ভাষা চলনশীল। আজকাল অনেক নতুন নতুন গালি এই চলনশীল ভাষায় প্রতিনিয়তই যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু আছে খুবই যুগোপযোগী, যেমনটি ধরেন ছাগু এবং ভাদা। এই দুই প্রজাতির অত্যাচারে প্রান যায় যায় অবস্থা। আজকাল আরেকটি কন্সেপ্ট গালির কাতারে হরদম ব্যবহৃত হচ্ছে, এর নাম ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি’। আমরা যারা ইউরোপ/আমেরিকায় থাকি তারা আবার অন্য রকম একটা গালি শুনি, ‘ইসলামিক এক্সট্রিমিস্ট’। তখন জ্ঞানের ভান্ডার খুলে বসা ছাড়া গতি নেইঃ ইসলাম কি, কোরান কি কি বলে, কি আমাদের আদর্শ...সর্বপরি যারা এখানে সেখানে জঙ্গি হামলা করছে, ছবি বা কার্টুন বানানোর অপরাধে মানুষ খুন করছে তারা কিভাবে আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে, ইত্যাদি ইত্যাদি...সে এক বিশাল ক্যাচাল। প্রশ্ন আসে, ‘কিন্তু যারা এগুলো করছে তারাও তো মুসলিম, তাই না?’ আরে না না, দে আর ফান্ডামেন্টালিস্ট, ওরা এক্সট্রিমিষ্ট সন্ত্রাসী, বিশ্বের বেশির ভাগ মুসলিম হল ‘মডারেট’, আমরা শান্তিপ্রিয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম।
যারা মোটামোটি নরম-সরম, আমাদের মতই শান্তিপ্রিয় মানুষ, তারা এই উত্তরে বেশ খুশি হয়। আমরা ঝাপ দিয়ে পরের টপিকে চলে যাই। সমস্যাটা বাধে কিছু অতি ‘ইন্টিলিজেন্ট’ বন্ধুদের নিয়ে। তারা প্রশ্ন করে বসে, যখন এই ফান্ডামেন্টালিস্ট সন্ত্রাসীরা সারা বিশ্ব জুরে আতংক সৃষ্টি করে, একটা মুভি’র জন্য মানুষ মেরে ফেলে, বই লেখার জন্য মৃত্যুর ফোতোয়া দেয় তখন এত এত মডারেট শান্তিপ্রিয় মুসলিমরা কোথায় থাকে?? (ভাগ্য ভাল বাংলাদেশটা ছোট আছে, আমাদের হুমায়ুন আজাদ বা রাজীবরা এদের চোখে এখনো পরে নি। পরলে পাকিস্তানের মত আমাদের নামেরও বারোটা বাজত)। যাইহোক বাঙ্গালী বোকা না। ওরা গাছে গাছে চললে আমরা চলি পাতায় পাতায়। সুন্দর মত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা-দুইটা ইসলামিক পত্রিকার সমালোচনামুলক সম্পাদকীয় আর হাফ-নাস্তিক, নামে মুসলিম বুদ্ধিজীবির আর্টিকেল ধরিয়ে দিয়ে যুদ্ধেজয়ী হয়ে ঘরে ফিরি।
সমস্যাটা বাধে তখন নিজেকে নিয়ে। নিজেকে প্রশ্ন করি আসলেই কি আমরা শান্তিপ্রিয়? শুধু নিজেদের জীবনে ধর্মান্ধ না, এতেই হয়ে গেলাম মডারেট? এখন শাহবাগে আমাদের সবার দাবি যুদ্ধাপরাধীর ফাসি। তাই শিবিরের ফাঁদে পা না দিতে সব বুদ্ধিমান মানুষই উপদেশ দিবে ‘রাজীবের ব্যপারটা এখন এড়িয়ে যান, সে নাস্তিক ছিল, ইসলাম বিদ্বেষী ছিল। বাঙ্গালী বড়ই ধর্মপ্রেমী জাতি! আন্দোলন অন্যদিকে নিবেন না।’ বড়ই বিচক্ষন কথা। হুমায়ুন আজাদের মত এত নামি-দামী একজন লেখক চলে গেলেন, বিচার হল না। রাজীব কোথাকার কোন ব্লগার! তাকে নিয়ে কেন কথা বলবো? শুধু আবার যখন কোথাও জঙ্গি হামলা হবে, আবার যখন কোন বাস/ট্রেন উড়িয়ে দিয়ে শত শত বিধর্মী বা মুরতাদ(!) মারা হবে, তখন যেন না বলি ওরা ধর্ম-ব্যবসায়ী, ওরা ফান্ডামেন্টালিস্ট সন্ত্রাসী, ওরা আর আমরা এক না। আজকে আমরা যারা এই খুনের ব্যপারটা এড়িয়ে যাচ্ছি, আমরা যারা এই খুনটা সমর্থন পর্যন্ত করছি, আমরা কি আসলেই এক না??
‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে,
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে।’
এত বড় হয়ে গেলাম, এর ভাব-সম্প্রসারনটা এখনো ধরতে পারলাম না আমরা। হায় সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




