somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভাগী থেকে ফেলানী অতঃপর ——- পর্ব ৩

০২ রা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাহেদ বলে,আচ্ছ!! তাহলে তোমার সিরিয়াস কথাটা তাড়াতাড়ি বলে ফেল, আমার খুব ঘুম লাগছে।

আর কোন ভনিতা না করেই আছবা বলে, সাহেদ, আমি ফেলানীকে নিতে চাই, ও আমাদের মেয়ে হবে।

আছবার কথায় সাহেদের বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠে, সে লাফ দিয়ে উঠে বসে বলে,ও আমাদের মেয়ে হবে, ওকে চাই এসবের মানে কি আছবা!?

মানে আমি ওকে এ্যাডাপ্ট করতে চাই তাহলে ও আমাদের মেয়ে হবে, ওকে আমরা আমাদের সাথে সুইডেন নিয়ে যাব,ওকে আমাদের সন্তান হিসাবে লালন পালন করবো, তোমার,আমার পরিচয়ে ও পরিচিত হবে কেউ ওকে আর ফেলানী বলবে না, ওর জন্য আমার খুব মায়া লাগছে, ওকে দেখার পর থেকে আমার মেয়ের কথা আমার খুব মনে পরছে, মনে হচ্ছে ওর ভিতরই লুকিয়ে আছে আমার মেয়ে, আমি ওকে চাই, এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামে আছবা কিন্ত তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগে।

সাহেদ, খুব আশ্চার্য হয়ে বলে কি বলছ, এসব পাগলের মত!! একটা বাচ্চা এ্যাডাপ্ট করবে সেটা তো অনেক চিন্তা ভাবনার বিষয়। বাচ্চা সম্পর্কে কিছু জানো না আর একটা বাচ্চা এ্যাডাপ্ট করা মানে অনেক বড় দায়িত্বের বোঝা মাথায় নেয়া এসব না ভেবে, রাস্তায় একটা বাচ্চা দেখে সিন্ধান্ত নিলে এই বাচ্চা তোমার চাই! তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি কোন পুতুল কেনার বায়না করছ আমি দোকান থেকে কিনে দিলাম তুমি বাসায় এসে শোকেসে সাজিয়ে রাখলে। হ্যা, একটা বাচ্চা এ্যাডাপ্ট করে আমরা সুইডেনে নিতে পারবো, কিন্ত তার জন্য অনেক নিয়ম কানুনের পথ পাঁড়ি দিতে তার জন্য সময় লাগবে, আমাদের সাথে নেয়া তো সম্ভব না। আছবা আমি চাই না এটা নিয়ে তুমি কোন ঝামেলা করো না, মাত্র তো দুই মাসের জন্য এসেছি সবার সাথে মিলে মিশে আনন্দ করো সেটাই ভালো হবে, সাহেদ কিছুটা বিরক্তি নিয়েই কথাগুলো বলে।

সাহেদের কথা শেষ হলেও আছবা কোন কথা বলে না, সে মাথা নিচু করে আছে আর তার দুচোখ বেয়ে শুধু পানি পড়ছে তো পড়ছেই, একটা সন্তানের শূন্যতা সাহেদের বুকেও আছে তার উপর আছবার চোখের পানি সাহেদকে দুর্বল করে দেয়, সাহেদ আছবার মুখটা উঁচু করে ধরে চোখের পানি মুঁছে মাথায় হাত বুলিয়ে খুব নরম সুরে বলে, প্লিজ আছবা কেঁদ না, তুমি যদি বাচ্চা এ্যাডাপ্ট করতেই চাও , তোমার বাবা, মা আরো সবার সাথে কথা বল তারা তোমাকে সাহায্য করতে পারবে আর ফেলানীর অবস্থান সম্পর্কেও হয়ত উনারা বলতে পারবে। তারপর সবকিছু ওকে থাকলে আমার দিক থেকে কোন সমস্যা নেই। আর যদি ফেলানীকে না পাওয়া যায় আমরা অন্য বাচ্চা দেখবো, তবু তুমি মন খারাপ করো না, তোমার হাসিমুখ দেখতে চাই।

এবার আছবা, খুশী হয়ে সাহেদের হাত ধরে বলে, আমি জানতাম তুমি রাজী হবে, তুমি অনেক ভালো সাহেদ। তাহলে রাতেই সবার সাথে কথাটা বলি?

সাহেদ জানে, আছবা মুখ দিয়ে যা বলেছে এটা না করা পর্যন্ত ওকে শান্ত করা যাবে না তাই মুচকি হেসে বলে, ওকে — পাগলী এবার একটু ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
সাহেদকে সব কিছু বলার পর আর সাহেদের সাপোর্ট পেয়ে আছবার বুকের ভিতরটা অনেক হাল্কা লাগছে ও ক্লান্ত থাকায় অল্ব সময়ে আছবা ঘুমিয়ে যায়।সাহেদ আছবার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সেও আছবার পাশে শুয়ে যায়।

ওদের ঘুম ভাঙে আছবার বোনের মেয়ে নোহার দরজায় নক করার শব্দে, ওরা ফ্রেশ হয়ে নীচে আসতেই দেখে সবাই খাবার টেবিলে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।এক সাথে রাতের খাবার খেয়ে সবাই মিলে পাশেই লিভিং রুমে সোফায় যেয়ে বসে , আছবা মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পাদুটো গুটিয়ে রেখেছে তার পায়ের পাশে বসেছে সাহেদের মা তার পাশেই সাহেদ।আছবার তিন ভাই, তিন ভাবী, আপু, দুলাভাই চৌধুরী সাহেব সবাই নিজ নিজ আসন নিয়ে বসে রাজনীতি থেকে শুরু করে, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছে,বিভিন্ন রকম হাসি তামাসাও হচ্ছে। আছবার মন আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো হলেও নিজের থেকে তেমন কিছু বলছে না, কেউ কিছু প্রশ্ন করলে হু্,হা বা অল্প কথায় জবাব দিচ্ছে। আছবা শুধু ভাবছে ফেলানীর কথাটা কি ভাবে বলবে, নিজের পরিবারের কাউকে নিয়ে চিন্তা করছে না , ভাবছে সাহেদের মা বাচ্চা এ্যাডাপ্ট করার ব্যাপারটা কি ভাবে নিবে সেটা নিয়ে।

আছবার দুলাভাই আনিস সাহেব বলে, কি ছোট গিন্নী শুধু হু , হা করছ কেন? এত বছর পর মেম সাহেবদের দেশ থেকে এসেছ তাদের সম্পর্কে কিছু বল আমাদের?

আছবা মায়ের কোল থেকে উঠে বসে মুখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে, জী বলবো দুলাভাই আপনারা সবাই আছেন, আমার শাশুরীমাও আছে, অনেক কথা বলবো তবে মেম সাহেবদের কথা নয় আমার জীবনের কথাই বলবো, আমার ব্যার্থতার আমার হারানোর কথা,সাহেদ আমার জন্য কি করেছে কতটুকু করেছে এসব আপনাদের জানা দরকার —কান্নায় আছবার গলাটা ধরে আসে, সেজোড়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে আরো বলে ফোনে অনেক কথাই আপনারা জেনেছেন তবে কিছুই বাকীও আছে সেগুলোই আজকে আপনাদের বলবো ।

আছবার কথায় সবাই নড়ে চরে বসে আছবার দিকে মনোযোগ দেয় ।
আছবা বলতে শুরু করে———

সুইডেন যাওয়ার দুই মাস পরেই আমি ভাষা শেখার স্কুল পেলাম ,স্কুল শুরু করে দুই বছরে ভাষার কোর্স শেষ করে আরো দুই বছরে আরো কয়েকটা কোর্স শেষ করলাম তাতে আমি ওখানকার কলেজ লেভেল পাশ করলাম,
আমার ইচ্ছা ছিল, আর পড়াশুনা করবো না ছোট খাট কোন একটা জব শুরু করবো। সাহেদকে এটা বলাতে ও বলে,

তুমি এটা করতে পারো , ছোট খাট কোন জব পেয়েও যাবে । দেখ, অনেকের হয়ত তোমার মত সুযোগ নেই তাই বাধ্য হয়েই তারা পড়াশোনা না করে ছোট খাট জব শুরু করে কিন্ত তোমার সুযোগ আছে, যদিও অর্থের চাহিদা কখনো শেষ হবে না , তবু আমরা মনে হয় ভালোই আছি, তাই তুমি জবের জন্য তাড়াহুরো না করে আরো একটু পড়াশুনা করলে ভবিষ্যতে তোমার জন্য ভালো হবে, আমি মনে করি তোমার এই সুযোগটা নেয়া দরকার। এটা তোমার জন্য আমার পরামর্শ, আমি তোমার উপর চাপিয়ে দিব না তুমি যেটা চাও তুমি সেটাই করবে।

- ওর কথাগুলো আমার বেশ ভালো লাগলো, আমি বলি , আচ্ছা তাহলে কি নিয়ে পড়ব আর কি ভাবে কি করতে হবে এসব কিন্ত তোমার দায়িত্ব।
- সাহেদ হাসতে হাসতে বলে , জী ম্যাডাম আমি দুধভাত মেখে আপনাকে খাইয়ে দিব।

এরপর সাহেদ ইন্টারনেট এ সার্চ করে, কত সময় লাগবে, ভবিষ্যতে জবের বাজার কেমন সব কিছু বিবেচনা করে অনেক কোর্সের মাঝখান থেকে ও আমার জন্য ইকোনমির উপরে তিন বছরের একটা কোর্স পছন্দ করে, আমাকে বলে এটাাই তোমার জন্য পারফেক্ট হবে, আমি বলি ওকে, তুমি যেটা ভালো মনে করো, সাহেদই অনলাইনে স্টকহোমের একটা স্কুলে ভর্তির জন্য এ্যাপ্লাই করে দেয়। দুই মাস পরই ক্লাস শুরু হল।আবারো পড়াশুনা নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে গেলাম।

আসার পর থেকেই দুজনের ব্যাস্ততার পর ফ্রী টাইম টুকু শাহেদের সাথে খুব সুন্দর যাচ্ছিল , সাহেদ আমাকে এতটাই আনন্দে রেখেছিল আমার দেশের কথা খুব মনে আসত না , আমার পরিবারের জন্য মন খারাপের কোন সুযোগই সাহেদ আমাকে দেয়নি। অবশ্য সবার সাথে নিয়মিত ফোনে কথা হত সেটাও একটা কারন ছিল।

ছয় সেমিষ্টারের প্রথমটা শেষ করে দ্বিতীয়টাও প্রায় শেষের দিকে একদিন হঠাৎ করেই মনে হল আমি দেশ থেকে এসেছি কতদিন হল ? নিজেই মনে মনে হিসাব করে দেখলাম প্রায়ই পাঁচ বছর। মনের ভিতরে কেমন যেন লাগলো এত দিন আম্মু আব্বুকে ছেড়ে আছি আমি!! কত দিন আম্মুর কুলে মাথা রাখি না, আব্বুকে জড়িয়ে ধরি না ,এসব ভাবতেই ভাবতেই আরো মনে হল আরে — এত দিনে আমাদের কোন বেবীও তো আসেনি, কেন?
আসলে এতটাই ব্যাস্ত আর আনন্দে মেতে ছিলাম কিভাবে এতটা সময় পার হয়ে গিয়েছে, খেয়ালই করিনি, যদিও তোমরা অনেকেই বলেছ , আমার শাশুরীও বলতো কিন্ত আমি বা সাহেদ এটা নিয়ে কেয়ার করতাম না।
কিন্ত সেদিন এসব ভাবতেই আমি অনেকটা অস্থির হয়ে যাই। আমরা এতদিনেও কেন কোন বেবী পাইনি? আমার মনে নানা ধরনের উল্টা পাল্টা ভাবনা আসে, সাহেদ এ ব্যাপারে কোন কথা বলেনি কেন? তাহলে কি সাহেদের কোন সমস্যা আর সেটা সাহেদ জানে। এসব নানা কথা ভেবেই সারাদিন মন খারাপ করে ছিলাম। সাহেদ বাসায় এলে সাথে আমি খুব কান্না করে বলি, আমরা এতদিনেও কোন বেবী পাইনি কেন?

সাহেদ হেসে বলে, এজন্য তুমি কাঁদছ ? বেবী কেন পাইনি, আল্লাহ চাইনি তাই পাইনি এটা সোজা কথা।
সাহেদের কথায় আমি আরো রেগে যেয়ে বলি, না তা হবে কেন? নিশ্চয় আমাদের কারো কোন সমস্যা আছে? তা না হলে তো এমনটা হবার কথা নয়!
সাহেদ এবার বলে আচ্ছা কান্না না করে বল, আমাকে এখন কি করতে হবে?

আমি বলি, চল আমরা ডাক্তারের কাছে যাব।

-আচ্ছা! এটা বল্লেই তো হয়! অত কান্না কাটির কি প্রয়োজন আছে!

পরের দিন সাহেদ অফিসে যাওয়ার আগে ক্লিনিকে ফোন করে, ডাক্তারের এ্যাপয়ন্টমেন্টর জন্য ফোনে আমাদের কথা শুনে একজন গাইনোলজি ডাক্তারের সাথে আমাদের এ্যাপয়ন্টমেন্ট দেয়া হয় এক সপ্তাহ পর।

এক সপ্তাহ পর আমরা ডাক্তারের সাথে দেখা করি, ডাক্তার সব কিছু শুনে আমাদের দুজনকেই কিছু টেষ্ট দেন, সব গুলো টেষ্টের রিপোর্ট পেয়ে দুই সপ্তাহ পর ডাক্তার আমাদের ডেকে বলে, তোমাদের সব গুলো রিপোর্ট আমার হাতে এসেছে, তোমাদের কারো কোন সমস্যা নেই। ছোট , খাট কোন সমস্যা থাকলে আমরা চিকিৎসা করতে পারি আর বড় কোন সমস্যা থাকলে আমি তোমাদের বিকল্প কোন পরামর্শ দিতে পারতাম, এখন তোমাদের জন্য ধৈর্য ধরা ছাড়া বলা আমার কাছে আর কোন পরামর্শ নেই । তবে চিন্তা করো না তোমাদের সন্তান হবে, অনেকের কনসিভ করতে একটু সময় নেয়, আর তোমরা তো মুসলিম সৃষ্টিকর্তা বিস্বাস করো তাহলে তার উপর ভরসা রাখো আর সবুর করো উনি যখন চাইবেন তখনই তোমাদের বেবী হবে । এভাবে আরো কিছু শান্তনার বানী শুনে আমরা চলে এলাম।

এর পর দ্বীতিয় সেমিষ্টার শেষ করে তৃতীয় সেমিষ্টারও প্রায় শেষের দিকে কিন্ত কিছুই হচ্ছে না, আমি খুব হতাশ হয়ে পরলাম, একটা বাচ্চার জন্য আমার আকুলতা দিনে দিনে বেড়েই যেতে লাগলো, আমার ধৈর্য আর বাঁধ মানতে চায় না কিন্ত করারও কিছু নেই এটা ভেবে আমার খুব মন খারাপ হতে থাকতো , প্রতিটা মাসেই আমি আশা করে থাকতাম কোন সুখবরের, কিন্ত মাস শেষে যখন দেখতাম কোন আশা নেই, তখন খুব কান্না করতাম। আমার এত বেশী মন খারাপ থাকতো পড়া শোনা, সাহেদের সাথে ঘুরতে যাওয়া, কোন কিছুই আমার ভালো লাগত না। কারো সাথে মিশতে বা কথা বলতে ইচ্ছে হত না।ওখানে পরিচিত যারা আছে তাদের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধই করে দিলাম, তোমাদের সাথেও ফোনে কথা বলা কমিয়ে দিলাম, দিনে দিনে মেজাজটা এত খিট মিটে হয়ে গেল সাহেদ ভালো কথা বল্লেও আমি খুব রেগে যেতাম, ওর সাথে ঝগড়া করতাম।কিন্ত সাহেদ কখনো আমার কথায় রেগে যেত না, ও সব সময় আমাকে শান্তনা দিত, আমাকে ভালো রাখার সব রকম চেষ্টা করতো আর বলতো দেখ আমাদের তো কোন সমস্যা নেই তুমি একটু অপেক্ষা করো আল্লাহ যখন যাবে আমাদের বাচ্চা হবে, আছবা তুমি এতটা হতাশ হয়ো না।আর আমাদের ভাগ্যে যদি সন্তান না থাকে তাহলে তো করার কিছুই নেই। এটা নিয়ে যদি তুমি মন খারাপ করে থাকো তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে।
একদিন সাহেদ বলে, আছবা চল আমরা না হয় দুই এক মাসের জন্য দেশ থেকে ঘুরে আসি সবার সাথে দেখা হলে তোমার ভালো লাগবে সাহেদ এটা বলে আবার একটু ভেবে বলে, আগামী সপ্তাহেই তোমার সুইডিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবো, এক থেকে ছয়মাস লাগতে পারে তারপরই আমরা দেশে যাব - তুমি কি বল?
আমি মুখে হ্যা, না কিছু না বলে মাথা নেড়ে সম্মতি দেই।

পরের সপ্তাহেই আবেদন করে মাত্র তিন সপ্তাহ পরই নাগরিকত্বের ডিসিশন পেলাম, পাসপোর্ট বানাতে দিলাম এক সপ্তাহ পর সুইডিস পাসপোর্ট হাতে পেয়ে সাহেদ, আমি দুইজনে মিলে নেটে সবকিছু দেখে আমার স্কুল, সাহেদের ছুটি সব কিছু মিলিয়ে চারমাস পরের টিকিট নিলাম কাতার এয়ার ল্যাইন্সে। দেখতে দেখতে তিন মাস চলে গেল , আর মাত্র একমাস বাকী আমার বিষন্ন মনে খুশীর জোয়ার কিছুটা হলেও এলো। কত দিন পর দেশে যাচ্ছি, যখনই সময় হয় দুজনে মিলে বাহিরে যাই দোকান ঘুরে ঘুরে এটা সেটা কিনি ওজন করে দেখি বেশ ভালো লাগে, দেখতে দেখতে আমাদের আসার সময় কাছে চলে এল আর মাত্র দশদিন বাকী — আর তিনদিন ক্লাস হয়েই আমার স্কুল বন্ধ হবে, সেদিন থেকেই সাহেদেরও ছুটি শুরু হবে, আমাদের হাতে তখনো কয়েকটা দিন থাকবে, অল্প কিছু কেনা কাটা বাকী আছে একদিন যেয়ে নিয়ে আসব তারপর সব প্যাকিং করবো এরকম ই ভেবেছি।

কিন্ত কয়েকদিন ধরে আমার শরীরটা একটু দূর্বল দূর্বল লাগে,ভাবলাম প্রায় একমাস ধরেই তো পরিশ্রম একটু বেশী হচ্ছে আবার ব্যাস্ততার জন্য খাওয়াও ঠিকমত হচ্ছে না তাই হয়তো, আর তখনই মাসের হিসাবটা একটু গরমিল মনে হল ।দেশে যাওয়ার আনন্দে আর কেনাকাটার ঝামেলায় খেয়াল করা হয়নি, আগে কখনো আমার এরকম হয়নি।

কিছুটা আনন্দ কিছুটা ভয়ে রাতে ভালো ঘুম হল না, সাহেদকেও কিছু বলছি না। ভোর না হতেই আমি বিছানা ছেড়ে উঠে সকালের নাস্তা সাজালাম টেবিলে, সাহেদের,আমার লাঞ্চের জন্য সবজীপাস্তা রান্না করে বক্সে রেডী করে করলাম। আমি মোটামুটি রেডী হয়ে সাহেদকে ডাকলে ।
- সাহেদ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে এখনই ডাকছ কেন?
- হ্যা উঠো তো তাড়াতাড়ি আমরা একটু ক্লিনিক হয়ে যাবো। প্রতিদিনই প্রায় আমরা এক সাথে বের হই সাহেদ আমাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে ওর অফিসে যায়।
- সাহেদ আমার হাত টেনে ধরে মুচকি হেসে বলে কেন, কি হয়েছে ম্যাডাম?
- কিছু হয়নি, আমি সাহেদকে ধ্বাকা দিয়ে বলি, উঠো তো তাড়তাড়ি সাহেদ উঠে শাওয়ার নিয়ে এলে আমারা এক সাথে নাস্তা করে বের হলাম।

কিছুটা শংকা কিছুটা আতংক নিয়ে ক্লিনিকে আসলাম, রিসিপশনে বল্লে, রিসেপশনিষ্ট সামনে সোফা দেখিয়ে বলে তোমারা ওখানে বস, নার্স এসে তোমাদের নিয়ে যাবে ।কিছুক্ষন পরেই নার্স এসে আমাদের তার রুমে ডেকে নিয়ে আমার হাতে একটা টিউব দিয়ে টয়লেট দেখিয়ে বলে, তুমি ওটা ওখানে ছোট জানালার মত আছে ওখানে রেখে এসো ।

আমি ফিরে এলে নার্স বলে, তোমরা একটু অপেক্ষা করো আমি পাঁচ মিনিটেই ফিরে আসবো।
পাঁচ মিনিটও তখন আমার কাছে পাঁচ যুগ মনে হচ্ছিল , আমার হার্ডবিট খুব দ্রত হচ্ছিল, আমি না বসতে পারছিলাম না দাড়িয়ে থাকতে পারছিলাম পুরো রুমে হাটাঁহাটি করছি, আমার অস্থিরতা দেখে সাহেদ বলে, আছবা এমন করছো কেন, তুমি টেনশন করো না আমার মন বলছে কোন ভালো খবরই হবে ।
সাহেদ আমাকে সুইডিশেই বলেছিল কথাটা আর নার্স ঘরে ঢুকার মুখেই সাহেদের কথাটা শুনে সাহেদের কথার রেশ ধরেই হাসতে হাসতে বলে হ্যা,হ্যা সুখবরই আছে। কংগ্রাচুলেশন!! আমার দিকে তাকিয়ে বলে তুমি মা হচ্ছ।
আমি একথা শুনে খুশীতে আবেগ আপ্লুত হয়ে সাহেদকে জড়িয়ে ধরি, আনন্দে আমার চোঁখে পানি আসছে, আমি সাহেদের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে মুখেও এক অপূর্ব খুশীর ঝিলিক জ্বলমল করছে ——। চলবে


আগের পর্বগুলো পড়তে চাইলে
পর্ব ১

পর্ব ২
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:২৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×