(গল্পটা আমার লেখা না,আমার ছোট বোন লিখেছে)
এক দেশে ছিল এক রাজা। আর সেই রাজার ছিল অনেক আদরের এক রাজপুত্র। সেই রাজপুত্রের বয়স যেদিন আঠার বছর পূর্ণ হল,রাজা মহাধুমধাম করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। অনুষ্ঠানে রাজপুত্রের সব বন্ধুকে দাওয়াত দেয়া হল। আশেপাশের দেশের রাজপুত্র,মন্ত্রীপুত্র সবাই এল। আর সাথে করে নিয়ে এল নামী-দামী সব উপহার। কিন্তু রাজপুত্রের সবথেকে প্রিয় বন্ধুটি তাকে উপহার দিল একটি লুঙ্গি। লুঙ্গিতে লাগান ছিল ‘লেবু সুন্দরী’ লেখা একটি স্টিকার। উপহার পেয়ে রাজপুত্র অবাক হয়ে তার বন্ধুকে বলল, “বন্ধু,এতকিছু থাকতে তুমি আমার জন্য লুঙ্গি উপহার নিয়ে এলে! তবে এটা খুবই সুন্দর। আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা, লেবু সুন্দরীটা আবার কে?” বন্ধু বলল, “তা তো আমার জানা নেই। আজ সকালে দরবেশের মত দেখতে একজন লোক আমার কাছে আসে। আমার হাতে লুঙ্গিটা ধরিয়ে দিয়ে বলে- ‘আজ রাজপুত্রের আঠার বছর পূর্ণ হচ্ছে। তুই এটা রাজপুত্রকে উপহার দিবি।’ বলেই সে চলে যায়। অনেক খোজাখুজি করেও আর তাকে পাইনি।” রাজপুত্র তখন মহারাজের কাছে গেল, “বাবা,বাবা,তুমি কি জানো লেবু সুন্দরী কে?বল না বাবা।”মহারাজ বললেন, “লেবু সুন্দরী আবার কে হবে? এটা তো লুঙ্গির উপরে লাগান একটা স্টিকার ছাড়া আর কিছুই না। লেবু সুন্দরী বলতে আসলেই কেউ নেই। যাও এখন ঘুমাতে যাও।” ঘুমের মধ্যে রাজপুত্র অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল-একটা বাতাবিলেবুর ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়ে। মেয়েটি ধীরে ধীরে রাজপুত্রের কাছে এসে কান্না জড়ান গলায় বলল,'আমি কতদিন থেকে তোমার অপেক্ষা করছি রাজপুত্র।তুমি এসে আমাকে এই লেবু থেকে উদ্ধার কর।'
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাজপুত্র ছুটে গেল মহারাজের কাছে, “বাবা, তুমি আমাকে মিথ্যা বললে কেন? আমি বলেছিলাম না,লেবু সুন্দরী সত্যিই আছে। আজ আমি লেবু সুন্দরীকে স্বপ্নে দেখেছি।” মহারাজ বললেন, “ঠিক আছে রাজকুমার,আমার ভুল হয়েছে।” রাজপুত্র বলল, “ভুল হয়েছে বললে তো হবে না।আমি এখন লেবু সুন্দরীকে খুজতে বের হব। তোমার ঘোড়াশালের সব থেকে সুন্দর ঘোড়াটা আমাকে দিতে হবে।” মহারাজ বললেন, “অবশ্যই দেব। কিন্তু আজ আর তোমার বের হবার প্রয়োজন নেই। কাল সকালে তুমি তোমার অভিযানে বের হবে।আমার কিছু সৈন্যও তোমার সাথে যাবে। আজ তুমি তোমার অভিযানের প্রস্তুতি নাও।ঠিক আছে?” কিন্তু রাজপুত্র আর পরদিন সকালের জন্য অপেক্ষা করল না। সেদিন রাতেই ঘোড়াশাল থেকে সবথেকে সুন্দর ঘোড়াটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অভিযানে।
রাজপুত্র ঘোড়া ছুটিয়ে চলতেই লাগল।চলতে চলতে একসময় সে এক দরবেশের দেখা পেল। সে দরবেশকে বলল, “দরবেশ বাবা,আমি এই দেশের রাজপুত্র। লেবু সুন্দরীর খোঁজে বেরিয়েছি। আপনি কি আমাকে বলতে পারেন কোথায় লেবু সুন্দরীকে পাব?” দরবেশ ইশারায় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বলল। রাজপুত্র আবার চলতে শুরু করল।আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আরেকজন দরবেশের দেখা পেল। এই দরবেশও রাজপুত্রকে একইভাবে সামনে এগিয়ে যেতে বললেন। রাজপুত্র আবার চলতে শুরু করল। অনেক পাহাড়-জঙ্গল পার হয়ে রাজপুত্র বিরাট এক বটগাছের নিচে উপস্থিত হল। সেই গাছের নিচে ধ্যান করছিলেন এক বৃদ্ধ দরবেশ। রাজপুত্র তাঁকে দেখে অভিভূত হয়ে গেল,বুঝতে পারল একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন লেবু সুন্দরীকে কিভাবে পাওয়া যাবে। দরবেশ তার কাছ থেকে সব কিছু শুনলেন। তারপর বললেন, “আমি জানতাম তুমি একদিন আমার কাছে আসবে। কিন্তু তুমি যে লেবু সুন্দরীকে খুঁজতে বের হয়েছ, তুমি কি জানো এটা কত কঠিন কাজ? আমার মনে হয় তুমি পারবে না। তারচে বরং তুমি ফিরে যাও বাবা।” রাজপুত্র বলল, “আমি যখন একবার লেবু সুন্দরীর খোঁজে বেরিয়েছি,তখন আমি তাকে না নিয়ে ফিরে যেতে পারি না। দয়া করে আপনি আমাকে সাহায্য করুন বাবা।” দরবেশ তখন বললেন, “ঠিক আছে,তুমি যখন তোমার মনকে স্থির করেই ফেলেছ,তখন আর আমি তোমাকে বাধা দেবনা। আবার বলছি,এটা আসলেই অনেক কঠিন কাজ। লেবু সুন্দরীর দেখা পাবে সাত সমুদ্র-তের নদী পার হয়ে। পথে অনেক বিপদ আসবে। তুমি এভাবে সেখানে যেতে পারবে না। আমি তোমাকে একটা পঙ্খীরাজ ঘোড়া দিচ্ছি,এটাই তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবে। ঘোড়া থেকে নেমে কিছুটা দূরে দেখবে একটা বাতাবিলেবু গাছ। সেই গাছের সবথেকে উচুডালে একটা মাত্র বাতাবিলেবু ঝুলে আছে। তুমি যখন সেটাকে নিয়ে আসবে,তখন অসংখ্য দৈত্য তোমাকে ভয় দেখাতে শুরু করবে,নানাভাবে তোমাকে পেছন থেকে ডাকবে। সাবধান,একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাবে না।তাহলে কিন্তু বাতাবি লেবুটা তোমার হাত থেকে উড়ে আবার গাছে ফিরে যাবে।” রাজপুত্র বলল, “আপনি যেভাবে বলছেন আমি সেভাবেই করব।” তারপর সে পঙ্খীরাজের উপর উঠে বসল আর পঙ্খীরাজ তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল সাত সমুদ্র-তের নদী পারে লেবু সুন্দরীর দেশে।
পঙ্খীরাজ থেকে নেমে রাজপুত্র দেখতে পেল কিছু দূরেই দারিয়ে আছে একটা বাতাবি লেবু গাছ। সেই গাছের সবচে উচুডালে রয়েছে একটা মাত্র বাতাবি লেবু। রাজপুত্র গাছে উঠে যখনই বাতাবি লেবুটা ধরল,তখনই শুরু হল ভয়ংকর সব চিৎকার।রাজপুত্র কোনরকমে লেবুটা ছিড়ে নিয়ে পঙ্খীরাজের দিকে ছুটতে শুরু করল আর পেছন থেকে বিভৎস সব দৈত্য তাকে তাড়া করতে শুরু করল। এরকম ভয়ঙ্কর অবস্থার মাঝে রাজপুত্র ভুলে গেল বৃদ্ধ দরবেশের সাবধান বাণী। সে শুনতে পেল খুবই মিষ্টি কন্ঠে পেছন থেকে তাকে ডাকছে। সে পেছন ফিরে একবার তাকাল আর বাতাবি লেবুটা তার হাত থেকে উড়ে গিয়ে আবার আগের জায়গায় চলে গেল। দৈত্যগুলোর ভয়ে রাজপুত্র আর বাতাবি লেবুটা আনতে যাবার সাহস করতে পারলনা। পঙ্খীরাজে চড়ে আবার ফিরে এল বৃদ্ধ দরবেশের কাছে। দরবেশ বললেন, “বলেছিলাম না বাবা,এটা অনেক কঠিন কাজ,তুমি পারবে না। তুমি তোমার বাবা-মার কাছে ফিরে যাও।” রাজপুত্র বলল, “বাবা,আমি অনেক কষ্ট করে এতদূর এলাম। ছোট্ট একটা ভুলের জন্য আমি খালি হাতে ফিরে যাব! আপনি আমাকে আরেকটা সুযোগ দিন।” দরবেশ রাজি হলেন।কিন্তু রাজপুত্র এবারো একই ভাবে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল। এবার আর দরবেশ কোন সু্যোগ দিতে রাজি হলেননা। রাজপুত্র অনেক কান্নাকাটি করল। দরবেশ তাকে শেষবারের মত একটা সুযোগ দিলেন। রাজপুত্র তার কানদুটো তুলা দিয়ে বন্ধ করে দিল যেন কোন শব্দ না ঢুকতে পারে। তারপর সে বাতাবি লেবুটা ফিরে আসল বৃদ্ধ দরবেশের কাছে। দরবেশ তাকে একটা ছুরি দিয়ে বললেন বাতাবি লেবুটা কাটতে। রাজপুত্র লেবুটা কাটল। দেখল,লেবুর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে স্বর্গের অপ্সরীর মত অপূর্ব রূপসী এক মেয়ে-ঠিক যেমনটা রাজপুত্র স্বপ্নে দেখেছিল। মেয়েটি রাজপুত্রকে বলল, “আমি তোমার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ রাজপুত্র। তুমি আমাকে আমার বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করেছ।” তারপর রাজপুত্র বৃদ্ধ দরবেশকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিল।
লেবু সুন্দরীকে নিজের ঘোড়ায় চড়িয়ে রাজপুত্র দেশে ফিরতে লাগল। চলতে চলতে তারা এক জঙ্গলে পৌছল। রাজপুত্র একটা গাছের নিচে এসে ঘোড়া থেকে নেমে লেবু সুন্দরীকে বলল, “আমি প্রচণ্ড ক্লান্ত। কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। আমি শুয়ে থাকি,তুমি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।” লেবু সুন্দরী রাজপুত্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে রাজপুত্র আস্তে আস্তে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল। লেবু সুন্দরী নিজেও একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।
এদিকে জঙ্গলের ভেতরে ঘোরাফেরা করছিল এক মাতাল। সে দূর থেকে লেবু সুন্দরীকে দেখছিল। লেবু সুন্দরী ঘুমিয়ে পড়লে সে কাছে এসে লেবু সুন্দরীর মুখ চেপে ধরে তাকে কাঁধে তুলে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আচমকা লেবু সুন্দরীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে চিৎকার করে রাজপুত্রকে ডাকতে থাকে। কিন্তু মাতাল লোকটা মুখ চেপে ধরায় তার চিৎকার রাজপুত্রের কানে পৌঁছায় না। মাতাল লোকটা তাকে নিয়ে একটা নদীর পাড়ে চলে আসে। লেবু সুন্দরীকে কাঁধে ফেলে সে নদী পার হতে যায়। হঠাৎ তার কাঁধ থেকে লেবু সুন্দরী নদীতে পড়ে যায়। লোকটা অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে আর না পেয়ে চলে যায় আর লেবু সুন্দরী একটা পদ্মফুল হয়ে ফুটে থাকে নদীর পাড়ে। এদিকে রাজপুত্র ঘুম থেকে উঠে দেখে লেবু সুন্দরী নেই। সে চিৎকার করে ডাকতে থাকে লেবু সুন্দরীকে। কিন্তু কোন সাড়া নেই। সে মনের দুঃখে একা একা ঘুরে বেড়াতে থাকে জঙ্গলের মধ্যে। ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে সে নদীর পাড়ে এসে মন খারাপ করে বসে থাকে।এভাবে প্রতিদিনই সে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে লেবু সুন্দরীকে খুঁজতে থাকে,আর যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন নদীর পাড়ে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। হঠাৎ একদিন সে ব্যাপারটা খেয়াল করে। নদীর পাড়ে ফুটে থাকা পদ্মফুলটাকে সে এতদিন ধরে একই ভাবে ভেসে থাকতে দেখছে! সে কি মনে করে নদীতে নেমে পদ্মফুলটা টেনে তোলে। আর তখনই পদ্মফুলের নিচ থেকে উঠে আসে লেবু সুন্দরী। রাজপুত্র তো অবাক। জিজ্ঞেস করে, “লেবু সুন্দরী,তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়ে এই পদ্মফুলের নিচে লুকিয়ে ছিলে কেন? আমি তোমাকে কত খুঁজেছি তুমি জানো?” লেবু সুন্দরী তখন সবকিছু খুলে বলল রাজপুত্রকে। সবকিছু শুনে রাজপুত্র লেবু সুন্দরীর কাছে ক্ষমা চাইল। তারপর তারা ফিরে গেল রাজপ্রাসাদে। মহারাজ মহা ধুমধাম করে তাদের বিয়ে দিয়ে দিলেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





