somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পবিত্র হোসাইন
মাঝে মাঝে নিজেকে আঠেরো শতাব্দীর অঘোষিত সাফল্যহীন কবি মনে হয়। যার কিছু লেখা নামহীন বাজারি পত্রিকায় ছাপা হয়ে ছিল কিন্তু কেউ তা পড়ে দেখিনি।

রঙিন ভালোবাসা -(২য় এবং শেষ পর্ব)

২১ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লেলিনা এবং জিওন আমার অনেক ভাল বন্ধু। বলতে গেলে আমরা এক সাথে থাকি, বাসা টা আমার হলেও ফ্রি-তে তারা আমার রুম পাটনার। কুকিং থেকে শুরু করে মুভি দেখা সব চলে আমার বাসায়। লেলিনার বাবা সম্ভবত র্পতুগ্রীজ তবে মায়েরটা বলতে পারব না। এবং জিওন পিওর কোরিয়ান। ওয়েস্টার্ন কালর্চারের একটা বিষয় আমার ভাল লাগে, এদের ধর্ম, বর্ন, জাতি নিয়ে মাথা ব্যথা কম। লেলিনা খুব চঞ্চল প্রকৃতি মেয়ে, চুল গুলো সোনালী হলেও তার হাসি দিয়ে ১০১ টা ছেলেকে ঘায়েল করার ক্ষমতা রাখে। কোন মেয়ের হাসি যে এত সুন্দর হতে পারে, লেলিনাকে না দেখলে বুঝতাম না। এই হাসি দেখে কত ছেলে প্রেমে পড়েছে তা লেলিনা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। অস্বীকার করব না, আমি তার প্রেম জলে হাবুডুবু খেয়ে সাঁতার শিখেছি। তবে তা কখনো বলি নি।
জিওনের কথা বর্ণনা করতে গেলে পুরা দিন-রাত মিলিয়ে শেষ করতে পারব না। এরকম কমেডিয়ান ছেলে বিশেষ ভাগ্যে জোটে। সত্যি বলতে তার সামনে আমি কখন মন খারাপ করে থাকতে পারি নি, একেবারে মন ভাল করার মেশিন তার বিশেষ গুণের মধ্যে অন্যতম মানুষ কে কপি করা, সারাদিন কোন মানুষ-টা কেমন করবে সেটা খুব ভাল করে লক্ষ্য করে রাতে আমাদের দেখানো তার প্রধান লক্ষ্য। সত্যি এমন বন্ধু থাকলে জীবন অসাধারণ।

সে বছরের শেষের দিকে কোন এক জরুরী কাজে আমাকে বাংলাদেশে যেতে হয়েছিল তবে সেটি খুব দীর্ঘ নয়, মাএ ১৫ দিনের জন্য। তখন লেলিনা এবং জিওন আমার সাথে বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করে, আমি ওদের না করিনি। শেষ মুহূর্তে জিওনের বাবা মারা যাওয়া-তে তা হয়ে ওঠেনি। জরুরীভাবে জিওনকে কোরিয়া ব্যাক করতে হয় এ নিয়ে লেলিনার অভিযোগের শেষ ছিল না, আমরা দু-জন এক সাথে চলে গেলে সে কি করবে?
বাংলাদেশে গিয়ে লেলিনা আর জিওনের জন্য খুব খারাপ লাগছিল তারচেয়ে বড় কষ্টের ব্যাপার এই কদিন একবারের জন্য ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।
আমার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভূদ ঘটনা ঘটে ১৫দিন পর যখন আমি শিকাগোতে ফিরে যাই! কোন ভাবে লেলিনা এবং জিওনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। ওদের দুজনের সকল ধরনের কন্টাক্ট বন্ধ! পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে ওদের কোন সন্ধান পায়-নি। এক কথায় হারিয়ে ফেলি ওদের।
তাই ৬-৭ মাস পরে এই রাতে লেলিনার ফোন কল আমাকে যথেষ্ট অবাক করেছে তার সাথে মনে জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের!

হাসপালের গেটে দেখা হয় লেলিনার মায়ের সাথে। লেলিনার ব্যাপার জিজ্ঞাসা করতে সে আমার হাত ধরে নিয়ে যান একটি রুমে। কিছুক্ষন পর একজন নার্স ফুটফুটে এক নবজাতক আমার কোলে তুলে দেয়।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি, আমি নিস্তব্ধ, আমি গতিহীন, আমি অনুচ্চারিত,আমার পৃথিবী থেমে গেছে, এতো পরীর বাচ্চা! কিভাবে তার বর্ণনা করব আমার জানা নেই। ছোট ছোট চোখ, নরম তুল তুলে গাল, ঠোঁট এতটাই লাল যা কালো বর্ন ধারন করেছে। হৃষ্টপুষ্ট আঙ্গুল গুলো দেখলে চুমু দিতে মন চায়, তার ড্যাব ড্যাব চাহনি ভুলিয়ে দেয় সব কষ্ট। চেহারা দেখে বুঝতে বাকি থাকে না এর বাবা জিওন! ভেতরে ভেতরে এত কিছু, আমি জানতে পারলাম না? জিওন এমন করতে পারে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।সাহস করে বলে ফেললাম,
-আন্টি, জিওন এবং লেলিনা কোথায়?
-জিওন আর ফিরে আসে-নি ! লেলিনের সাথে প্রতারণা করেছে।
-আমি কি একটু লেলিনের সাথে কথা বলতে পারি?
-হ্যাঁ ! A113 নাম্বার কেবিনে চলে যাও ।

কেবিনে ঢুকে দেখি লেলিনা বিছানায় শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে বসতেই আমার হাত জড়িয়ে তার প্রথম কথা,
-আমার একটা উপকার করতে পারবে?
-একটা না দশটা করব।বল কি করতে হবে।
-আমার বাবুর নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে ওর বাবার নাম প্রয়োজন! আমাকে সাহায্য করবে?
-হুম…সমস্যা নেই "পবিত্র হোসাইন" লিখে দিব কিন্তু একটা শর্ত আছে?
-কি শর্ত?
-প্রতিদিন এই পরীর বাচ্চার আঙ্গুলে চুমা দিতে চাই এবং তুমি সেটা মানা করতে পারবে না। বল রাজি কিনা?

লেলিনা অপলক দৃষ্টি-তে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, সে চোখের ভাষা আমি পড়তে পারি। তার মিষ্টি হাসির চাহনি আবার আমাকে মাতাল করে দেয়। আজ স্বার্থপরের মতো সৃষ্টিকর্তার কাছে বলতে চাই জিওন ফিরে না আসুক। কখনই না আসুক আমাদের রঙিন ভালোবাসায়।
রঙিন ভালোবাসা (১ম পর্ব এখানে ক্লিক করুন )
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×