১৩ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়ে গেল ‘ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস’। এই ঘোষণাই প্রমাণ করে বাংলাদেশে কি পরিমাণে ইভটিজিং বৃদ্ধি পেয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শুধুমাত্র ইভটিজিং এর কারণে গত চার মাসে ১৪ জন কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে বাবা-মেয়ে এক সাথে আত্মহত্যার ঘটনাও। পুলিশ বলছে, অন্ততঃ তিনজন মানুষ মারা গিয়েছে ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌন হয়রানির যে আইন বাংলাদেশে আছে তাতে অভিযোগকারীরা কোন ধরনের সহায়তা পান না। বরং বাদীর পরিবার বিভিন্ন ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটান।
‘কিছু নির্যাতিত এমন আছে যার আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না’, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুফিয়া কামাল এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। ‘এ মুহূর্তে দেশের অবস্থাটা ভয়াবহ। ১৪ জন কিশোরীর আত্মহত্যা সেকথাই প্রমাণ করে। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমরা মহিলারা বেশিদিন সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারব না’।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায় ১৩ বছরের কিশোরী নাশফিয়া আকন্দ পিংকি’র ঘটনাটি। পিংকি তার চাচার সাথে ঢাকার বাসায় থাকত। নবম শ্রেনীর ছাত্রী পিংকির স্কুল ছিল বাসা থেকে আধমাইল দূরে। আসা যাওয়ার পথে সে ২২ বছর বয়সী একটি ছেলের ও তার বন্ধুদের করা আপত্তিকর মন্তব্য, অশ্লীল কৌতুক, অট্টহাসি ও শিস এর শিকার হত। এবং এ ঘটনা চলে আসছিল বেশ কয়েক মাস জুড়ে।
গত ১৯ জানুয়ারী পিংকি ঔষধ কেনার জন্য দোকানে যাচ্ছিল। ছেলেটি ও তার বন্ধুরা মেয়েটির পথ আগলে ধরে বিভিন্ন ধরনের বাজে মন্তব্য করতে থাকে। পিংকি রেগে এর প্রতিবাদ করে। ছেলেটি আরো আক্রমনাত্বক হয়ে গালিগালাজ করতে থাকে এবং তার ওড়না ধরে টান দেয়। এমনকি একসময় মেয়েটিকে চড়ও দিয়ে বসে। মেয়েটি এতে রাস্তায় পড়ে যায়। প্রতিবেশিরা বিষটি দেখলেও এড়িয়ে গিয়েছে।
পিংকির খালু আলী আশরাফ আকন্দ বলছিলেন ‘এ ধরনের অশোভন অপমানের কারণে সে বড় ধরনের মানসিক আঘাত পায় এবং এটা ছিল তার জন্য সহ্যের বাইরে। রাগে দুঃখে নিজ শাড়িকে সিলিং ফ্যান এর সাথে জড়িয়ে আত্মহত্যা করে সে। পিংকি আমাকে তাকে উত্যক্ত করার বিষয়টি তার আত্মহত্যার ১৫ দিন আগে জানায়। আমি ছেলেটিকে সাবধান করার চেষ্টা করি। কিন্তু এত উল্টা সে উত্যক্ত করার পরিমান বাড়িয়ে দেয়’।
আত্মহত্যার আগে পিংকি তার খাতায় তার আত্মহত্যা সম্পর্কে এভাবে লিখে গিয়েছে, ‘আমি যখন আমার বাড়ীর সামনে এইভাবে অপমানিত হলাম আর দেখলাম আমার আশেপাশের মানুষগুলো কেউ আমার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসল না, তখন আত্মহত্যাই হল আমার একমাত্র পথ। আমার পরিবারের কেউই আমার আত্মহত্যার জন্য দায়ী নয়’।
বাংলাদেশ পুলিশ এর প্রধান নুর মোহাম্মদ, পিংকি সহ এই রকম অন্যান্য মামলা সম্বন্ধে বলছিলেন, এটা এক ধরনের অশনি সংকেত। আমাদের এই ধরনের নির্যাতন এখনই বন্ধ করা দরকার।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছিলেন, ছাত্রী,শিক্ষিকা কেউই আজ স্কুলে এবং রাস্তায় নিরাপদ না। এটা মোটেও বাড়িয়ে বলা কোন কথা নয়। কিছু জায়গায় ইভটিজিং এর জন্য স্কুল বন্ধ করে দিতে হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা পিছাতে হয়েছে। যারা ইভটিজিং এর স্বীকার হন তারা স্কুলে যেতে চায় না এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবকরাও তাদের স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না। ফলে স্কুল থেকে ছাত্রীদের ঝরে পড়ার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। চরিত্রের উন্নতি ঘটানোর সাথে সাথে ইভটিজিং’র প্রতিকারে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই সব বাধা দূর হবে, হবে নারীর মুক্ত পথ চলা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




