আমি এসেছি -(১ম পর্ব)
আমি এসেছি -(২য় পর্ব)
৪র্থ পরিচ্ছেদ-
ফিলিপাইনের একটি জাতীয় উৎসব সিনুলগ । মূলত এটি ধর্মীয় উৎসব হলেও পরবর্তীতে এটি জাতীয় ভাবে রুপ নেয় । প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের তৃতীয় রোববারে সিনুলগ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।সান্টো নিনোর ছবিকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য এক ধর্মীয় নাচের আয়োজন করা হয় ।
দুইদিন ব্যাপী এ উৎসব চলে । নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি নির্দেশনায় নির্দিষ্ট অঞ্চল গুলোতে সকল মোবাইল কোম্পানী গুলো তাদের সিগন্যাল বন্ধ রাখে । আর এর ফলে জিনিনের ফোন সংযোগ বন্ধ ।
এই দুইদিন আমার অবস্থা কেমন ছিল তা বর্ননা করার মত নয়। আমার মনে আছে ঐই দুই দিন আমি পানি ছাড়া কিছু খেতে পারি নি । আর জিনিনের অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ ।
দেখতে দেখতে ৬ মাস চলে গেল । আমি আবার শিকাগো চলে আসি । তাতে জেনিন কিছুটা শান্তি পায় । শিকগোতে ফিরে প্লান অনুযায়ী মালদ্বীপের জন্য প্রস্তুতি চলতে থাকে । সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা আগামী মাসে সেখানে যাব ।কিন্তু সবার ভাগ্যে সব থাকে না । কথায় আছে- যায় দিন ভাল আসে দিন খারাপ । একরাতে রিসেলার ফোনে ঘুম ভাঙে আমার ।
-পবিত্র !
-কি খবর রিসেলা ?
-তুমি কি ফিলিপাইন আসবে ?
-কেন কি হয়েছে ? সব ঠিক আছে তো ?
-না ! ঠিক নেই , তোমাকে কিছু কথা বলব , মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নাও ।
রিসেলার কথায় আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে । ২০ তলার ছাদে থেকে মাটিতে পড়লে যেমন লাগবে , আমার অনুভূতি এই মুহূর্তে তেমন । পুরো শরীরে বিন্দু মাএ শক্তি নেই । হাত গুলো কাঁপছে । যেকোন মূল্যে আমি ফিলিপাইন যেতে চাই ।
৫ম পরিচ্ছেদ-
রাতের বৃষ্টি আমি ভয় পাই । তবে আজ তা লাগছে না । ফিলিপাইন এয়ারপোর্টের লাল-হলুদ আলোয় বৃষ্টি গুলো যেন জ্বল জ্বল করছে । আমাকে নিতে কিছুক্ষন আগে রিসেলা এসেছে । আমি আর রিসেলা বসে আছি এয়ারপোর্টের সেই ছোট ব্রেঞ্চে । তার হাতে জিনিনের লেখা ২০ পৃষ্ঠার একটি চিঠি ।
জেনিন , তুমি একটা মিথ্যুক !!!
তুমি বলেছিলে -“আমি তোমার শহরের মায়া ছাড়তে পারব না , একটি সুঘ্রান আমার পিছু ছাড়বে না “
কই ? আজ আমি এসেছি তোমার শহরে , কোন সুঘ্রান তো পাই না !!!
সেদিন আমার কলিজার শত শত ছিদ্র আর চোখ ভরা কান্না নিয়ে তোমার শহরে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আসনি । তোমার সাথে আমার এমন কথা ছিল না ।
তুমি অভিমান করে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলে । প্রতিটি স্বপ্ন আজ আমার ধূষর । আমি তোমার মত করে কাউকে ভালবাসতে পারব না ।তোমার হাতটি ধরার সৌভাগ্য আমার হয়নি। সামনে দাড়িয়ে বলতে পারিনি কতটা ভালবাসি ।
সেদিন ম্যাকটানের আকাশ ভারী ছিল আমার আর্তনাদে । অঝরে কেঁদেছিল আমার হয়ে । এখনও আমার কানে বাজে তোমার শেষ কথা গুলো ।জানি তুমি কোনদিন ফিরবে না, তবু তোমার অপেক্ষায় আমি বসে থাকি । তোমার লেখা ২০ পৃষ্ঠার চিঠির গল্প আজও আমাকে কাঁদায় । আমি কোনদিন কাউকে তা বলতে পারব না ।
এ চিঠির গল্প শুধু আমার, শুধুই আমার ...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩