বিগত কিছুদিন ধরে দেখছি অসহায় বাবা-মা কে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনুনয়-বিনয় করতে, যাতে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নষ্ট না করা হয়। আপনি বলতে পারেন মাত্রইতো শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলো, কিছু না বুঝেই কেন বাবা-মায়েরা রাস্তায়? আসলে যারা রাস্তায় নেমেছে তারা সবাই ৬ষ্ঠ এবং ৭ম শ্রেনির অভিভাবক। যেহেতু বিগত ১বছর ধরে তাদের সন্তানেরা এই শিক্ষানীতি পড়ালেখা করছে তাই তারা জানে কি হচ্ছে শিক্ষার নামে।
বর্তমান শিক্ষানীতির আলোকে কিছু পর্যালোচনা:
১। আমি বিভিন্ন স্কুলের ফেসবুক পেজ ঘুরে দেখেছি। যেটা আগে ছিল অনেটা নোটিশ বোর্ডের মত, সেটা এখন হয়ে গেছে ফেসবুক/ইউটিউবের ভ্লগারের পেজ। সেখানে এখন নিয়োমিত পোষ্ট করা হয় রান্না-বান্নার ভিডিও। সবাই মিলে বিশাল হাড়িতে রান্না অথবা বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আসা খাবারের ভিডিও। যদিও বাসা থেকে রান্নাকরে আনা খাবার যতটা না শিক্ষার্থী তৈরি করছে তারচেয়ে শিক্ষার্থীর মায়ের অবদানই বেশি। আর বাবার পকেটতো কাটছেই। আপনারা চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন দেশের স্বনামধন্য স্কুলগুলোর ফেসবুক পেজ।
চলছে রান্না বান্নার কাজ
২। সরলমনা শিক্ষার্থীরা বলবে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে স্কুলে পিকনিক করাকেই সঞ্চয় বলে। শিক্ষার্থীরা নাকি তাদের সঞ্চয়কৃত টাকা দিয়ে বাজার করে রান্না করে খায়। কিন্তু আপনারাতো সঞ্চয়ের সংগাই পাল্টে ফেলেছেন। সঞ্চয় মানে হলো: উপার্জিত টাকা থেকে কিছু অংশ ভবিষ্যতে জন্য জমা রাখা। যা বিশেষত আপদকালীন সময়ে ব্যবহার করা হয়। আর এখানে শিক্ষার্থীরা নাকি তাদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সঞ্চয় করে পিকনিক করছে।
৩। স্কুল থেকেই বলা হচ্ছে নেটে সার্চ দিয়ে জেনে নিতে। এই শিক্ষানীতির কারনে শিক্ষার্থীরা নাকি মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়েছেন বলে দাবি বাবা মায়ের। তার চেয়ে এক কাজ করুন সব শিক্ষার্থীকে টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব একাউন্ট খুলে দিন, তাতে কিছু রেমিটেন্স আসতে পারে।
৪। অসংখ্য বার শিক্ষানীতির পরিবর্তন হলেও, ভার্সিটি এডমিশন টেস্ট, সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ পরিক্ষার কোন পরিবর্তন কিন্তু ঘটেনি। ঠিক তেমনি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাই।
৫।শিক্ষানীতিতে হাতে কলমে শিখানোর জন্য আপনি যে শিক্ষককে দিয়ে ছাত্রদের ধান লাগানোর ক্লাস নিচ্ছেন সে শিক্ষক জীবনে হয়তো কোন দিন এই কাজ করেনি। আপনার উচিত একজন কৃষককে দিয়ে এই ক্লাসটা করানো। তার চাইতে কে আর দক্ষ এই কাজে?
৬। আসলে যে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেটা সকল বিষয়ে প্রযোজ্য না করে এটাই একটা বিষয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের পড়ানো যেত। যদিও এই রান্না বান্না বা ধন চাষ আগেও ছিল সেটা আমরা কৃষি ও গার্হস্থ্য অর্থনীতির মাধ্যেমে পেয়েছি।
৭। সরকার পরিবর্তন মানেই শিক্ষানীতির পরিবর্তন যা খুবই গতানুগতিক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। তারই আলোকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সৃজনশীল শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। যদিও তখন এই বিষয়ে তেমন কোন উচ্চ্য-বাচ্চ্য হয়নি। কিন্তু সেই একই সরকার কেন তার ক্ষমতা কালীন সময়ে আবার শিক্ষানীতি পরিবর্তন করলো? কারণ এতদিন পরে হলেও তারা বুঝতে পেরেছে তাদের সৃজনশীল শিক্ষানীতি অকার্যকর।
অতপর এটাই বলবো, যারা এই শিক্ষানীতি প্রণয়নের সাথে জড়িত জানি তাদের সন্তানেরা এই দেশে পড়া লেখা করে না। তাই তারা এই সব নিয়ে মাথাও ঘামান না। দিনশেষে ... ...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



