somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একই হাদিসকে যদি একজন আলেম সহীহ এবং অন্যজন যইফ/জাল বলেন তো সাধারণ মুসলিমদের করণীয় কি?

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যার হাতে আমার প্রাণ এবং যিনি আমাকে ব্লগে লিখার। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ এর উপর।

একজন ফকীহ একটি হাদিসকে ”সহীহ” বলেছেন। অপরদিকে আরেকজন ফকীহ সেই হাদিসকেই ”যইফ” বা দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমন অবস্থায় আমরা সাধারণ মুসলিমরা কি করব?

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে বাংলাদেশের অসংখ্য যুবক রয়েছে যারা দ্বীন শিখতে আগ্রহী। অসংখ্য ভালো ভালো আলেম রয়েছেন বাংলাদেশে যারা এই সমস্ত ছাত্রদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

যাই হোক যে সমস্যাটা আমরা চরমভাবে লক্ষ করেছি তা হলো আহলে হাদিস দাবীদারগণ এবং বাংলাদেশের আহলে হাদিস আলেমগণ যখনই কোন হাদিস বলেন তখনই হাদিসটি বলার পাশাপাশি হাদিসটি যে সহীহ সেটা মানুষকে বুঝানোর জন্য আরো একটি কথা উচ্চারণ করে থাকেন যে ””আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন”””। পক্ষান্তরে মাজহাবের অনুসারীরাও তাদের দেখাদেখি কোন হাদিস উচ্চারণ করেই বলে উঠে ”ইমাম তিরমিজী, ইমাম যাহাবী হাদিসটি সহীহ বলেছেন। ”আলবানী বড় না ইমাম তিরমিজী আগে” ইত্যাদি টাইপের প্রশ্ন করে থাকেন।

একই হাদিস সম্পর্কে যদি দুজন আলেম বিপরীতমুখী বক্তব্য দেন তখন আমাদের করণীয় কি?

মূলত হাদিস এর মধ্যে ৪ প্রকারের হাদিস গ্রহণ যোগ্য। যথা
১। সহীহ লি যাতিহী
২। হাসান লি যাতিহী
৩। সহীহ লি গইরিহী
৪। হাসান লি গইরিহী

এছাড়া হাদিস যইফ বা দুর্বল বলে আখ্যায়িত হয় ১০-১২ টি কারণে। যেমন-
১। হাদিসটি মুরসাল হলে
২। সনদের কেউ মাজহুল হলে
৩। হাদিসটি মুতকাতি হলে
৪। হাদিসটি মুজতরিব হলে
৫। হাদিসটি শায হলে
৬। হাদিসটিতে তাদলিস থাকলে
৭। সনদের কোন রাবীর স্মৃতিশক্তিতে প্রচুর ঘাটতি থাকলে
৮। হাদিসটি সনদে মাতরুক ব্যক্তি থাকলে
৯। হাদিসটি মুদাল হলে

এছাড়াও আরো বেশ কিছূ কারণ রয়েছে। যাই হোক একজন আলেম যখন কোন হাদিসকে সহীহ বলেন তখন উনার উচিত সকল বিষয়গুলোই বিবেচনা করা। কিন্তু হাদিস বিশেষজ্ঞগণ ফেরেশতা না হয়ে মানুষ হওয়ার জন্য সব সময় সকল দিক বিবেচনা করতে পারেন না বা ভূলবশত বাদ পড়ে যায়। কেউ সনদ দেখে বলেন হাদিসটি সহীহ। অথচ হাদিসটি শায হওয়ার কারণে যইফ। তাই কেউ হাদিসকে সহীহ বললেই যে হাদিসটি সহীহ তেমনটি নয়। বরং দেখতে হবে কেউ হাদিসটিকে যইফ বা জাল বলেছেন কিনা। যদি বলে থাকেন তো আমাদের দেখতে হবে কোন সমস্যার কারণে তিনি হাদিসটিকে যইফ বা জাল বলেছেন।

সুতরাং দুজন আলেম একই হাদিস সম্পর্কে একজন সহীহ অন্যজন যইফ বললে দেখতে হবে কোন সমস্যার কারণে তিনি হাদিসটিকে যইফ বলেছেন। যদি তিনি কারণ উল্লেখ করতে পারেন তো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

উদাহরণ স্বরূপঃ-

আমাদের সমাজে একটা হাদিস প্রচলিত যে
মুয়াজ রাঃ এর সঙ্গীগণ থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাঃ মুয়াজ রাঃ কে ইয়ামেনে পাঠানোর পূর্বে বললেন হে মুয়াজ! কোন সমস্যা আসলে কিভাবে সমাধান করবে। তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহর কিতাব দিয়ে। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন যদি আল্লাহর কিতাব তথা কোরআনে না পাও? তিনি উত্তর দিলেন তখন রাসূল সাঃ এর সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করব? রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন সেখানেও যদি না পাও? তিনি বললেন তখন আমি গবেষনা (ইজতিহাদ) করব। (তিরমিযী, অধ্যায়ঃ বিচার কিভাবে ফায়সালা করবে, হাদিস নং-১০২৭)।

এ হাদিসটি ৩টি কারণে যইফ বা দুর্বল। সমস্যাগুলো হলো-
=> মুয়াজ রাঃ এর সঙ্গীগণ থেকে বর্ণিত। কিন্তু এই সঙ্গী কারা ছিল সে সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। সঙ্গীরা মাজহুল।
=> হাদিসটি মুরসাল। অর্থ্যাৎ তাবেয়ী সরাসরি রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেছে যেখানে মাজখানের সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে।
=> হাদিসটির সনদে হারেস ইবনুল আমর রয়েছেন যিনি মাজহুল অর্থ্যাৎ হাদিস এর ভান্ডারে এই ব্যক্তি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। কে সে? কার সন্তান? বা কার পিতা? কিছুই জানা যায় না।

ইমাম বুখারী বলেন হাদিসটি সহীহ না। ইবনে হাজম বলেন এ হাদিসটি বাতিল এবং এর কোন ভিত্তি নাই। (আত তালখীস পৃষ্ঠা নং-৪০১)।

কোন আলেম হাদিসটিকে সহীহ বলতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে আর কেউ যইফ বলেছে কি না? যদি বলে তো দেখতে হবে কোন কারণে বলেছে। উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে উনার যইফ সংক্রান্ত বক্তব্যটি গ্রহণ করা হবে এবং আগে যিনি সহীহ বলেছেন তার বক্তব্য বাতিল হবে।

সুতরাং আমরা যখনই কোন দেখব আলেমগণ একটি হাদিস সম্পর্কে দুরকম মন্তব্য দিয়েছেন তখন যে প্রমাণ দেখাতে পারবে সেটাই মানব। সবচেযে যেই ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো হাদিস যইফ বলার পাশাপাশি যইফ হওয়ার কারণ গুলোও উল্লেখ করতে হবে এবং হাদিসটি কোন অধ্যায় এ পাওয়া যাবে সেটাও উল্লেখ করতে হবে।

==>>আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, আজ আমরা যা ব্লগগুলোতে পোষ্ট করছি তাই বছরের পর বছর ব্লগে ফেইসবুকে সকল জায়গায় প্রচার হবে। তাই লাগলে সময় নিয়ে হলেও একটা পোষ্ট দিব যা ফল দিবে দীর্ঘদিন যাবৎ। আর আমাদের প্রতিদান তো ওই মহান স্বত্ত্বারই নিকট যার কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে।

আল্লাহ আমাদের সত্য বুঝার, জ্ঞান অর্জন করার, হাদিস নং অধ্যায় তাহকিক সহ প্রচার করার এবং যইফ ও জাল হাদিসের ক্ষেত্রে কারণ উল্লেখ সহকারে ইসলাম প্রচারের তৌফিক দান করুন। আমীন।
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×