গত কয়েকদিনে ৩ ঘন্টা ৪৮ মিনিটের সুদীর্ঘ একটা ডকুমেন্টারি দেখলাম মিনি-সিরিজ দেখার মত করে। নাম Til Madness Do Us Part.
চিনের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ইউনান প্রদেশের একটি মানসিক হাসপাতালের কয়েকমাসের দৈনন্দিন কার্যাবলী নিয়ে এই আখ্যান। সেখানে যারা এসেছে, তাদের কেউ কেউ ভয়ংকর অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো, কেউ কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আবার কেউ কেউ জন্মগতভাবেই এমন। তাদের অনেকেই ১০-১৫ বছর ধরে এই হাসপাতালে আছে। হাসপাতাল না বলে অবশ্য জেলখানা বললেই মানানসই হবে। লম্বা শিক দিয়ে ঘেরা করিডর, প্রবেশমুখও তালা মারা থাকে। এখানকার মানুষদের জীবন কেমন? 'পাগল'দের জীবন আর কেমন হবে! হাসি আনন্দে ভরপুর!
হ্যাঁ, তারা হাসে, কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই। সেই হাসির মধ্যে জীবনের উচ্ছ্বাস নেই। তাদের কেউ কেউ রাতের বেলা নগ্ন হয়ে ঘোরাফেরা করে, কেউ ঘরের মধ্যেই মূত্রত্যাগ করে, কেউ অযথা পায়চারি করে, আর যা-তা বকে। মাঝেমধ্যে আত্মীয়স্বজন তাদের দেখতে আসে, তারা অনুযোগ জানায় বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে। কিন্তু খুব কম মানুষেরই সৌভাগ্য হয় সহসা সেখান থেকে বেরোনোর।
এই ডকুমেন্টারিতে অন্য সব ডকুমেন্টারির মত সাক্ষাৎকার, ধারাবর্ণনা কিছু নেই। হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরায় সেখানকার অসুস্থ মানুষদের প্রতিদিনকার জীবনযাপনের বিভিন্ন অংশ দেখানো হয়েছে। এটা দেখা খুব সুখকর অভিজ্ঞতা না। নিজেকে ওই জায়গায় কল্পনা করে বারবার শিউরে উঠেছি। নোনা ধরা হলুদ দেওয়াল, একটা সিঙ্গেল বেড, আসবাবপত্র বলতে এই। বারান্দায় বেঞ্চ রাখা আছে, সেখান থেকে তারা গ্রিলের ওপাড়ের পৃথিবী দেখে। আর আছে একটা টিভিরুম। সেখানে তারা বিষণ্ণমনে বসে থাকে। নিচতলায় মেয়েদের আবাস। মাঝেমধ্যে পুরুষেরা চিৎকার করে সেই মেয়েদের ডাকে। 'পাগল' হলেও কামনা-বাসনা তো ফুরিয়ে যায় নি!
আত্মীয় স্বজন খাবার দাবার নিয়ে এলে তারা ভাগ করে খায়। মানবিকতাই শেষ পর্যন্ত মানুষের সম্বল!
এই চলচ্চিত্রটি তাদের দেখা উচিত, যারা 'পাগল' বলতে বিনোদনের ব্যাপার বোঝেন। যারা পাবনা মেন্টাল হসপিটালে ঘুরতে যান পাগলদের কাজকারবার দেখতে। কত কষ্টে, কত আঘাতে একজন মানুষ তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, এবং তারপর তাদের জীবন কেমন হয় জানতে এটি দেখা উচিত সবার, আর নিজের সুস্থতার জন্যে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৮