহাখুশি হয়ে ঝটপট তৈরী হয়ে গেলাম আমাদের হাতে বানানো নাশতা করে।



নাশতার কথা মনে হতেই আমার লক্ষ্য করা কিছু বিষয় তুলে ধরছি। আমি আমার জীবনে প্রথম এতো মোটা মোটা পাউরুটির ফালি পর্তুগালেই দেখলাম। আমার মতো মানুষের পেট ভরার জন্য এক পিস পাউরুটিই যথেষ্ট । তারপরের ব্যাপারটা হলো সুপারশপ বনাম বেকারী। জার্মানিতে সুপারশপের বেকারী পণ্যের দাম বেকারীর তুলনায় কম, কিন্তু পর্তুগালে ব্যাপারটা পুরো উল্টা। সাজ্জাদ ভাইকে একবার ৩ ইউরো দিয়ে বাকরখানি কিনে খাওয়ানোতে ভাইয়া মনে পড়লে এখনোও পঁচায় আমাকে! এখানে পঁচানোর পরিবর্তে অন্য কোনো উপযুক্ত শব্দ পাচ্ছিনা বলে পঁচানোই ব্যবহার করলাম। নাস্তা করা শেষে হোটেলের বারান্দা থেকে সাগর দেখে বারান্দাতেই দাড়িয়ে ছবি তুলতে শুরু করলাম। পড়াশুনা, রান্না-বান্না, গিটার, ব্লগ লিখা ছাড়াও ছবি তোলা খুব পছন্দের একটা কাজ আমার। শুধু মাত্র ফারোতেই আমি প্রায় ১৭৪৮ টি ছবি তুলেছিলাম!



লবি হয়ে হোটেলের সামনে এসে দাড়াতেই দুজন জার্মানের সাথে আমার পরিচয় হলো, বন্ধু হয়ে গেলো ওরা আমাদের। ছেলেটার নাম হ্যানরি, জার্মানির বন শহরের বাসিন্দা।এবং ওর গার্লফ্রেন্ড লওরা, জার্মানির আখেন শহরের বাসিন্দা। আখেন এবং বন দুটো শহরই কোলনের খুব কাছে। ওদের সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম, ওরা বললো আমরা নাকি একই প্লেনে ছিলাম, ওরা আমাদের দেখেছে। আর আমরা একই বিমানে জার্মানি ব্যাক করবো, ভালোই লাগলো ব্যাপারটা শুনে। সবাই আমরা একসাথে সমুদ্রের পাড়ে চলে গেলাম। কত বিশাল সমুদ্র আটলান্টিক !



অবাক হয়ে উজ্জ্বল নীলাভ সবুজ আটলান্টিকের পানি দেখছিলাম কিছুক্ষন। শান্ত সাগরের মাঝে কিছু স্হানীয় জেলে বড়শিতে মাছ শিকার করছিলো। বড়শির মাথা থেকে সুতা ধরে আমরা সাগরের কোথায় বড়শি পাতা হয়েছে তা দেখার চেষ্টা করলাম। দেখতে পেলাম না, কারন অনেক গভীরে ছিলো বড়শির ছিপ। অনেক লম্বা এক লাঠির মাথায় চিকন নাইলনের সুতায় বড়শি তৈরী। এবং লাঠির গোড়া মাটিতে পুঁতে লাঠিকে সোজা করে রাখা হয়।






আমি অদ্ভুত সুন্দর কিছু ঝিনুক এবং পাথর কুড়িয়ে নিলাম। পানির সাথে আমার বৈরীতার কারনে আমি সাগরে নামি নি। আমার জার্মান বন্ধু তার বান্ধবীকে নিয়ে নগ্ন হয়ে পানিতে নেমে পড়লো! লজ্জায় আমরা সেই স্থান থেকে মুহূর্তে প্রস্থান করলাম। আমি আর ভাইয়া তখন সাগরের পাড়ে ঘুরে কিছু ছবি এবং স্লোমো তুললাম। এমন করে প্রায় ৩ ঘন্টার মতো সাগরে থেকে আমি একটা ট্যাক্সি কল করলাম, ১৫ মিনিট পর ট্যাক্সি এসে পৌছলে আমরা ট্যাক্সিতে করে মূল শহরে চলে গেলাম। রাস্তায় ট্যাক্সি চালকের কাছে জেনে নিলাম কোথায় ভালো স্যী ফুড পাওয়া যাবে। তিনি জানালেন আমাদের খুব সকালে তাভিরাতে যে বাজার বসে সেখানে যেতে হবে।



আমরা ফারো সেন্ট্রালে নেমে আশেপাশে বিভিন্ন সুন্দর স্পট ঘুরতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে দুপুর কখন সন্ধ্যা হয়ে গেলো আমরা বুঝলামও না। পেটে অনেক ক্ষুধা নিয়ে আমরা এক রেস্টুরেন্টে ঢুকে আবারও স্যীফুড খেলাম। খাওয়া শেষে কিছু বাজার করে নিলাম রান্নার জন্য। পাশেই এক গোপালগণ্জ্ঞের ভাইয়ের দোকান খুঁজে পেলাম! খুব অমায়িক মানুষ ছিলেন ভাইটা, আমাদের দেখে ওনার কতো আপ্যায়ণ। আশ্চর্য জনক ভাবে উনার নামও ছিলো সাজ্জাদ। ১২ বছর লন্ডনে ছিলেন ! পরে ফারো এসে দোকান খুলেছেন। আপনারা ফারো এলে উনার দোকানে অবশ্যই যাবেন। ফারো সেন্ট্রালে ম্যাকডোনাল্ডের পাশের ২-৩ টা দোকানের পরেই উনার দোকান। আমরা যেহেতু খেয়ে গিয়েছিলাম তাই উনাকে কোন কিছু করতে দেইনি। পরে উনি জোর করে উনার মিতাকে ১ বোতল পানি দিয়ে দিলেন!



উনার দোকান থেকে বের হয়ে তোলা কমলা গাছের নিচে তোলা সাজ্জাদ ভাইয়ের ছবি। উনার দোকান থেকে বের হয়ে আমরা বাসে উঠলাম আজ। রাত বেশী হয়নি বলে বাস পেয়েছিলাম। পর্তুগালে বাস অনেক ব্যয়সাপেক্ষ মনে হলো আমার! জার্মানিতে আমরা ১ দিনের জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্টের টিকেট, এমনকি ৩ ঘন্টার জন্য টিকেট কিনতে পারি। কিন্তু পর্তুগালে আমাদের বাংলাদেশের মতো যত বার বাসে উঠি ততোবর টিকেট কাটতে হয়!

আমরা ৩০ মিনিট পর বাসায় পৌঁছালাম । বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে ঘুম। আজ এতটুকুই... পরবর্তী দিনে লিখবো কি করে পর্তুগাল থেকে স্পেনে ঘুরে আসলাম। ভালো থাকবেন সবাই!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৩৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×