যদি দেখতে চান কোন সত্যিকারের প্রেমের প্রতিচ্ছবি; যদি বুঝতে চান অপেক্ষার মানে, আত্নত্যাগ আর ভালোবাসা পেয়ে হারিয়ে ফেলার কষ্ট তাহলে আপনাকে খুব মনযোগ দিয়ে দেখতে হবে সিনেমাটি। সিনেমাটোগ্রাফী এক কথায় অসাধারন। মিউজিক পুরা বুকে গিয়ে কুরে কুরে খায় সমস্ত অনুভুতি। আর অভিনয়, কি আর বলবো?
সিনেমার কাহিনী আবর্তিত আমস্টারডামের তিন কোরিয়ানকে নিয়ে। হে ইয়ং এক তরুনী আর্টিস্ট। যার জীবনে এখনো ভালোবাসা আসেনি। সে নিজের মত এঁকে চলেছে তার পৃথিবী, তার ভালোলাগা আর সম্ভাব্য ভালোবাসার বিমুর্ত প্রতিচ্ছবি। কিন্তু তাকে পেয়ে বসেছে এক অদ্ভুত ভালোলাগায়; তার সামনে ঝুলে আছে এক নিরুত্তর প্রশ্ন। কে তাকে প্রতিদিনই নিয়ম করে পাঠাচ্ছে এক গুচ্ছ ডেইসি ফুল? এই ডেইসি ফুল খুবই প্রিয় ছিলো হে ইয়ং এর। ভ্যানগগ যেমন সূর্যমুখী নিয়ে এঁকেছিলেন তার বিখ্যাত ছবি- ‘সানফ্লাওয়ার’, তেমনি হে ইয়ং এর কাছে এই ডেইসিই ছিলো ছোট্ট সূর্যমুখী। এক বিস্তৃর্ণ মাঠে বসে সে আঁকতো অপরিমেয় ডেইসির ছবি।
পার্ক ইউ একজন পেশাদার খুনী। কালো টিউলিপ দিয়ে তাকে সংকেত পাঠানো হয় খুন করবার জন্য। তার বাড়ির পাশে এক ডেইসি ভরা মাঠ যেখানে প্রায় একটা মেয়ে আসে ছবি আঁকতে। পার্ক ইউ তার রক্তাক্ত জীবনের কিছু সময় ভুলে থাকতে পারে সেই মেয়েকে দেখে। সাইকেল চালিয়ে মেয়েটি এসে পার হয় একটা ছোট্ট খাল যা পার হতে হয় একটা ফেলে রাখা গাছের গুড়ির উপর দিয়ে। মেয়েটি পার হতে খুব ভয় পায় আর ছেলেটি নিয়ম করে দেখে যায় সেই মেয়েটিকে। এভাবেই একদিন খাল পার হতে গিয়ে জলে পড়ে যায় মেয়েটি আর তার ক্যানভাসের ব্যাগ ভেসে যায়। পার্ক ইউ ছুটে যায় মেয়েকে বাঁচাবে বলে কিন্তু মেয়ে ততক্ষণে উঠে পরেছে পাড়ে। পার্ক ইউ উদ্ধার করে সেই ব্যাগ আর অপেক্ষা করে তা ফেরত দেবে বলে।
একদিন সকাল; মেয়েটি নিয়ম করে আসে মাঠে ছবি আঁকবে বলে। কিন্তু এসে দেখে এ কি?? আজ খালের উপর একটা ছোট্ট সুন্দর কাঠের ব্রীজ বানানো! কে বানালো এই ব্রীজ আর কেনই বা? হঠাত সে খেয়াল করে ব্রীজের খুঁটিতে আঁটকানো সেই ভেসে যাওয়া ক্যানভাস ব্যাগ। বুঝতে পারে মেয়েটি যে কেউ একজন শুধু তার জন্য বানিয়ে রেখেছে এই ব্রীজ! মেয়েটিও তাকে ভোলেনা আর তাই সে রেখে যায় তার আঁকা একটা ডেইসি মাঠের ছবি। ছবিটা সে রেখে যায় ঠিক ব্রীজের উপরে তাকে দেবে বলে। এরপর থেকেই মেয়েটি কোন অজানা মানুষ থেকে প্রতিদিন পেতে থাকে একগুচ্ছ ডেইসি ফুল।
উয়াং উ একজন ইন্টারপোল এজেন্ট। আমস্টারডামে সে আসে এক ড্রাগ পেডেলারকে ধরতে যার আস্তানা এক স্কয়ারে। সেখানে সবসময় অনেক মানুষের ভীড় আর তাই তার নজরদারিতে কোন সমস্যা হয়না। তবুও স্বাভাবিকতার জন্য সে স্কয়ারে এসে এক তরুনী আর্টিস্টের সামনে আসে; কোরিয়ান জেনে খুশি হয় এবং বসে পড়ে নিজের স্কেচ করাবে বলে! কিন্তু তরুনী মনে হচ্ছে তার জন্য একটু বেশি উতলা, তার দিকে তাকাচ্ছে একটু অন্যরকম ভাবে! কিন্তু কেন? ভাবার সময় নেই তাকে উঠতে হয় নজরদারির কাজে। সে চলে যায় কিন্তু সে ফেলে রেখে যায় একগুচ্ছ ডেইসি ফুল মেয়েটির পায়ের কাছে। ফুলগুলো এমনিই কেনা। কিন্তু মেয়েটি? সেও কি এটাই ভাবছে?? উহু। একেবারেই না।
পরিচয় দিয়ে দিলাম। আর বলবোনা। এবার বাঁকি কাজ আপনাদের। সময় করে দেখে নিবেন এই অসাধারন সিনেমাটি। একটা কথায় বলতে পারি- নিজের হারানো অনেক কিছু খুঁজে পেতে পারেন সিনেমাটিতে, আবার হারাতেও পারেন অনেক কিছু। হাসতে পারেন আর আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারে কিছু দম বন্ধ করা কষ্, কিছু বিমর্ষ খারাপ লাগা।
ডেইসি---------- অসাধারন একটি কোরিয়ান মুভি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।