শোন দৃপ্রনিশা,
এই পৃথিবীতে ত্র্যহস্পর্শের কোন অপ্রতুলতা নেই , ক্ষান্ত নেই কোন অপরাধীর অপরাধ করবার স্পৃহাতে । প্রতিনিয়ত আগামির এতটুকু স্বস্তির জন্য অনিরস্ত এক বিচলতা তাড়া করে বেরায় তোমাকে,আমাকে আর আমাদের । আর এই থেকে জন্ম নেয় অনিশ্চয়তা ! এই অনিশ্চয়তা যেন মানবের ছায়ার মত , অশুভ আর রহস্যময় অথচ এক অনন্য শক্তি !!
আগামির প্রতি ভয় থেকে মানুষের এক অনীহা জন্মে যায় চট করে । মানুষ ভাবে , কী দরকার এত আয়োজনের ? পৃথিবী তো একটি নিয়মের অধীন , তার সাথে মানুষও এক বিশৃঙ্খল ও অসংজ্ঞায়িত নিয়মের অধীন যাকে আমরা নিয়তি বলে জানি ! এই নিয়তির অধীনেই যখন সব কিছু তবে আর প্রচেষ্টার কী মূল্য বল ? মানুষের এই বোধদয় মানুষকে করে তুলতো অসহায় , ভঙ্গুর , রাহুগ্রস্থ আর বেওয়ারিশ এক ঘুড়ি । কিন্তু মানুষের সামনে ধরা দিল এক নতুন ভয় , অনিশ্চয়তা ।
মানুষের কাছে শুধু দুশ্যমান বর্তমান । অতীত , সে তো কিছুটা জ্ঞাত আর পুরোটাই বিভ্রমের পাল্লায় মাপা । আর ভবিষ্যত , একেবারেই দুর্বোধ্য । কী এক অসহায় অবস্থা এই মানুষের । বর্তমানে অন্ধ হয়ে ঘুরপাক খায় আহত পাখির ডানা নিয়ে । তার কাছে সে নিজেই দৃশ্যমান নয় , দৃশ্যমান নয় তার সঠিক অবস্থান নিয়ে । ফলে জন্মায় এক ভয় , সে ভাবতে থাকে নিয়তি কী তার জন্য ঠিক করে রেখেছে কোন ঝড় কিংবা কোন পর্বত বিদীর্ণ গলিত পাথর ?
এই যে অজ্ঞাত থেকে অনিশ্চয়তা ,
এখানেই মানুষ আবার জন্ম নেয় ।
ফেলে দেয় তার নিয়তি কেন্দ্রিক সকল আলস্যতা,
প্রাণপণ চেষ্টা চালায় নিয়তিকে ডিঙিয়ে নিজেকে জানতে ও প্রকাশ করতে ।
আর এভাবে মানুষের প্রচেষ্টা থেকে প্রথিত হয় পৃথিবীর প্রাণ !!
যদি মানুষ অনিশ্চয়তাকে ভয় করে বিমূঢ় হয়ে যায় ,
তাতে করে কী অনিশ্চয়তা দমে যাবে ?
নাকি আগামি তার রূপ বদলাবে ,
নাকি নিয়তি স্থবির হয়ে যাবে ?
ধ্বংস হয়ে যাবে মানুষ !
ধীরে ধীরে মরে যাবে তার ভেতরের পুঞ্জিত বৃক্ষটি , যা ছেঁয়ে ফেলতে পারে মহাবিশ্বকে !!
তবে তুমি কেন আর অনিশ্চয়তাকে ভয় করে বাঁচবে ?
কেন নিয়তিকে দেবে প্রশ্রয় ?
সবার মত তুমিও অজ্ঞাত আগামিকে নিয়ে ,
তাই বলে কী তোমার মানসবৃক্ষকে শীতের নিথর ভাস্কর্য হতে দেবে !
তুমি রুখে দাঁড়াও এই নিবাত উপত্যকায়,
মাথা উঁচু করে বল অনিশ্চয়তা তুমি আমার বন্ধুবর ,
তাকে সাথি করে নিজেকে করে তোল এক প্রবাদ-প্রতিম পর্বত
যাকে নিয়তির পারাপার স্নাত করলেও বিলীন করবে না ।
তুমি হও দৃপ্রনিশা ,
তুমি হও আরও শত দৃপ্রনিশার নিশান ।
তুমি হও , অন্তত জানালার ফাঁকে আকাশা না দেখে পাহাড়ের চুড়ায় পুরো জমিনকে দেখ !!
(এই লিখাটা এমন এক মেয়ের জন্য যার সমস্ত তিথি ত্র্যহস্পর্শ হয়ে গিয়েছিল কিছু পুরুষের পাশবিকতায় । মেয়েটা জানতেই পারল না এই পৃথিবীর ব্রাত্য এক যুবা সবসময় ভাবে যদি একখণ্ড সুন্দর পৃথিবী তাকে উপহার দিতে পারতো তবে হয়তো দৃপ্রনিশা থেকে সে হয়ে উঠত অনন্য কোন শ্রেয়সী । যুবাটির সেই যোগ্যতা নেই সে নাহয় তাকে নিয়ে কিছু লিখল !)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ২:০২