somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*~*| |* জীবন বদলে দেয়া চিরকুট (পর্ব - ১) *| |*~*

০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উফফ !! অসহ্য এক বিশ্রী গন্ধে কেবিন টা ভরে রয়েছে, প্রথম দিন ডেটল দিয়ে মেঝে মুছে দেবার পরেই কেমন যেন গা গুলিয়ে আসছিল ওর তাই সাথে সাথে নার্সদেরকে ডেকে বলেছিল তার কেবিনে যেন এমন জীবানু নাশক ব্যাবহার করে যাতে এমন গন্ধ থাকবে না, এর পরে আজকে ওরা এমন কিছু লিকুইড মিশিয়ে ঘর পরিষ্কার করেছে যে তার গন্ধে এ কেবিনে টেকা দায় হয়ে পড়েছে .... এক কেবিনে ভারী পর্দা দিয়ে আলাদা করা দুজন রুগীর জন্য ... এমনিতেই অস্বস্হিকর পরিবেশ তার উপর বিশ্রী গন্ধ (এটাকে দুর্গন্ধ বলাই উত্তম) ... এ অবস্হার মধ্যে মরার উপরে খাড়ার ঘা হিসেবে হাসতে হাসতে সুমনার কেবিনে প্রবেশ করলো শুভ্র ... শুভ্র একই কেবিনের অন্য পাশের রোগী, খিটমিটে সুমনার রাগে গজ গজ করা শুনেই উৎসুক দর্শকের মত উকি দিয়েছে ওর এখানে ... আর ঢুকেই পাগলের মত খিটমিট করতে দেখে নিজর চুপ থাকা কে সামলাতে না পেরে ফিক করে হেসে দিয়েছে ... ব্যাস , শুরু হয়ে গেল সুমনার কেয়ামত ... চেনা নেই জানা নেই এভাবে এসে হাসবে কেন সে ? ... নক করে ঢুকে পড়েছে বলেই তাকে ভদ্র বলা যায়না তো ... কোথায় যে তাকে নিয়ে আসা হলো ... আব্বু আম্মুর উপর এখন তার আরো অনেক বেশী রাগ হতে লাগলো ....সব দোষ তাদের... ওদের জন্যই তো আজকের তার এইখানে আসতে হইসে ....

ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে ... সেমিষ্টার ফাইনালের চাপে অস্হির সুমনা ... বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সেই সাথে ইনস্টিটিউটের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী , সুতরাং দুদিকের প্রত্যাশাকে পূরনের লক্ষ্যে রাত দিন এক করে পড়ছিল সে ... মাঝে মাঝে পড়ার চাপে চিড়েচ্যাপ্টা সুমনা কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে রেষ্ট নেয় অথবা পাপ্পুর সাথে গল্প করে মাথাটা ফ্রেশ করে নেয় ... পাপ্পু ওর খুব কাছের একজন বন্ধু, ওর কথা বলার ধরনটাই এমন যে শুনতে থাকলে শুধুই শুনতে ইচ্ছে করে ... সেও গল্প শুনিয়ে মজা পায়, তাই ওকে গল্প বলে যায় একের পর এক ... অনেক দিন ওর কাছে গল্প শুনতে শুনতে সে ঘুমিয়ে পড়েছে ... এভাবে চলতে চলতে এক রাতে ওর আব্বু এসে দেখে বিছানায় বই খুলে সুমনা কার সাথে যেন গল্পে মশগুল হয়ে আছে ... এই অবস্হা দেখে তিনি দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে বকে গেলেন কিছুক্ষন তারই আদরের মেয়েকে ... সবসময় তার সব কাজকে তিনি প্রশ্রয় দিলেও সেমিষ্টার ফাইনালের সময় তার এমন কাজকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না ... এদিকে পাপ্পু ফোনে থাকা অবস্হায় এমন বকা খাওয়ায় অপমানিত আর সেই সাথে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে শোনা কঠিন কথাগুলো সুমনার জন্য সহ্য করা সত্যি কষ্ট কর হয়ে পড়েছিল ... তাইতো সে রাগে, অপমানে, অভিমানে মায়ের ড্রয়ার থেকে চুরি করে আনা দু পাতা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে শুয়ে পড়েছিল চির নিদ্রার অভিপ্রায়ে ... এর পরে কি হয়েছে সে নিজেও জানে না , গতকাল যখন চোখ খুলেছে তখন নিজেকে পেয়েছে এই কেবিনের ভিতরে ...

দরজায় ঠক ঠক নক ভিতরে আসতে পারি বলতে বলতেই পর্দা সরিয়ে কেবিনের ভিতর শুভ্র প্রবেশ করেই খিক খিক করে গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো ... আমি শুভ্র (সুমনা মনে মনে বলে -- তোর নাম জানতে চেয়েছি নাকি ), এ কেবিনের ও পাশের বেডটাই আমার (সুমনা মনে মনে -- আমায় উদ্ধার করেছিস পাশে থেকে), এখানে কয়েকদিন থাকলেই এ গন্ধ আপনার সহ্য হয়ে যাবে (সুমনা মনে মনে -- তোকে এই দুর্গন্ধের উকালতি করতে বলেছে কে ?), আপনার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকতে পারেন (সুমনা মনে মনে -- গলায় দড়ি দিতে ডাকবো, চলবে ?)... এখন আসি , পরে কথা হবে (সুমনা মনে মনে -- দুর হ ! তোর মুখ আমি দেখতে চাইনা) ... কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বলার মত অভদ্রতা করতে পারলোনা শুধু মাত্র দুটো মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে , তবে শুভ্র চলে যাওয়ার পরেই সে নার্সকে ডেকে বলে দিয়েছিল ওকে যেন মানা করে দেয়া হয় তার সাইডে আসতে .... কথাটি নার্স শুভ্রকে জানিয়ে দেয়ার পরে সেখান থেকেই চিৎকার বলে উঠেছিল .... জলদি সুস্হ হয়ে উঠুন তবেই আমার এ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবেন ....

এমনিতে সকাল থেকেই মেজাজ খারাপ তার উপরে শুভ্রর এই ফালতু আচরন মেজাজটা আরো বিগড়ে দিয়েছে ...ম্যুড ভয়ংকর খারাপ অথবা রাগ হলেই সুমনার না খাওয়ার একটা পুরোনো অভ্যাস আছে সেই সাথে এই মুহুর্তে ঔষধ না খাওয়ার এক রকম পণ করেছে সে, দরকার নেই তার ভাল হওয়ার; এমন অপমান আর বকা খাওয়ার পরে বেচে থাকারই ইচ্ছে নেই তার ... সে কারনেই সকালের নাশ্তা আর তার পর খেতে দেয়া ঔষধগুলো এখনো টেবিলের উপরেই পড়া আছে ... আগে আর কেউ না হোক আব্বুর মন খারাপ দেখে সে খেয়ে নিতো ... কিন্তু এবার সেই আব্বুই এমনভাবে তাকে বকা দিয়েছে, সুতরাং সে খাবেই না ... এবার সে দেখে নিতে চায় দুনিয়ায় কে আছে যে তাকে খাবার আর ঔষধ খাওয়াতে পারে ....



( চলবে .... )




২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×