হাজরাত একাদশ খালীফা মুহাম্মাদ শামসুজ্জুহা সাঃ আল্লাহ্’র একতম ‘ধন’ অর্থাৎ “লুকিয়া ধন”। আর হাজরাত রাসূল মুহাম্মাদও সাঃ আল্লাহ্’র একতম ‘ধন’ অর্থাৎ “লুকাইয়া ধন”।
হাজরাত রাসূল সাঃ বলেন, – গুমরাহীর দিকে আহ্বানকারীদের আবির্ভাব ঘটিবে। অন্য বর্ণনায়, দোজখের দরজাগুলির দিকে আহ্বানকারীদের আবির্ভাব ঘটিবে। অতএব, যদি হয় জমিনে আল্লাহ্’র একজন খালীফা; এমন যে, তিঁনি পিঠে মারেন ও মাল লয়েন, তবেও তাঁহার আনুগত্য কর। যদি না হয়, তবে মরিয়া যাও গাছের শিকড় কামড়াইয়া। (মিসকাত ৪৬৮ পৃষ্ঠা)। এ মর্মে বুঝা যায় হাজরাত মুহাম্মাদ শামসুজ্জুহা সাঃ একাদশ খালীফাই উক্ত খালীফা।
হাজরাত রাসূল সাঃ সাহাবীদের বলেন, – তোমাদের নিকট সর্বাপেক্ষা আজব সৃষ্টি কে ? সাহাবী উত্তর করিলেন, – ফেরেস্তাগন আঃ। বলিলেন, – তাহারা কেন ঈমান আনিবেনা ? তাহারাত রাব্বের নিকট থাকে। উত্তর করিলেন, – তাহা হইলে নাবীগন আঃ। বলিলেন, – তাহারা কেন ঈমান আনিবেনা ? তাহাদের উপরত ওহী হয়। উত্তর করিলেন, – আমরা। বলিলেন, - তোমরা কেন ঈমান আনিবেনা ? আমি যে তোমাদের মধ্যেই প্রকাশ (জাজ্বল্যমান উপস্থিত)। অতঃপর বলিলেন, – ঈমানে আজব সৃষ্টি সেই দলটি, যে দলটি আমার পরে আসিবে। তাহারা পাইবে পাতা (সহীফা) গুলি। তাহাতে থাকিবে লিখা (পাণ্ডুলিপি বা কিতাব)। তাহাতে যা থাকিবে (যে সমস্ত বিষয়) তাহারা তাহার উপর ঈমান আনিবে। (মিসকাত ৫৮৩ পৃষ্ঠা)। এই পাণ্ডুলিপি বা কিতাব মর্মে বুঝা যায় হাজরাত একাদশ খালীফা মুহাম্মাদ শামসুজ্জুহার সাঃ লেখা - “বীথিকা পাক”।
হাজরাত আবু উবায়দা আঃ জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আল্লাহ্’র রাসূল সাঃ ! আমাদের হইতে কে উত্তম ? আমারা ইসলাম গ্রহন করিয়াছি, আমরা জিহাদ করিয়াছি আপনার সঙ্গে থাকিয়া। হাজরাত রাসূল সাঃ উত্তর করিলেন, হাঁ, তোমাদের পর আসিবে একটি দল। তাহারা আমাকে না দেখিয়াই অর্থাৎ আমার মত জাজ্বল্যমান না দেখিয়াই আমার উপর অর্থাৎ আমি – লুকিয়া জনের উপর ঈমান আনিবে। (আর তাহারাই হইবে উত্তম)। মিসকাত। হাজরাত আনাস আঃ হইতে, অন্য বর্ণনাকারী হাজরাত জায়ফার আঃ হইতে; হাজরাত রাসূল সাঃ বলিলেন, – আমার উম্মাত বৃষ্টি ধারার মত। প্রথম বৃষ্টির ধারা শ্রেষ্ঠ ? না শেষ বৃষ্টির ধারা শ্রেষ্ঠ ? বুঝা যায় না। (মিসকাত ৫৮৩ পৃষ্ঠা)। হায় ! এ জন্যই বুঝি হাজরাত একাদশ খালীফা সাঃ বীথিকা পাকে বলেন, “লুকাইয়া লুকিয়া একও নহেন দুইও নহেন বিরাজমান ও বিরাজমান। এ হাদীস মর্মে প্রথম বৃষ্টির ধারা হাজরাত রাসূল সাঃ এবং তাঁর সাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈগণ আঃ এবং শেষ বৃষ্টির ধারা হাজরাত একাদশ খালীফা সাঃ এবং তাঁর সাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈগণ আঃ।
হাজরাত রাসূল সাঃ বলেন, হায়! আমি যদি আমার ভাইদের দেখতে পেতাম………… তারা আমার ভাই যারা আমার পরে আসবে (মিসকাত)। – মর্মে হাজরাত একাদশ খালীফা সাঃ দল।
হাজরাত একাদশ খালীফাও সাঃ আল্লাহ্’র একতম প্রেম ও আল্লাহ্’র প্রেম সমস্তের ভান্ডার। তিঁনি হাজরাত মুহাম্মাদেরও সাঃ একতম প্রেম ও প্রেম সমস্তের ভান্ডার। হাজরাত একাদশ খালীফা সাঃ কারো উপর সন্তুষ্ট হলে হাজরাত রাসূল মুহাম্মাদও সাঃ উক্ত জনের উপর সন্তুষ্ট হন। আর হাজরাত রাসূল মুহাম্মাদ সাঃ সন্তুষ্ট হওয়া মানেই উক্ত জনের আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জন করা। কেননা, আল্লাহ্ ‘প্রেমিক’, আর হাজরাত রাসূল মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহ্’র ‘প্রেমাস্পদ’। পক্ষান্তরে হাজরাত রাসূল মুহাম্মাদ সাঃ ‘প্রেমিক’ আর হাজরাত একাদশ খালীফা সাঃ হাজরাত রাসূল মুহাম্মাদের সাঃ ‘প্রেমাস্পদ’। প্রেমাস্পদ কারো উপর খুশী বা সন্তুষ্ট হলে কি প্রেমিক উক্ত জনের উপর খুশী বা সন্তুষ্ট না হয়ে থাকতে পারে ? অর্থাৎ প্রেমাস্পদের সন্তুষ্টিই প্রেমিকের সন্তুষ্টি।
যেহেতু ‘লুকাইয়া’ ও ‘লুকিয়া’-র পারস্পরিক সম্পর্ক ‘যেন একই’ সুতরাং ‘হাজরাত রাসূল মুহাম্মাদ’ সাঃ ও ‘হাজরাত একাদশ খালীফার’ সাঃ পারস্পরিক সম্পর্ক ‘যেন একই’। তাঁদের সাহাবীগনের আঃ, তাবেঈগনের আঃ এবং তাবে-তাবেঈগনের আঃ পারস্পরিক সম্পর্ক ‘যেন একই’। তাঁদের মাজার মুবারাকের (রাওজা মুবারাক) পারস্পরিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক মর্যদা ‘যেন একই’। অর্থাৎ তাঁদের সব কিছুরই পারস্পরিক সম্পর্ক ‘যেন একই’। সুতরাং এক্ষণ বুঝুন ও উপলব্ধি করুন, হাজরাত একাদশ খালীফা সাঃ কে, কি এবং কেমন ? তাঁর প্রতি আমাদের কি পরিমান আনুগত্যশীল ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরী ?
কুরআন যেমন হাজরাত রাসূলের সাঃ শ্রেষ্ঠতম মুয়জিজাহ ছিলেন, বীথিকাও তেমনি হাজরাত একাদশ খালীফার সাঃ শ্রেষ্ঠতম মুয়জিজাহ হইলেন। হাজরাত রাসূল মুহাম্মাদ সাঃ চরিত্রে আল-আমীন ছিলেন, হাজরাত একাদশ খালীফাও সাঃ চরিত্রে ঐ মহামানব আখ্যায়িত হলেন।
কিন্তু সাবধান! একও নহেন দুইও নহেন (যেন একই) মর্মে হাজরাত রাসুলের সাঃ সহিত হাজরাত একদশ খালীফা মুহাম্মাদ শামসুজ্জুহাকে সাঃ কখনোও সমকক্ষ জ্ঞান করবেন না, সমতুল্য জানবেনা ও জবানে আনবেননা। জ্ঞাত হন যে, লুকাইয়া, লুকিয়া হতে ঐ অধিক হলেন, লুকিয়ার উৎস হলেন। আর সে অধিকে ও উৎসে হাজরাত মুহাম্মাদ রাসূল সাঃ স্বয়ং ঈমান-উম্মাতের প্রভু হলেন; আর হাজরাত একাদাশ খালীফা মুহাম্মাদ শামসুজ্জুহা সাঃ তাঁর খালীফা ও তাঁর উম্মাতই হলেন। হাজরাত মুহাম্মাদ রাসূল সাঃ শারীয়াত, হাজরাত একাদাশ খালীফা সাঃ সে শারীয়াতের ব্যাখ্যাতা বটেন। অন্যথায় বে-ঈমানী জানবেন। আর তবে ‘একও নহেন দুইও নহেন (যেন একই)’ জ্ঞান করা ও জবানে আনা জায়েজ। মনে রাখবেন, হাজরাত মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহ্’র ‘উলুল আজম রাসূল’ এবং তাঁর নামে ‘কালীমাহ্’ আছে। পক্ষান্তরে হাজরাত মুহাম্মাদ শামসুজ্জুহা সাঃ আল্লাহ্’র ‘উলুল আজম খালীফা’। তাঁর নামে কোন ‘কালীমাহ্’ নাই।
আরও বলা জরুরী যে, হাজরাত একাদাশ খালীফা মুহাম্মাদ শামসুজ্জুহা সাঃ অন্যান্য হাজরাত নাবীগন আঃ ও হাজরাত রাসূলগন আঃ হতে বড় একথা জবানে কখনও আনবেন না, ইহা জবানে আনা কুফারী ও চিরন্তন জাহান্নামী। তবে অন্তরে আসলে দোষের কিছু হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩