দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভবত পঞ্চাশতম দিন আজকে। এখন মনে হয় নিজেদের প্রশ্ন করার সময় এসেছে, কী হচ্ছে, কী হতে যাচ্ছে, কী হতে পারতো এবং কী হয়েছে। এসব হিসাব মেলানো এখন খুব দরকার। করোনা ভাইরাস আক্রমণের সময় বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম বিদেশী খবর, রিসার্চ, লিংক ইত্যাদি কপি পেস্ট করে যা ঘটতে যাচ্ছে তার সম্ভাব্য একটা চিত্র দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমি রেডিট থেকে একজন ইতালিয়ানের পোস্ট বাংলায় অনুবাদ করে দিয়েছিলাম। সেখানে এক মাস (কিংবা ছয় সপ্তাহের) একটা টাইমলাইন ছিলো। তারা করোনা ভাইরাসকে অবহেলা করার কারণে, কীভাবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার হয়েছিলো, এবং কীভাবে হাসপাতালগুলি লাশে ভরে গিয়েছিলো, তার করুন এবং ভয়াবহ বিবরণ ছিলো সেখানে। ইতালিতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু ভয়াবহ আকার ধারণ করার কারণ ছিলো, কয়েক হাজার মানুষ রেড জোন থেকে নিরাপদ এলাকাতে চলে গিয়েছিলো। ফলে সারা দেশে সংক্রমণ এবং মৃত্যু শুরু হয়।
এইবার আসেন পয়েন্টে।
১। ইতালিয়ানরা যে ভুল করেছিলো, আমরাও কি সেই ভুলগুলি করি নি? করেছি। তার চেয়ে বেশিই করেছি। আমাদের দেশে কীরকম লকডাউন হয়েছে, তা আমরা ভালোই দেখেছি। এর মধ্যে একবার মানুষজন ঢাকার বাইরে গেলো, আমরা বললাম দাঁড়াও বাছাধন, দুই সপ্তাহ পর টের পাইবা! দুই সপ্তাহ কই, এক মাস কেটে গেলো ইওর অনার! তেমন কিছু তো টের পাচ্ছি না! সাধারণ ছুটি ঘোষণার কয়েকদিন পর দলে দলে গার্মেন্টসের কাজে যোগ দেয়ার জন্যে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিকেরা ঢাকায় এলো, আবার চলেও গেলো। বলা হলো, দুই সপ্তাহ পর বাছাধনেরা টের পাবে। তিন সপ্তাহ কেটে গেছে কিন্তু! ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনারও দুই সপ্তাহ হতে চললো। আমরা প্রচুর ট্রোল দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু লাশ কই? প্রচুর লাশ দেখান!
২। জ্বী, লাশ দেখাতে হবে। ১৫০ লাশে চলবে না। আক্রান্ত হয়েছে ৫০০০, সরকারি হিসাবে, আসল আক্রান্ত তার চেয়ে বহুগুণ বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। সেটা আন্দাজ করে বলাও সম্ভব না। কিন্তু সরকারি হিসেবে মৃত্যুর চেয়ে আসল সংখ্যা ১৫০ এর চেয়ে খুব বেশি না, এটা শিওর! এই সোশাল মিডিয়ার যুগে লাশের সংখ্যা ধামাচাপা দেয়ার সাধ্য কারো নাই।
৩। বিভিন্ন হিসেব দেখিয়ে বলা হচ্ছিলো বাংলাদেশে তিন মাসে ১০ লাখ বা ২০ লাখ, বা ২২ লাখ মানুষ মারা যাবে। দেড় মাসে তাহলে কত মারা যাওয়ার কথা যেন?
৪। এটা শতভাগ নিশ্চিত যে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সে যে অবস্থা হয়েছে, আমাদের সে অবস্থা হয় নি। কেন হয় নি? আমাদের লকডাউনের অবস্থা বেহাল, বারকয়েক বিশাল গণজমায়েত হয়েছে। আমাদের ভেন্টিলেটর নেই, পিপিই নেই, আইসিইউ নেই, তারপরের মৃত্যুর সংখ্যা এত কম, কীভাবে সম্ভব? ভাইরাস কি দুর্বল হয়ে পড়েছে? নাকি আমাদের ইমিউনিটি বেশি? নাকি আসলেই আবহাওয়াজনিত কোন সুবিধা আমাদের আছে?
৫। আউটব্রেক যে চেপে রাখা যায় না, গতবছর ডেঙ্গুর কথা মনে করলেই বোঝা যাবে। প্রতিটি পরিবারে আক্রান্ত ছিলো, সবারই পরিচিত কেউ না কেউ আক্রান্ত হয়েছে, হাসপাতালে থেকেছে, মারা গেছে, কিন্তু এবার? এবার সেরকম হচ্ছে না কেন? দেড় মাসে ১৫০টা মৃত্যুর জন্যে কত লাখ লাখ পরিবার এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে সে হিসাব রাখেন? উৎপাদন নাই, বিলিবন্টন নাই, বেতন নাই, পর্যাপ্ত ত্রান নাই, জমানো টাকা শেষ, এভাবে আর কতদিন? না খেয়ে মানুষ মরবে নাকি?
উপসংহার- আমি বলছি না, লকডাউনের দরকার ছিলো না। কিন্তু এই যে পঞ্চাশটা দিন পার হয়ে গেলো, এত যে জুজু দেখানো হইলো এইগুলার জাবেদা খাতা বের করে হিসাব নিকাশ করেন দয়া করে, কী হওয়ার আশঙ্কা এই সময়ের মধ্যে ছিলো, আর আসলেই কী হয়েছে। হলে পরে কেন হয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব বন্ধ রাখলে করোনার কিছু করা লাগবে না, অর্থনৈতিক মন্দাই খেয়ে দিবে!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:৩৯