somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*~*| |* জীবন বদলে দেয়া চিরকুট (পর্ব - ৩) *| |*~*

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





প্রথম পর্ব -- Click This Link

দ্বিতীয় পর্ব --- Click This Link


মায়ের কাছে এভাবে ফেলে দেয়া খাবার চাওয়ার কথাটা পড়তে পড়তে সুমনার চোখ দিয়ে কখন যে টপ টপ করে পানি পড়তে শুরু করেছে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারেনি ... এমন সুন্দর টুকটুকে আদুরে মেয়েটা কি শেষ পর্যন্ত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো যে ভালো খাবারের পরিবর্তে ফেলে দেয়া খাবারের সন্ধান করছে ? ... এমন একটা ফুটফুটে বাবুকে সুস্হ করতে জান দিয়ে হলেও চেষ্টা করতো , তাইতো এরপর তনুর কি হয়েছে জানার জন্য সে এখনি আহত পাখির মত ছটফট শুরু করে দিয়েছে ... গোগ্রাসে বিকেলের খাবার সব শেষ করে বেল বাজিয়ে নার্সকে ডেকে জিজ্ঞেস করবো রাতের খাবার কখন দিবে ... রাত ৮ টার সময় রাতের খাবার সার্ভ হয় শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলো সুমনা ... এখনো ৩ ঘন্টা পরে ? .... সে জিজ্ঞেস করলো -- তার যদি জলদি ক্ষিধে পায় তবে কি কিছু পাওয়া সম্ভব ? ... মায়ের মত আদর করা ওর অন্যতম প্রিয় নার্সটি ওর কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে বলে, তোমার যখনই খেতে মন চাইবে খালি বেল বাজিয়ে বললেই তোমাকে সার্ভ করা হবে ... ঠিকাছে ? ... সে চলে যেতেই এতক্ষনে সুমনা চোখ পড়লো ওর বাবার উপরে, কখন যে উনি মা কে নিয়ে তার বিছানায় পাশে দাড়িয়েছেন বুঝতেই পারেনি... জ্বরে অসুস্হ মা মেয়েকে দেখতে ছুটে চলে এসেছেন হাসপাতালে, ওদিকে কিছুক্ষন সুমনার খোজ খবর নিয়ে ওর বাবা চলে গেলেন শুভ্রর কাছে, এই না দেখে সুমনা এক গাদা অভিযোগ করে বসলো মায়ের কাছে, মেয়েকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে তিনিও বাবাকে অনেক বকা দিলেন ... ঘন্টা খানিক পরে ভিজিটিং আওয়ার শেষ হলে তিনি চলে গেলেন বাসায় ... আম্মু চলে যাওয়ার পরে পরেই তনুর কথা মনে পড়তেই রাজ্যের ক্ষিদে যেন সুমনার পেটে এসে বাসা বাধলো ... সাথে সাথে ডিং ডং করে ঘন্টা বাজিয়ে কিছু একটা খাবে জানাতেই হাসিমুখে স্বল্পভাষী নার্সটা চলে গেল খাবার আনতে ... যাওয়ার সময় বলে গেল - রাতের খাবারের সময়ের অনেক আগেই চাওয়া হয়েছে বলে আসতে একটু দেরী হতে পারে...

আধ ঘন্টার মাথায় খাবারের ট্রে হাতে প্রিয় এক নার্সকে আসতে দেখে সুমনা খাবারের চেয়ে ট্রে তে কোন চিরটুক আছে কি না দেখার জন্য রীতিমত দাড়িয়ে পড়লো ... ছোট্ট একটা আদর দিয়ে নার্স ওর হাতে চিরকুট টা দিয়ে বললো এটার জন্যই দুষ্টুটার ক্ষিদে পেয়েছিল তাই না ? ... চিরকুট টা পেয়ে আর এমন আদুরে কথা শুনে সুমনা যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল ... আর কাল ক্ষেপন না করেই ও পড়তে শুরু করলো এবারের বেশ বড় চিরকুট টা ...

" অবাক চোখে মেয়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মা বললেন কেন মামনি, ও খাবার কেন , তোমাকে টাটকা কিছু বানিয়ে দিতে বলি ? ... কিন্তু তনুর না সূচক ঘাড় নাড়িয়ে বললো - ওগুলো তো ফেলেই দিবে, এর চেয়ে আমাকে দাও না প্লিজ ... মেয়ের কথা ফেলতে না পেরে কাজের বুয়াকে দিয়ে তিনি বাসি ভাত পাঠিয়ে দিয়ে দরজার আড়াল থেকে শোনার চেষ্টা করতে লাগলেন তার মেয়ে কি করে ... ততক্ষনে খবর পেয়ে তনুর বাবাও অফিস থেকে ছুটে এসেছেন দেখতে তার মেয়ে কি করে , কিছুক্ষন পরে ঘরের বাইরে থেকে তনুকে একমনে নিজে নিজে কথা বলতে শুনে একসাথে দুজনেই ভিতরে গিয়ে দেখে তনু খাবারগুলো একটু একটু করে বাইরে ফেলছে আর বলছে -- আসো আসো খাও, আরেকটু খাও ... বাবা মা কে ঘরে ঢুকতে দেখেই ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে বলে হাতের বাটির সবটুকু ভাত বাইরে ফেলে একটু পরে ইশারায় বললো -- এদিকে আসো। আস্তে আস্তে উনাদের হাত ধরে জানালার কাছে আনতেই অবাক নয়নে তারা দেখলেন কার্নিসের কোনায় একটা ছোট্ট চড়ুই পাখির বাসা... সেখানে এক মা চড়ুই পাখি তনুর দেয়া খাবার গুলো খুটে খুটে তুলে নিয়ে বাচ্চাদেরকে খাওয়াচ্ছে ... তাই দেখে আনন্দে ও মুখ টিপে হেসে চলেছে, শব্দ করছে না, পাছে যদি ওদের ডিস্টার্ব হয় .... এর পর থেকে প্রতিদিন সময় মত তনু ঐ পাখির বাচ্চাদের সাথে গল্প করা আর খাবার খাওয়াতে শুরু করলো, এভাবে চলতে চলতে কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল সবগুলো চড়ুই আর কার্নিস থেকে না, বরং তনুর জানালায় বসে খাবার খাচ্ছে ... সেই সাথে তনুও কিছু দিনের মধ্যেই একেবারে ঝরঝরে সুস্হ হয়ে উঠলো ... আগের যে কোন সময়ের চেয়ে উচ্ছল আনন্দে নিজের সব কাজ উৎসাহের সাথে শেষ করার পাশাপাশি সময়মত চড়ুইদের খাবার খাইয়ে, ওদের সাথে নিজের সারাদিনের গল্প করে বেশ কাটছিল দিন গুলো .... হঠাৎ একরাতে অন্ধকার মেঘে ভর করে দুরন্ত গতিতে ছুটে এলো কালবৈশাখী ঝড়, উড়িয়ে তাড়িয়ে ধ্বংস করে দিলো অনেকের সাজানো সংসার ... সেই সাথে কার্নিসে বানানো চড়ুই পাখির সাজানো ছোট্ট ঘর আর তনুর মুখে এতদিন লেগে থাকা আনন্দের হাসিটি ...



চলবে ... (৪র্থ পর্বে সমাপ্তি)
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×