প্রথম পর্ব
Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব
Click This Link
....সেদিন ক্লাসে একটা হাড্ডি নিয়ে এসেছে লাবনি ম্যাডাম।এটাকে নাকি ফিমারের হাড় বলে।উনার আগামীকাল পরীক্ষা তাই সায়েকদের ক্লাসে সবাইকে পড়তে দিয়ে নিজেও পড়ে যাচ্ছেন স্বভাবচারিত ডাক্তারী পড়া মেয়েদের মত ।ঐ হাড়টা দেখতে দিলেন সবাইকে হাতে নিয়ে।সায়েক এর মনোযোগ সেখানে নেই ।সে আড় চোখে চুরি করে বারবার ম্যডামকে দেখে যাচ্ছে।একসময় ম্যাডাম চোখ তুলে তাকাতেই সায়েক চোখ ফিরিয়ে নিল।হাড্ডিটা হাতে নিয়ে লাবনী ম্যাডাম উঠে দাড়িয়েছে।ওটা হতে নিয়েই স্বভাবচরিত হাত নেড়ে কথা বলতে লাগল সে।তখনই ঘটল কান্ডটা।হাড্ডিটা ছিটকে এসে একেবারে সায়েকের কপালে সরাসরি আঘাত করল।প্রথমে সায়েক বুঝে উঠতে পারেনি,পরে টের পেল অসম্ভব ব্যাথা পেয়েছে সে।ম্যাডাম তড়িঘড়ি করে ফার্স্ট এইড বাক্স নিয়ে সায়েক কে ব্যন্ডেজ বেঁধে দিচ্ছেন আর অনেকভাবে সরি সরি বলেই যাচ্ছেন।ম্যাডাম কি বলছেন সেটাতে সায়েকের বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই।তার মনে হচ্ছে স্বগীয় কোন স্বপ্নকন্যা তাকে অনুভূতির উর্ধ্বে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে।সেই অনুভূতি যখন এক স্বর্গ থেকে আরেক স্বর্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তখনই লাবনী ম্যাডামের কন্ঠ শুনতে পেল সে--" হয়ে গেছে,এখন হাতটা ছাড় "। সায়েক শুধু বলল "হু" কিন্তু হাত ছাড়ল না।ক্লাসে সবাই হোহো করে হেসে উঠল।সে শব্দে একটি কিশোরের স্বপ্ন জগতের যাবতীয় রূপকথাময় আনন্দ ভ্রমনের অবসান ঘটল।
বাসায় পৌছে লাবনী খুব অনুতপ্ত বোধ করল।প্রতিদিন সায়েকের খোঁজ নিতে লাগল সে.......চারদিন পর ব্যনডেজ খুলতে গিয়ে সায়েক দেখে মাথায় সে জায়গাটাতে একটা স্থায়ী দাগ বসে গেছে।ক্লসে গিয়ে এই দাগ দেখিয়ে ম্যডামের কাছ থেকে আরো সহানুভূতি পাবার আশায় সে মনে মনে ফন্দি আটলো।যথারীতি পরিকল্পনা মোতাবেক ক্লাসে গেল কিন্তু ম্যাডাম সেদিন এল না।সপ্তাহে দু দিন ম্যাডামের ক্লাস কিন্তু পরের দিনও এলেন না দেখে সায়েক ফোন করল। ম্যাডাম জানালেন বোর্ডের সার্টিফিকেট জনিত কাজে খুলনা যেতে হয়েছিল তাই আসতে পারেন নি।পরের সপ্তাহে দুদিন ক্লাসে পেয়ে সায়েক তার পুরনো ফন্দি অনুযায়ী মাথার দাগটা দেখিয়ে যথেষ্ট অতিরিক্ত সহানূভূতি পেতে সক্ষম হল।সে সহানুভূতি কি শুধুই স্নেহ নাকি অসম মোহ প্রসূত সেটা জানতে হলে আমাদেরকে আরো একটু এগুতে হবে।
কিছুদিন পর কোচিং এর ম্যনেজার নতুন এক ভদ্র লোককে ক্লাসে এনে পরিচয় করিয়ে দিলেন--"উনি হচ্ছেন তোমাদের নতুন বায়োলজী স্যার"।তার মানে?লাবনী ম্যাডাম কোন এক অজ্ঞাত কারনে চাকরী ছেড়ে দিয়েছেন।বের হয়েই ম্যাডামকে ফোন দিল সে এবং যা শুনল তাতে খুশী হবে না কষ্ট পাবে সেটা বুঝার মত পরিপক্কটা তার তখনও হয়নি।ম্যাডাম বললেন সময় করে পারলে একবার দেখা করে যেতে কেননা হাতে সময় খুব কম।সে সিদ্ধান্ত নিল কালই ম্যাডামের ওখানে যাবে।পরদিন স্কুল শেষ করে সায়েক একটা রিক্সা নিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশ্যে।রাস্তার এপাশে প্রচন্ড যানজট দেখে তড় সইছিল না তার।তাই রিক্সাটাকে ছেড়ে দিয়ে সে রাস্তা পার হতে গেল।রাস্তায় এক পা ,দু পা তিন পা দিতেই একটা জীপ সজোড়ে আঘাত করল তাকে।.................................
(বি.দ্র. এবার সিট বেল্ট বেঁধে বসটে পারেন রোলার কোস্টার চলবে)
কদিন পর হাসপাতালে জ্ঞান ফিরল যখন তখনও লাবনী ম্যাডাম সায়েকের মাথায়।সুস্থ হয়ে উঠার আগেই সে ফোন করা শুরু করল কিন্তু ম্যাডামতো ফোন ধরছেনই না। আগামীকাল ডাক্তার তাকে বাসায় যাবার অনুমতি দিয়েছে কিন্তু আব্বু বলেছে বাসায় বেড রেস্টে থাকতে।কিছু করার নেই বাবাকে সে যমের চেয়েও বেশী ভয় পায়।পরের দিন রাতে তার বন্ধু আরিফ এল বাসায়।জানালো লাবনী ম্যাডাম এসেছিলেন সবার সাথে শেষ বারের মত দেখা করতে কয়েকদিন আগে।সায়েকের কথা শুনে খুব কেঁদেছেন ,ফোনো করেছেন কিন্তু সায়েকের ফোনতো তখন বন্ধ ছিল।ম্যডাম একটা চিঠি লিখে গেছেন সায়েকের জন্য ----
চিঠিটা খুলল সায়েক।একটা কাগজে ছোট্ট চিঠি
"সায়েক ,তোমার কাছে আমার চাওয়ার কিছুই নেই ।তোমার মা-বাবা সবাই তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে কারন তুমি বড় হলে তাদেরই থাকবে ,ভাল মানুষ হলে তাদেরই সেবা করবে।কিন্তু আমাকে দেখ ..তুমি নিশ্চই বড় হয়ে গেলে আমাকে খুঁজবে না....আমি কোন রকম ভবিষ্যত প্রত্যাশা ছাড়াই তোমার মঙ্গল চাই ,তুমি অনেক বর হও...ভালকরে পরাশুনা কর আমাকে নিরাশ করো না প্লিজ....আজ রাত নয়টায় আমার ফ্লাইট ।ইংল্যন্ডের স্কলারশিপটার কথা জেনে তুমি অনেক খুশী হয়েছ জানি....তাই তোমার খোঁজ খবর না পেয়ে চলে এলাম।কিন্তু দেখা হল না,ভাল থেকো ।"
----------------------------------------------------------------------------------
২০৪২ সাল।লর্ডসে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল।আর মাত্র তিন রান বাকী তাহলে বাংলাদেশ পর পর তিনবার বিশ্ব জয়ের হাট্রিক করবে।চার মারতেই একটা মেয়ে সমোস্বরে উল্লাসে ফেটে পড়ছে।গায়ে একটা সবুজ বাংলাদেশ পতাকা রঙের সালোয়ার কামিজ পরা মেয়েটা যেন আরব্য রজনীর কল্পিত দ্বীপের অপরূপ সুষমাকন্যা।পাশে থাকা ছেলেবন্ধুটি(নাম আরহাম) খুশিতে নীলান্তিকে জড়িয়ে ধরল।মা-বাবা হারানো মেয়েটার আশ্রয় এই ছেলেটিই।আরহাম বলল--আজ এই দিনটাকে স্মরনীয় করে রাখতে চাই।তোমাকে আজ আমার বাবার কাছে নিয়ে যাব..............
.....নীলান্তিকে দেখতেই চেহারাটা খুব পরিচিত লাগছিল আরহামের বাবার।বৃ্দ্ধ সায়েক -উজ -জামান এর কুচকে যাওয়া চামড়ার ভাঁজ পরা মুখে -শুষ্ক ঠোঁটের ফাঁকে হালকা একটা ম্লান হাসি ।এরকম অদ্ভূত ভাবে বাবাকে কখনো হাসি দিতে দেখেনি আরহাম।এ হাসির অর্থ ওদের কাছে রয়ে গেল অজানাই ..............
মাথার দাগটাতে এক হাত দিয়ে তখন বৃ্দ্ধ সায়েক-উজ- জামান হাতড়ে বেড়াচ্ছেন ফেলে আসা নানা রঙের দিনগুলি .....
( শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৫