somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক সাথে দুই ছোট গল্প: শয়তানের সাথে শয়তানি (কিঞ্চৎ রোম্য)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে বাসায় ফিরে ক্লান্তি ভরে কিছুক্ষন খাটের ওপর বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। এর পর ফ্রেশ হয়ে রাতে খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে আবার সেই খাটের উপরই কিছুক্ষণ বসে রইলাম। এর মধ্যেই দেখলাম একটা মিসকা শয়তান আমার রুমের বাইরে ঘুরাঘুরি করছে। সে আমার রুমে আসবে কি আসবে না এ নিয়ে সে ভীষণ দ্বিধা-দ্বন্ধে আছে এটা তার চেহারা দেখেই বুঝে নিলাম। শয়তানের মুখে কোন হাসি নেই- কপালে দুঃচিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠেছে। এর পর আমি আর তার দিকে কোন মনোযোগ দেই নি। নিজের চিন্তায় কিছুক্ষণ ডুবে রইলাম। এর মধ্যে এটুকু বুঝতে পারলাম যে – শয়তানটা বারবার আমার রুমের দিকে উকি দিচ্ছে।
ও হ্যা একটি কথা বলা হয়নি আপনাদের। আমার মাঝে একটি অদ্ভুত বিষয় আছে। আমি অদৃশ্য সত্ত্বা দেখতে পাই, সেটা ভুত-পেত, জ্বীন-পরী, শয়তান যাই হোক না কেন।


আমি আমার নিজের হাতের কাজ গুলো গুছিয়ে নিলাম খুব তারাতাড়ি। তারপর একটা বই হতে শুয়ে পড়ল বিছানায়। পড়া শুরু করলাম, কিছুক্ষণ পড়ার পর দেখলাম শয়তানটা এক-পা দু-পা করে আমার রুমে প্রবেশ করল। রুমে এসেই এদিক সেদিক দু-একবার তাকিয়ে আস্তে করে আমার মাথার কাছে বসে পড়ল। আমি তাকে ভাল-মন্দ কিছুই বললাম না। আমি চুপচাপ আছি দেখে সেই আমার সাথে আলাপ জমাবার চেষ্টা করল। প্রথমে আমার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করল? তারপর বলল- কি কর?
আমি তার জবাবে বললা– বই পড়ি। এই ভাবে কথা বলতে বলতে বেশ কিছু সময় কেটে গেল। এর মধ্যে দেখলাম শয়তান আমার মাথায় হাতবুলাতে শুরু করেছে। অতি অল্পক্ষণের মধ্যেই আমি একটু আরাম-আরাম অনুভব করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই মাথাটা ভার হয়ে আসলে আমি বইটা বুকের উপর রেখে চোখ বুজে আরমটা পূর্ণাঙ্গ ভাবে অনুভব করতে থাকলাম। এর মধ্যেই দেখে শয়তান মাথা ছেড়ে শরীর টেপা শুরু করছে। আমিও বেশ অনুভব করলাম শরীর টেপা, মূহূর্তেই শরীরটা নিষ্ক্রিয় হয়ে এলে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারি নি।


সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে– শয়তানটা তখনো আমার মাথার কাছে বসে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম– কিরে তুই এখনো যাস নি? শয়তান জবাবে বলল- আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য বসে আছি। আমি বললাম- কেন কিসের ধন্যবাদ? শয়তান বলল- আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন তাই। আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমি কিভাবে তোর জীবন বাচালাম? জবাবে শয়তান বলল- গতকাল সারা দিন আমি এখানে সেখানে ঘুরেছি, কিন্তু কোন খারাপ কাজ করতে পারি নাই। সারাদিন শেষে আমি আপনার কাছে আসলাম- দেখি আপনি বসে আছেন। আপনিই ছিলেন আমার শেষ টার্গেট। আপনার সাথে যদি আমি শয়তানি করতে না পারতাম তাহলে আমার মুনিব আমাকে ধ্বংস করে ফেলত আজ। কারণ পর পর তিন দিন আমি শয়তানি করতে ব্যার্থ হয়েছি। আর আমাদের নিয়ম হচ্ছে যদি কেউ পরপর তিন দিন শয়তানি কাজ করতে ব্যর্থ তাহলে তাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়।


কিছুক্ষণ থেমে শয়তান আবার বলা শুরু করল- যখন কোন আশাই দেখছিলাম না, এই মূহুর্তে আপনি কোন ভালকাজ করবেন ঠিক তখনই আপনি বই হাতে নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়া শুরু করলেন। জানেন তো– আপনারা যদি কোন ভাল কাজ না করেন তাহলে আমাদের কোন কাজ থাকে না। আর যদি কোন কাজও না করেন তাহলেও আমাদের কোন কাজ থাকে না। কারণ যে ব্যক্তি কোন কাজই করে না তার মাথা থেকে এমনিতেই শয়তানি উৎপাদন হতে থাকে, তাকে দিয়ে খারাপ কাজ করাতে আর আমাদের দরকার হয় না।


আমি একটু মাথা তুলে শয়তানের দিকে তাকালাম- সে আবার বলা শুরু করল- যখনই দেখলাম আপনি বই নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়ছেন তখনই আমি আপনার কছে গেলাম, প্রথমে আপনার মাথায় হাত বুলালাম, যখন দেখলাম আপনি একটু চোখ বুজেছেন ঠিক তখনই আপনার সারাশরীর টেপা শুরু করলাম। দেখলাম খুব দ্রুতই আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। জানেন তো মানুষ বই পড়লে জ্ঞানী হয়। তারা ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে তারা খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। তাই আমাদের শয়তানদের মাঝে সেই সবচেয়ে বড় শয়তান যে মানুষকে জ্ঞানাহোরণ থেকে বিরত রাখতে পারে। এই জন্য আপনাকে ধন্যবাদ যে- আপনি আমাকে বড় শয়তানের উপাধি পেতে ও জীবন বাচাতে সাহায্য করেছেন।


আমি শয়তানের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে তাকে বললাম আমারও যে কিছু কথা বলার আছে তোকে। শয়তান বলল বলেন শুনি কি কথা-
আমি তাকে বলতে শুরু করলাম- যখন রুমের বাইরে দেখলাম তোকে, তখন চিন্তা করছিলাম শয়তান কেন আমার রুমের সামনে? ওর তো শয়তানির উদ্দেশ্য ছাড়া এখানে থাকার কথা না। কিছুক্ষণ তোকে নিয়ে চিন্তা করলাম কি ভাবে তোকে কাজে লাগানো যায়। তখন একটা বুদ্ধি বের করলাম- তারই অংশ হিসেবে আমি বইটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। দেখলাম তুই রুমে ঢুকে আমার সাথে আলাপ জমিয়ে নিজের শয়তানি শুরু করে দিলি। আমি তোকে কিছু বলি নি করাণ আমি এমনিতেই ক্লান্ত ছিলাম তার উপর আবার মাথা ব্যাথা করছিল। আমি এমনিতেই শুয়ে পড়তাম তোকে দেখই বইটা হাতে নিয়েছিলাম মাত্র, কারণ আমি নিজেও জানতাম তোদের শয়তানদের মাথা নষ্ট হয়ে যায় যখন তোরা দেখিস কেউ পড়ছে। তাই আমি শুধু মাত্র তোকে ব্যবহার করে হাত-পা টিপিয়ে নিলাম।বই পড়া বা জ্ঞানাহোরণ কোন উদ্দেশ্য ছিল না, শুধু উদ্দেশ্য ছিল শরীর পেটানো।। এখন চলে যা আবার যদি কখনো দরকার হয়ে তখন আমাকে বলিস – তোকে উদ্ধার করে দিব।


আমার এই গল্পটি লিখার পিছনে আরেক টি গল্পের অবদান আছে। এই গল্পটি আমাকে ছোট সময়ে আমার এক শিক্ষক বলেছিল- সেই গল্পটি এখন আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি- এটিও খুব মজার এবং শিক্ষণীয় একটি গল্প বলে আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে।


শয়তানদের গুরু তার নিজের দুই হাতে ঘষা দিয়েই একটি করে শয়তান উৎপাদন করে। এটা প্রতিদিনের কাজ। তো একদিন সে কিছু শয়তান উৎপাদন করে ছেড়ে দিল শয়তানি করার জন্য। এর মধ্যে কিছু শয়তান সফল ভাবে বিভিন্ন ধরনের খারাপ করাল মানুষকে দিয়ে । এই যেমন- এক গরুর মালিক কে বলেছে অমুকের খেতে ভাল ঘাস আছে তুমি রাতে তোমার রোগা-পটকা গরুটাকে তারা খেতে ছেড়ে দিলে তাজা ঘাস খেয়ে সে মোটা-তাজা হতে পারে। আবার সেই শয়তানই খেতের মালিকের কাছে গিয়ে বলে এসেছে আজ তোমার খেতে তমুক গরু ছেড়ে দিয়ে ঘাস খাওয়াতে পারে। তুমি রাতে খেত পাহাড়া দিও । যথারীতি গরুর মালিক রাতে তার গরু ছেড়ে দিল ঘাস খেতে, আর খেতের মালিক পাহাড়া দিতে লাগল গরুর অপেক্ষায়। এক সময় খেতের মালিক গরুটিকে ধরে নিয়ে এলো তার বাড়িতে । এই নিয়ে গরুর মালিক ও খেতের মালিকের মাঝে ভীষণ ঝগড়া লেগে গেল। এক পর্যায়ে হানাহানি-মারামারি। এই রকম প্রত্যেক শয়তানই কিছু না কিছু শয়তানি করে গুরু শয়তানের কাছে ফিরে গিয়েছে। শুধু মাত্র একজন ছাড়া। সে সারা রাত ঘুরেও কোন শয়তানি করতে পারে নি। সকাল বেলা …. সে যখন সব আশাই ছেড়ে দিয়েছিল ঠিক তখনই পথে মধ্যে দেখল একটা বালক বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। শয়তান তার পিছু নিল। কিছুক্ষণ পর মানুষের রূপ ধরে সে বালকের কাছে গেল। সে তাকে মার্রবেল দিয়ে বলল চল আমার খেলি। বালকও দেখল স্কুলের সময় হতে আরো বেশ কিছুক্ষণ দেরি আছে। তাই সে শয়তানের সাথে মার্রবেল খেলা শুরু করল। এই ভাবে শয়তানের ধোকায় পড়ে সে সারা বেলা মার্রবেল খেলে কাটালো। সে দিন সে আর স্কুলে যেতে পারল না। দিন শেষে শয়তান ফিরে গেল তার গুরুর কাছে।


গুরু শয়তান এক এক করে সকল শয়তান কে ডাকল- এবং কে কি শয়তানি করেছে তার বর্ণনা শুনতে লাগল। সব শয়তান গুলোই তাদের বিভিন্ন কাজের বর্ণনা করতে লাগল। তারা একেক জন অনেক বড় বড় শয়তানির বর্ণনা দিতে লাগল। এই সময় মার্রবেল খেলা শয়তান চুপ করে বসে রইল। সবার শেষে সে শয়তানির কথা বর্ণনা করবে বলে উঠে দাড়াল। সে ভয়ে ভয়ে গুরুর কাছে গেল- এবং বলতে লাগল – গুরু আমি খুব বেশি বড় শয়তানি করতে পারি নি। তখন গুরু জিজ্ঞাসা করল- কি করেছিস সেটা তো বল। তখন সে বলা শুরু করল- সারা রাত ঘুরে যখন কোন শয়তানি পাচ্ছিলাম না তখন সকালের দিকে দেখলাম একটা বালক স্কুলে যাচ্ছিল, তখন তাকে আমি ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার সাথে মার্রবেল খেলে তাকে আর স্কুলে যেতে দেই নি।
তখন গুরু শয়তান তার দিকে তাকিয়ে বলে আরে তুই সবচেয়ে বড় শয়তানিটাই করেছিস। তুই একজনকে জ্ঞানাহোরণ থেকে বিরত রেখেছিস। সে যদি স্কুলে যেতে পারত তাহলে সে জ্ঞানী হয়ে যেত- আর সেই জ্ঞান দ্বারা সেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারত তাতে তারা মন্দ কাজ না করে শুধু ভাল কাজ করত। আর যারা ভাল কাজ করে তারা আমাদের শত্রু। আজকের মহা শয়তানির পুরষ্কারটা তোর।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×