সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে সবাই ৮ টায় হোটেলের নিচে চলে আসলাম। আমাদের গাইড এসে আমাদের নাস্তা করতে নিয়ে গেল পাশের এক হোটেলে। সকাল বেলা লুচি, পাপর, ডাল আর সবজি দিয়ে নাস্তা সেরে নিলাম আমরা। তারপর আমরা মেইন রোডে আসলাম। আমাদের জন্য একটা সুমো জীপ ওয়েট করছিল। সকাল বেলা বের হয়েই দেখেছিলাম গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আমরা বের হলাম শিলং শহর দেখব বলে।
শিলং-পুলিশ বাজার
শিলং শহরের আঁকাবাঁকা পথে আমাদের গাড়ি ছুটে চলল। (ভিডিও কেন জানিনা আপলোড করার অপশন পেলাম না। অনেকদিন পর ব্লগে আসি বলে সব ভুলে গিয়েছি)
যাইহোক, রাতে শিলং শহরে প্রবেশ করেছিলাম বলে আফসোস লাগছিল কারন রাতের শহর খুব ভালোভাবে অবলোকন করতে পারিনি। দিনের বেলায় বের হওয়াতে খুব ভালো লাগছিল। শিলং শহরে জ্যাম নেই বললেই চলে। ট্রাফিক পুলিশ এক জায়গাতেই দেখেছিলাম। এখানে দেখলাম অকারনে হর্ণও বাজায় না। এমনকি সহজে ওভারটেকও করেনা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর। যেখানে সেখানে এরা ময়লা ফেলেনা। গাড়ি কিছুক্ষণ চলার পর লেডি হায়দারি পার্কের সামনে এসে দাঁড়াল।
লেডি হায়দারি পার্ক-শিলং
ফুল গাছটার নাম জানিনা, তবে দেখতে ভাল লাগছিল।
প্রতিটা জায়গায় নিজেদের ছবি থাকাতে সুন্দর সুন্দর দৃশ্যগুলো বাদ রয়েই গেল।
এরপর আমরা গেলাম ওয়ার্ডস লেকে
ওয়ার্ড লেকে যখন পৌছালাম তখনও বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই আমরা ভেতরে টিকিট কেটে ঢুকে গেলাম। ওয়ার্ড লেক বেশ গুছানো এবং সুন্দর।
ওয়ার্ডস লেক
ওয়ার্ডস লেক
ওয়ার্ডস লেক
ওয়ার্ডস লেক
ওয়ার্ডস লেকের ভেতরেই খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। তাছাড়া এখানে শিলং এর ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে ছবি তোলা যায়। আমাদের গ্রুপের কেউ কেউ ছবিও তুলেছিল। বৃষ্টি থাকাতে পুরো লেক টা ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি। কারন সাথে ছাতা ছিলনা। খুব ঠান্ডা লাগছিল। আমাদের সাথে থাকা ৪/৫ জন বৃষ্টিতে ভিজেই পুরো লেকটা দেখেছিল। ওয়ার্ডস লেক জায়গাটা বেশ বড়।
রাতে যখন শিলং শহরে আমাদের বাস ঢুকছিল তখন দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল সুবুজ আলোয় আলোকিত কিছু একটা। পরে আমাদের গাইড বলল এটা শিলং শহরের মসজিদ। দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। আমরা পরদিন সকালেই মদিনা মসজিদ দেখতে গিয়েছিলাম।
মদিনা মসজিদ প্রবেশদ্বার
মদিনা মসজিদ
মদিনা মসজিদ
এরপর আমরা গিয়েছিলাম বরাপানি লেক দেখতে। যা খুবই আকর্ষনীয় ছিল।
মেঘের ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম
লেকের কাছে এরকম একটা ব্রিজের মতন আছে যেখান থেকে লেকটা দেখা যায়। আর এই জায়গাটা দেখতে বেশ লাগছিল।
বরাপানি লেক (এই ভিউটা আমার খুবই পছন্দের। দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল)
মেঘে ঢাকা বরাপানি লেক (পাহাড়ের উপড় থেকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল)
মেঘে ঢাকা বরাপানি লেক
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমরা এই জায়গাগুলো দেখছিলাম। বেশ মজা লাগছিল। যদিও ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম ।
বরাপানি দিয়েই দ্বিতীয় পর্ব শেষ করছি।
অফটপিকঃ শিলং ঘুরে ভুটান যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম এই ডিসেম্বরেই। ট্রানজিট ভিসার জন্য এপ্লাই করলাম। ১২ তারিখ প্ল্যান হলো যাবার। টিকেট কনফার্ম, সবকিছুই কনফার্ম ছিল। কিন্তু যাওয়া আর হলোনা। ৬ ডিসেম্বর আমার মা পৃথিবী ছেড়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। মানসিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত। নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করি। ব্লগেও আসলাম লেখালেখি করতে। মা ছাড়া পৃথিবীটাই অন্ধকার লাগে। যাদের বাবা মা বেঁচে আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ বাবা মাকে সময় দিন। পরে আফসোস হবে। আমার ভাগ্যটা ভালো, আমার মায়ের মৃত্যুর সময় আমি পাশে ছিলাম।
শিলং ট্যুরে যাওয়ার সময় মাকে বলেছিলাম আমি যাচ্ছি। মা বলছিল যাও তুমি, চিন্তা করোনা আমি ভালো আছি। কারন এর আগে যখন শিলং যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম ঠিক তখনই মা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এক মাস হসপিটালে থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় এসেছিল। তাই শিলং যাওয়ার সময় খুব চিন্তা হচ্ছিল। মা আমাকে ভরসা দিয়েছিল যাওয়ার জন্য। মায়ের ভরসা পেয়েই শিলং গিয়েছিলাম। কিন্তু মা বেশিদিন বেঁচে থাকলনা। প্রতিটা মূহুর্ত মায়ের স্মৃতি কষ্ট দেয়। জীবনটা কেমন যেন শূন্যতায় ভরে গেছে। মনে হয় মার কাছে চলে যাই, মায়ের কোলে গিয়ে ছোট্ট শিশুটির মতন মুখ লুকাই।
যাদের বাবা মা বেঁচে আছেন তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। যাদের বাবা মা বেঁচে নেই তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা সবাইকেই সুস্থ রাখুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৮