আমি যে বাসায় থাকি সেই বাসার বাড়িওয়ালা আর বাড়িওয়ালী এই দুই জন থাকে শুধু। তাদের সন্তান-সন্তদি কর্মের টানে থাকে উন্নত বিশ্বে। তারা খুব নিঃসংগ। এই বযসে তাদের দেখার আপন কেউ নেই। তারা সম্পুর্ন কাজের লোকের উপর নির্ভরশীল। যা ঠিক তাদের যত্ন নেয় না। সেই নিঃসংগ দুজন আবার বার্ধক্য জনীত আনেক রোগে আক্রান্ত। যেমন ডায়াবেটিস, হার্ড এর সমস্যা, প্রেশার ইত্যাদি। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো বাড়িওয়ালার আবার স্মৃতি ভ্রস্ট রোগে আক্রান্ট। সে বছরের বেশীরভাগ সময়ই এই রোগে আক্রন্ত থাকে। বিশেষ করে শীতের সময়।
বাড়িওয়ালার নাম হলো ডঃ দেবপ্রিয় ভট্ট, সে এগ্রিকালচার এর কোন সাবজেক্টএর উপর ডক্টরেট করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছে।তাছাড়া সে সরকারের একজন উচ্চপর্যায়ের আমলা ও ছিণ একসময়। কিন্তু তার বর্তমানে এই অসহায় অবস্থা। একসময়ের নামকরা শিক্ষক এখন বেশীর ভাগ সময়ই স্মৃতি হারিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে এমন হয় নিজের বাড়ি পর্যন্ত চিনতে পারেনা। বেশ কয়েকবার বাইরের থেকে নিজের বাসার দরজার কাছে এসে আবার চলে গেছে, নিজের বাসা নিজেই চিনতে পারে নাই। বলে কি না এটা তার বাড়ী না। অন্য কারো বাড়িতে ভুল করে ঢুকে পরেছে। থখন সবাই তাকে ধরে বাড়িতে আসতে হয়।
তাদের এই অবস্থা দেখে আমার থুব কষ্ট হয়। তার পর্যাপ্ত ধন-সম্পদ, প্রতিভ্ঠিত সন্তান-সন্ততি থাকতেও কত অসহায়।তাদের টাকার অভাব নাই, কিন্তু দেখোর আপন কেহই নাই। এই শেষ বয়সে তারা যে ছোট্ট শিশুর মত অসহায়। ছেলে মেয়েদের আর নাতি-নাতকুরদের ফোনই তাদের সান্তনা।
যা হোক আসল কথায় আসি। একদিন খুব ভোড়ে যখন আমি ফজরের নামাজ আদায় করছিলাম। ঠিক তখন আমার দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। একনে তো আমাকে কেহউ ডাকার নাই। কে এলো এতা ভোড়ে? তার পর আবার জানালায় কে যেন আওয়াজ করছে। আমি দ্রুত নামাজ আদায় করে দরজা খুললাম। দেখি ডঃ দেবপ্রিয় ভট্ট এর স্ত্রী। উদভ্রান্তের মত দেখা যাচ্ছে। আমি আবার নেপালী ভাষা বলতে পারি না। তাই তার সাথে হিন্দিতে আলাপ করি। সে তখন হিন্দিতে যা বল্ল তা হলো তার সাহেব এই সকালে কাউকে না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। সে যেহেতু সব ভুলে যায়, তাই কোথায় যায় তার ঠিক নাই, আর বাসায় ফিরতে পারবে কিনা তাও বরা যায় নাই। আর আমাকে অনুরোধ করলো “বাবা তুমি কি একটু দেখবে?“ আমিও চিন্তায় পরে গেলাম তাই দ্রত তৈরী হয়ে বের হয়ে গেলাম তাকে খুজে ফেরত আনতে। আমি এদিক সেদিক হাটছি কোথাও তাকে খুজে পাচ্ছিনা। এক পর্যায়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। বাসায় কি মুখ নিয়ে ফিরে যাব!। না এর একটু দেখি, শেষ চেষ্টা করি। আবার দ্রত হাটা শুরু করলাম রাস্তার এবার ওপাশ দেখতে। কিছুদুর হাটার পর তাকে পেলাম। সে নিশ্চিন্তে দুহাত পিছনে দিয়ে হেটে চলেছে।আমি খুব দ্রত হেটে তাকে ধরার চেষ্টে করলাম। এক পার্যায়ে তাকে ধরে ফেল্লাম। আমি ভবলাম সে আমাকে চিনতে পারবে। কারণ আমাকে প্রতিদিন দেখে। সে ভাল ইংরেজী বলে। আমার সাথে সে প্রায়ই প্রথমে নেপালী ভাষায় কথা বলে।কিন্তু যখন আমি বলতে না পেরে ইংরেজী শুরু করি তখন সে ইংরেজীতে কথা বলা শুরু করে। তাই তাকে আগে পিছন থেকে তার হাতে আস্তে করে ছোয়া দিলাম। তাকে থামালাম। তার সাথে ইংরেজী কথোপথোন করা শুরু করলাম। তা এ রকম।
আমিঃ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
বৃদ্ধাঃ আপনি কে কেন আপনকে বলবো।
আমিঃ আপনি আমার সাথে চলেন বাসায়।
বৃদ্ধাঃ কেন আমি আপনার সাথে যবো? (সে খুব রাগ হয়ে গেল)
আমিঃ (হাতদিয়ে পিছন দিকের রাস্তার দিকে দেখিয়ে)ঐ যে ঐদিকে আপনার ্বাসায় আপনার ওয়াইফ আপানার জন্য অপেক্ষা করছে।
বৃদ্ধাঃ (সে পিছনের দিকে তাকেয়ে বললো)না সে আমার ওয়াইফ না অন্য মহিলা।
আমি ও পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি আসলে একটা মহিলা তো দাড়িয়ে আছে। আমি দেখালাম বাড়ির দিক) আমার হাসি পেল।
আমিঃ আরে সেই মহিলা না সে বাসায় আপনার অপেক্ষায় আছে। চলেন।
বৃদ্ধাঃ আমি আমার বাসা চিনি তোমাকে চিনাতে হবেনা। তুমি যে কাজে আসছো সে কাজে যাও।
আমিঃ (তখন বুঝলাম এভাবে জোড় করা যাবেনা, তালে তাল মিলাতে হবে।) না আমি এই দিকেই যাচ্ছিলাম। চলেন একসাথে যাই।
বৃদ্ধাঃ ও আচ্ছা।
আমিঃ আপনি কি করেন? আপনার বাসা কোথায়?
বৃদ্ধাঃ আমি প্রফেসর। আমার নাম ডঃ দেবপ্রিয় ভট্ট।তা স্যার আপনি কি করেন?
আমিঃ আমি একটা বিদেশী কোম্পনীতে কাজ করি।
বৃদ্ধাঃ ও আচ্ছা আচ্ছা।
আমিঃ চলেন আপনার বাসায় যাই।
বৃদ্ধাঃ না না এখন আমি আমার বাসায় যাবোনা।
আমিঃ ও আচ্ছা।
বৃদ্ধাঃ আমি প্রফেসর। আমার নাম ডঃ দেবপ্রিয় ভট্ট।(আবার বলে)
আমিঃ ও তাই নাকি? তা আপনি কোন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছিলেন?
বৃদ্ধাঃ আমি কাঠমান্ডু ইউনির্ভাসিটির প্রফেসর ছিলাম। তা ছাড়া অনেক কলেজের ক্লাস নিতাম।
আমিঃ ও তাই নাকি? আর কি কি করেছেন?
বৃদ্ধাঃ আমি কয়েকদিন আগে সরকারের কাছ থেকে আমার বিশেষ অবদানের জন্য ক্রেস্ট ও দুই লাখ টাকার চেক পেয়েছি।
আমিঃ (এসব তো সে ঠিকই বলছে। আমি পত্রিকায় দেখেছি। তার ছবি উঠেছিল) ও তাই নাকি? সে তো অনেক গর্বের কথা।
এই কথা সেই কথা বলতে বলতে কিছুদুর যাওয়ার পর সে হঠা থেমে গেল।
বৃদ্ধাঃ আমি আর যাবোনা। (আমাকে সে উটকো ঝামেলা মনে করছে, তাই এভয়েড করার জন্য সে তার ডেস্টিনেশন চেন্জ করছে)
আমিঃ তাহলে আমি ও যাবোনা।
বৃদ্ধাঃ না না আপনি যান আম আমার বাসায় যাবো।
আমিঃ আরে না, আপনার মত একজন মানুষের সাথে হাটছি এতে আমি গর্ববোধ করছি। চলেন একসাথে যাই।
(আমরা বাসার দিকে হাটা শুরু করলাম)
বৃদ্ধাঃ ঐ যে বায়ে যে রাস্তাটা গেছে, সেই দিকে আমার বাসা।
আমিঃ ও তাই নাকি? (আমি এমন ভাব করলাম যেন চিনিনা।) কে বলেছে আপনার বয়স হয়েছে। আপনি তো সব চিনেন।
বৃদ্ধাঃ (খুব খশী হলো) হ্যা ধন্যবাদ এই মন্তব্য করার জন্য।
আমিঃ ধন্যবাদের কি আছে যা আমার কাছে ঠিক মনে হলো তাই বল্লাম
(কিছুদুর হাটার পর)
বৃদ্ধাঃ এখন বার বায়ে যাবো।
আমিঃ সোজা না?
বৃদ্ধাঃ না না বায়ে আমার বাসা। ঐ যে দেখা যাচ্ছে।
আমিঃ (সে ঠিক ঠিকই বলছে) চলেন আনার বাসাটা চিনে আসি।
(তারপর আমি একটু আগে বেরে সদর দরজা টা যেই খুল্লাম)
বৃদ্ধাঃ ওকে ঠেঙ্কইউ। আমার সাথে হাটার জন্য ধন্যবাদ। আবার কোনদিন আমরা একসাথে হাটবো।
আমিঃ (আমি তো অবাক আমিতো ভাছিলাম একাসাথে বাসায় ঢুকবো। কারণ আমি ও তো এই বাসায়ই থাকি) ও আচ্ছা ঠিক আছে আবার দেখা হবে। আমি আপনাকে হেল্প করলাম শুদু দরজা খোলার জন্য।
বৃদ্ধাঃ ঠিক আছে আছে ধন্যবাদ আবার দেখা হবে।
আমিঃ আচ্ছা ধন্যবাদ।
(আমি তাকে দেখিয়ে দরজার কাছথেকে সরে তার দৃষ্টির আরালে দাড়িয়ে রইলাম। আর অপেক্ষা কররাম কখন সে তার দোতলার ঘরে ঢুকে। তার ঘরে ঢোকার আওয়াজ পাওয়ার পরপরই আমি আবার বাসার চুপিসারে ঢুকে পরি)
তার কিছু ভুলে যাওয়া আবার কিছু মনে থাকা। সর্বোপরি তার এই আসহায় অবস্থা আমাকে খুব মমার্হত করেছে।আমি ও এখানে আমি আমার বাবা-মা কে ছেড়ে কর্মের টানে বিদেশে একা বসবাস কলছি। তাই আমি তাদের কষ্টটা কিছুতা অনুভব করথে পারি। তারা মানষিক শক্তি হাড়িয়ে ফেলেছে। শুধু বেচেঁ আছে আল্লাহ হায়াত রেখেছে বলে। এই সময় প্রিয় মানুষের কাছে থাকা যে কত দরকার এদের দেখলে বোঝা যায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




